বাঙ্গালীর প্রতিভা ও সুভাষচন্দ্র/সুভাষচন্দ্রের জন্ম

সুভাষচন্দ্রের জন্ম

১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারী দিবা ১২টা ১৫ মিনিটের সময়ে উড়িষ্যার রাজধানী কটকে সুভাষচন্দ্রের জন্ম হয়। তাঁহার পিতা স্বর্গীয় রায় জানকী নাথ বসু মহাশয় শৈশবে অতি দুঃখকষ্টের ভিতর দিয়া মানুষ হইয়াছিলেন। বয়ঃপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তিনি সুপণ্ডিত ও বাঙ্গালী সমাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন ব্যক্তি বলিয়া গণ্য হইয়াছিলেন তিনি কটকের সরকারি উকিল এবং স্থানীয় আইন ব্যবসাইদের নেতা ছিলেন। এতদ্ভিন্ন তিনি বহুবৎসর কটক মিউনিসিপ্যালিটির ও জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।

 সুভাষচন্দ্রের মাতা শ্রীমতী প্রভাবতী বসু একজন পুণ্যশীলা আদর্শ হিন্দুরমণী ছিলেন। তাঁহার সরল ও অমায়িক ব্যবহারে আত্মীয় স্বজন সকলেই মুগ্ধ হইত। পুত্র কন্যাগণের চরিত্রে তাঁহার অসামান্য প্রভাব পরিলক্ষিত হইত, এবং তাঁহারা সকলেই মাতাকে দেবীর ন্যায় ভক্তি ও পূজা করিতেন।

 জানকীবাবুর আদিনিবাস জেলা ২৪ পরগণার কোদালিয়া গ্রামে। তাঁহার আটটি পুত্র এবং ছয়টি কন্যা। তন্মধ্যে সাতটি পুত্র ও দুইজন কন্যা বর্ত্তমানে জীবিত আছেন। পুত্রগণের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শ্রীযুক্ত সতীশ্চন্দ্র বসু, দ্বিতীয় শ্রীযুক্ত শরৎচন্দ্র বসু, তৃতীয় শ্রীযুক্ত সুরেশ্চন্দ্র বসু, চতুর্থ শ্রীযুক্ত সুধীর চন্দ্র বসু, পঞ্চম ডাক্তার সুনীলচন্দ্র বসু, ষষ্ঠ শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসু এবং সপ্তম শ্রীযুক্ত শৈলেশচন্দ্র বসু। অষ্টম এবং সর্ব্ব কনিষ্ঠ পুত্র সন্তোষ কুমার বসু কয়েক বৎসর পূর্ব্বে প্রলোকগমন করিয়াছেন। জানকীবাবু তাঁহার পুত্রগণকে উচ্চশিক্ষা দিবার পক্ষে কোনও ত্রুটি করেন নাই। পুত্রগণের এখানকার শিক্ষা শেষ হইলেই, জানকীবাবু তাঁহাদিগকে ইউরোপে পাঠাইয়াছিলেন। গভর্নমেণ্ট জানকীবাবুকে রায় বাহাদুর উপাধি দিয়াছিলেন। গত আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে গভর্নমেণ্টের দমন-নীতির প্রতিবাদকল্পে তিনি ঐ উপাধি পরিত্যাগ করেন। জানকীবাবু ৭৫ বৎসর বয়সে পরলোকগমন করেন। তিনি কটক, পুরী, কার্সিয়ং এবং কলিকাতায় এক একখানি বাড়ী করিয়াছিলেন।

 জানকীবাবুর পুত্রগণ সকলেই পরবর্ত্তী জীবনে বিভিন্নক্ষেত্রে কৃতিত্ব লাভ করিয়াছেন। জ্যেষ্ঠ শ্রীযুক্ত সতীশ্চন্দ্র বসু ব্যারিষ্টার। তিনি পূর্ব্বের কলিকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলার হইয়াছিলেন এবং বর্ত্তমানে বিপুল সংখ্যক ভোটাধিক্যে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্ব্বাচিত হইয়াছেন। মধ্যম শ্রীযুক্ত শরৎচন্দ্র বসু স্বনামধন্য ব্যারিষ্টার এবং দেশনেতা। শরৎবাবু প্রথমতঃ উকিল হইয়া কলিকাতা হাইকোর্টে প্রবেশ করেন। পরে বিলাত হইতে ব্যারিস্টারি পাশ করিয়া কৃতিত্বের সহিত হাইকোর্টে ব্যারিষ্টারি করিতেছেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের একজন প্রধান সহকারি হিসাবে তিনি কর্পোরেশনের কাউন্সিলার হইয়াছিলেন, এবং ‘ফরওয়ার্ড’ পত্রিকার ভার লইয়া প্রথমে রাজনীতি ক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। শরৎচন্দ্র এবং তাঁহার সহধর্ম্মিণী সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের উপর অশেষ প্রভাব বিস্তার করিয়াছিলেন। তৃতীয় শ্রীযুক্ত সুরেশচন্দ্র বসু উড়িষ্যার ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে তিনি ঐ পদ ত্যাগ করিয়াছিলেন। তিনি বর্তমানে ইম্প্রুভমেণ্ট ট্রাষ্ট ট্রাইবিউনালের অন্যতম য়্যাসেসর। চতুর্থ শ্রীযুক্ত সুধীরচন্দ্র বসু টাটা কোম্পানির কয়লার খনির একজন বড় অফিসার। পঞ্চম সুনীল চন্দ্র বসু কলিকাতার হৃদ্‌রোগের একজন বড় হার্ট স্পেশালিষ্ট প্রসিদ্ধ চিকিৎসক। সুভাষচন্দ্র মাতা পিতার ষষ্ঠ সন্তান। সপ্তম শৈলেন চন্দ্র বসু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার।