বিজ্ঞান বাবু/প্রথম অঙ্ক
শীতল। আজ বিজয়া দশমী, মনোমালিন্য ভূলে গিয়ে পরম শক্রকেও আজ আলিঙ্গন কর্ত্তে হয়, কিন্তু মনুষ্যের মন সহজে শক্রতা ভুল্তে পারে না বলে লোক ভেদে ব্যবস্থার ভেদ হয়েছে। বৈরনির্য্যাতন চিন্তা আমাদের হৃদয় চিরদিন যে পরিমাণে অধিকার করে থাকে মনের রূপান্তর ব্যতীত তাহা সহজে দূর করা যায় না; অথচ শত্রুকে আলিঙ্গন করে হৃদয়ের মহত্ব প্রকাশ করা নিতান্তু প্রয়োজন।
রামকান্ত। শীতল বাবু! আপনার কথা শুনে প্রাণে বড় ব্যথা পেলেম, আপনি ওরূপ কথা বলবেন না। আপনি আপনার হৃদয়ের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক ভাব এককরে দেখুন, সেরূপ করে যাহাকে আলিঙ্গন দেওয়া উচিত তা’কে প্রাণখুলে আলিঙ্গন দিন; কিন্তু অন্তরে শক্রতাকে পোষণ করে বাহিরে কোল দেওয়া ধর্ম্ম-বিগর্হিত। এতে কি আপনার হৃদয় সুখী হবে? ওরূপ কল্লে ঈশ্বরের নিকট আপনি দোষী হবেন।
গৌরহরি। ওটা কি জান রামকান্ত বাবু, ওটা আমাদিগের লৌকিক প্রথা। এতে আর ধর্ম্মাধর্ম্ম কি আছে বলুন?
শীতল। আপনি যা বলেছেন সত্য; যে বৈবাহিকের নিকট হ’তে নালিস্ করে টাকা আদায় কর্ত্তে হয়েছিল, আবার যিনি পুজার সময় আমার প্রাপ্য পাওনা দিতে কুণ্ঠিত; যে ক্ষতি পূরণের জন্য court খুল্লেই আমায় আইনের আশ্রয় নিতে হবে; তা’কে বিজয়ার দিন কোল দিতে হ’লে প্রাণটা যেন গুটিয়ে আসে, আর হাত দুটো বারকত্তে ইচ্ছা হয় না।
রামকান্ত। কাল্পনিক পূজার জন্য আপনারা কিনা কচ্চেন; এতকষ্ট করে যে, টাকা উপার্জ্জন করেন, কিনা একটা মাটির ঠাকুর খাড়া করে টাকা গুলো বেজায় উড়িয়ে দেন। ছিঃ ছিঃ আমাদের দেখ্লে ও লজ্জা হয়। মাটির ঠাকুর দেবতা বলে পূজা করা কতদূর ছোট মনের কাজ বল্তে পারি না।
শীতল। গৌরহরি বাবু! আপনাকে বলবো কি, পূজার সময় আমার বৈবাহিক খরচ দিতে কুণ্ঠিত হওয়াতে পূজ্যপাদ, সজীব-দুর্গার সেই নিত্যপ্রস্ফুটিত কোকনদ-সদৃশ চরণ শোভা আশীভরির ডায়মনকাটা নূতন মল চার্-গাছি অতিশয় অনিচ্ছা সত্বেও বিক্রয়, করে এই খড়ো-দুর্গা পূজার সময় খরচ চালাতে হয়েছে। যা’র জন্য আজও অসুর-মর্দ্দিনী মহাশক্তির সাক্ষীস্বরূপ আমার দেহে শতমুখী বিদ্ধচিহ্ণ প্রকাশ পাচ্চে, সেই বৈবাহিককে যে আলিঙ্গন করবার প্রথা প্রচলিত আছে এটা বড় অন্যায়—নিষ্কাম ধর্ম্মের চূড়ান্ত আদর্শ, সাম্যের চিহ্ন, মৈত্রীর কবিতা, জাতীভেদের দীপশিখার ন্যায়।
