বাংলা শব্দতত্ত্ব/প্রতিশব্দ
প্রতিশব্দ
১
ইংরেজি ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার একটা কারবার চলিয়াছে। সেই কারবার সূত্রে বিশ্বের হাটে আমাদের ভাবের লেনা-দেনা ঘটিতেছে। এই লেনা-দেনায় সব চেয়ে বিঘ্ন ভাষায় শব্দের অভাব। একদিন আমাদের দেশের ইংরেজি পড়ুয়ারা এই দৈন্য় দেখিয়া নিজের ভাষার প্রতি উদাসীন ছিলেন। তাঁহারা ইংরাজিতেই লেখাপড়া শুরু করিয়াছিলেন।
কিন্তু বাংলাদেশের বড়ো সৌভাগ্য এই যে, সেই বড়ো দৈন্যের অবস্থাতেও দেশে এমন সকল মানুষ উঠিয়াছিলেন যাঁহারা বুঝিয়াছিলেন বাংলা ভাষার ভিতর দিয়া ছাড়া দেশের মনকে বলবান করিবার কোনো উপায় নাই। তাঁহারা ভরসা করিয়া তখনকার দিনের বাংলা ভাষায় গ্রাম্য হাটেই বিশ্বসম্পদের কারবার খুলিয়া বসিলেন। সেই কারবারের মূলধন তখন সামান্য ছিল কিন্তু আশা ছিল মস্ত। সেই আশা দিনে দিনেই সার্থক হইয়া উঠিতেছে। আজ মূলধন বাড়িয়া উঠিয়াছে— আজ শুধু কেবল আমাদের আমদানির হাট নয়― রফ্তানিও শুরু হইল।
ইহার ফল হইয়াছে এই যে বাংলা দেশ, ধনের বাণিজ্যে যথেষ্ট পিছাইয়া আছে বটে কিন্তু ভাবের বাণিজ্যে বাংলাদেশ ভারতের অন্যান্য প্রদেশকে ছাড়াইয়া গেল। মাদ্রাজে যখন গিয়াছিলাম তখন একটা প্রশ্ন বারবার অনেকের কাছেই শুনিয়াছি―“মৌলিন্যে[১] বাংলাদেশ আমাদের চেয়ে এত অগ্রসর হইল কেন?” তাহার সব কারণ স্পষ্ট করিয়া নির্দেশ করা সহজ নহে। কিন্তু অন্তত একটা কারণ এই যে, বাঙালির ছেলেমেয়ে শিশুকাল হইতেই বাংলা সাহিত্য হইতে তাহাদের মনের খোরাক পাইয়া আসিতেছে। অধিক বয়সে যে পর্যন্ত না ইংরেজি শেখে সে পর্যন্ত তাহার মন উপবাসী থাকে না।
আজ পর্যন্ত আমাদের ভাষা প্রধানত ধর্মসাহিত্য এবং রসসাহিত্য লইয়াই চলিয়া আসিতেছে। দর্শন বিজ্ঞান প্রভৃতির আলোচনায় যে-সকল শব্দের দরকার তাহা আমাদের ভাষায় জমে নাই। এইজন্য আমাদের ভাষায় শিক্ষার উচ্চ অঙ্গ কানা হইয়া আছে।
কিন্তু কেবল পরিভাষা নহে, সকলপ্রকার আলোচনাতেই আমরা এমন অনেক কথা পাই যাহা ইংরেজি ভাষায় সুপ্রচলিত, অথচ যাহার ঠিক প্রতিশব্দ বাংলায় নাই। ইহা লইয়া আমাদের পদে পদেই বাধে। আজিকার দিনে সেসকল কথার প্রয়োজন উপেক্ষা করিবার জো নাই। এইজন্য শান্তিনিকেতন পত্রে আমরা মাঝে মাঝে এ সম্বন্ধে আলোচনা করিব। আমরা প্রতিশব্দ বানাইবার চেষ্টা করিব― তাহা যে সাহিত্যে চলিবে এমন দাবি করিব না, কেবল তাহার যাচাই করিতে ইচ্ছা করি। আমি চাই আমাদের ছাত্র ও অধ্যাপকেরা এ সময়ে কিছু ভাবিবেন। কোনো শব্দ যদি পছন্দ না হয়, বা আর-একটা শব্দ যদি তাঁহাদের মাথায় আসে, তবে এই পত্রে তাহা জানাইবেন।
ইংরেজি Nation[২] কথাটার আমরা প্রতিশব্দরূপে ‘জাতি’ কথাটা ব্যবহার করি। নেশান শব্দের মূল ধাতুগত অর্থ জাতি শব্দের সঙ্গে মেলে। যাহাদের মধ্যে জন্মগত বন্ধনের ঐক্য আছে তাহারাই নেশন। তাহাদিগকেই আমরা জাতি বলিতে পারিতাম কিন্তু আমাদের ভাষায় জাতি শব্দ একদিকে অধিকতর ব্যাপক, অন্য দিকে অধিকতর সংকীর্ণ। আমরা বলি পুরুষজাতি, স্ত্রীজাতি, মনুষ্যজাতি, পশুজাতি ইত্যাদি। আবার ব্রাহ্মণ শূদ্রের ভেদও জাতিভেদ। এমন স্থলে নেশনের প্রতিশব্দরূপে জাতি শব্দ ব্যবহার করিলে সেটা ঠিক হয় না। আমি নেশন শব্দের প্রতিশব্দ ব্যবহার না করিয়া ইংরেজি শব্দটাই চালাইবার চেষ্টা করিয়াছি।
ইংরেজি Nation, race, tribe, caste, genus, species― এই ছয়টা শব্দকেই আমরা জাতি শব্দ দিয়া তর্জমা করি। তাহাতে ভাষার শৈথিল্য ঘটে। আমি প্রতিশব্দের একটা খসড়া নিম্নে লিখিলাম― এ সম্বন্ধে বিচার প্রার্থনা করি।
Nation―অধিজাতি। National―আধিজাতিক। Nationalism—আধিজাত্য।
Race―প্রবংশ। Race preservation―প্রবংশ রক্ষা।
Tribe―জাতি সম্প্রদায়।
Caste―জাতি, বর্ণ।
Genus এবং speciesকে যথাক্রমে মহাজাতি ও উপজাতি নাম দেওয়া যাইতে পারে।
আষাঢ় ১৩২৬
২
প্রতিশব্দ সম্বন্ধে আষাঢ়ের শান্তিনিকেতনে যে প্রবন্ধ বাহির হইয়াছিল সে সম্বন্ধে পাঠকদের কাছ হইতে আলোচনা আশা করিয়াছিলাম। কিন্তু এখনো কাহারো কাছ হইতে কোনো সাড়া মেলে নাই। কিন্তু এসব কাজ একতরফা হইলে কাঁচা থাকিয়া যায়। যে-সকল শব্দকে ভাষায় তুলিয়া লইতে হইবে তাহাদের সম্বন্ধে বিচার ও সম্মতির প্রয়োজন।
আমি নিজেই বলিয়াছি নেশন কথাটাকে তর্জমা না করিয়া ব্যবহার করাই ভালো। ওটা নিতান্তই ইংরেজি, অর্থাৎ ওই শব্দের দ্বারা যে অর্থ প্রকাশ করা হয়, সে অর্থ ইহার আগে আমরা ব্যবহার করি নাই। এমন-কি, ইংরেজিতেও নেশনের সংজ্ঞা নির্ণয় করা শক্ত।
