বাখতিন/প্রাক্কথন
প্রাক্কথন ২
জেনেছি তাকে’, এই প্রাচীন উচ্চারণ মেধাবী প্রত্যয়ে আজও মর্মরিত হয়, প্রাণিত করে আমাদের। কিন্তু সময়ের নিষ্করুণ প্রহারে ছিন্নভিন্ন হতে হতে আমরা কি তেমনভাবে দ্বিধা ও সংশয় পেরিয়ে যেতে পারি! সাহসী উচ্চারণ থেকে কতখানি বিচ্ছুরিত হয় উদ্ভাসনী আলো? আসলে আমাদের জিজ্ঞাসা পূর্ণাঙ্গ নয় কেননা আমরা আজও নিজেদের জিজ্ঞাসাকে নির্মাণ করতে শিখি নি। তাই প্রত্যুত্তরযোগ্যতাও অর্জিত হয়নি কী ব্যক্তিপরিসরে কী সামাজিক পরেসরে। অথচ জীবন নামক সমাপ্তিবিহীন নির্মাণের আয়োজনে জিজ্ঞাসার যথাথ গ্রন্থনাই সব কিছু।
মিখায়েল মিখায়েলোভিচ বাখতিন জীবনতত্ত্ব ও জীবনপ্রয়োগের শ্রেষ্ঠ চিন্তাশিল্পী। হাঁ, ইদানীং মনে হয়, এই চিন্তা শুরু প্রকৃতপক্ষে চিন্তাকে শিল্পে রূপান্তরিত করেছেন। জীবন নামক প্রয়োগশালায় একটি মুহূর্তের সঙ্গে অপর মুহূর্তের, একটি অবস্থানের সঙ্গে অপর অবস্থানের, একটি অস্তিত্বের সঙ্গে অপর অস্তিত্বের দ্বিবাচনিকসম্পর্ক স্বতঃসিদ্ধ ও স্বয়ংদীপ্ত— এই পাঠই তো দিয়েছেন তিনি। জীবনে শেষ কথা বলে কিছু নেই, কোনো পূর্বধার্য সমাপ্তিবিন্দুও নেই কোথাও— এই বোধে দীক্ষিত হয় যখন, আমাদের হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে বুঝে নিই অন্তহীন সম্ভাবনার পরিসর হিসাবে।
বাখতিন অনন্য উপন্যাসতাত্ত্বিক নিশ্চয়, কিন্তু তার চেয়েও বেশী হলো তিনি জীবন নামক স্থাপত্যের বিশ্বকর্মা। যত পড়ি তাকে, ততই নতুন নিষ্কর্য আবিষ্কার করি। উপন্যাসের পাঠকৃতি আর জীবনের বয়ানের যুগলবন্দি হয়ে ওঠে একই সত্যের ভিন্নভিন্ন প্রকাশ। ভিন্নতার পথে ঐক্যের সন্ধান আবার ঐক্যের পথে বিভিন্নতার খোজ: অনেকার্থদ্যোতক এই প্রকরণ। বহুঘরে বহুমাত্রায় তার বিন্যাসও প্রতিন্যাস। এই সন্দর্ভে নান্দনিক ব্যকরণের বিধি আছে নিশ্চয়, কিন্তু সেইসব বিধি পেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতায় ঐ খোজ অনন্য। তিনি শুধ প্রতীচ্যের ছিলেন না কখনও, তিনি সর্বমানবের চিন্তাগুরু। সব কালে ও সব পরিসরে তাকে বহুবার বারবার পুনরাবিষ্কার করে যেতে হবে আমাদের।
তাই বাখতিন চর্চা আমাদের বৌদ্ধিক কৃত্য নয় কেবল, জীবনের প্রতি আনখশির তৃতীয় নিমগ্ন থেকে জীবন-পুনর্নির্মাণের আর্তি প্রতিষ্ঠার জরুরি আয়োজন। দ্বিরালাপই অস্তিত্বের সারসত্য এই বোধে উদ্দীপ্ত হওয়ার জন্যে নিজেকে জানাতে হয়: ‘জেনেছি তাকে’: বেদাহম্ এতম্। সাহিত্যে-শিল্পে কত অজস্র দ্যোতনায় পুষ্পিত হয়ে চলেছে সহযোগ, তা উচ্চারণ করাই তো নির্মাণবায়িত কুহকী জগতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দৃপ্ত ঘোষণা। এই আমাদের একক ও সামূহিক প্রতিবাদ।
