বিজ্ঞান বাবু/দ্বিতীয় অঙ্ক

দ্বিতীয় অঙ্ক
প্রথম গর্ভাঙ্ক।
নগেন্দ্র বাবুর লিখিবার ঘর।
নগেন্দ্র বাবু চেয়ারে উপবিষ্ট।

 নগেন্দ্র। সর্ব্বভূক্ ও মুদ্রা যন্ত্রকে তুষ্ট করা বড় দায়। social science পড়া অবধি জাতীয় ভাষার উপর আমার একেবারে বিতেষ্টা জন্মে গেছে। ইচ্ছা করে মাখন বাবুর মত বাঙ্গালা ভাষাটা একেবারে ভুলে যাই, কিন্তু মাতৃভাষা ভোলা ভাল কিনা তা স্থির কররার জন্য সময়ে সময়ে অনেক ভাবি, ভাবতে ভাবতে মাথা গরম হয়ে যায়। দূর হক্ আর ভাবতে পারি নি। ভাষাটা ভুলব কিনা? ভুলি, ভুলি কিনা ভুলি? আর কেমন করেই বা ভুলতে পারি; আমি বাঙ্গালা সংবাদপত্রের এডিটার, বাঙ্গালা আমার ইজেরার মহল। প্রতি সপ্তাহে কাগজ বার করি। বকলমে ডাক্তারি করি, বাপকে ডাক্‌লে নিজে যাই।

একজন কম্পোজিটারের প্রবেশ।

 স্ব-কলম অপেক্ষা ব-কলমে আমার বড় জোর; আমি স্বার্থপর হয়ে নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একবাণে দুটি পাখী মারতে চেষ্টা কচ্চি।

 কম্পোজিটার। মহাশয়! কাপির জন্য কম্পোজিটার সব বসে আছে; এখনও কাপি না পেলে শনিবার কোন মতেই কাগজ—

 নগেন্দ্র। কেও বাবু! আমি ভাষাটা ভুলে গিছি; তোমাদের জন্য কাগজ শিবদুর্গা কল্লেম তবুও ছাড়বে না। তোমাদের কাগজ তোমরা লেখ। তবে যত ক্ষণ না ভুলে ছিলাম ততক্ষণ তোমাদের লিখে দিয়েছি আর পারবো কি না বলতে পারি না। আমি বেশ বুঝতে পাচ্চি, আমার মাথাটার ভেতর social science এ ভরে যাচ্চে, সুতরাং বাঙ্গালা ভাষাটা সত্বর আমাকে বন্যার জলের ন্যায় ত্যাগ করে যাবে।

 (নেপথ্যে)। Husband, Husband আমি যাচ্চি, তুমি কি আমাকে meet করবার জন্য ready আছে।

 নগেন্দ্র। মুদ্রাযন্ত্রের প্রেত, একটু সরে দাঁড়াও, আমি বলে কহে দেখি, যদি আজ থেকে তোমাদের সঙ্গ ত্যাগ পারি। (হেমন্ত কুমারীর প্রতি) O! yes dear.

হেমন্তকুমারীর প্রবেশ।

 হেমন্ত। Dear! আজ তোমাকে এত unmindful দেখচি কেন? তোমার কি হয়েছে, তুমি আমায় বল, আমি তার প্রতিকারের চেষ্টা কচ্চি। এতে যদি আমার জীবনের সারাংশও ত্যাগ কর্ত্তে হয় তাতেও আমি স্বীকার আছি।

 নগেন্দ্র। আমার ভাবনা সমুদ্রবৎ, সদাই তরঙ্গ গুলি যেন তীরে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে নমস্কার কচ্চে?

 হেমন্ত। তোমার ও সম্পাদকীয় লম্বা ঘনঘোর ভাব আমি বুঝতে পাচ্চিনি। সাদা ভাষায় বল, পারি প্রতিবিধান করব। তুমি আমার dear husband, তোমার জন্য আমার জীবন ত্যাগ করা যায়, কিন্তু, ত্যাগ করবো বা করা উচিত কিনা জানি না।

 নগেন্দ্র। তোমার স্মরণ থাকতে পারে?

 হেমন্ত। না, স্মরণ থাকবার একটা ব্যাঘাত আছে; আমার মাথার বড় ঠিক নাই, সদাই ঘুরে, সুতরাং তোমার বলবার কষ্ট বাঁচাবার জন্য আমায় past historyর জীর্ণ পাতা গুলি উল্টাবার কষ্ট তোমার ন্যায় husband এর দেওয়া উচিত নহে।

 নগেন্দ্র। আমি social science পড়তে আরম্ভ করা অবধি মাতৃভাষা ভুলবো কিনা তাই ভেবে স্থির কর্ত্তে পারি নাই। মাখনের মত আমারও ইচ্ছা করে মাতৃভাষা ভুলে যাই, এতে তোমার কি মত?

 হেমন্ত। মাখন বাবুর মত পাল্লে ভাল বটে, কিন্তু, তুমি কি তা পারবে?

 নগেন্দ্র। আমিও তাই স্থির করেছি, এখন তোমার একটি কার্য্য কল্লে ভাল হয়।

 হেমন্ত। কার্য্য! কি কার্য্য?