সেইজন্যই বাংলায় প্রচলিত কোনো শব্দ নেশনের প্রতিশব্দরূপে ব্যবহার করিলে কিছুতেই খাপ খাইবে না। “জাতি” কথাটা ওই অর্থে আজকাল আমরা ব্যবহার করি বটে কিন্তু তাহাতে ভাষার ঢিলামিকে প্রশ্রয় দেওয়া হইতেছে। বরঞ্চ সাহিত্য ইতিহাস সংগীত বিদ্যালয় প্রভৃতি শব্দ-সহযোগে যখন আমরা ‘জাতীয়’ বিশেষণ প্রয়োগ করিয়া থাকি তখন তাহাতে কাজ চলিয়া যায়—কারণ ওই বিশেষণের অন্য কোনো কাজ নাই। সেইজন্যই ‘জাতীয়’ বিশেষণ শব্দটি ন্যাশনল শব্দের প্রতিশব্দরূপে এমনি শিকড় গাড়িয়া বসিয়াছে যে, উহাকে আর উৎপাটিত করিবার জো নাই। কিন্তু কোনো বৈজ্ঞানিক গ্রন্থে যদি nation, race, tribe, clan শব্দের বিশেষত্ব নির্দেশ করার প্রয়োজন ঘটে তবে বিপদে পড়িতে হইবে। সুতরাং নেশন ও ন্যাশনাল কথাটা বাংলায় জাতে তুলিয়া লওয়া কর্তব্য মনে করি। এমন বিস্তর বিদেশী কথা বাংলায় চলিয়া গেছে।
এই ‘জাতি’ শব্দের প্রসঙ্গে আর-একটি শব্দ মনে পড়িতেছে যাহার একটা কিনারা করা আশু আবশ্যক। কোনো বিশেষকালে-জাত সমস্ত প্রজাকে ইংরেজিতে generation বলে। বর্তমান অতীত বা ভাবী জেনেরেশন সম্বন্ধে যখন বাংলায় আলোচনার দরকার হয় তখন আমরা পাশ কাটাইয়া যাই। কিন্তু বিঘ্ন দূর না করিয়া বিঘ্ন এড়াইয়া চলিলে ভাষার দুর্বলতা ঘোচ না।
বস্তুত বাংলায় ‘প্রজা’ কথার অন্য অর্থ যদি চলিত না থাকিত তবে ওই কথাটি ঠিক কাজে লাগিত। বর্তমানে যাহারা জাত তাহাদিগকে বর্তমানকালের প্রজা, অতীতকালে যাহারা জাত তাহাদিগকে অতীত কালের প্রজা বলিলে কোনো গোল হইত না। কিন্তু এখন আর উপায় নাই।
‘জন’ কথাটারও ওই রকমেরই অর্থ। জন্ম শব্দের সঙ্গেই উহার যোগ। কিন্তু উহার প্রচলিত অর্থটি প্রবল, অন্য কোনো অর্থে উহাকে খাটানো চলিবে না।
অতএব প্রজা এবং জন এই কথার মাঝামাঝি একটা কথা যদি পাওয়া যায় তাহা হইলে সেটা ব্যবহারে লাগানো যায়। যথা প্রজন। মনুতে স্ত্রীলোকের বর্ণনাস্থলে আছে ‘প্রজনার্থং মহাভাগাঃ পূজার্হ গৃহদীপ্তয়ঃ। অর্থাৎ প্রজনের জন্য স্ত্রীজাতি পুজনীয়া। ইংরেজি ভাষায় generation শব্দের অন্য যে-অর্থ আছে অর্থাৎ জন্মদান করা, এই প্রজনের সেই অর্থ। কিন্তু পূর্বকথিত অর্থে এই শব্দ ব্যবহার করিলে কানে খারাপ লাগিবে না। প্রজন শব্দটা প্রথমে বুঝিতে হয়তো গোল ঠেকিবে, উহার বদলে যদি ‘প্রজাত’ শব্দ ব্যবহার করা হয় তাহা হইলে অপেক্ষাকৃত সহজে বুঝা যাইবে। এ সম্বন্ধে পাঠকদের মত জানিতে চাই।
আমার ‘প্রতিশব্দ’ প্রবন্ধ উপলক্ষে একটিমাত্র বিতর্ক উঠিয়াছে। সেটা ‘মৌলীন্য’ কথা লইয়া। Originality শব্দের যে প্রতিশব্দ আজকাল চলিতেছে সেটা ‘মৌলিকতা’। সেটা কিছুতেই আমার ভালো লাগে নাই। কারণ ‘মৌলিক’ বলিলে সাধারণত বুঝায় মূলসম্বন্ধীয়— ইংরেজিতে radical বলিতে যাহা বুঝায়। যথা, radical change—মৌলিক পরিবর্তন। আপনাতেই যাহার মুল, তাহাকে মৌলিক বলিলে কেমন বেখাপ শোনায়। বরং নিজমূলক বলিলে চলে। কখনো কখনো আমি ‘স্বকীয়তা’ শব্দ Originality অর্থে ব্যবহার করিয়াছি। কিন্তু সর্বত্র ইহা খাটে না। বিশেষ কাব্যকে স্বকীয় কাব্য বলা চলে না। মৌলিক কাব্য বলিলেও যে সুশ্রাব্য হয় তাহা নহে, তবু চোখ কান বুজিয়া সেটাকে কণ্ঠস্থ করা যায়।
এইজন্যই কুলীন শব্দে যেমন কুলগৌরব প্রকাশ করে তেমনি মূলীন শব্দে মূল গৌরব প্রকাশ করিবে এই মনে করিয়াই ওই কথাটাকে আশ্রয় করিয়াছিলাম। কিন্তু শাস্ত্রীমহাশয় বলিয়াছেন কুলীন শব্দ ব্যাকরণের যে-বিশেষ নিয়মে উৎপন্ন মূলীন শব্দে সে নিয়ম খাটে না। শুনিয়া ভয় পাইয়াছি। ভুল পুরাতন হইয়া গেলে বৈধ হইয়া উঠে, নূতন ভুলের কৌলীন্য নাই বলিয়াই ভাষায় তাহা পঙ্ক্তি পায় না। বাংলায় সংস্কৃত ব্যাকরণের ব্যভিচার অনেক চলিয়াছে; কিন্তু আজকালকার দিনে পূর্বের চেয়ে পাহারা কড়াক্কড় হওয়ায় সে সম্ভাবনা আর নাই। অতএব জাতমাত্রই মৌলীন্য শব্দের অন্ত্যেষ্টি সৎকার করা গেল।
ভাদ্র ১৩২৬
৩