অতএব এই বইয়ের দ্বিতীয় পরিমার্জিত সংস্করণ হয়। বহুবিঘ্ন পেরিয়েই হয়। কেননা জীবন থেমে থাকতে পারে না, শিল্প পথ থেকে পথান্তরে যায়, অস্তিত্বের বিস্তার ঘটে ক্রমাগত। বাখতিন ছিলেন আছেন থাকবেন কেননা রয়েছেন তাঁর অজস্র জিজ্ঞাসু পাঠকেরা।
প্রাক্কথন ১
এমন একটা সময়ও ছিল আমাদের যখন ‘তত্ত্বকথা’ জাতীয় শব্দ ছিল অস্পৃশ্য; জিজ্ঞাসা থেকে সব মহিমা ঝরে গিয়েছিল। ব্যঙ্গ বিদ্রূপের সহজ লক্ষ্য হিসেবে ‘তত্ত্ব’ ছিল অদ্বিতীয়। বলা বাহুল্য, সাহিত্য-আলোচনায় তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে যত আপত্তি। এবং, এবিষয়ে আমরা ঘোর জাতীয়তাবাদী। পদার্থবিদ্যায় নিউটন-আইনস্টাইন-কে যারা ছাড় দেয় এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সমস্ত শাখায় আন্তর্জাতিক নাগরিক হতে পারে সোৎসাহে— তাদের যত আপত্তি সাহিত্যতত্ত্ব নিয়ে। বিশ্বায়নের শুরু হওয়ার পরেও সাহিত্যচিন্তায় সীমান্ত-প্রহরা অটুট রয়ে গেছে। সাহিত্যে নতুন-নতুন চিন্তা প্রত্যাশিত। সেইসব ক্ষেত্রেও লক্ষ করি যুক্তিহীন দ্বিধা ও অনীহা।
তবু মিখায়েল মিখায়েলোভিচ বাখতিনের বিস্ফোরক আবির্ভাব হলো। সত্তর দশকে ইংরেজি অনুবাদে তার রচনা পড়ার পরে। মুখ্যত, দেবেশ রায়ের উদ্যম বাখতিনকে উৎসুক বাঙালি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। ফুকো-বার্ত-দেরিদা-জেমসন-বদ্রিয়ারের প্রতি কেউ-কেউ হয়তো সামান্য মনোযোগী। কেননা আধুনিক ও আধুনিকোত্তর কালপর্বের জটিলতা ব্যাখ্যায় প্রতীচ্যের এই তাত্ত্বিকেরা অগ্রণী। তত্ত্বকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখতে চান যাঁরা, সেইসব পাঠকদের কথা বলছি না। বলছি সেই জিজ্ঞাসু পড়ুয়াদের কথা যাঁরা জানেন, জীবনের প্রতিটি পাঠই তত্ত্বের পাঠ।
বাখতিনের স্বাতন্ত্র্য ঠিক কোথায়— তা অনুশীলন করতে গিয়ে দেখি, তিনি আমাদের যাবতীয় ভাবপিঞ্জর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে প্রাণিত করেছেন। বাখতিনের তত্ত্ববীজগুলি স্বভাবে আকরণোত্তরবাদী। তাই কোনও ধরনের রুদ্ধতায় এরা কখনও বিকশিত হয় না। বাখতিনের ভাববিশ্ব এমন যে বারবার পুনঃপঠিত হওয়ার মধ্যেই তার সার্থকতা প্রমাণিত ও পরীক্ষিত হয়ে থাকে। তাঁর তত্ত্ববিশ্বের আরও একটি প্রধান ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য হলো, অন্যান্য চিন্তা-প্রস্থান কিংবা চিন্তাবীজের সঙ্গে দ্বিরালাপে তার বিকাশ ত্বরান্বিত হয় আরও। নিশ্চিহ্নায়ন ও প্রতিরূপায়ণের তোড়ে, আকাঙ্ক্ষার প্রতাপে সমকাল যখন প্লাবিত—কোনও কল্পিত স্বর্গের ইশারা পাই না তাঁর কাছে। এ মুহূর্তে ঠিক কোথায় নোঙর ফেলতে পারে চেতনা, এই জিজ্ঞাসা নিয়েই যাই বাখতিনের কাছে।