রামকান্ত। গৌরহরি বাবু! আপনি কল্কেতার একজন বর্দ্ধিষ্ঠ লোক, আপনার উচিত এই লোকাচার বিরুদ্ধ বিজয়ার কোলাকুলী প্রথা তুলে দেওয়া। পৌত্তলিকতার আশ্রয় দেওয়া আপনার ন্যায় লোকের উচিত নহে। এই শুভ দিনে আপনি একবার বলুন—
শীতল। রামকান্ত বাবু! দিন কতক আগে যদি এই পরামর্শ আসায় দিতেন, তাহলে আর এত কষ্ট হ’ত না; আমি স্বয়ং চৈতন্তের মত দুই হাত তুলে
বল্তাম; আমার ঘরের মহিষমর্দ্দিনীকেও একবার কেন, দুই তিন বার পর্য্যন্ত বলিয়েনিতাম। আর সমাজে বসে স্ত্রী পুরুষের সঙ্গে
বলে চলে আস্তেম। (গৌরহরি বাবুর প্রতি) হুজুর! একে অসুরবধ, তাতে আচার্য্যের ন্যায় বেদিতে বসেছি এতেও যদি দামোদর-ক্বংশ-দপহারী না দেখাদেন তবে দুর্গানামে কলঙ্ক হ’বে। Native champagne এর সহিত দেখা নাহলে মনের চাঞ্চল্যতা দূর হবে না।
গৌরহরি। ওরে নিয়ে আয় (হাস্য) শীতল বাবু, শীতল হয়ে যাচ্চেন।
এই খানে রাখ; ভাল করে বেটেচিস্ত?
দামু। কর্ত্তা মশয়! তোমারও লুন খাইচি, সে আপনি যা কবে তা কাঁই না করিব। আপনি মুনিব আছ; কর্ত্তা মশয়, সে তোমার কথা না করিব কাঁই, ইয়াডু ঠাকুর দেইচি সে মোর ঘরে যে জগড়নাথ আছু পারা সেয় ডু ইয়া দেইছি।
শীতল। তা বেশ করেছ দামু; দেবতার প্রসাদ ভক্ষণ কল্লে পুণ্য হয়, আর তা না হউক শরীরটা একটু তাজা হয়। তুমি একবার তামাক নিয়ে এস।
বেহারা। যাইচি, যাইচি।
শীতল। রামকান্ত বাবু! আসুন, Native champagne এ একবার বাহার দেওয়া যাক্।
রামকান্ত। আমাকে মাপ করবেন।
গৌরহরি। কেন রামকান্ত বাবু?
রামকান্ত। আমি Band of hope এ নাম লিখিয়েছি।
শীতল। তোমার সে অরুণ বরণ নীল ফিতে কোথা?
রামকান্ত। সেটা সঙ্গে নাই।
শীতল। কথাটা বড় প্রাণে লাগ্লো না। প্রয়াগের মত তোমার মনের ভাব, আর মুখের কথা, যেন উৎলে উৎলে মুক্ত হয়ে যাচ্চে। আমি তোমার মনের কথাটা বুঝেছি। হিন্দু ধর্ম্মের ভক্ষ্য ভোজ্য হিন্দুধর্ম্মদ্বেষী কালাপাহাড় খাবে কেন? বল দেখি রামকান্ত বাবু! তোমার ব্রাহ্মধর্ম্মের দিব্বি, তোমার আচার্য্যের দিব্বি, তোমার সেই মন্দিরের-বেদীর দিব্বি আমার অনুমান ঠিক কিনা?
রামকান্ত। শীতল বাবু! সে কারণেও যদি হয় তা হলেও ক্ষতি কি?
গৌরহরি। (হাস্য করিয়া) রামকান্ত বাবু। এ কথা সত্য নাকি?
শীতল। আরে মহাশয় সত্য না ত কি? উনি এখন কল্মা ছুঁয়ে কাজি হয়েছেন—আর কেন হয়েছেন তাও আমি বুঝতে পেরেছি—ওঁর দুটো বিয়ে, দ্বিপত্নীক হয়ে উনি কিছু ব্যস্ত হয়েছিলেন; উনি একটিকে ভাল বাসিতেন বা বাসেন; আর একটির অল্প বয়স সুতরাং “বিকার হেতৌ সতি বিক্রিয়ন্তে’। সেই ছোট সতী বিক্রয় করবার জন্য স্বয়ং কন্যাকর্ত্তা হয়ে বিবাহ দিবার ইচ্ছা ওর হৃদয়ে বড় বলবতী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ওরূপ গৌরীদানের ফল হিন্দুধর্ম্মে নাই, তাই কাজি হয়েছেন।
রামকান্ত। শীতল বাবু! আপনি বোধ হয় আপনার সীমার অধিক যাচ্চেন। দেখুন ধর্ম্ম সম্বন্ধে তর্ক করা বড় অন্যায়, আমাদের ধর্ম্ম হিন্দুধর্মের রূপান্তর মাত্র।
শীতল। বটে, বটে, ওঁ বিষ্ণু; ঐ রূপান্তর কি কেবল দাড়িতে আর মসিদের ভেতর ভাই ভগ্নী নিয়ে চোক বুঝাতে। গৌরহরি বাবু! Native champagne আমায় দিন, আমিই ওর Justice কচ্চি। মহাদেবের নেসার মর্য্যাদা হিন্দু ভিন্ন আর কেউ রাখ্তে পারবে না। (গ্লাসে সিদ্ধি ঢালিয়া পান)। (গৌরহরি বাবুর প্রতি) আপনার চলবে কি, না আমি একাই জয় মুনি হ’ব। রামকান্ত বাবু! একটু অপেক্ষা করুন তার পর মাখনের কাছে বিজ্ঞান শিখতে যাবেন—সুধা ভক্ষণ করে যদি গরল উঠে তবে তোমার।
গৌরহরি। (সিদ্ধিপান করিয়া) ওরে তামাক দে।
রামকান্ত। অনুমতি হলে আমি মাখন বাবুর কাছে যাই।
শীতল। আরে তাও কি হয়, তুমি গেলে গরল খায় কে?
গৌরহরি। বসুন, আমি মাখনকে ডাক্তে বলচি। ওরে মাখন বাবুকে ডেকে নিয়ে আয়।
(নেপথ্যে)। আজ্ঞে যাই।
রামকান্ত। আমার আর একটা engagement আছে সেই খানে যেতেই হবে।
গৌরহরি। রামকান্ত বাবু! বিজ্ঞানটা কি আমায় বুঝিয়ে দিতে পারেন। সেকালে আমাদের বিজ্ঞান বলে কিছুই ছিল না।
রামকান্ত। গৌরহরি বাবু! আজ আমায় ক্ষমা করবেন আমি অন্য দিন এসে আপনাকে এই কথা যতদূর সম্ভব বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করবো; এক্ষণে চল্লেম।
শীতল। গৌরহরি বাবু! আজ আমার প্রাণটা বড় খুলে গিয়েছে। প্রাণের ভেতর কে যেন বসন্তের হাওয়া দিচ্চে। একটা আগমনী গাই।
অরুণ উঠিল ওই,
কৈরে আমার উমা মা এল।
আশা পথ চেয়ে, বর্ষ গেছে ধেয়ে,
পাগল সে ভোলা, হাড়মাল দোলা,
উমা ধনে বুঝি না পাঠাইল।
ষষ্ঠ গত প্রায়, আয় মাগো! আয়,
নেহারি বদন তোর জীবন জুড়াই।
মাখন। Good morning Sital Babu, good morning dear father, আপনি আমাকে untimely ডেকে আমার অনেক কার্য্য নষ্ট করেছেন; however, আপনাকে honour করা আমার সর্ব্বতোভাবে উচিত, কেন না আপনিই আমার এই উন্নতির মূল। আজ আমায় excuse করবেন for I have taken my seat here.