বাংলায় ‘অপুর্ব’ শব্দ বিশেষ অর্থে প্রচলিত হইয়াছে।[৩] ‘অপূর্ব সৌন্দর্য’ বলিতে আমরা original beauty বুঝি না। যদি বলা যায় কবিতাটি অপূর্ব তাহা হইলে আমরা বুঝি তাহার বিশেষ একটি রমণীয়তা আছে, কিন্তু তাহা যে original এরূপ বুঝি না। ইংরেজিতে যাহাকে original man বলা যায় তিনি চিন্তায় কর্মে বা আচরণে অন্য কাহারো অনুসরণ করেন না। বাংলায় যদি তাঁহাকে বলি ‘লোকটি অপূর্ব’ তাহা হইলে সেটা ঠাট্টার মতো শোনায়। বোধ হয় এরূপ প্রসঙ্গে স্বানুবর্তী ও স্থানুবর্তিতা কথাটা চলিতে পারে। কিন্তু রচনা বা কর্ম সম্বন্ধে ও কথাটা খাটিবে না। ‘আদিম’ শব্দটি বাংলায় যদি ‘primitive’ অর্থে না ব্যবহৃত হইত তাহা হইলে ওই শব্দটির প্রয়োগ এরূপ স্থলে সংগত হইত। বিশেষ কবিতাটি আদিম বা তাহার মধ্যে আদিমতা আছে বলিলে ঠিক ভাবটি বোঝায়। বস্তুত, অপূর্ব=strange, আদিম=original। অপূর্ব সৌন্দর্য=strange beauty, আদিম সৌন্দর্য=original beauty, আদি গঙ্গা=the original Ganges। আদি বুদ্ধ=the original Buddha। আদি জ্যোতি=the original light। অপূর্ব জ্যোতি বলিলে বুঝাইবে, the strange light। আদি পুরুষ=the original ancestor, এরূপ স্থলে অপূর্ব পুরুষ বলাই চলে না।
ভাদ্র ১৩২৬
8
ইংরেজি পারিভাষিক শব্দের বাংলা করিবার চেষ্টা মাঝে মাঝে হইয়াছে। কিন্তু ইংরেজিতে অনেক নিত্যপ্রচলিত সামান্য শব্দ আছে বাংলায় তাহার তর্জমা করিতে গেলে বাধিয়া যায়। ইংরেজি ক্লাসে বাংলায় ইংরেজি ব্যাখ্যা করিবার সময় পদে পদে ইহা অনুভব করি। ইহার একটা কারণ, তর্জমা করিবার সময় আমরা স্বভাবতই সাধু ভাষার সন্ধান করিয়া থাকি, চলিত ভাষায় যে-সকল কথা অত্যন্ত পরিচিত সেইগুলিই হঠাৎ আমাদের মনে আসে না। চলিত ভাষা লেখাপড়ার গণ্ডির মধ্যে একেবারেই চলিতে পারে না এই সংস্কারটি থাকাতেই আমাদের মনে এইরূপ বাধা ঘটিয়াছে। ‘আমার পরে তাহার sympathy নাই’ ইহার সহজ বাংলা ‘আমার পরে তাহার দরদ্ নাই’, কিন্তু চলিত বাংলাকে অপাঙ্ক্তেয় ঠিক করিয়াছি বলিয়া ক্লাসে বা সাহিত্যে উহার গতিবিধি বন্ধ। এইজন্য ‘সহানুভূতি’ বলিয়া একটা বিকট শব্দ জোর করিয়া বানাইতে হইয়াছে; এই গুরুভার শব্দটা ভীমের গদার মতো, ইহাকে লইয়া সর্বদা সাধারণ কাজে ব্যবহার করিতে গেলে বড়োই অসংগত হয়।[৪]
দরদ কথাটা ঘর-গড়া নয়, ইহা সজীব, এইজন্য ইহার ব্যবহারের বৈচিত্র্য আছে। ‘লোকটা দরদী’ বলিলেই কথাটার ভাব বুঝিতে বিলম্ব হয় না—কিন্তু ‘লোকটা সহানুভব’ বলিলে কী যে বলা হইল বোঝাই যায় না, যদিচ মহানুভব কথাটা চলিত আছে। আমরা বলি, ওস্তাদজি দরদ দিয়া গান করেন, ইংরেজিতে এ স্থলে sympathy শব্দের ব্যবহার আছে কিন্তু ‘সহানুভূতি দিয়া গান করেন’ বলিলে মনে হয় যেন ওস্তাদজি গানের প্রতি বিষম একটা অত্যাচার করেন।
আসল কথা, অনুভূতি শব্দটা বাংলায় নূতন আমদানি, এইজন্য উহার পরে আমাদের দরদ জন্মে নাই। এইজন্যই ‘সহানুভূতি’ শব্দটা শুনিলে আমাদের হৃদয় তখনি সাড়া দেয় না। এই কথাটা কাব্যে, এমন-কি, মেঘনাদবধের সমান ওজন কোনো মহাকাব্যেও, ব্যবহার করিতে পারেন এমন দুঃসাহসিক কেহ নাই। অনুভূতি কথাটা যেমন নূতন, বেদনা কথাটা তেমনি পুরাতন। এইজন্য সমবেদনা কথাটা কানে বাজে না। যেখানে দরদ শব্দটা খাপ খায় না সেখানে আমি ‘সমবেদনা’ শব্দ ব্যবহার করি, পারৎপক্ষে ‘সহানুভূতি’ ব্যবহার করি না।
তর্জমা করিবার সময় একটা জিনিস আমরা প্রায় ভুলিয়া যাই। প্রত্যেক ভাষায় এমন কোনো কোনো শব্দ থাকে যাহার নানা অর্থ আছে। আমাদের ‘ভাব’ কথাটা, কোথাও বা idea, কোথাও বা thought, কোথাও বা feeling, কোথাও suggestion, কোথাও বা gist। ভাব কথাটাকে ইংরেজিতে তর্জমা করিবার সময়ে সকল জায়গাতেই যদি idea শব্দ প্রয়োগ করি তবে তাহা অদ্ভুত হইবে। ‘এই প্রস্তাবের সহিত আমাদের সহানুভূতি আছে’ এরূপ বাক্য প্রয়োগ আমরা মাঝে মাঝে শুনিয়াছি। ইহা ইংরেজি ভাষাব্যবহারের নকল, কিন্তু বাংলায় ইহা অত্যন্ত অসংগত। এ স্থলে ‘এই প্রস্তাবে আমাদের সম্মতি আছে’ বলা যায়। কারণ, প্রস্তাবের অনুভূতি নাই, সুতরাং তাহার সহিত সহানুভূতি চলে না। অতএব একভাষায় যেখানে একশব্দের দ্বারা নানা অর্থ বোঝায় অন্য ভাষায় তাহার এক প্রতিশব্দ হইতেই পারে না।
গতবারের শান্তিনিকেতনে originality শব্দের আলোচনাস্থলে আমরা ইহার প্রমাণ পাইয়াছি। কোনো একজন মানুষের originality আছে এই ভাব ব্যক্ত করিবার সময়ে তাঁহার স্বানুবর্তিতা আছে বলা চলে না, সে স্থলে ‘আদিমতা’ আছে বলিলে ঠিক হয়; যে কবিতা হইতে আর-একটি কবিতা তর্জমা করা হইয়াছে সেই কবিতাকে মূল কবিতা বলিতে হইবে। যে কবিতায় বিশেষ অসামান্যতা আছে, তাহাকে অনন্যতন্ত্র কবিতা বলা চলে। ইহার উপযুক্ত সংস্কৃত কথাটি ‘স্বতন্ত্র’— কিন্তু বাংলায় অন্য অর্থে তাহার ব্যবহার। বস্তুত আমার মনে হয়, কি মানুষ সম্বন্ধে কি মানুষের রচনা সম্বন্ধে উভয় স্থলেই অনন্যতন্ত্র শব্দের ব্যবহার চলিতে পারে।