 নগেন্দ্র। আমি সম্পাদকীয় ভার তোমার হস্তে ন্যস্ত কর্ত্তে ইচ্ছ করি।

 নেপথ্যে। Nagendra Babu may I go in?

 হেমন্ত। তোমার কাগজ বাঙ্গালা না ইংরাজি?

 নগেন্দ্র। বাঙ্গালার ভাগটা বেশী, ইংরাজি কলম দুই তিন আছে।

 হেমন্ত। সাহেব মহলে আমার বেশী পসার হওয়া অবধি যদিও তোমার বাঙ্গালা ভাষাটা আমার তাদৃশ মনে নাই তবু তোমার কথা অনুসারে দুই একটা issueর ভার নিতে আমি স্বীকার আছি।

 নগেন্দ্র। আঃ বাঁচলেম-তুমি আমার—

 হেমন্ত। তুমি আমার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে বলে আমি এই ভার নিতে স্বীকার করি নাই, কেবল দেখাইতে জগৎকে যে স্ত্রীজাতীর দ্বারা কাগজ এ দেশেও সম্পাদন হ’তে পারে। তুমি প্রচার করে দাও, আজ হ’তে তোমার কাগজের সম্পাদক আমি।

 নগেন্দ্র। রামকুমার, রামকুমার! মুদ্রাযন্ত্রের প্রেত রামকুমার!

 (নেপথ্যে)। আজ্ঞে যাই।

রামকুমারের প্রবেশ।

 নগেন্দ্র। দেখ! এই বারের নম্বর হ’তে কাগজে লিখে দাও

সম্পাদক শ্রীমতি হেমন্ত কুমারী।

 রামকুমার। যে আজ্ঞে। আর কাপি?

 হেমন্ত। তুমি কাপির কথা আর নগেন্দ্র বাবুকে জিজ্ঞাসা করো না। কাগজের সঙ্গে নগেন্দ্র বাবুর আর কোন সম্পর্ক নাই।

 রামকুমার। যে আজ্ঞে কাপি?

 হেমস্ত। কাপি কি তোমাদের কিছুই নাই।

 রামকুমার। আজ্ঞে না; আমরা কাপির জন্য বসে আছি।

 (নেপথ্যে) Nagendra Baboo are you in

 হেমন্ত। মাখন বাবু এসেছেন; সঙ্গে করে নিয়ে এস।

নগেন্দ্রনাথের প্রস্থান।
শিখ বাঁধা Ganot হস্তে মাখন বাবুকে সঙ্গে করিয়া নগেন্দ্র বাবুর পুনঃ প্রবেশ।

 হেমন্ত। কাপি কি আপাততঃ কিছুই নাই। আচ্ছা আমি কলম ধর্‌চি।

 নগেন্দ্র। Science এ মাখন বাবু! মুদ্রাযন্ত্র চলে, কিন্তু Science এ কাপির কিছু ব্যবস্থা কর্ত্তে পারেন?

 মাখন। Good day Mrs. Bose, science এ না হয় কি? আমাদের দেশ যখন science এর মর্ম্ম বুঝতে পারবে, তখন কাপি কি, author দের আর বই লেখার কষ্ট পেতে হবে। আমার ইচ্ছা আছে multiplication table এর মত বই লেখার একটা machine সত্বর তৈয়ারি করব বা England থেকে order দিব।

 হেমন্ত। মাখন বাবু! আপনার কথা শুনে সুখী হলেম, আর না হবেই বা কেন? যদি আমাদের বৃদ্ধ মন্ত্রি scientific frontier কর্ত্তে পারেন তা হ’লে তোমাদের এই সামান্য কার্য্য না হবেই বা কেন?

 নগেন্দ্র। (হেমন্তকুমারীর প্রতি) বলি হ্যাঁগা হ’বে? তা হ’লে কি আবার—

 হেমন্ত। মাখন বাবু মনে করেন ত সকল কার্য্যই হ’তে পারে। ভাল মাখন বাবু! বিজ্ঞান বলে মুদ্রাযন্ত্র আপনি চলে না কেন?

 মাখন। আপনি বিজ্ঞানের প্রতি অচলা ভক্তি দেখান, it will move on its axis.

 নগেন্দ্র। মাখন বাবু! বিজ্ঞান শিখ্‌লে কি চসমা ব্যবহার না করে থাকা যায় না?

 মাখন। থাকা যায় না নহে, উচিত নয়, কেন না, বিজ্ঞানের ভিতর, আর কেবল বিজ্ঞানের ভিতরই বা কেন, সমস্ত উচ্চ শিক্ষা ভিতর যে অতি minute particles আছে, যা আমাদের naked eyeতে দেখতে পাওয়া যায় না, তা দেখবার জন্য চস্‌মা ব্যবহার করা চাই। যেমন microscope না হলে অতি সূক্ষ্ম পদার্থ দেখতে পাওয়া যায় না, science এও সেই রূপ চস্‌মা না হ’লে অনেক কথা বুঝতে পারা যায় না। এটা আমি তোমাকে বল্‌তাম না; তুমি আমার হেমন্ত কুমারীর husband বলেই তোমাকে timely inform কল্লেম, কিন্তু দেখো এ secret যেন আর কেহ জানতে না পারে।

 নগেন্দ্র। এ চস্‌মা কোথা থেকে কিনেছেন?

