বাঙ্গালীর প্রতিভা ও সুভাষচন্দ্র/আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্ট

আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্ট

 অতঃপর স্বাধীন গভর্ণমেণ্ট স্থাপন করিবার প্রয়োজন উপলব্ধি হইল। ১৯৪৩ সালের ২১শে অক্টোবর তারিখে Independence League এর প্রতিনিধিগণকে লইয়া একটি সভার অধিবেশন হইল। সেই সভায় নেতাজী অস্থায়ী আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্টের সংগঠন সংবাদ ঘোষণা করিলেন। সেই ঘোষণাপত্রে তাঁহার নিজের ও নবগঠিত গভর্ণমেণ্টের মন্ত্রীগণের নাম সাক্ষরিত ছিল। এই অস্থায়ী স্বাধীন গভর্ণমেণ্টের বিশেষত্ব এই ছিল যে ভারতের জাতীয় বাহিনীর অন্তর্গত মিসেস্ লক্ষী নামে এক নারীকে মন্ত্রীসভার অন্তর্ভূক্ত করিয়া লওয়া হইল। পরদিন রাণী লক্ষীবাইয়ের জন্মোৎসব উপলক্ষে নেতাজী “ঝাঁসীর রাণী সেনাবাহিনী”—(Rani of Jhansi Regiment) নাম দিয়া এক নারীবাহিনী গঠন করিলেন। বিংশ বৎসরের নিম্ন সহস্র সহস্র বালিকা নবীন উৎসাহের সহিত এই নারী বাহিনীতে যোগদান করিতে লাগিল। সঙ্গে সঙ্গে তাহাদিগের সামরিক শিক্ষা দিবার ব্যবস্থাও হইতে লাগিল।

 এই গভর্ণমেণ্ট স্থাপন করিবার অব্যবহিত পরেই জার্ম্মাণি, জাপান প্রভৃতি সাতটি স্বাধীন গভর্ণমেণ্ট আনন্দ সহকারে এই গভর্ণমেণ্টের অনুমোদন করিলেন।

জাপানের সহিত চুক্তি

 জাপান গভর্ণমেণ্টের সহিত আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্টের সম্বন্ধ মিত্র শক্তিগণের ন্যায় ছিল। জাপানের পররাষ্ট্রসচিব Mr. Renzu Sawada সামরিক বিচারালয়ে Captain শাহ-নওয়াজ প্রভৃতি সৈনিকগণের বিচারকালে যে সাক্ষ্য দিয়াছেন, তাহা হইতে জানা যায় যে ভারত অভিযানের পূর্ব্বে জাপান গভর্ণমেণ্টের সহিত আজাদ গভর্ণমেণ্টের এক চুক্তি পত্র সাক্ষরিত হইয়াছিল এবং উভয়পক্ষই দুইটি পৃথক ঘোষণাপত্র বাহির করিয়াছিলেন। জাপান গভর্ণমেণ্ট তাঁহাদের ঘোষণা পত্রে লিখিয়াছিলেন যে তাঁহারা ব্রিটিশের সহিত যুদ্ধে অবতীর্ণ হইবেন, এবং সেই যুদ্ধে যে কোনও দেশ তাঁহাদের অধিকারভুক্ত হইকে অথবা লুণ্ঠন করিয়া যাহা কিছু হস্তগত হইবে তাহা আজাদ গভর্ণমেণ্টকেই দিতে হইবে। জাপানের জেনারেল এই পত্রে সাক্ষর করিয়াছিলেন। পক্ষান্তরে সুভাষবাবু একটি ঘোষণাপত্রে জানাইয়াছিলেন যে তাঁহারা জাপানের সহিত মিলিত হইয়া ব্রিটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হইবেন, কিন্তু জাপান ভারতের কোনও অংশ জয় করিতে পারিলে তাহা আজাদ গভর্ণমেণ্টকেই ছাড়িয়া দিতে হইবে। এই ঘোষণাপত্র সুভাষবাবুর সাক্ষরিত ছিল।