“বাঙ্গালীর প্রতিভা” বাঙ্গলার মনীষীগণের কীর্তিকথা লইয়াই বিরচিত। যে সকল বাঙ্গালী নিজ নিজ প্রতিভাবলে জগতীতলে মহীয়সী কীর্তি স্থাপন করিয়াছেন, তাহাদের বিষয় এই গ্রন্থে আলোচনা করা হইয়াছে। ইহাদের মধ্যে কেহ সাহিত্যে, কেহ বিজ্ঞানে, কেহ ধর্ম প্রচারে কেহবা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখাইয়াছেন। আবার কোন কোন বীর সামরিক বিভাগে আপনার প্রতিভা প্রকাশ করিয়া বঙ্গভূমির গৌরব শতগুণে বৃদ্ধি করিয়াছেন। যাহাদের যশেভাতি ভারতের সীমা অতিক্রম করিয়া সুদুর পাশ্চাত্য গগন উদ্ভাসিত করিয়াছে এবং যাহারা পাশ্চাত্য ভূখণ্ডের বহু মনীষী কর্তৃক সম্মানিত হইয়া এই অধঃপতিত বাঙ্গালী জাতির আসন উচ্চে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন, কেবলমাত্র তাঁহাদেরই প্রতিভার কথঞ্চিৎ পরিচয় এই গ্রন্থে দেওয়া হইয়াছে। সুভাষচন্দ্র এই মহামানবগণের মধ্যে অন্যতম। তাঁহার সর্বতোমুখী প্রতিভা তাহাকে যে জগতের শ্রেষ্ঠ মানবগণের পর্য্যায়ভূক্ত করিয়াছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। বর্তমান গ্রন্থে এই মহাপুরুষের কীর্তিকথাই বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করা হইয়াছে।
সামরিক বিচারালয়ে ভারতীয় জাতীয় বাহিনীর প্রতিনিধি মেজর জেনারল শাহ-নওয়াজ প্রভৃতির বিচার কালে সুভাষবাবুর অনেক কীর্তিকথা জনসাধারণের সমক্ষে উপস্থিত হইয়াছে। “আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্ট” সম্বন্ধেও অবশ্যজ্ঞাতব্য বহুতথ্য “অমৃতবাজার পত্রিকা” “হিন্দুস্থান ষ্ট্যাণ্ডার্ড” প্রভৃতি ইংরাজী সংবাদপত্রে এবং “আনন্দ বাজার পত্রিকা”, “নবযুগ” প্রভৃতি বাঙ্গালা সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হইয়াছে। ইংরাজি সংবাদপত্রগুলি হইতে সেই সকল তথ্যের সরল অনুবাদ এবং . আনন্দ বাজার পত্রিকা হইতে উদ্ধৃত “নেতাজীর অন্তর্ধান” কাহিনী প্রভৃতি কয়েকটি সংবাদ একত্রে সন্নিবিষ্ট করিয়া বাঙ্গলার কৌতূহলী পাঠক পাঠিকাগণের সমক্ষে স্থাপন করিবার জন্যই এই এন্থের অবতারণা। সুভাষচন্দ্রের জীবনী সম্বন্ধে লিখিত “Rebel President” নামক বিখ্যাত ইংরাজি গ্রন্থ হইতেও কোন কোন অংশ গ্রহণ করিতে বাধ্য হইয়াছি। মাসিক বসুমতী হইতে ‘ত্রিপুরী অভিভাষণ’ এবং নবযুগ হইতে ‘সিঙ্গাপুর অভিভাষণ’ নামক প্রবন্ধদ্বয় উদ্ধৃত করিয়া পুস্তকখানির সৌষ্ঠব বৃদ্ধি করিতে প্রয়াস পাইয়াছি। এজন্য আমি এই সকল সংবাদপত্র সম্পাদক ও গ্রন্থকারের নিকট আন্তরিক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিতেছি। মৎপ্রণীত কয়েকটি মৌলিক প্রবন্ধও এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা হইয়াছে। গ্রন্থপানির দ্বারা পাঠক পাঠিকাগণের এবং সুকুমার-মতি বালক বালিকাগণের কৌতূহল কিয়ৎ পরিমাণে চরিতার্থ হইলে লেখকের শ্রম সফল হইবে।
উপসংহারে নিবেদন এই যে সুভাষচন্দ্রের জীবনের কিয়দংশ এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে বিদ্যমান রহিয়াছে। তাহার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী যদি কোনও দিন লোকলোচনের গোচরীভূত হয়, তাহা হইলে অনেক সমস্থার সমাধান হইতে পারে। সুতরাং এই গ্রন্থে আমি তাঁহার অলৌকিক জীবনের কতকগুলি উপাদান মাত্র দিতে সক্ষম হইয়াছি। ভবিষ্যৎ ইতিহাসবেত্তা যখন এই মহাপুরুষের জীবনবৃত্তান্ত লিখিতে প্রবৃত্ত হইবেন, এই উপাদানগুলি তাহার আবশ্যক হইতে পারে। আর এক কথা,—সাহিত্যক্ষেত্রে এই আমার প্রথম লেখনী ধারণ-পদে পদে উপাহাসাম্পদ হইবার সম্ভাবনা। কিন্তু তথাপি দুঃখিত হইবার কারণ নাই। যেহেতু কালিদাসের ন্যায় মহাকবিও বলিয়াছেন—
মন্দঃ কবি-যশঃ প্রাথী গামিষ্যাম্যুপহস্যতাম্।
প্রাণ্ডলভ্যে ফলে লোভা উদ্বাহুরিব বামনঃ॥
এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।