 মাখন। From Mullick Brothers.-Tailors Out-fitters &c.

 নগেন্দ্র। বাঙ্গালীর দোকান থেকে?

 মাখন। তার কারণ, এই firm এর চস্‌মা চোকে দিলে অল্প বিজ্ঞান শিক্ষা কল্লেও বহুজ্ঞান দেখায়।

 মাখন। Excuse me Mrs. Bose, I am just coming. নগেন্দ্র বাবু! আপনি আসবেন কি?

 নগেন্দ্র, চলুন।

উভয়ের প্রস্থান।

 হেমন্ত। (স্বগতঃ) কাপির জন্য রামকুমার ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। আমার সাধ্য নাই যে কাগজে কলমে করি।

রামকুমারের প্রবেশ। অর্থ পুস্তকের পাণ্ডুলিপি হস্তে অবিনাশের প্রবেশ।
 অবিনাশ। মহাশয়! আমার এই বই খানা ছেপে দিতে হবে, কতকরে ফর্ম্মা চার্জ্জ করবেন?

 হেমন্ত। কি ছাপতে হ’বে দেখি? (স্বগতঃ) এই খানিক এইবার কাগজে যাক্‌না কেন, এওত কাপি।

 অবিনাশ। এই কাপি দেখুন।

 হেমন্ত। রামকুমার! রামকুমার!

 (নেপথ্যে)। আজ্ঞে যাই।

রামকুমারের প্রবেশ।

 হেমন্ত। এই নাও কাপি নিয়ে যাও, আজিই আমার প্রুফ চাই। (অবিনাশের প্রতি।) আপনি এখন যেতে পারেন, কাল এলে দেখতে পাবেন।

 অবিনাশ। তবে কাপিটা আপনার কাছে রৈল।

 হেমন্ত। আমার কাছে, কম্পোজিটারের কাছে রৈল।

 অবিনাশ। অজ্ঞে তাই;

প্রস্থান।

 হেমন্ত। রামকুমার তুমি যে বাঁদরের মত দাঁড়িয়ে রইলে? যাও কম্পোজ করগে!

 রামকুমার। এই কি খবরের কাগজের কাপি?

 হেমন্ত। হাঁ, হাঁ, হাঁ, আমার লেখাও যা আর আর একজনের লেখাও তা, আমি যখন দায়িত্ব নিচ্চি তখন তোমার আর ভাবনা কি? এ তোমার শালগ্রামের মকোদ্দমা নহে।

 রামকুমার। সেটাও ভাল ছিল।

প্রস্থান।
 হেমন্ত। সম্পাদক হওয়া ভাল নহে, ইতর লোকের সহিত অনেক কথা কৈতে হয় আমি একাজ আর স্বীকার কর্‌বো না।
প্রস্থান।
মাখন ও নগেন্দ্রের প্রবেশ।

 মাখন। Science কলির দেবতা; আপনাদের উচিত শক্তির পূজা না করে Science মহাশক্তির পূজা করা। নগেন্দ্র বাবু! আপনি দেখ্‌বেন in time আপনাদের পুত্র কন্যার বিবাহও Science এ হবে।

 নগেন্দ্র। আপনাদের বিজ্ঞান বিকাশিনী সভায় এবার কোন Subject এ Lecture দেবেন?

 মাখন। মৃত্যুর পর জীবের পুনর্জ্জীবন হ’তে পারে কি না?

 নগেন্দ্র। আপনার Subject টি বড় সুন্দর ও interesting হ’বে? কবে Lecture দেবেন? আপনার data কি?

 মাখন। আপনি Science পড়েছেন না? আপনার মুখ হ’তে এরূপ Foolish meaningless কথা নির্গত হ’বে তা আমার একদিনের জন্যও মনে হয় নাই। আপনি interesting বল্লেন কেমন করে? যেটা সত্য সে আবার interesting কি? আমি সোমবার the 16th instant এ কলিকাতার light and elite এর নিকট আমার এই গভীর গবেষণার পরিচয় প্রাদান করবো। আমি আপনাকে ও more specially আমার friend Mrs. Bose কে সেই occasion এ present থাক্‌তে অনুরোধ করি। শুনন আমার data Science nothing but science.

 নগেন্দ্র। আমাকে excuse করবেন; আমি আপনার Lecture day তে Mrs. Bose কে সঙ্গে করে নিয়ে যাব। আমার একটি request আছে।

 মখন। কি বলুন?

 নগেন্দ্র। আপনার lecture টা পড়া হলে copy টা যদি আমায় দেন তা হ’লে আমি ওটা আমার কাগজে publish করে দি, বাঙ্গালা সংবাদ পত্রে ওরূপ প্রবন্ধ প্রকাশিত হ’লে পঙ্গপালের ন্যায় গ্রাহক ছুটে আসবে; আমারও কিছু লাভ হ’তে পারে।

 মাখন। আজ কাল বাঙ্গালা News paper এও কি বিজ্ঞানের আন্দোলন হ’চ্চে?