গৌরহরি। বাবা মাখন! তোমার হাতে ওটা কি? তোর ওরূপ ভাব দেখে আমার প্রাণে বড় আশঙ্কা হয়।
মাখন। আপনি যদি Huxley বা Tyndal পড়তেন তাহ’লে বোধ হয় ওরূপ foolish প্রশ্ন কর্ত্তেন না। মনুষ্যের জীবনরক্ষা করা কতদূর প্রয়োজন, যে ব্যক্তি বিজ্ঞান না পড়েছে তাকে বুঝান দুর্গোৎসব ব্যাপার। আপনার কথা শুনে অন্যে রাগ কর্ত্তে পারত বা কর্তো কিন্তু আমি অনেক বিবেচনা করে দেখলাম আপনার ন্যায় লোকের উপর রাগ করা আর বিজ্ঞানকে অন্ধকূপে হত্যা করা এ উভয়ই সমান। আপনি আমার এই non-conductor হওয়া দেখে বিস্মিত হচ্চেন, কিন্তু শুনুন, আপনার ঔরসজাত, আমার মাতৃগর্ভস্থ, যে শিশুর সম্ভাবনা আছে তাহার জীবনের অটল স্থায়িত্ব হেতু আমি তার জন্যও একটি লোহার শিখ order দিয়েছি। ইচ্ছা ছিল আপনার ও আমার বৃদ্ধ মাতার জন্য দুইটি conductor order দি, কিন্তু, যাহাদের বিজ্ঞানের চর্চ্চা বা উন্নতি করবার কিঞ্চিৎ মাত্রও ইচ্ছা বা উপায় নাই তাদের জীবন দুরারোহ পর্ব্বতের ন্যায় থাকা না থাকা দুই সমান।
গৌরহরি। ছিঃ মাখন! বাব ও সকল ত্যাগ কর, তোমার ও রকম ব্যবহার দেখ্লে লোকে তোমায় পাগল বলবে। আর আমায়—
মাখন। Hush! আপনি আমার বয়োজ্যেষ্ঠ ও পিতা, তাই আপনার ন্যায় বিজ্ঞান-অন্ধ লোকের সহিত আমি এখনও কথা কহিতেছি। প্রাচীন ইতিহাসের একটা ছায়া মাত্র আজ আপনার নিকট উন্মুক্ত করি শুনুন—যে ইংরাজজাতী সামান্য Telegraphএর প্রথম প্রচলনের সময় তারে জুতা বাঁধিয়া বিদেস্থ পুত্রকে পাঠাইয়াছি ভাবিয়া স্থির হইত, বিজ্ঞানের চর্চ্চা করে, সেই ইংরাজ আজি সু-দূর হিমালয় হ’তে কুমারিকা পর্য্যন্ত ইঙ্গিতে শাসন কর্চ্চে। আর আমরা যে Nasty nation তাইই রহিলাম, not a whit superior, সেই বিজ্ঞানে M. A. পাশ দিয়ে, আমি কি Dumb inert, as Egyptian mummy হয়ে থাক্ব। আপনি দেখবেন আমি by sheer science আপনার হিমালয়কে গরম করব, তাকে মানুষের ন্যায় কথা কওয়াব, ocean কে Shahara তে পরিণত কর্ব।
শীতল। মাখন বাবু! এ বড় আশ্চর্য্যের বিষয়। এ যদি তোমার বিজ্ঞানে হ’তে পারে, তা হলে, আমিও তোমার নিকট বিজ্ঞান শিক্ষা কর্ত্তে প্রস্তুত আছি।
মাখন। আশ্চর্য্য বিজ্ঞানে কিছুই নাই, এটা axiomatic truth of জানবেন, science এ সকল বস্তুই হ’তে পারে। শুনে বড় সুখী হ’লেম, যে আপনার বিজ্ঞান শিক্ষার ইচ্ছা আছে। কিন্তু scienceএ initiate হওয়ার পূর্ব্বে আপনাকে একটা conductor শরীরের সঙ্গে বাঁধতে হ’বে। এর কারণ এই—সদাই বিজ্ঞানের চর্চ্চা কল্ল্যে মনুষ্য শরীর থেকে electricity বহুপরিমাণে নির্গত হয়ে যায়; যাতে volatile আর একটা পদার্থ surcharged with electricity এসে হটাৎ আপনার শরীরে enter কত্তে না পারে তারই জন্য এই conductor; এতে শরীরের সঙ্গে আর frictional electricity ওয়ালা আর একটা bodyর সঙ্গে যাতে সদাই equilibrium থাকে তারই জন্য science এ এই conductor বাঁধার প্রথা প্রচলিত আছে। Take for instance Government palace, Writers’ Buildings, Electric ring, আর কত চান।
