বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড)/৫৭
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
---|---|---|
যুব দাবী দিবস উপলক্ষে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের রাজনৈতিক ঘোষণা | পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ | ২৭শে মার্চ, ১৯৫২ |
“যুব দাবী দিবসে”
পূর্ব পাক যুবলীগের ঘোষণা
আমরা পাকিস্তানের যুবসমাজ আজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিষম সঙ্কটের সম্মুখীন হইয়াছি। পাকিস্তান কায়েম হইবার পর আমরা পাকিস্তানের সকল শ্রেণী যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী আশা করিয়াছিলাম যে, ইংরেজ শোষকদের হাত হইতে মুক্ত হইয়া আমাদের সোনার দেশ আবার ধনেধান্যে শিক্ষায়-শিল্পে সমৃদ্ধ হইয়া উঠিবে, আজ সাড়ে চারি বৎসরের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখিতেছি সে আশা সম্পূর্ণ ধুলিসাৎ হইয়াছে। এই সঙ্কটময় জীবনের অবসানকল্পে সমাজের সকল শ্রেণীর যুবক-যুবতীদের নিম্নলিখিত ১৪ দফা দাবীর ভিত্তিতে পূর্ব-পাক যুবলীগ ঐক্যবদ্ধ করার সঙ্কল্প নিয়াছে। ঠিক এক বৎসর পূর্বে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের যুবসমাজকে এক সংস্থায় সংঘবদ্ধ করার আহ্বান নিয়া যুবলীগের জন্ম হয়। আজিকার “যুব দাবী দিবসে” আমরা যুবলীগের সেই ১৪ দফা দাবীগুলিই জনসম্মুখে পেশ করিতেছিঃ
১। সর্বপ্রথম আমরা দুনিয়ার যুবসমাজের সহিত কণ্ঠ মিলাইয়া ঘোষণা করিতেছি, আমরা মানবতাবিরোধী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধ চাই না; এবং সকল প্রকার মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রের ধ্বংস দাবী করি। আমাদের সাধের পাকিস্তানকে শান্তির মধ্যেই উন্নত করিতে পারিব। তাই দুনিয়ার মানুষের উন্নতিকে ব্যাহত করিবার ও তাহাদের দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ করিবার যে সাম্রাজবাদী চক্রান্ত তাহাকে আমরা যে কোন মূল্যেই প্রতিহত করার শপথ লইতেছি।
২। আমরা চাই পাকিস্তান বৃটিশ কমনওয়েলথ হইতে মুক্ত হইয়া একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রে পরিণত হউক এবং প্রত্যেকটি ভাষাভাষী প্রদেশের অধিবাসীদের স্বায়ত্তশাসন এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা কায়েম হউক এবং বাংলাকেও পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দেওয়া হউক।
৩। আমরা চাই, বেকারীর অবসান, এবং প্রত্যেকের সৎভাবে জীবিকার্জনের নিশ্চয়তা।
৪। আমরা চাই, প্রাপ্তবয়স্কের সার্বজনীন ভোটাধিকার এবং যুক্ত নির্বাচন।
৫। আমরা চাই, সমস্ত নারী ও পুরুষের নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং যুদ্ধ খাতে ব্যয় কমাইয়া শিক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধিকরণ।
৬। আমরা চাই যুবসমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক মান উন্নয়ন এবং যুবক-যুবতীদের জন্য প্রচুর ক্লাব, লাইব্রেরী ও খেলাধুলার সুবন্দোবস্ত।
৭। আমরা চাই জনসাধারণের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সরকার কর্তৃক প্রচুর ব্যয় বরাদ্দ ও যথেষ্ট চিকিৎসালয় ও ব্যায়মাগার নির্মাণ।
৮। আমরা চাই বিনা খেসারতে জমিদারী, জায়গীরদারী প্রথার উচ্ছেদ ও কৃষকের হাতে জমি।
৯। আমরা চাই শ্রমিকের জীবিকা ধারণের উপযুক্ত মজুরী ও ৮ ঘণ্টা হিসাবে সপ্তাহে ৪৪ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ।
১০। আমরা চাই সমস্ত বিদেশী মূলধন বাজেয়াপ্ত ও বড় শিল্পগুলির জাতীয়করণ।
১১। আমরা চাই যুবসমাজের জন্য সামরিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও অস্ত্র রাখার অধিকার।
১২। আমরা চাই সমস্ত দাসত্বমূলক আইনের প্রত্যাহার, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি এবং সকল শ্রেণীর জনসাধারণের সভাসমিতি ও মতামত ব্যক্ত করার ভিত্তিতে ব্যক্তির পূর্ণ স্বাধিকার।
১৩। আমরা চাই, সকলের নিজ নিজ ধর্ম পালন করার পূর্ণ অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা।
১৪। আমরা চাই, পাকিস্তান হইতে সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা ও প্রাদেশিকতার অবসান।
উপরোক্ত দাবীগুলি পাকিস্তানের দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি যুবক-যুবতীর দাবী। উপরোক্ত মৌলিক দাবীগুলি কায়েম করিতে পারিলেই দেশের সকল প্রকার যুবসমাজের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির নিশ্চয়তা হইবে এবং পূর্ববঙ্গ তথা সারা পাকিস্তান ধনে, জনে, শিল্পে ও শিক্ষায় সমৃদ্ধ হইয়া উঠিবে।