 নগেন্দ্র। অত্যন্ত অধিক।

 মাখন। আমি সেই বিজ্ঞান আবিষ্ক্রেতাকে শত ধন্যবাদ দি।

ব্রাহ্মিকা বেশে হেমন্ত কুমারীর প্রবেশ।

 হেমন্ত। (ঘড়ি খুলিয়া) মাখন বাবু! আমাকে excuse করবেন, আমি engagement ঠিক রাখতে পারি নাই। আমার একটি European friend আমাকে তার private chamber এ বসিয়ে দেরি করে দিলেন।

 মাখন। oh! never mind; হ্যাঁ আপনি সে দিন বিবাহের কথা কি বল্‌ছিলেন?

 হেমন্ত। সে কথার আলোচনা chamber এ বসে হ’বে; এখন চলুন একটু evening walk করে আসা যাক্‌। আমার সেই European friend আমাকে তাঁর গাড়ি খানি kindly lent করেছেন। Nagendra Baboo তুমি একটু wait কর। আর, আমার নামে যদি কোন চিটি আসে সে দিন কার মত তুমি তাহা খুলো না। আমি তোমাকে বলছি English law তে এমন কিছুই নাই যে husband, wife এর চিটি খুলে পড়তে পারে। এখন আমরা চল্লেম।

মাখন লাল ও হেমন্ত কুমারীর প্রস্থান।

 নগেন্দ্র। শিক্ষিতা স্ত্রী চরিত্র কি জঘন্য! যে স্ত্রী পরিণয় শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েও স্বামীর বিনা অনুমতিতে গোপনে বিহার করে তাহার চরিত্র কি ভয়ানক। কি সন্দেহ জনক! হেমন্ত সত্য সত্যই কি কূ-পথাবলম্বী! না না, একথা কখনই মনে স্থান পায় না; হেমন্ত আমার সতী সাবিত্রী; ইংরাজ মহলে তার যে এত আলাপ সে কেবল কালেজে পড়ার জন্য বৈত নহে, এতে তার চরিত্র সম্বন্ধে আমি কোন প্রকারে সন্দেহ কর্ত্তে পারি না। (পরিক্রমণ করিতে করিতে) আমার দুরদৃষ্ট বশতঃই আমি বিজ্ঞান শিক্ষা করেছি; আমি মাখনের সঙ্গে পরিণয় করে জ্বলন্ত অনলে হেমন্ত কুমারীকে আহুতি প্রদান করেছি; সোনার কমল চণ্ডালের হস্তে অর্পণ করেছি। হায়; কেন বিজ্ঞান শিক্ষায় আমার ইচ্ছা হলো? বিজ্ঞান কর্ম্মনাশা পার হক্‌। আমি বিজ্ঞান বিজ্ঞান করে তোমার কোন কার্য্যই শুনি নাই, কিন্তু আমি তোমাকে প্রাণ অপেক্ষা ভাল বাসি, তোমার শত সহস্র দোষ সত্বেও আমি তোমাকে ভাল বাসি। তবু বলি তুমি আমার! হেমন্ত তুমি আমার! আমি সংসার ত্যাগ কর্ত্তে পারি তবু তোমার ন্যায় সুরূপা স্ত্রীকে আমি পরিত্যাগ কর্ত্তে পারি নাই। হেমন্ত! একবার বল তুমি আমার; শুনেও আমি সুখে প্রাণ ত্যাগ করি। যাই দেখিগে তারা কোথায়?

প্রস্থান।
দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক।
মাখন লালের বৈঠকখানা।
মাখন লাল ও হেমন্ত কুমারী।

 হেমন্ত। আপনার অনুমান সত্য, আমি এ সম্বন্ধে কখনই স্বীকার করি নাই। কালেজে পড়বার সময় আমি আমার জীবন যৌবন বা জীবন যৌবনের ছায়া মাত্র একজনকে অর্পণ করে ছিলাম; সে মূর্খ বুঝতে না পেরে কিছু দিন তার আদর করে আবার আমায় ফিরিয়ে দিলে, সেই অভিমানে, ক্রোধে, শোকে আমি ইহা স্বীকার করি। এ স্বীকারেও একটা সুন্দর contract আছে সেই Contract অনুসারে আজ আমি Mackenzie Lyall এর highest bidder এ আমার দেহ বিক্রয় করবো; যদি আপনার ন্যায় ক্রেতা পাই I would be only happy.

 মাখন। বিবাহে আমার তাদৃশ ইচ্ছা নাই or else I would have taken a chance, তবে তোমার ন্যায় সুশিক্ষিতা স্ত্রী যদি সংসারে আমার সহায় হয়, তাহা হ’লে আমার যত objection আছে সকল গুলিই might go to the walls.

রামকান্ত বাবুর প্রবেশ।

 রামকান্ত। Good morning Mrs. Bose, Good morning Mr. Mookerjea.

 মাখন। আসুন, আপনার Practice কেমন চলচে?

 রামকান্ত। Science শেখা অবধি client এর number দিন দিন swell কচ্চে।

 মাখন। Very glad to hear.

 রামকান্ত। আপনাদের বিবাহের কথা শুনছিলাম না।

 মাখন। বিবাহের idea ই আমি একবারে give up করেছি।

 হেমন্ত। সত্য নাকি?