তিনি আমাদের শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেন না। হয়তো মুক্তি ও শীর্ষবিন্দুর তাৎপর্য বদলে গেছে এখন। সমাজের কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়েছে ইতিহাস, মানবতন্ত্র ও নান্দনিক চেতনা। তবুও অনবরত অস্তিত্বের নবায়মান নির্মিতি-প্রকরণ সম্পর্কে আমাদের অবহিত থাকতেই হয়। বারবার তৈরি করে নিতে হয় নিজেদের প্রত্যুত্তরযোগ্যতা, অপরতার সঙ্গে সত্তার সংযোগ-প্রকল্প। প্রশ্ন হচ্ছে, আজকের সর্বব্যাপ্ত বিয়োগপর্বে বাখতিনের পথ ও পাথেয়কে কতদূর পর্যন্ত প্রসারিত করা সম্ভব? শুধু তো আধুনিকতাই নয়, আধুনিকোত্তর পরিস্থিতিও বিস্ফোরিত হয়েছে আমাদের চারপাশে। জাঁ বদ্রিয়ার বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে এসেছে মুক্তির মুহুর্ত: ‘Political liberation, sexual liberation, liberation of the forces of production, liberation of the forces of destruction, women's liberation, children's liberation, liberation of unconscious drives, liberation of art. The assumption of all models of representation, as of all models of anti-representaiton’ (The transperancy of evil: ১৯৯৬: ৩)। বর্তমান যখন অস্থির, কেন্দ্রচ্যুত ও নিরালম্ব— উপস্থাপনার সমস্ত আকল্প ধ্বস্ত হয়ে যেতে বাধ্য। সন্দর্ভ ও প্রতিসন্দর্ভের যাবতীয় আয়োজন যেন হঠাৎ প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে। এই সময় যেন নিজেই মাদকে রূপান্তরিত; নিষ্কর্ষরিক্ত কার্নিভালের হুল্লোড়ে। ভেসে যাচ্ছে বাস্তব, কল্পনা, যুক্তি, তর্ক, বিশ্লেষণ, সংকট ও দ্যোতনা। বাখতিন নিশ্চয় এমন প্রতিজগতের কথা ভাবতে পারেননি যেখানে প্রতিবাচনের সন্ত্রাসে বাচনের জমি। ও আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বস্তু-চিহ্ন-বার্তা-আকাঙক্ষা-ভাবকল্পের অতি উৎপাদনে প্রতিটি পথের সম্ভাবনা রুদ্ধ হয়ে গেছে। প্রতিরূপেরও প্রতিরূপ তৈরি করতে করতে আমরা ক্লান্ত ও অবসন্ন এখন।
বাখতিন-চর্চায় নিজের সাধ্য অনুযায়ী যেদিন যোগ দিয়েছিলাম, পরিবেশ আজকের মতো এতটা আবিল হয়ে যায়নি। সাহিত্য ও জীবনের আশ্চর্য দ্বিরালাপের অংশীদার হয়ে মনে হয়েছিল, বাঙালি পড়ুয়াদের কাছে প্রণালীবদ্ধভাবে কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরা যায়। একেবারে ব্যর্থ হয়েছিল সেই অধ্যবসায়, একথা নিশ্চয়ই বলা যায় না। বাখতিনের তত্ত্ববিশ্বে ভ্রমণ-প্রত্যাশী সহযাত্রীর