একটি অত্যন্ত সহজ কথা লইয়া বাংলা ভাষায় আমাদিগকে প্রায় দুঃখ পাইতে হয়― সে কথাটি feeling। Feeling-এর একটা অর্থ বোধশক্তি―ইহাকে আমরা ‘অনুভূতি’ শব্দের দ্বারা প্রকাশ করিতেছি। আর-একটি অর্থ হৃদয়বৃত্তি। কিন্তু হৃদয়বৃত্তি শব্দটা পারিভাষিক। সর্বদা ব্যবহারে ইহা চলিতে পারে না। অনেক সময়ে কেবলমাত্র ‘হৃদয়’ শব্দের দ্বারা কাজ চালানো যায়; যেখানে ইংরাজিতে বলে ‘feeling উত্তেজিত হইয়াছে’ সেখানে বাংলায় বলা চলে, ‘হৃদয়’ উত্তেজিত হইয়াছে। যে মানুষের feeling আছে তাহাকে সহৃদয় বলি। ‘করি এই কবিতায় যে feeling প্রকাশ করিয়াছে’ এরূপ স্থলে feeling-এর প্রতিশব্দ স্বরূপে হৃদয়ভাব বলা যায়। শুধু ‘ভাব’ও অনেক সময়ে feeling-এর প্রতিশব্দরূপে চলে। Emotion শব্দটি বাংলায় তর্জমা করিবার সময় আমি বরাবর ‘আবেগ’ ও ‘হৃদয়াবেগ’ শব্দ ব্যবহার করিয়া আসিয়াছি। যাঁহারা সংস্কৃত জানেন তাঁহাদের কাছে আমার প্রশ্ন এই যে, সংস্কৃত ভাষায় পারিভাষিক ও সহজ অর্থে ‘feeling’ শব্দের কোন্ কোন্ প্রতিশব্দ ব্যবহৃত হয়?
ইংরেজি culture শব্দের বাংলা লইয়া অনেক সময় ঠেকিতে হয়।[৫] ‘learning’ এবং ‘culture’ শব্দের মধ্যে যে পার্থক্য আছে তাহা সংস্কৃত কোন্ শব্দের দ্বারা বোঝায় আমি ঠিক জানি না। ‘বৈদগ্ধ্য’ শব্দের অর্থ ঠিক culture বলিয়া আমার বোধ হয় না। Culture শব্দে যে ভাব প্রকাশ হয় তাহা বাংলায় ব্যবহার না করিলে একেবারেই চলিবে না। একটি বিশেষ স্থলে আমি প্রথমে ‘চিত্তোৎকর্ষ’ শব্দ ব্যবহার করিয়াছিলাম; কারণ culture শব্দের মতোই ‘উৎকর্ষ’ শব্দের মধ্যে কর্ষণের ভাব আছে। পরে আমি ‘চিত্তোৎকর্ষের’ পরিবর্তে ‘সমুৎকর্ষ’ শব্দটি গ্রহণ করিয়াছিলাম। আমার জিজ্ঞাস্য এই যে, শুধু ‘উৎকর্ষ’ শব্দ এই বিশেষ অর্থে চালানো যায় কি না। cultured mind-এর বাংলা করা যাইতে পারে প্রাপ্তোৎকর্ষ-চিত্ত’। ভালো শোনায় যে তাহা নহে। ‘উৎকর্ষিত’ চিত্ত বলা যাইতে পারে; মানুষ সম্বন্ধে ব্যবহারের বেলায় ‘উৎকর্ষ-বান’ লোক বলিলে ক্ষতি হয় না। উৎকৃষ্ট বিশেষণ শব্দটি হাতছাড়া হইয়া গিয়াছে। যেমন ‘learning’ এবং ‘culture’ তেমনি ‘knowlegde’ এবং ‘wisdom’-এর প্রভেদ আছে। কোন্ কোন্ শব্দের দ্বারা সেই প্রভেদ নির্ণীত হইবে তাহার উত্তরের অপেক্ষা করিয়া রহিলাম।
কিছুদিন হইল আর-একটি ইংরেজি কথা লইয়া আমাকে ভাবিতে হইয়াছিল। সেটি ‘degeneracy’, আমি তাহার বাংলা করিয়াছিলাম আপজাত্য। যাহার আপজাত্য ঘটিয়াছে সে অপজাত (degenerate)। প্রথমে জননাপকর্ষ কথাটা মনে আসিয়াছিল, কিন্তু সুবিধামত তাহাকে বিশেষণ করা যায় না বলিয়া ছাড়িয়া দিতে হইল। বিশেষত অপ উপসর্গই যখন অপকর্ষবাচক তখন কথাটাকে বড়ো করিয়া তোলা অনাবশ্যক।
এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করি genetics নামে যে নূতন বিজ্ঞানের উদ্ভব হইয়াছে তাহাকে কি প্রজনতত্ত্ব নাম দেওয়া যাইতে পারে? আমি eugenics শব্দের বাংলা করিয়াছি সৌজাত্যবিদ্যা।
এই প্রজনতত্ত্বের একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় heredity। বাংলায় ইহাকে বংশানুগতি এবং inherited শব্দকে বংশানুগত বলা চলে। কিন্তু inheritanceকে কী বলা যাইবে? বংশাধিকার অথবা উত্তরাধিকার? inheritable—বংশানুলোম্য।
Adaptation শব্দকে আমি অভিযোজন নাম দিয়াছি। নিজের surroundings-এর সহিত adaptation— নিজের পরিবেষ্টনের সহিত অভিযোজন। Adaptability—অভিযুজ্যতা। Adaptable—অভিযোজ্য। Adapted—অভিযোজিত।
আশ্বিন-কার্তিক ১৩২৬
৫
কয়েকটি ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দ স্থির করিয়া দিবার জন্য অনুরোধ করিয়া একজন পত্র লিখিয়াছেন।
১ প্রশ্ন। I envy you your interest in art। এখানে interest শব্দের অর্থ কী?
উত্তর। বলা বাহুল্য interest শব্দের অনেকগুলি ভিন্ন অর্থ আছে। বাংলায় তাহাদের জন্য পৃথক শব্দ ব্যবহার করিতে হইবে। এখানে উক্ত ইংরেজি শব্দের স্থলে বাংলায় ‘অনুরক্তি’ শব্দ ব্যবহার করা চলে।
২ প্রশ্ন। Attention is either spontaneous or reflex। এখানে spontaneous ও reflex শব্দের প্রতিশব্দ কী হওয়া উচিত?