গৌরহরি। বাবা মাখন! তুমি যা বল্লে ও বাড়ি সম্বন্ধে খাটে বটে, কিন্তু মনুষ্য মধ্যে ত ও প্রথা প্রচলিত নাই, আমার এত বয়স হয়েছে আমি কখন মানুষের হাতে, মাথায় শিখ বেঁধে বেড়াতে দেখি নাই, তুই ও সকল ত্যাগ কর, আমার কথা রাখ্। পরশুরাম পিতৃআজ্ঞায় আপনার জননীর মস্তক ছেদন করে ছিলেন, তুই আমার কথা শোন। বাবা! লেখা পড়া শিখেছ, বাড়ীতে বসে জমীদারী দেখ, আমোদ আহ্লাদ কর; দেখেও আমার প্রাণটা সুখী হ’ক।
মাখন। যে America বিজ্ঞানের মাতৃভূমি সেই American বিখ্যাত বিজ্ঞানবিৎ Voxley বলেছেন বাড়ি অপেক্ষা মনুষ্য শরীরে conductor বাঁধা নিতান্ত প্রয়োজন; এ কথা আজও আমাদের দেশের লোকে বুঝে নাই, তাই সে প্রথা প্রচলিত হয় নাই। ভাল, আপনি ত্যাগ ত্যাগ কচ্চেন; আমাকে কি ত্যাগ করাতে চান্।
গৌরহরি। তোর লেখা পড়া, তোর বিজ্ঞান, তোর ঐ শিখ।
মাখন। I cannot help laughing. By Jove! আমি স্বপ্নেও অনুভব কর্ত্তে পারি না how shall I unlearn a thing which I have committed to memory from my very infancy. আমাদের অবস্থা যে কতদূর শোচনীয় তাহা বলা যায় না। আপনি কখন মহাভারত পড়েছেন?
শীতল। কেন মহাভারতে আবার কি আছে?
মাখন। Never mind কি আছে কি না আছে, that matters little (গৌরহরি বাবুর প্রতি) আপনি আমার question answer করুণ। দেখুন, ভদ্রলোকের question answer না করা অপেক্ষা অপমান বোধ হয় জগতে আর নাই। An idiot to treat with.
গৌরহরি। পড়েছি। হিন্দুরছেলে রামায়ণ মহাভারত ছাড়া কি কেউ আছে?
মাখন। ইংরাজি না বাঙ্গালা, বেদব্যাসী না প্রতাপরায়ী?
গৌরহরি (জনান্তিকে) ও শীতল বাবু! এ কি বলেগো?
শীতল। (জনান্তিকে) এই বুঝি ইংরাজি শিক্ষার ফল; বাবা একি ছেলে না বারমার মগ—মাথায় একটা লোয়ার পাগ্ড়ি।
মাখন। Hear me dear father, তোমার রামায়ণ ও মহাভারত যার জন্য তোমরা Homer's Illiadকে হত গর্ব্ব কর, সেই Ramayana and Mahabharata বিজ্ঞানের প্রথম সোপান মাত্র; তবে যে, যে light এ ন্যায় সে সেই রূপেই দেখ্তে পায়। But the best course would be for me to deliver a course of lectures before these uneducated fools, আর তা না কল্লে আমার বোধ হয় I see there is very little chance of our national improvement. দেখুন্ Scienceহীন জাতী জাতীই নহে।
গৌরহরি। বাবা মাখন! বিজ্ঞান বলেই পৃথিবী তা আমি স্বীকার কল্লেম। কিন্তু বিজ্ঞান শিখবে কারা, যা’দের অর্থ নাই; যারা পেটের চিন্তার জন্য লেখা পড়া লিখেছে, তাদের পক্ষে বিজ্ঞান প্রয়োজনীয় বটে, তোমার তাতে প্রয়োজন কি? তুমি ও সকল ত্যাগ কর, আমার কথা শোন, জমীদারী দেখ, ঘরটা বজায় রাখ।
মাখন। আপনি না Dr. Sirkar এর science সভায় একদিন গিয়েছিলেন, আর আমি যে দিন আপনাদের ত্যাগ করে আমার কতকগুলি Lady friend কে নিয়ে Brother Nagendranath এর বাটী গিয়েছিলাম সেই দিন না আপনি Eliot সাহেবের Lecture-room এর ভিতর গিয়ে বিজ্ঞানের অসীম ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে swoon হয়ে পড়েছিলেন। আমি সেই বিজ্ঞান বলে জমীদারী কোনছার world কে Napoleon এর ন্যায় শাসন করবো।
