বাঙ্গালীর প্রতিভা ও সুভাষচন্দ্র/হরতাল

হরতাল

 সুভাষচন্দ্রের অদ্ভুত কার্য্যকুশলতার পরিচয় পাওয়া যায় ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর, যখন মহামান্য প্রিন্স অফ ওয়েল্‌স্ ভারতে আগমন করেন। তাঁহার কর্ম্মপন্থা এরূপ কার্য্যকরী হইয়াছিল যে সেইদিন কলিকাতা মহানগরীকে জনমানবহীন বিজন পুরীর ন্যায় প্রতীয়মান হইয়াছিল। কেবল কলিকাতায় নহে—সমগ্র বঙ্গদেশ এবং ভারতবর্ষের প্রধান প্রধান সহরগুলিতেও হরতাল হইয়াছিল।

 সুভাষচন্দ্রের চেষ্টায় হরতাল এইরূপে সাফল্যমণ্ডিত হওয়ায় আংলোইণ্ডিয়ান ও ইউরোপীয় সম্প্রদায় সমূহ এবং ব্যবসায় সংক্রান্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ইহাকে যুবরাজের মর্য্যাদাহানিকর বলিয়া মনে করিলেন। জনসাধারণ স্বেচ্ছায়ই হরতাল করিয়াছিল। কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবকগণ কেবল তত্ত্বাবধান করিয়াছিলেন—যাহাতে কোনও রূপ গোলযোগ না হয়। তথাপি আংলোইণ্ডিয়ান সংবাদপত্রগুলি কংগ্রেস ও খিলাফৎ প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিকে এই হরতালের কারণ স্থির করাতে ব্রিটিশ গভর্নমেণ্ট উহাদিগকে বেআইনি বলিয়া ঘোষণা করিলেন। কলিকাতা ও সহরতলীতে তিন মাসের জন্য জনসভা ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ হইল। কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবক ও খেলাফৎ কমিটিকে বেআইনি ঘোষণা করিয়া বাঙ্গালা গভর্ণমেণ্ট যে আদেশ দেন, তাহার প্রতিবাদকল্পে কলিকাতার নেতৃগণ এবং কর্ম্মীগণ এক বিবৃতি বাহির করেন। ইহার পরে ১৯২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসু ও অপর কয়েকজন নেতাকে কারারুদ্ধ করা হইল। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি বিনাশ্রমে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ হইল।