 মাখন। প্রায় বটে, তবে তোমার সম্বন্ধে একটু think করবো।

 রামকান্ত। আপনি কি সকল প্রকার বিবাহের idea ত্যাগ করেছেন।

 মাখন। হাঁ।

 রামকান্ত। কি কি?

 মাখন। কুমারী বিবাহ, বিধবা বিবাহ, গান্ধর্ব্ব্য বিবাহ।

 রামকান্ত। আপনি যে সকল বিবাহের কথা বল্লেন সকল গুলিই ত্যাগ করা উচিত? কারণ প্রথমটি বিজ্ঞান বিরুদ্ধ, দ্বিতীয়টি শাস্ত্র নিষিদ্ধ, তৃতীয়টি সমাজ বিরুদ্ধ; কিন্তু এই সকল দোষ বর্জ্জিত যদি কোন প্রকার বিবাহ থাকে তাহ’লে আপনি স্বীকার কত্তে পারেন কি না?

 মাখন। Oh yes, বিশেষতঃ আমি যাকে heartily ভালবাসি তাকে যদি পাই।

 রামকান্ত। আপনি অঙ্গীকার কচ্চেন?

 মাখন। হাঁ।

 রামকান্ত। যদি আপনার কোন বাধা না থাকে তবে তাহার নাম জিজ্ঞাসা কত্তে পারি কি?

 মাখন। আমার যে আপত্তি পূর্ব্বে ছিল সে আপত্তি এখন নাই, তাই আমি আপনার নিকট প্রকাশ কচ্চি, তাঁর নাম শ্রীমতি হেমন্ত কুমারী।

 রামকান্ত। (জনান্তিকে হেমন্ত কুমারীর প্রতি) আপনি এতে স্বীকার আছেন।

 হেমন্ত। (জনান্তিকে) আমি বিবাহ করেছি বটে, কিন্তু আমার সে বিবাহ purely western অর্থাৎ সাময়িক, আমি সে বিবাহ বাতিল বা নামঞ্জুর কত্তে পারি ও প্রস্তুত আছি; কারণ আমার husband আমার নিকটে নাই।

 রামকান্ত। মাখন বাবু! আইন মতে আপনি সধবা বিবাহ কর্ত্তে পারেন, তার বিপক্ষে শাস্ত্রে কোন কথাই নাই। আপনি সধবা বিবাহ করুণ, শাস্ত্র আপনার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকবে মাত্র, কোন কথা বলবার ক্ষমতা থাক্‌বে না।

 মাখন। আমি বিবাহ কল্লে বিজ্ঞানের কোন অনিষ্ট হ’তে পারে?

 রামকান্ত। কোন সম্ভাবনা নাই; তবে যদি আপনার আশঙ্কা হয় আপনি আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানবিৎ পণ্ডিত Voxley র মত নিতে পারেন; তিনি আমাদের আচার্য্য সুতরাং তার মত নিলে আর কোন বাধা মন মধ্যে উদয়ও হবে না। বলেন ত আমি এখনই Telegraph করি।

 হেমন্ত। ইহাই যুক্তি যুক্ত বটে, তোমার বিজ্ঞানের পথে আমি কণ্টক হ’তে ইচ্ছা করি না।

 মাখন। A Daniel has come to judgment Yea a Daniel. আপনি Telegraph করুণ।

 রামকান্ত। বেহারা বেহার়া!

 (নেপথ্যে)। যাইচি যাইচি।

দামু বেহারার প্রবেশ।

 তার বই নিয়ায়।

দামু বেহারার প্রস্থান ও টেলিগ্রাফের খাতা লইয়া পুন প্রবেশ।

 মাখন। (বেহারার প্রতি)। তুই বাইরে গিয়ে বস্‌গে।

দামুবেহারার প্রস্থান

 রামকান্ত। (লিখিতে আরম্ভ)। What objection in science marrying married lady.

 মাখন। address কি দিলেন?

 রামকান্ত। Dr. R. Voxley—Washington East. Urgent. From Makhun M. A. in Science.

 হেমন্ত। এই হলেই যথেষ্ট হবে বোধ হয়?

(কাগজ বেহারার হস্তে প্রদান।)

 মাখন। Oh yes, quite—

 হেমন্ত। কতক্ষণের ভিতর reply পাওয়া যাবে?

 রামকান্ত। অন্য সময় হলে 6 hours লাগত কিন্তু এটা special বলে বোধ হয় শীঘ্র পাওয়া যাবে।

 মাখন। আর বিশেষ আমি Science এ M. A. আমার reply শীঘ্র আসবে।

 রামকান্ত। আপনার সঙ্গে তার পরিচয় আছে?

 মাখন। কিছু মাত্র নহে?

 রামকান্ত। তবে কিরূপে বল্লেন?

 মাখন। Telephone এর একটি wire work কল্লে যেমন তার সঙ্গে যত connection আছে সকল গুনোই work করে সেই রকম science এর একটা magnetic ক্ষমতা আছে—যেখানেই যে থাকুক না কেন জান্‌তে পারা যায়।

 রামকান্ত। আপনারা তা হ’লে বিবাহের জন্য প্রস্তুত হন।

 হেমন্ত। আমি প্রস্তুত আছি।

 মাখন। একটু অপেক্ষা করুণ; যদি বিধান না আসে?

 রামকুমার। তার দায়িত্ব আমার।

 মাখন। তুমি আমার প্রিয় শিষ্য সুতরাং I cannot withhold your desire, এই উত্তর এসেছে।

টেলিগ্রাম লইয়া দামুর প্রবেশ ও মাখনকে দিয়া প্রস্থান।

 খবরটা কি এলো বলা যায় না, খোলা যাক্।

 রামকুমার। না একটু অপেক্ষা করুণ, আমি একবার চোক বুজিয়ে ঈশ্বরের নাম নি, তার পর আপনি খুলিবেন; যদি এতে কোন প্রতিকূল কথা থাকে পরম পিতা তাহার অনুকূল করবেন।

চক্ষু মুদিত করিয়া উপবেশন।

 এখন খুলুন (দণ্ডায়মান হইয়া)। ও হরি দয়াময়, ও হরি দয়াময়।

 মাখন। Married lady to marry, no objection in Science.

 রামকান্ত। বিবাহ এক্ষণে কোন মতে হবে?

 মাখন। মতামত এতে আমার কিছুই নাই; বিজ্ঞানে যখন কোন প্রতিবন্ধক নাই তখন আমি বিবাহ কত্তে স্বীকার আছি।

 রামকান্ত। তবে ব্রাহ্ম মতে হোক্‌।

 মাখন। ছিঃ ছিঃ ওটা কি আবার মত; যে মতে মুচিরমেয়ে ব্রাহ্মণে বিবাহ করে, যেমতে পুত্র মাতার বিবাহ দেয়, ভাই ভগ্নীতে চোক বুজুলে ধর্ম্ম বা প্রেম হয়, আমি কি সেই লাঙ্গুলহীন শৃগাল দলের মত নিয়ে বিবাহ করব, কখনই নহে। আমি Scientific মতে বিবাহ করবো, যে বিবাহ কদাচ null and void হবেনা।

 রামকান্ত। সে কি রকম?

 মাখন। Ganot র নূতন editionsএ যে মত প্রকাশিত হয়েছে আমার সেই মত। Electricity যার ব্রহ্মা, তার যাহার সূতা, battery যাহার মাকু, এ আমার সেই মত। (হেমন্তকুমারীর প্রতি)। চল আমরা সেই মত অনুযায়ী বিবাহ শেষ করে আসি।

উভয়ের প্রস্থান।

 রামকান্ত। কি সুখের মিলন, এমন না হ’লে কি বিবাহ, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি ব্রাহ্ম হয়েও এই শুভ মিলনের সময় একবার ও ঈশ্বরের নাম কর্ত্তে পাল্লেম না।

মাখন ও হেমন্তকুমারীর প্রবেশ।

 মাখন। এ প্রক্রিয়া ভাল কি না?

 হেমন্ত। তুমি যাকে ভাল বলে স্বীকার করেছ আমি তার দোষ দেখতে পাব কেমন করে?

কাগজ কলম লইয়া নগেন্দ্রনাথের প্রবেশ।

 নগেন্দ্র। তুমি এখানে বসে আছ আর আমি কাগজ কলম নিয়ে এমন স্থান নাই যে তোমার অন্বেষণ করি নাই।

 রামকান্ত। কেন?

 নগেন্দ্র। কাগজের কাপি লিখ্‌বে কে? আমার কি আর কাগজ লেখবার অধিকার আছে?

 হেমন্ত। আমি এখন মাখন বাবুর পরিণীতা স্ত্রী তোমার কাগজ, তোমার কলম, তোমার কাপি ও তোমার সহিত সম্পর্ক আজ হতে বা ইহার এক মুহূর্ত্ত পূর্ব্ব হ’তে আমার সহিত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

 নগেন্দ্র। সে কি হেমন্ত! কেন হেমন্তকুমারী আমি তোমার কি দোষ করেছি? আমি তোমার স্বামী; স্বামী স্ত্রীলোকের গুরু; আমি বর্তমান থাক্‌তে—

 হেমন্ত। এ পরাশরের মত, সুতরাং ঠিক শাস্ত্রসম্মত হয়েছে, তুমি যখন অনুপস্থিত ছিলে তখন আমি এই বিবাহ করেছি। এ’ত দোষ তোমার কিছুই নহে; আমার ইচ্ছা।

 নগেন্দ্র। তোমার এ ইচ্ছা কেন হ’লো, হেম?

 হেমন্ত। কেনর উত্তর নাই, আমি তোমাকে বিবাহ করেছি। আমার ইচ্ছা আমি তোমাকে ত্যাগ কল্লেম। তুমি জেন আজ হ’তে আমি মাখন বাবুর পরিণীতা স্ত্রী।

 নগেন্দ্র। অ্যাঁ ওমা আমার কি হ’বে। আমি কার জন্য নিত্য ঘরে আস্‌বো। (ক্রন্দন)

 রামকান্ত। নগেন্দ্র বাবু! এটা ভদ্রলোকের বাড়ি, এটা শ্মশান বলে মনে করবে না, যে ইচ্ছা মাপিক চীৎকার কর্ত্তে পারেন।

 নগেন্দ্র। শ্বাশান হ’লেও বোধ হয় ভাল ছিল। এটা শ্মশান অপেক্ষাও জঘন্য স্থান, এখানে জীয়ন্তে ত্যাগ কর্ত্তে হয়। ওগো আমার কি হ’ল গো-আমার পোষা পাখী কে ধল্লে গো (ক্রন্দন)।

গৌরহরি ও শীতলের প্রবেশ।

 গৌরহরি। কি হয়েছে? তুমি কাদঁচ কেন?