শীতল। (জনান্তিকে গৌরহরির প্রতি) মহাশয়! দেখ্চেন কি, বেতর বিগড়েছে, কথায় বড় সুবিধা নয়, খাশ করা ছেলের গোঁ। দেখুন দেকি বিয়ের কথা তুলে।
গৌরহরি। মাখন! তোমাকে বিবাহ কর্ত্তে হবে? তোমাকে সংসারী হয়ে সংসার দেখতে হ’বে; আমি বুড় হয়েছি কবে মরব; তোমাকে এর মধ্যে জমীদারী প্রথা শিখতে হবে; আমি আজ হ’তে তোমার উপর জমীদারীর সমস্ত ভার দিব।
মাখন। মৃত্যু! হাহা! মৃত্যু কি? আজ যদি আপনার science পড়া থাক্ত তাহ’লে আপনার মুখ থেকে ও কথাটা বোধ হয় নির্গত হ’ত না। আপনি জানেন বোধ হয় রামচন্দ্রের Father (নামটা আমার ঠিক স্মরণ হ’চ্চে না Talboys Wheeler এর রামায়ণে অনেক দিন হ’ল পড়েছিলাম) স্ত্রৈণ হেতু একটা স্ত্রীর কথায় রাম, লক্ষ্মণ ও রামের wife কে বাড়ি থেকে দূর করে দিয়ে, পুত্রশোকে নিজের vitality নষ্ট করে ফেলে ও ক্রমে collapse অবস্থা প্রাপ্ত হয়; রামের আর দুটো ভাই ছিল তাদের নাম বড় queer, হটাৎ মনে পড়া দায়; তারা কল্লে কি তাদের Father কে embalm করে রেখেদিলে; till the return of their banished brothers. সে টাইম টা exactly আমার মনে নাই, বোধ হয় fourteen years, এই fourteen years রামের বাপ embalmed হয়েছিল which is as good as living; সুতরাং Death বলে বোধ হয় জগতে কোন কথাই থাকা উচিত নহে। By the bye আপনি আমার marriage এর কথা বলেচেন, কিন্তু, marriage is nothing but a social union; সে social union যদি বিজ্ঞানের দ্বারা সাধিত হয় তা হ’লে যাকে আমরা বলি marriage, আর আপনারা যাহাকে বিবাহ বলেন, তার প্রয়োজন কি? স্ত্রীলোক অপেক্ষা কোমল বিজ্ঞান, সেই বিজ্ঞানের যে আস্বাদ পেয়েছে সে কি একটা illiterate ugly looking দ্বাদশ বর্ষীয়া বালিকা কে তার partner কত্তে স্বীকার করবে? আমি ত কখনই নহে।
গৌরহরি। আরে তুই বলিস্ কি? তোর জন্য কি আমি আত্মহত্যা হ’ব?
মাখন। আপনি জানেন, আপনার এই কথার জন্য আপনি আইন অনুসারে দণ্ডনীয়। আপনার এই কথা যদি আমি জগতে, বা even একজন common police officer কে বলে দি যে Babu Gourhari intends to commit suicide তা হ’লে আপনাকে দায়রায় সোপরর্দ্দ কর্ত্তে পারে। My father, my good father আমি আপনাকে earnestly request কচ্ছি আপনি কুআশার ঘোর অন্ধকার ত্যাগ করুণ; একটু একটু science পড়তে আরম্ভ করুণ। যদি বৃদ্ধ বয়সে পড়্তে আপনার লজ্জা হয়, I take upon myself the most gravest duty of initiating you in the heaven of science. আমার সতত ইচ্ছা করে আপনাকে ও আমার dearest mother কে যদি Tyndal, Huxley, Proctor or even Ganot will do, যদি even a page a day পড়াতে পারি, তা হ’লে আপনার একেবারে কুসংস্কার বর্জ্জিত হবেন। আমি নিশ্চয় বলচি যে Your salvation will come as near as what you call the originator of Navadwipa's disciple Jaga.
