বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড)/৪৯
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলা ভাষার বিভিন্ন সরলীকরণ প্রচেষ্টার একটি নমুনা ও তার প্রতিক্রিয়া | নও বাহার (সাপ্তাহিক) | মার্চ, ১৯৫১ |
গণ-শীকখা পরীশদঃ*
আর কিছু হউক না হউক দুনীতি দমন বিভাগের ডি,আই,জি জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেবের কল্যাণে পূর্বপাকিস্তানে ভাষা, হরফ এবং বানানের সংস্কার খুব দ্রুত গতিতে অগ্রসর হইতেছে। উশ্রী জলপ্রপাতের মতই এই সংস্কারের ধারা গৈরিক নিস্রাবে পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্য ও সংস্কৃতির শ্যামল ক্ষেত্রের উপর দিয়া বহিয়া চলিয়াছে। উশ্রীরৎ পাদদেশই সম্প্রতি “গণ-শীকখা পরীশদ” স্থাপিত হইয়াছে। ভাষা, হরফ এবং বানানের সংস্কার শেষ হইয়া যাওয়ার পর জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেব এখন “গণ-শীকখা” লইয়া মাতিয়া উঠিয়াছেন। এই পরীশদ হইতে তিনি নিম্নলিখিত এশতেহার জারী করিয়াছেন।
DACCA
To
The Manager,
Presidency Printing Works
Dacca.
Dear Sir,
Kindly send 3 or 4 intelligent Compositors of yours to attend the evening classes at the headquarters of Council of Mass Education at 7-17 P.M. to get lessons from us regarding the use of the reformed Bengali Script. It is expected that if they attend these classes for only 3 days, the compositors will be able to compose correctly any matter in old Bengali by themselves.
This is very necessary as your press is on the way and work of the fortnightly, Kajer Katha, will start straightary-(?)
Sd. ABUL HASANAT
Joint Secretary.
Council of Mass Education.
Joint Secretary.
Council of Mass Education.
15-3-1951.
Dear Sir.
I'm quoting here-under copy of a report on two meetings of leading intellectuals and public men and Resolutions passed by them. I would request the favor of your lending support to the noble cause in all ways possible Your Co-operation will inspire us to go ahead.
The NEW SCRIPT may kindly be given a trial in columns of newspapers, journals, etc owned, edited or supported by you with IMMEDIATE FFFF.CT as per Resolution No. 2.
Further literature on our activities is also enclosed.
Sd. ABUL HASANAT
7-3-1951.
পূর্ব পাকিস্তানে কে রাজা, কে প্রজা, কে শাসক, কে শাসিত- কিছুই বুঝা যায় না। গত ১৯৪৯ সালে গভর্ণমেণ্ট একটি ভাষা-কমিটি (লেংগুয়েজ কমিটি) নিযুক্ত করেন, প্রায় দেড় বৎসর পর এই কমিটি নাকি তাঁদের রিপোর্ট দাখিল করিয়াছেন। জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেব সেই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। কমিটির রিপোর্ট এখনো সরকারের বিবেচনাধীন। কাজেই এই সম্বন্ধে এখনও কোন স্থির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় নাই। দেশের কবিসাহিত্যিক এবং অন্যান্য চিন্তাশীল মনীষীরাও কমিটির সুপারিশগুলি সম্বন্ধে একমত নহেন। অথচ এই অবস্থায় জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেব তাঁর এই খেয়ালী ভাষা, হরফ এবং নূতন বানান চালু করিয়া দিতেছেন এবং সরকারী হুকুমের ঢং-এ সমস্ত পত্রিকা ও প্রেসকে নূতন হরফে এবং নূতন বানান পদ্ধতিতে ছাপা শুরু করিতে আদেশ দিতেছেন। ভাষা-সংস্কার কমিটির সুপারিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হইলে সরকারই তখন তাহা চালু করিবার জন্য চেষ্টিত হইবেন। তাহার আগেই কোন ব্যক্তিবিশেষ এরূপ নির্দেশ দিতে পারেন, ইহা আমাদের জানা ছিল না। এরূপ কার্য্য শাসনতন্ত্রের নিয়মানুবর্তিতার বরখেলাফ রিপোর্ট দাখিল করিবার সংগে সংগে ভাষাকমিটির মেম্বারদিগের কার্য্য খতম হইয়াছে। বাকী কাজ গভর্ণমেণ্টের। জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেবের এইসব নির্দ্দেশের পিছনে গভর্ণমেণ্টের কোন সম্মতি আছে কিনা, আমরা জানিতে চাই। যদি না থাকে, তবে আমরা ইহার তীব্র প্রতিবাদ জানাইতেছি। জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেব কলিকাতা এবং ঢাকার প্রেসিডেন্সী লাইব্রেরীর সহিত সংশ্লিষ্ট আছেন। সেই লাইব্রেরী হইতে নাকি পাক্ষিক পত্র “কাজের কথা’ বাহির হইবে। এই সব কর্ম-তৎপরতার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি, বুঝা যাইতেছে না। একটা খামখেয়ালীর ভাব সর্বত্র বিরাজমান। উপরের উদ্ধৃত ইংরেজী অংশগুলির ভাষা, শব্দ-বিন্যাস এবং ব্যাকরণ রীতির মধ্যেও যথেষ্ট চন্দ্রালোকের ছাপ পড়িয়াছে। আবুল হাসানাৎ সাহেব বাংলা ব্যাকরণকে মানেন না বলিয়া ইংরাজী ব্যাকরণকেও বৃদ্ধাংগুলি দেখাইয়াছেন দেখিতেছি, প্রথম চিঠির শেষোক্ত প্যারাই তার প্রমাণ। তাঁর মত বিচক্ষণ ব্যক্তির নিকট হইতে আমরা অধিকতর শালীনতা আশা করি।
এই প্রসংগে পূর্ব-পাক গভর্ণমেণ্টের নিকটও আমাদের আরজ, জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেবকে পুলিশের ডিআইজি, পদ হইতে অপসারিত করিয়া ভাষা সংস্কারে ও গণশিক্ষার ডি,আই,জি, পদে নিযুক্ত করুন। তাঁহার স্বাভাবিক প্রতিভা যখন এই দিকেই রহিয়াছে, তখন তাঁহাকে কেন অনর্থক ডি,আই,জি পদের গুরুদায়িত্ব দিয়ো আটক রাখা হয়? ইহার ফলে তাঁহার নিজের সরকারী কাজও তিনি ভালভাবে করিতে পারেন না। তবে গভর্ণমেণ্টের পলিসী যদি এমন হয় যে, এক পদে থাকিয়া অন্য পদের কাজ যিনি যত করিতে পরিবেন, তিনি ততই সুযোগ্য কর্ম্মচারী বলিয়া বিবেচিত হইবেন, তাহা হইলে আমাদের আর কোন আপত্তির কারণ রহিবে না। তখন শিক্ষাবিভাগের ডিরেক্টর হইবেন এমন ব্যক্তি যিনি লেখাপড়া জানেন না। শিক্ষা বিভাগের সেক্রেটারীর কাজ হইবে নাটক লেখা, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাজ হইবে সাহিত্য ও কাব্য লইয়া রসালাপ করা, ইনকামট্যাক্স অফিসারের কাজ হইবে মাসিক পত্র বাহির করা, আর পুলিশের কাজ হইবে ভাষা সংস্কার করা। সেই রূপ পাবলিসিটি ডিপার্টমেণ্টএর কাজ হইবে কোন কিছু পাবলিশ না করা। এরূপ হইরে আমাদের কিছুই বলিবার নাই।
গভর্ণমেণ্টের নিকট আমরা জানিতে চাই জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেবের এই সব কার্য্যের পশ্চাতে তাঁহাদের কোন সম্মতি (চেংসান) আছে কিনা। যদি থাকে, তবে নিশ্চয়ই আমরা জনাব হাসানাৎ সাহেবের নির্দেশ মানিয়া চলিব এবং অচিরেই ২-৪ জন কম্পোজিটার পাঠাইয়া দিব- যাহাতে নূতন হরফে ও বানান অনুযায়ী মাত্র তিন দিন কম্পোজিং শিখিয়া আসিয়াই নির্ভুলভাবে পুরাতন রীতি অনুসারেই তাহারা কম্পোজ করিতে পারে। কি অপূর্ব তেলেছমাৎ, কিন্তু আমাদের মনে হয়, কম্পোজিটারেরা ইহাতে রাজী হইবে না। ভুল বানান নির্ভুলভাবে শিখিবার ভুল তাহারা কেন করিবে?