 মাখন। তোমার এতে interfere করবার কি প্রয়োজন আছে? তুমি এখান হ’তে যাও।

 নগেন্দ্র। ওগো আমার বিয়ে করা মাগ; বিয়ে করেছে আর ছেড়ে দেবে না। (ক্রন্দন।)

 শীতল। বিয়ে করা কি রকম?

 নগেন্দ্র। ছাঁদ্‌লা তলায় সাত পাক দিয়ে এনেছি।

 গৌরহরি। কথাটা কিছু বুঝতে পাচ্চিনি, ব্যাপার টা কি?

 মাখন। ব্যাপার এই হেমন্তকুমারী, নগেন্দ্রবাবুর পরিণীতা স্ত্রী; উনি নগেন্দ্র বাবুকে পরিত্যাগ করে আজ আমায় বিবাহ করেছেন।

 গৌরহরি। সে কি রে? তুই বলিস্ কি?

 মাখন। হ্যাঁ, I mean what I say.

 গৌরহরি। ও শীতল বাবু! এ কি বিবাহ না—

 মাখন। হাঁ বিবাহ।

 শীতল। এ কি মতে বিবাহ।

 মাখন। purely scientific মতে; পাছে তোমার মত মূর্খ এর বিপক্ষে কোন কথা বলে সে জন্য এই দেখ তার ব্যবস্থা ও আনিয়েছি।

 শীতল। সধবার কি বিবাহ হয়?

 রামকান্ত। না হয় তার শাস্ত্র কিছু আছে? স্বীকার করি বিধবা বিবাহ অশাস্ত্রীয়, কুমারী বিবাহ বিজ্ঞান বিরুদ্ধ, কিন্তু সধবা বিধাহ সম্বন্ধে তাহার প্রতিকূল কোন কথা কিছু আছে?

 শীতল। নাই বলেই কি বিবাহ হতে পারে?

 মাখন। পারে না কিসে? যার প্রতিকূল বা অনুকূলে কোন কথাই নাই তাহাই শাস্ত্র সম্মত। “মৌনং সম্মতি লক্ষণ” এটা চির প্রসিদ্ধ।

 গৌরহরি। বলি বিয়েটা কি হয়ে গেছে।

 মাখন। বহুকাল।

 রামকান্ত। কেবল শাঁক বাজান বাকি আছে, সেটা আপনিই করুণ।

 মাখন। একটা formal contract কেবল বাকি আছে, তাই Collectorateএ stamp এর জন্য লিখেছি। সেটা এলেই engross করে দেব? তা হ’লেই finish। আর উকীল বড় কেও কেটা নহে।

 গৌরহরি। কুলাঙ্গার তোর দ্বারা আমার বংশের অপমান হ’ল। যা আমার বংশের কেহ কখন করে নাই আজ তোর দ্বারা তা হ’ল।

 মাখন। আমার দ্বারা তোমার বংশে মুখ উজ্জ্বল হ’ল। science এ M. A. পাশ তোমার বংশে কে দিয়েছে? আর বিজ্ঞানের উন্নতি করে কে কবে সধবা বিবাহ করেছে? কে কবে বিজ্ঞানের উজ্জ্বল মুখের gloss বার করেছে?

 গৌরহরি। আর তোর মুখ দেখতে চাই নাই; তোর ছাই পাঁশ তোরই থাক, আমার বংশে যেন আর না ঢোকে। তুই আমার বাড়ি থেকে বের হ; ও পাপ হওয়া আর আমি বাড়িতে রাখতে চাই না।

 মাখন। Photograph ও কি নয়?

 গৌরহরি। না। তুই আমার বাড়ি থেকে বের হ।

 মাখন। মাকে একবার বৌ দেখিয়ে যাই।

 গৌরহরি। তোর মা ওমন কুলাঙ্গারের মুখ দেখ্‌তে চায় না।

  মাখন। বলি বৌয়ের কি নহে, পরের মনের কথা তোমার জানবার শক্তি নাই।

 গৌরহরি। তুই আমার বাড়িতে ঢুকিস নি, কুপুত্রের চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।

 মাখন। আচ্ছা তাই হ’বে আমি চল্লেম। Come dear এ সকল old fool এর কাছে থাক্‌তে নাই।

 নগেন্দ্র। হেমন্তকুমারি! ও হেমন্তকুমারি তুমি আমাকে সত্তি সত্তি কি ত্যাগ করে চল্লে। তোমার সঙ্গে আমার সাধের Social Scienceও চল্লো।

 গৌরহরি। আজ থেকে তুমি আমার তেজ্য পুত্র। আমি আমার বিষয় আশয় দেবত্ব করে ফেলব।

 মাখন। রামকান্ত বাবু! নূতন আইন খানি খুলে দেখত আমি বাবার তেজ্য পুত্র হ’তে পারি কি না?