উত্তর। Spontaneous―স্বতঃসৃত। Reflex―প্রতিক্ষিপ্ত।
৩ প্রশ্ন। Forethought-এর প্রতিশব্দ কী?
উত্তর। প্রসমীক্ষা, প্রসমীক্ষণ, পূর্ব-বিচারণা।
8 প্রশ্ন। ‘By suggestion I can cure you’. ‘The great power latent in this form of suggestiveness is wellknown’. Suggestion ও suggestiveness -এর প্রতিশব্দ কী?
উত্তর। সাধারণত বাংলায় suggestion ও suggestiveness-এর প্রতিশব্দ ব্যঞ্জনা ও ব্যঞ্জনাশক্তি চলিয়া গিয়াছে। কোনাে বিশেষ বাক্যপ্রয়ােগে শব্দার্থের অপেক্ষা ভাবার্থের প্রাধান্যকে ব্যঞ্জনা বলা হয়। কিন্তু এখানে ‘suggestion’ শব্দ দ্বারা বুঝাইতেছে, আভাসের দ্বারা একটা চিন্তা ধরাইয়া দেওয়া। এ স্থলে ‘সূচনা’ ও ‘সূচনাশক্তি’ শব্দ ব্যবহার করা যাইতে পারে।
৫ প্রশ্ন। ‘Instinct similar to the action inspired by suggestion’ ইহার অনুবাদ কী?
উত্তর। সুচনার দ্বারা প্রবর্তিত যে মানসিক ক্রিয়া তাহারই সমজাতীয় সহজ প্রবৃত্তি।
বলা বাহুল্য আমাদের পত্রে আমরা যে প্রতিশব্দের বিচার করি তাহা পাঠকদের নিকট হইতে তর্ক-উদ্দীপন করিবার জন্যই। সকল প্রতিশব্দের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির ক্ষমতা আমাদের নাই।
অগ্রহায়ণ ১৩২৬
৬
কয়েকটি চিঠি পাইয়াছি তাহাতে পত্রলেখকগণ বিশেষ কতকগুলি ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দ জানিতে চাহিয়াছেন। নূতন একটা শব্দ যখন বানানাে যায় তখন অধিকাংশ লােকের কানে খট্কা লাগে। এইজন্য অনেকে দেখি রাগ করিয়া উঠেন। সেইজন্য বার বার বলিতেছি আমাদের যেমন শক্তিও অল্প অভিমানও তেমনি অল্প। কেহ যদি কোন শব্দ না পছন্দ করেন দুঃখিত হইব না। ভাষায় যে-সব ভাবপ্রকাশের দরকার আছে তাহাদের জন্য উপযুক্ত শব্দ ঠিক করিয়া দেওয়া একটা বড়ো কাজ। অনেকে চেষ্টা করিতে করিতে তরে ইহা সম্পন্ন হইবে। আমাদের চেষ্টা যদি এক দিকে ব্যর্থ হয় অন্য দিকে সার্থক হইবে। চেষ্টার দ্বারা চেষ্টাকে উত্তেজিত করা যায়, সেইটেই লাভ। এইজন্যই, কোনো ওস্তাদীর আড়ম্বর না করিয়া আমাদের সাধ্যমত পত্রলেখকদের প্রেরিত ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দ ভাবিয়া বাহির করিবার চেষ্টা করিতেছি।
পূর্ববারে লিখিয়াছি হিপ্নটিজ্ম্ প্রক্রিয়ার অন্তর্গত suggestion শব্দের প্রতিশব্দ ‘সূচনা’। আমরা ভাবিয়া দেখিলাম সূচনা শব্দের প্রচলিত ব্যবহারের সহিত ইহা ঠিক মিল হইবে না। তাই ইংরেজি suggestion-এর স্থলে ‘অভিসংকেত’ শব্দ পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার করিতে ইচ্ছা করি। অভি উপসর্গ দ্বারা কোনো-কিছু অভিমুখে শক্তি বা গতি বা ইচ্ছা প্রয়োগ করা বুঝায়; ইংরেজি towards-এর সহিত ইহার মিল। অভ্যর্থনা, অভিনন্দন, অভিযান, অভিপ্রায় প্রভৃতি শব্দ তাহার প্রমাণ। Auto-suggestion শব্দের প্রতিশব্দ স্বাভিসংকেত হইতে পারে। একজন জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, “আমরা কথায় বলি ‘তোমায় কয়েকটি উপায় suggest করতে পারি’ এ ক্ষেত্রে বাংলায় কি বলিব?” একটা কথা মনে রাখা দরকার, কোনো টাট্কা তৈরি কথা চলিত কথাবার্তায় অদ্ভুত শোনায়। প্রথমে যখন সাহিত্যে খুব করিয়া চলিবে, তখন মুখের কথায় ধীরে ধীরে তাহার প্রবেশ ঘটিবে। ‘অভিসংকেত’ কথাটা যদি চলে তবে প্রথমে বইয়ে চলিবে। “কয়েকটি উপায় অভিসংকেত করা যাইতে পারে” লিখিলে বুঝিতে কষ্ট হইবে না।
উক্ত লেখকই প্রশ্ন করিয়াছেন, “Adaptability-র বাংলা কী হইতে পারে? আমরা পূর্বেই বলিয়াছি, ‘অভিযুজ্যতা’। একজন সংস্কৃতজ্ঞ পাঠক তাঁহার পত্রে জানাইয়াছেন, “উপযোগিতাই ভালো।” উপযোগিতা বলিতে suitability বুঝায়। যাহা উপযুক্ত তাহা স্বভাবতই উপযুক্ত হইতে পারে কিন্তু adapt করা চেষ্টাসাপেক্ষ। ‘অভিযোজিত’ বলিলে সহজেই বুঝায় একটা-কিছুর অভিমুখে যাহাকে যোজনা করা হইয়াছে; যাহা সহজেই যুক্ত তাহার সহিত ইহার বিশেষ প্রভেদ আছে। আর-একজন পণ্ডিত লিখিয়াছেন —‘যোজিত’ অপেক্ষা ‘যুক্ত’ই ব্যাকরণসম্মত। আমরা ব্যাকরণ সামান্যই জানি কিন্তু আমাদের নজির আছে—
পরমে ব্রহ্মণি যোজিত চিত্তঃ
নন্দতি নন্দতি নন্দত্যেব।
প্রশ্ন: Paradox শব্দের বাংলা আছে কি?
নাই বলিয়াই জানি। শব্দ বানাইতে হইবে, ব্যবহারের দ্বারাই তাহার অর্থ পাকা হইতে পারে। বিসংগত সত্য বা বিসংগত বাক্য এই অর্থে চালাইলে চলিতে পারে কি না জিজ্ঞাসা করি।
Parody―ব্যাঙ্গানুকরণ।
Amateur শব্দের একটা চলিত বাংলা ‘অব্যবসায়ী’। কিন্তু ইহার মধ্যে একটু যেন নিন্দার ভাব আছে। তাহা ছাড়া ইহাতে অত্যন্ত দক্ষতার অভাবমাত্র বুঝায় কিন্তু অনুরাগ বুঝায় না। ইংরেজিতে কখনো কখনো সেইরূপ নিন্দার ভাবেও এই শব্দের ব্যবহার হয়, তখন অব্যবসায়ী কথা চলে। অন্য অর্থে শখ শব্দ বাংলায় চলে, যেমন শখের পাঁচালি, শখের যাত্রা। ব্যবহারের সময় আমরা বলি শৌখিন। যেমন শৌখিন গাইয়ে।
প্রশ্নকর্তা লিখিতেছেন, “Violet কথাটার বাংলা কী? নীলে সবুজে মিলিয়া বেগুনি, কিন্তু নীলে লালে মিলিয়া কী?”