সংখ্যা তখন যা ছিল, সেই তুলনায় গত কয়েক বছরে অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে নিশ্চয়। তবু যে-পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই পথের উপযোগিতা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে এখন। একই পথে যে অভিন্ন লক্ষ্যে যাত্রার অভিনিবেশ অক্ষুন্ন থাকবে— তা ভাবার কারণ নেই কোনও। কতটা রূপান্তরিত হয়েছে পথ ও লক্ষ্য, যাত্রায় কতটা নতুন গতি সঞ্চারিত হয়েছে, তা অনুধাবন করার আগেই জরুরি হয়ে পড়েছিল বাখতিনের পুনঃপাঠ। আমরা কি বিপুল শূন্যায়তনে প্রতিরূপেরও প্রতিরূপ গড়ে তুলছি কেবলই? বিভিন্ন ধরনের মুক্ত লক্ষ্য ইতিমধ্যে বিলীয়মান দিগন্তরেখার মতো অনেক দূরে সরে গেছে। যেসব চিহ্ন, প্রকরণ, আকাঙ্ক্ষা আমরা নিজেরাই উৎপাদন করেছিলাম— সেসব কি উৎপাদককেই গ্রাস করতে চাইছে আজ?
বিশ শতকের অন্তিম দশকের সূচনাপর্বে যখন বাখতিন-চর্চার শুরু করেছিলাম, সে সময় নির্মাণবায়নের চোরাবালি এতটা হিংস্র হয়ে ওঠেনি। এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার দাপট এমন ভাবে যাবতীয় অপর পরিসরকে মুছে ফেলতে বেপরোয়া আগ্রাসন শুরু করেনি। বাখতিনের দেওয়া চিন্তাসূত্র ব্যবহার নিজেদের জীবন-জগৎ-সাহিত্য-মনন নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে উদ্যমী হয়েছিলাম। প্রত্যুত্তরযোগ্যতা, নির্মিতিবিজ্ঞান, উদ্যমের দর্শন সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলি ইংরেজি ভাষান্তরে তখনও পাইনি। নব্য উপনিবেশবাদের প্রতাপ ও বিশ্বায়িত প্রযুক্তির তুমুল প্রভাবে ধীরে-বীরে বাড়তে লাগল বদ্রিয়ার-কথিত, ‘epidemic of simulation,’ (তদেব: ৪) এবং সেই সূত্রে অনিশ্চয়তা ও অনির্ণেয়তা। বাখতিনেরর যথাপ্রাপ্ত স্থিতি-র ধারণা কি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে তাতে? নাকি অস্থিতিমূলক স্থিতিকে যথাপ্রাপ্ত বলে ধরে নিয়ে জীবন ও জগতের বয়ান তৈরি করব এখন? ‘দ্রষ্টা চক্ষু’র ধারণায় ‘দৃষ্টি’র বহুস্বরিক তাৎপর্য প্রতিরূপায়ণের মোড়কে কি ঝাপসা হয়ে যাবে—নাকি নতুন উজ্জ্বলতা নিয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে? ইতিমধ্যে আরও কয়েকজন তাত্ত্বিকের মৌলিক ভাবপ্রস্থান সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এরা প্রত্যেকেই সমান্তরাল অপর চিন্তা-পরিসরের সূত্রধার হিসেবে বাখতিন-অনুধ্যানকেই গভীরতর ও শানিততর করেছেন যেন।
তাই এই লিখন-প্রয়াসীর যে-বইটি বাখতিন সম্পর্কে প্রথম পূর্ণাঙ্গ (এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র) বাংলা বই, তার সম্পূরক কিছু রচনা অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। প্রধানত ছোট পত্রিকার সহযোগী লিখন-যোদ্ধাদের আগ্রহে তৈরি হলো কিছু প্রবন্ধ। সময় ও পরিসরের উত্তাপ কিংবা দহন থেকে যে-বিহ্বলতা তৈরি হয়েছে সর্বত্র, বাখতিনের পুনঃপাঠ সূত্রে তার মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করেছি। বুঝতে চেয়েছি, বাস্তু-চিহ্ন-কৃত্য যখন তাদের ভাবনা-ধারণা-নির্যাস-উৎস-পরিণতি-মূল্যমান-পরম্পরা-অন্বিষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে যায় বাখতিনীয় পার্থক্য-প্রতীতি এবং দ্বিবাচনিকতা কি সত্যিই কূটাভাসের গোলকধাধায় হারিয়ে যায়! অথবা প্রত্যুত্তর-যোগ্যতার সম্ভাবনা ও তাৎপর্যকে বহুদূর অবধি প্রসারিত করে নিরবচ্ছিন্ন নির্মিতির অধ্যবসায়ে মগ্ন হতে হয়! বাখতিন কি এই ক্রান্তিকালেও আমাদের এই পাঠ দেন না যে অস্তিত্বের সংজ্ঞা ও অন্বিষ্ট পুনর্নির্ণয়ের প্রক্রিয়া নতুন পরিস্থিতিতে নতুনভাবে শুরু হয় মাত্র?
নিশ্চয়। নতুন নতুন আরম্ভের শেষ নেই কোনও। সহযোগী সত্তার উপস্থিতি সম্পর্কে সংশয়ের কারণ নেই। তাই তিনদশক ধরে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছেন যিনি, ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকার স্বনামধন্য সেই সেনাপতি, অনিল আচার্য, আমার বাখতিন-পাঠ সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন। একজন লিখন-কর্মীর কক্ষে এই তো বড়ো পুরস্কার যে অনুষ্টুপ প্রকাশনীর শ্লাঘ্য তালিকায় তার উদ্যমও অন্তর্ভুক্ত হলো। তাহলে, বাখতিন ঠিক, কোনও অধ্যবসায়ই হারিয়ে যায় না পুরোপুরি, আসন্ন ভবিষ্যতে দ্বিরালাপের পরবর্তী বিকাশের প্রক্রিয়ায় এই উদ্যমও তাৎপর্য নির্ণয়ের অন্তর্বর্তী পর্যায় হিসেবে স্বীকৃত হবে। আসলে সর্বব্যাপ্ত বিয়োগপর্বের কুহকে যত আচ্ছন্নতাই আসুক, সংযোগশূন্য ও মানবিক অভিকর্ষহীন চরম পরিস্থিতি কখনও তৈরি হতে পারে না। সব কিছুই রাজনৈতিক এখন, তাই আলাদা ভাবে কোনও পরিসরে রাজনীতি খুঁজতে হয় না। সব কিছুই চিহ্নায়ক যখন, আলাদা ভাবে চিহ্নায়ন প্রকরণ কোথায় খুজব? তেমন-ই সব কিছুই এখন সাংস্কৃতিক—হ্যাঁ, সর্বত্রব্যাপ্ত পীড়া-সংক্রমণ সত্ত্বেও—অতএব সংস্কৃতির যুদ্ধক্ষেত্র আলাদা ভাবে খুঁজতে হয় না।
বাখতিন-পাঠের সময়োপযোগী নিষ্কর্ষ অনুশীলনে এই বইটি যদি গ্রহীতা-পাঠকদের সহযোগী হিসেবে পায়, তাদের চিন্তাবিশ্বে একটুও শরিক হতে পারে—তাহলে উদ্যমকে সার্থক মনে করব। তবে চিন্তা ও কৃত্য যেহেতু চূড়ান্ত হয় না কখনও, এই প্রতিবেদন পরবর্তী কোনও সন্দর্ভের পূর্বলেখ বলে বিবেচিত হোক॥
ফেব্রুয়ারি, ২০০২