বাঙ্গালীর প্রতিভা ও সুভাষচন্দ্র/ভারতীয় স্বাধীন প্রতিষ্ঠান

Indian Independence League

বা

ভারতীয় স্বাধীন প্রতিষ্ঠান

 বিপ্লবী রাসবিহারী বসু অনেক পূর্ব্বেই জাপানে গিয়া বাস করিতেছিলেন। তিনি ৩০ বৎসর পূর্ব্বে বৃটিশ গভর্ণমেণ্ট কর্ত্তৃক নির্ব্বাসিত হইয়াছিলেন। জাপানে অবস্থানকালে স্বদেশানুরাগী একদল প্রবাসী ভারতীয় লইয়া তিনি Indian Independence League বা ভারতীয় স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নামে এক সমিতি গঠন করেন। ঐ সমিতির প্রধান কর্ম্মকেন্দ্র প্রথমে ব্যাঙ্ককে ছিল। তৎপরে ১৯৪৩ সালে ইহা সোনানে স্থানান্তরিত হয়। ব্রহ্মদেশ, থাইল্যাণ্ড, মালয়, সিঙ্গাপুর, ইন্দুচীন, যাবা সুমাত্রা ফিলিপাইন, সাংহাই, হংকং এবং জাপানে এই সমিতির শাখা ছিল। ইহার সদস্য সংখ্যা ছিল ৭॥ লক্ষ।

 ১৯৪১ সালের ৮ই ডিসেম্বর জাপান ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তৎপরে জাপান তড়িতগতিতে সংগ্রাম পরিচালনা করিয়া ১৯৪২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর অধিকার করে। ইহার পরেই জাপান সেনাপতি টোজো (General Hideki Tozo) প্রকাশ্য সভায় ঘোষণা করেন ভারতের স্বাধীন সংগ্রামে জাপান গভর্ণমেণ্ট Independence Leagueকে সাধ্যমত সাহায্য করিবেন।

 জেনারেল Tozoর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান প্রধান ভারতীয় নেতৃগণকে লইয়া টোকিওতে একটি সভার অধিবেশন হয়। তৎপরে রাসবিহারী বাবু ব্যাঙ্ককে আসিলে পূর্ব্ব এশিয়ার সমস্ত প্রবাসী ভারতীয়গণের প্রতিনিধিগণকে লইয়া তাঁহার নেতৃত্বে ১৯৪২ সালের ১৫ই জুন হইতে ২৩শে জুন পর্য্যন্ত কয়েকটি বৃহত্বর সভার অধিবেশন হয়। ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতালাভই এই সভাগুলির উদ্দেশ্য ছিল। রাসবেহারী বাবু বার্দ্ধক্যে উপনীত হওয়া সত্ত্বেও নবোদ্যমে একটি জাতীয় সেনাবাহিনী গঠন করিবার চেষ্টা করেন, এবং তদুপলক্ষে অর্থসংগ্রহ করিতে আরম্ভ করেন। যাঁহারা সেনাদলে যোগ দিলেন, তাঁহাদের সামরিক শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হইল।

সুভাষচন্দ্রের আগমন

 ১৯৪৩ সালের ১৫ই জুন তারিখে সুভাষবাবু বার্লিন হইতে একখানি জার্ম্মাণ সাবমেরিণের সাহায্যে প্রথমতঃ সুমাত্রা দ্বীপে উপস্থিত হন। তথা হইতে বিমানযোগে টোকিও নগরে আগমন করেন। তাঁহার আগমন সংবাদে নবগঠিত সৈন্যগণের মধ্যে এক উত্তেজনার সঞ্চার হয়। সুভাষবাবু ২রা জুলাই সিঙ্গাপুরে আসিয়া উপস্থিত হন। রাসবেহারী বাবু ৪ঠা তারিখে একটি বিরাট সভার আয়োজন করিয়া সুভাষবাবুকে Leagueএর সভাপতি হইতে অনুরোধ করেন। এই গুরুদায়িত্বভার সুভাষ বাবু আনন্দ সহকারে গ্রহণ করেন। রাসবেহারী বাবু League এর সর্ব্বোচ্চ পরামর্শদাতা বলিয়া স্থিরীকৃত হয়।

 পূর্ব্ব এশিয়ায় যে সময়ে শ্রীযুক্ত রাসবেহারী বসু ও শ্রীযুত সুভাষচন্দ্র বসুর অদম্য উৎসাহে স্বাধীন সংগ্রামের উয্যোগ আয়োজন চলিতেছিল, তাহার অব্যবহিত পূর্ব্বেই ১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট তারিখে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতি ‘ভারত ত্যাগ কর’ প্রস্তাব গ্রহণ করিলেন। সমগ্র ভারতবর্ষে দাবানল জ্বলিয়া উঠিল। কংগ্রেস নেতৃগণ একে একে কারারুদ্ধ হইতে লাগিলেন। ভারতীয়গণ দলে দলে প্রাণ বিসর্জ্জন করিতে লাগিলেন। ব্রিটিশ বিমান-বহরের বোমা বর্ষণে শত শত গ্রাম ও নগর বিধ্বস্ত হইতে লাগিল।