 রামকান্ত। না তা কখনই নয় তেজ্য হ’তে পারেন এরূপ আইনএর মর্ম্ম নহে; এর জন্য বোধ হয় একটা উকীল সমিতি আবশ্যক। উনি এখনও তোমাকে পুত্র বলে স্বীকার কচ্চেন তা হ’লেই হ’ল।

 গৌরহরি। দূর হও-দূর হও,—এখনি আমার বাড়ি থেকে বের হও।

 নগেন্দ্র। মহাশয়! আমার উপায় কি হবে, আমি কি আমার স্ত্রীকে আর পাব না? হায় কেন শিক্ষিতা স্ত্রীকে বিবাহ করেছিলাম? কেন স্ত্রী স্বাধীনতার জন্য ব্যস্ত হয়ে ছিলাম; কেন হেমন্তকুমারীকে মাখনের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়ে ছিলাম? বোধ হয় আমার ন্যায় হতভাগ্য এখানে অনেক আছেন, তাঁহারা আমার দৃষ্টান্ত দেখে শিক্ষালাভ করুন যে স্ত্রী স্বাধীনতা বা এরূপ শিক্ষিতা বালিকার পরিণয় শৃঙখলে আবদ্ধ হ’য়ে যেন কেহ কখন আর ঘোর শোকার্ণবে ঝাঁপ না দেন। যাই দেখিগে পুলিশের সাহায্যে যদি এর কোন উপায় হয়।

সংবাদ পত্র হস্তে অবিনাশের প্রবেশ।

 অবিনাশ। (হেমন্তকুমারীকে দেখিয়া)। এই যে; একেবারে আমার সর্ব্বনাশ করেছেন অর্থপুস্তক কাগজে সমস্ত প্রকাশ করেছেন! আমি জিজ্ঞাসা করি আমার কপি কাগজে প্রকাশ করবার অধিকার আপনার কি আছে?

 হেমন্ত। তোমার সহিত আর আমি কথা কহিতে ইচ্ছা করি না, কারণ আজ হ’তে কাগজের সম্পাদক আমি নহি, আমার প্রিয়বন্ধু বাবু নগেন্দ্র নাথ।

 অবিনাশ। কাগজের সঙ্গে আমারই বা সম্পর্ক কি?

 হেমন্ত। সেই কম্পোজিটার কে জিজ্ঞাসা করগে?

 নগেন্দ্র। তুমিত আমায় ছাড়লে, আবার বোঝা ঘাড়ে দাও কেন?

 হেমন্ত। আমি তোমার সহিত কথা কহিতেছি না।

 অবিনাশ। আমি সংবাদ পত্রের নামে “রিভাই সিং ব্রেঞ্চে” নালিশ করবো?

 হেমন্ত। শতবার।

 নগেন্দ্র। হেমন্ত! আমায় রক্ষা কর; জ্বলন্ত অনলে আর ঘৃতাহুতি দিও না।

মাখন, রামকান্ত ও হেমন্ত কুমারীর প্রস্থান।

 অবিনাশ। আরে তুমি যাও যে; আমার ব্যবস্থা করে দাও।

 (নেপথ্যে) তোমার সকলি ঐ ব-কলমে এও না হয় তাই হয়েছে।

 অবিনাশ। আমার দেখচি প্রতি পদে সর্ব্বনাশ।

 নগেন্দ্র। আমার ও তাই; তুমি বই হারিয়েছ আমিও মাগ হারিয়েছি; এস ভাই দুই জন মিলে এর একটা উপায় করা যাক্‌গে।

উভয়ের প্রস্থান।
 গৌরহরি। অল্প শিক্ষার কি বিষময় ফল! সে শিক্ষার দোষে, এই বৃদ্ধ বয়সে আমার কত কষ্ট তা বলে জানন যায় না। বর্ত্তমান শিক্ষা প্রণালীর জঘন্য আদর্শ আমার পুত্র। হায়! সংসারে, আমার ন্যায় কত লোক আছেন; বর্ত্তমান জঘন্য শিক্ষা প্রণালীর জন্য তাহারা না জানি কত কষ্টই পাচ্ছেন। এই শিক্ষার প্রভাবে পুত্র, পিতা, মাতা, ভাই ভগ্নিকে সন্মান করে না; প্রতিবেগীকে সমাদর করে না; ইহার জন্য তাহাদের হৃদয়ে সহানুভূতির নাম মাত্রও নাই। হায় হায়! পুত্রবান হয়েও অপুত্রক হয়ে জীবন ত্যাগ কত্তে হ’ল এর অপেক্ষা দুঃখের বিষয় আর কি আছে? সমাগত বন্ধুগণ! একবার আমার অবস্থা ভাল করে ভেবে দেখুন। যাঁহারা আমার ন্যায় হতভাগ্য তারা এই সময় হতে সাবধান হউন নতুবা আমার ন্যায় শোক তাদের ও সঞ্চিতও আছে।

যবনিকা পতন।