আমার ধারণা ছিল নীলে লালে বেগুনি। ভুল হইতেও পারে। সংস্কৃতে violet শব্দের প্রতিশব্দ পাটল বলিয়া জানি।
পত্রলেখক romantic শব্দের বাংলা জানিতে চাহিয়াছেন। ইহার বাংলা নাই এবং হইতেও পারে না। ইংরেজিতে এই শব্দটি নানা সূক্ষ্মভাবে এমনি পাঁচরঙা যে ইহার প্রতিশব্দ বানাইবার চেষ্টা না করিয়া মূল শব্দটি গ্রহণ করা উচিত।
লেখক dilettante শব্দের বাংলা জানিতে চাহিয়াছেন। মোটামুটি পল্লবগ্রাহী বলা চলে। কিন্তু তাহার সঙ্গে সঙ্গে আরো যেসব ভাবের আভাস আছে বাংলা শব্দে তাহা পাওয়া যাইবে না। প্রত্যেক ভাষাতেই এমন বিস্তর শব্দ আছে যাহা তাহার মোটা অর্থের চেয়ে বেশি কিছু প্রকাশ করে। সেইরূপ ফরাসি অনেক শব্দের ইংরেজি একেবারেই নাই। আমার মনে আছে—একদা ভগিনী নিবেদিতা আমার নিম্নলিখিত গানের পদটি দুই ঘণ্টা ধরিয়া তর্জমা করিবার চেষ্টা করিয়া ছাড়িয়া দিয়াছিলেন—
নিশিদিন ভরসা রাখি,
ওরে মন, হবেই হবে।[৬]
প্রথম বাধিল ‘ভরসা’ কথা লইয়া। ভরসা কথার সঙ্গে দুটো ভাব জড়ানো, confidence এবং courage। কিন্তু ইংরেজি কোনো এক শব্দে এই দুটো ভাব ঠিক এমন করিয়া মেলে না। Faith, trust, assurance কিছুতেই না। তার পরে ‘হবেই হবে’ কথাটাকে ঠিক অমন করিয়া একদিকে অস্পষ্ট রাখিয়া আর-এক দিকে খুব জোর দিয়া বলা ইংরেজিতে পারা যায় না। ইংরেজিতে একটু ঘুরাইয়া বলা চলে—
Keep thy courage of Faith, my heart,
And thy dreams will surely come true.
পৌষ ১৩২৬
৭
...Two mindednessকে দ্বৌমানসিকতা বললে কি রকম হয়? কিম্বা Two minded=দ্বৈতমনা, ও Two mindedness=দ্বৈতমানস।···[৭]
৯ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৭
৮
মহান-Sublime
মহিমা-Sublimity
সৌন্দর্য ও মহিমা— এইটেই ভালো লাগ্চে। ভূমা শব্দের অসুবিধা অনেক। কারণ বিশেষ্য বিশেষণ একই হওয়া ব্যবহারের পক্ষে একেবারেই ভালো নয়।···[৮] ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৯
৯
আমার শরীর ও মনের অটুট কুঁড়েমি শেষ নৈস্কর্ম্য রাত্রির পূর্বসন্ধ্যা বলে ধরে নিতে পারো। এই নৈঃশব্দ্যের যুগে আমার কাছে শব্দসৃষ্টির প্রত্যাশা নিয়ে এসেছ, কুণ্ঠিত করেছ আমার লেখনীকে। রচনার প্রসঙ্গে পরিভাষা যখন আপনি এসে পড়ে তখন সেটা মাপসই মানানসই হয়। পা রইল এ পাড়ায় আর জুতো তৈরি হচ্ছে ও পাড়ায় ব্যবহারের পক্ষে এটা অনেক সময়েই পীড়াজনক ও ব্যর্থ হয়। অপর পক্ষে নতুন জুতো প্রথমটা পায়ে আঁট হলেও চলতে চলতে পা তাকে নিজের গরজে আপনার মাপের করে নেয়। পরিভাষা সম্বন্ধেও সেরকম প্রায়ই ঘটে।
Harmony-স্বরসংগম বা স্বরসংগতি।
Concord-স্বরৈক্য
Discord-বিস্বর
Symphony—ধ্বনিমিলন
Symphonic―সংধ্বনিক
সংস্কৃত ধাতুপ্রত্যয় যেখানে সহজে সাড়া না দেয় সেখানে মূল শব্দের শরণ নিয়ো। ভাষায় ম্লেচ্ছ সংস্রবদোষ একদা গর্হিত ছিল। এখন সেদিন নেই―এখন ভাষার অম্নিবাসে ফিরিঙ্গিতে বাঙালিতে ঘেঁষাঘেঁষি বসে।...[৯]
২৪ নভেম্বর ১৯২৭
১০
···আমার মতে “স্বপ্নাঞ্চিত” কথাটা অন্তত এখনো চলনসই হয় নি— রোমাঞ্চিত কথাটার মানে, রোম carved হয়ে ওঠা— আমি তৃণাঞ্চিত কথা ব্যবহার করেচি— সেটা যদিও অচলিত তবু অচলনীয় নয়। মঞ্জীরকে “তিক্ত” বল্লে ভাষায় ফিরিঙ্গি গন্ধ লাগে। ইংরেজিতে bitter কথাটা রসনাকে ছাড়িয়ে হৃদয় পর্যন্ত প্রবেশ করে— বাংলায় “তীব্র” কথাটা স্বাদে এবং ভাবে আনাগোনা করে কিন্তু তিক্ত কথাটাকে অন্তত নূপুরের বিশেষণরূপে চালাবার পূর্বে তোমার কবিযশকে এখনো অনেক দূর সুপ্রতিষ্ঠিত ও পরিব্যাপ্ত করতে হবে। “স্বীকৃতির” পরিবর্তে খ্যাতি বলাই ভালো। “সুগুপ্ত” কথাটা আমার কানে অত্যন্ত পীড়ন সঞ্চার করে। যেখানে গুপ্ত শব্দের সঙ্গে সু বিশেষণের সংগতি আছে সেখানে দোষ নেই। অনেকে খামকা সু-উচ্চ কথা ব্যবহার করে কিন্তু ওতে কেবল ছন্দোরক্ষার অনাচার প্রকাশ পায়।···[১০]
৬ মে ১৯৩১
১১
The Voice কথাটার বাংলা প্রতিশব্দ চাও। বাণী ছাড়া আর কোনো শব্দ মনে পড়ে না। আমাদের ভাষায় আকাশবাণী দৈববাণী প্রভৃতি কথার ব্যবহার আছে। শুধু “বাণী” কথাটিকে যদি যথেষ্ট মনে না কর তবে “মহাবাণী” ব্যবহার করতে পারে।···[১১]
২৭ শ্রাবণ ১৩৩৮
১২
আমার মনে হয় নেশান, ন্যাশনাল প্রভৃতি শব্দ ইংরেজিতেই রাখা ভালো। যেমন অক্সিজেন হাইড্রোজেন। ওর প্রতিশব্দ বাংলায় নেই। রাষ্ট্রজন কথাটা চালানো যেতে পারে। রাষ্ট্রজনিক এবং রাষ্ট্রজনিকতা শুনতে খারাপ হয় না। আমার মনে হয় রাষ্ট্রজনের চেয়ে রাষ্ট্রজাতি সহজ হয়। কারণ নেশন অর্থে জাতি শব্দের ব্যবহার বহুল পরিমাণে চ’লে গেছে। সেই কারণেই রাষ্ট্রজাতি কথাটা কানে অত্যন্ত নতুন ঠেকবে না।