গৌরহরি। তুই আমায় বৃদ্ধ বয়সে কাঁদাস্নি। দেখ্ মাখন, বাবা! তোমার বয়স হয়েছে, বুঝতে সুজতে পার, তুই আমার এক মাত্র ছেলে, তোর মুখ চেয়ে আমি স্বর্গের চাঁদ হাতে পাই, কিন্তু বাবা! তোর কি আমাকে মন কষ্ট দেওয়া উচিত?
মাখনI Far from it dear father, কিন্তু একটা কথা I must mention, যে all along আমি দেকে আসচি আপনার address very objectionable. আমি আপনাকে আপনি আপনি বলচি কিন্তু before the presence of another gentleman আপনি আমার প্রতি vulgar terms ব্যবহার কচ্চেন। এটা আমি বল্তাম না, পাছে আমার father হয়ে society তে আপনি অপদস্থ হ’ন simply সেই জন্য আমি আপনাকে এই hint টুকু দিলাম। আর একটা কথা, আপনি heavenly bodies কে হাতে কত্তে চান কিরূপে ত তো বুঝতে পাল্লেম না not even science can dream of it.
গৌরহরি। (স্বগতঃ) আমার দেখচি সর্ব্বনাশ উপস্থিত; ছেলেটা ঘোর উন্মাদ হয়েছে; পাগল মিতাক্ষরার মতে বিষয়ের উত্তরাধিকারী হ’তে পারে না; এখন কি করি, কেন ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজে দিয়েছিলাম; এই কি উচ্চ শিক্ষার ফল; হা অদৃষ্ট! দেখি আরো বুঝিয়ে যদি পারি। (প্রকাশ্যে) বাবা! তুই কি পাগল হলি নাকি? আমার এই অতুল সম্পত্তি কি দশজনে লুটে খাবে, আর তুই আমার এক মাত্র ছেলে হয়ে ভোগ কর্ত্তে পারবিনি?
মাখন। আপনি বলেন কি? আপনার এই riches আমি useful purpose a spent করবো। আমি আপনার অর্থের অধিকারী হ’লেই একটা monument করবো, তার উপর বড় বড় golden letters এ লিখে দেব “In memory of the late Babu Gourhari Mookerjea this monument of science has been erected by his son Makhun Lal Mookerjea”, এ দেখ্লে Governor-General, Lieutenant-Governor বোধ হয় আপনাকে K. C. S. I. title পাঠিয়ে দিতে কিঞ্চিত মাত্র ও কুণ্ঠিত হ’বে না; আর এমনও হতে পারে Her Majesty letter of condolence পাঠিয়ে আমাকে তার sorrow জানাবেন। এখন good bye আমাকে Brother Nogendranath এর বিজ্ঞান বিকাশিনী সভায় যেতে হ’বে।
শীতল। গৌরহরি বাবু! ছেলে দেখে কি বুঝলেন?
গৌরহরি। (দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া) বুঝব আর কি, আমার মাতা আর মুণ্ডু; এখন চল শয়ন করা যাক্গে কপালে যা আছে তাই হইবে।
গৌরহরি। গিন্নি! তোমার ছেলের জ্বালায় বুঝি আমায় সংসার ত্যাগ কর্ত্তে হ’ল; তুমি তোমার ছেলে নিয়ে থাক, আমি বিষয় আশয় বিক্রি করে কাশীবাসী হইগে।
চন্দ্রমুখী। কেন? মাখন আমার কি করেছে? আমার ছেলের ভাল তুমিত কিছুই দেখতে পারনা। বলি আমার মাখনলাল করেছে কি?