Caste—জাত |
Nation—রাষ্ট্রজাতি |
|
Population—প্রজন[১২]
২২ জানুয়ারি ১৯৩২
১৩
দুরূহ আপনার ফরমাস। Broadcastএর বাংলা চান। আমি কখনো কখনো ঠাট্টায় সুরে বলি আকাশবাণী।[১৩] কিন্তু সেটা ঠাট্টার বাইরে চলবে না।···
সীরিয়াসভাবে যদি বলতে হয় তা হলে একটা নতুন শব্দ বানানো চলে। বলা বাহুল্য পারিভাষিক শব্দ পুরোনো জুতো বা পুরোনো ভৃত্যের মতো―ব্যবহার করতে করতে তার কাছ থেকে পুরো সেবা পাওয়া যায়।
“বাক্প্রসার” শব্দটা যদি পছন্দ হয় টুকে রাখবেন, পছন্দ যদি না হয় তা হলেও দুঃখিত হবো না। ওর চেয়ে ভালো কথা যদি পান তবে তার চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।[১৪]
১ বৈশাখ ১৩৪২
১৪
শরীর ভালো ছিল না, ব্যস্ত ছিলাম, তার উপরে তোমার প্রশ্ন অত্যন্ত কঠিন, যে চারটে শব্দ তর্জমা করতে অনুরোধ করেছ সেগুলি যদি সশ্রম কারাদণ্ডে ব্যবহার করতে দিতে তা হলে তিন-চার মাসের মেয়াদ ভর্তি হতে পারত।
Intellectual friendship শব্দের ভাষান্তরে তোমাদের প্রস্তাব ‘আধিমানসিক মিত্রতাবোধ’। আপত্তি এই, মিত্রতা মানসিক হবে না তো আর কি হতে পারে। মানসিক শব্দের অর্থ intellectual-এর চেয়ে ব্যাপক— বস্তুত ওর ইংরেজী হচ্ছে mental। Intellect-কে বুদ্ধি বললে বোঝা সহজ হয় বুদ্ধিগত বা বুদ্ধিমূলক বা বুদ্ধিপ্রধান মৈত্রী অথবা মৈত্রীবোধ বল্লে কানে খটকা লাগবে না। ওর প্রতিকূল শব্দ হচ্ছে emotional অর্থাৎ ভাবপ্রধান বা হৃদয়প্রধান।
Cultural self শব্দটাকে তর্জমা করা আরো দুঃসাধ্য। তোমাদের প্রস্তাব হচ্ছে ‘আধি সাংস্কৃতিক’। এর ঠিক মানেটা আন্দাজ করা অসম্ভব বললেই হয়। প্রথমত culture শব্দের বাংলা একটি করতে হবে। আমি বলি মনঃপ্রকর্ষ বা চিত্তপ্রকর্ষ বল্লে ভাবখানার একটা ইসারা পাওয়া যায়। Cultured লোককে বলা যেতে পারে প্রকৃষ্টচিত্ত বা প্রকৃষ্টমনা। যদি বলতে হয় অঙ্কশাস্ত্রে তিনি cultured তা হলে বাংলায় বলবে অঙ্কশাস্ত্রে তিনি প্রকর্ষপ্রাপ্ত। অমুক পরিবারে culture-এর atmosphere আছে বলতে হলে বলা যেতে পারে, অমুক পরিবারে মনঃপ্রকর্ষ বা চিত্তপ্রকর্ষের আবহাওয়া আছে। কৃষ্টি কথাটা আমার কানে একটুও ভালো লাগে না। বরঞ্চ উৎকৃষ্টি[১৫] বল্লেও কোনোমতে চলত।
বা হোক আমার মতে cultural self-কে চিত্তপ্রকর্ষগত বা মনঃকর্যগত সত্তা বা ব্যক্তিত্ব বলা যায়। আরো দুটো কথা দিয়েছ intellectual passion, intellectual self। সংরাগ শব্দকে আমি passion অর্থে ব্যবহার করি। অতএব আমার মতে intellectual passion-কে বুদ্ধিগত সংরাগ ও intellectual self-কে বুদ্ধিগত ব্যক্তিত্ব বল্লে ভাবটা বুঝতে বাধবে না।
যাই হোক বহুল ব্যবহার ছাড়া এ-সব শব্দ ভাষায় প্রাণবান হয়ে ওঠে না।
বলা বাহুল্য physical culture-কে বলতে হবে দেহপ্রকর্ষ চর্চা।[১৬]
৪ আষাঢ় ১৩৩৯
১৫
ভূতত্বের পরিভাষা আলোচনা আমার পক্ষে অসাধ্য। Fossil শব্দকে শিলক ও Fossilized-কে শিলীকৃত বলা চলে। Subman-কে অবমানব বললেই ভালো হয়। প্রাতর্ ও প্রত্যুষ শব্দের যোগে যে শব্দ বানিয়েছ কানে অসংগত ঠেকে। প্রাতর্ শব্দের পরিবর্তে প্রথম বা প্রাক্ ব্যবহার করলে চলে না কি, Eolith=প্রাক্প্রস্তর। Eoanthropus=প্রাক্মানব। Eocene=প্রাগাধুনিক
Proterozoic= পরাজৈবিক।[১৭]
৭ কার্তিক ১৩৩৯
১৬
পরিভাষা সংকলনের কাজ আপনি যে নিয়মে চালাচ্ছেন সে আমার অনুমোদিত। আপনার কাজ শেষ হতে দীর্ঘকাল লাগবে। কিন্তু বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক পাঠ্যপুস্তক রচনার কাজে অধিক দেরি করা চলবে না। বই যাঁরা লিখ্বেন তাঁদের মধ্যে যোগ্যতম ব্যক্তিদের হাতেই পরিভাষায় চরম নির্বাচন ও প্রচলন নির্ভর করে; উপস্থিত মতো যথাসম্ভব তাঁদের সাহায্য করবার কাজে আমরা প্রবৃত্ত হয়েছি। ভাষায় সব সময়ে যোগ্যতমের নির্বাচন নীতি খাটে না―অনেক সময়ে অনেক আকস্মিক কারণে অযোগ্য শব্দ টিঁকে যায়। সর্বপ্রধান কারণ হচ্ছে তাড়া― শেষ পর্যন্ত বিচার করবার সময় যখন পাওয়া যায় না তখন আপাতত কাজ সারার মতো শব্দগুলো চিরস্বত্ব দখল করে বসে। আমার মনে হয় যথাসম্ভব সত্বর কাজ করা উচিত— কাজ চলতে চলতে ভাষা গড়ে উঠবে― তখন পারিভাষিক শব্দগুলি অনেক স্থলে প্রথার জোরেই ব্যাকরণ ডিঙিয়ে আপন অর্থ স্থির করে নেবে।[১৮]
২১ আষাঢ় ১৩৪১
১৭
যখন কোনো ইংরেজি শব্দের নূতন প্রতিশব্দ রচনা করতে বসি তখন প্রায় ভুলে যাই যে অনেক সময়ে সে শব্দের ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ হয়। Background, ছবি সম্বন্ধে এক মানে, বিষয় সম্বন্ধে অন্য মানে, আবার কোনো কোনো জায়গায় ওই শব্দে বোঝায় প্রচ্ছন্ন বা অনাদৃত স্থান। পটভূমিকা শব্দটা আমিই প্রথমে যে জায়গায় ব্যবহার করেছিলেম সেখানে তার সার্থকতা ছিল। পশ্চাদ্ভূমিকা বা পৃষ্ঠাশ্রয় হয়তো অধিকাংশ স্থলে চলতে পারে। “শিশিরবাবুর নাটকে গানের অনুভূমিকা বা পশ্চাদ্ভুমিকা” বললে অসংগত শোনায় না। বলা বাহুল্য নতুন তৈরি শব্দ নতুন জুতোর মতো ব্যবহার করতে করতে সহজ হয়ে আসে। “এই নভেলের ঐতিহাসিক পশ্চাদ্ভুমিকা” বললে অর্থবোধের বিঘ্ন হয় না। কিন্তু আমার প্রশ্ন এই যে এ-সকল স্থানে ইংরেজির অবিকল অনুবাদের প্রয়োজন কী? এ স্থলে যদি বলা যায়―ঐতিহাসিক ভূমিকা বা ভিত্তি তা হলে তাতে কি নালিশ চলে―কোনোমতে ওই ‘পশ্চাৎ’ শব্দটা কি জুড়তেই হবে? আশ্রয় বা আশ্রয়বস্তু কথাটাও মন্দ নয়। ইংরেজিতেও অনেক সময়ে একই অর্থে foundation বললেও চলে, background বললেও চলে, support বললেও চলে।
“কায়াচিত্র”[১৯] Tableau-এর ভালো অনুবাদ সন্দেহ নেই।
Allusion এবং reference অধিকাংশ স্থলেই সমার্থক। বাংলা করতে হলে ভিন্ন ভিন্ন স্থলে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ প্রয়োগ করতে হবে― যেমন সংকেত, লক্ষ্য, উদ্দেশ, উদাহরণ। বলা যেতে পারে, মল্লিনাথের টীকায় দিঙ্নাগাচার্যের সমুদ্দেশ পাওয়া যায়। Reference স্থলবিশেষে পরিচয় অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন certificate-এর সমর্থক reference।
“সুমেরিয় ইতিহাসে ইন্দ্র দেবতার allusion আছে,” এখানে allusion যদি অস্পষ্ট হয় তবে সেটা ইঙ্গিত, যদি স্পষ্ট হয় তবে সেটা উদাহরণ। Alluding to his character—“তাঁর চরিত্রের প্রতি লক্ষ্য করে।” মোটের উপর অভিনির্দেশ অভিসংকেত শব্দ দ্বারা reference-এর allusion-এর অর্থ বোঝানো যেতে পারে। রক্তকরবীর নন্দিনীকে লক্ষ্য করে যদি ‘art’ শব্দ ব্যবহার করতে হয় তা হলে বলা উচিত ‘কলারূপিণী’। Technical termএর প্রচলিত বাংলা পারিভাষিক শব্দ।[২০]
৮ আষাঢ় ১৩৪৩
১৮
Relief শব্দের প্রচলিত বাংলা প্রতিশব্দ উৎকীর্ণ-চিত্র— যদি অক্ষর হয় তবে উৎকীর্ণ লিপি।[২১]
১০।১।৩৭
Proximo ও Ultimo শব্দের সহজ প্রতিশব্দ গত মাসিক ও আগামী মাসিক।১
২৮ শ্রাবণ ১৩৪৪
••• Image কথাটার প্রতিশব্দ প্রতিমা— স্থান বিশেষে আর কিছুও হোতে পারে।২
?.১, ৪০
- ↑ দ্রষ্টব্য: প্রতিশব্দ ২
- ↑ দ্রষ্টব্য: প্রতিশব্দ ১২
- ↑ বিধুশেখর শাস্ত্রী মহাশয় প্রতিশব্দ প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতন পত্রে (ভাদ্র ১৩২৬) আলোচনা প্রসঙ্গে originality-র প্রতিশব্দরূপে ‘অপূর্বতা’ শব্দের ব্যবহার প্রস্তাব করেন।
- ↑ দ্রষ্টব্য: ‘চিহ্নবিভ্রাট’ এবং ‘শব্দচয়ন’ প্রবন্ধ।
- ↑ দ্রষ্টব্য: ‘কাল্চার ও সংস্কৃতি’ প্রসঙ্গ।
- ↑ দ্রষ্টব্য চিহ্নবিভ্রাট, ভূমিকাংশ}}
- ↑ অজিতকুমার চক্রবর্তীকে লিখিত পত্র
- ↑ অজিতকুমার চক্রবর্তীকে লিখিত পত্র
- ↑ শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত পত্র
- ↑ শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত পত্র}}
- ↑ শ্রীভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়কে লিখিত পত্র
- ↑ রেবতীমোহন বর্মনকে লিখিত পত্র
- ↑ ‘ধরার আঙিনা হতে ঐ শোনো উঠিল আকাশবাণী’ কবিতায় (৫ অগস্ট ১৯৩৮) রবীন্দ্রনাথ শব্দটি ব্যবহার করেন। শ্রীনলিনীকান্ত সরকার -প্রণীত ‘শ্রদ্ধাস্পদেষু’ গ্রন্থে (১৮৭৯ শকাব্দ) “রবীন্দ্রনাথ” প্রবন্ধে কবিতাটি উদ্ধৃত ও রচনার প্রসঙ্গ আলোচিত।}}
- ↑ চারুচন্দ্র ভট্টাচার্যকে লিখিত পত্র
- ↑ দ্রষ্টব্য ‘কালচার ও সংস্কৃতি’}}
- ↑ শ্রীসুধীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত পত্র
- ↑ শ্রীসতীশরঞ্জন খাস্তগীরকে লিখিত পত্র
- ↑ জ্ঞানেন্দ্রলাল ভাদুড়ীকে লিখিত পত্র
- ↑ পত্রলেখক-কর্তৃক প্রস্তাবিত ও রাজশেখর বসু কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিশব্দ।}}
- ↑ শ্রীক্ষিতিভূষণ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত পত্র
- ↑ যোগেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়কে লিখিত পত্র