গৌরহরি। ওটা পড়ে পড়ে বেতর বিগ্ড়ে গিয়েছে, বোধহয় শীঘ্র পাগল হ’বে।
চন্দ্রমুখী। ওমাঃ আমি কোথায় যাব! এই বুঝি আমার মাখনলালের দোষ। তা হ’ক, মা সরস্বতী যার পেটে ঢুকেছেন তাকে পাগল তিনিই করেন। আহা! তোমায় বল্বো কি, মাখন যখন ঘুমিয়ে থাকে, আমি আড়ি পেতে শুনেছি—ছেলের মুখ দিয়ে পল্তার কলের জলের মত ক্রমাগত ইংরিজি বেরোয়, আর কেবল পটাস্ পটাস্ শব্দ করে, বলে লোকে বিয়েন, না কি মর—মুখে আসে না, তাই বুঝেনা।
গৌরহরি। ওই পটাস্ পটাস্ আর পোড়া বিজ্ঞানই কাল হয়েছে। তোমায় বলবো কি সে একবারে ঘোর উন্মাদ হয়েছে।
চন্দ্রমুখী। তা হ’ক; আমার মাখনের বিয়ে দিয়ে একটি ছোট রাঙ্গা বউ ঘরে এনে আমার মনের সাধ পুরাব। আর ঐযে খ্যাপা খ্যাপা রকম দেখ্চো তা রাঙ্গা বোয়ের মুখ দেখলেই সব যাবে। মা সরস্বতী আমার মাখনকে যে খেপিয়ে তুলেছে সেটা তোমায় বলছি কখনই থাকবে না। আমি মা শীতলার পূজো মেনেচি। ঘোষেদের ছেলেও ঐ রকম চস্মা নিত, দাড়ি রেখেছিল, ঠাকুর দেখলেই তেড়ে যেত, আর বাপ, মা, ভাই, বুন সকলকে বলতো পুতুল পূজা করা পাপ; তার বিয়ে হওয়া অবধি সে পাগ্লা রকম গিয়েছে। ওটা বিয়ে করবার পূর্বচিহ্ন; হাজার হোক্ লেখা পড়া শিখেছে, বাপ মার কাছে কি বিয়ের কথা বলতে পারে, তাই একটু আদটু পাগলামি করে বাপ মা কে জানায় যে আমি বিয়ে করবো। যে বাপ মা বুঝতে না পারে, তারা ছেলেকে পাগল বলে। ছেলে পাগল হয়েছে বলে বলেই ছেলের বিয়ে দেয় না; ছেলেরও পাগলামি বাড়তে থাকে। আমি তোমায় বলচি, আমার মাখনের বিয়ে দাও। মাখন যে বিয়েন বিয়েন করে, আর ওই যে নোয়ার শিখ বেঁধে থাকে, সেটা বৌমা ভিন্ন আর কেউ খুলতে পারবে না পারবে না।
গৌরহরি। স্ত্রীবুদ্ধি প্রলয়ঙ্করী। আমি লজ্জার মাথা খেয়ে বিয়ের কথা বল্লাম, কিন্তু সে কিছুতেই স্বীকার কল্লে না। সে বল্লে তার বিবাহ বিজ্ঞানের সঙ্গে হয়েছে; সে আর অন্য বিয়ে করবে না।
চন্দ্রমুখী। হ্যাঁগা বিজ্ঞান কে? সেটা কোথায় থাকে? বলি তুমি কি এ বিয়ের কথা কিছু জান? মাখন কি আমায় লুকিয়ে বিয়ে কল্লে।
গৌরহরি। দেখ গিন্নি! আমি এখন চল্লুম।
চন্দ্রমুখী। ও হরিঃ! বাবা আমার, তাই খ্যাপা হয়েছে। দেখ্লে, আমি যা বলেছিলুম তাই ঘটলো ত; আর ও রাগ কল্লে কি হবে, ছেলেত আর ত্যাগ কর্ত্তে পারবে না। বাবা আমার বিয়ে করেছে বৌটি ঘরে নিয়ে এস; যখন আপনি পছন্দ করে বিয়ে করেছে, সে বৌয়ের মুখ দেখলেই ঐ বিয়েন বিয়েন, আর পোড়া শিখ সব খসে পড়বে।
গৌরহরি। দেখ গিন্নি! আমি আর সহ কর্ত্তে পারিনা; এই বুড়ো বয়সে অদেষ্টে আরও কত কষ্ট আছে জানি না। তুমি মাখনকে বুজিয়ে সুজিয়ে যদি বিয়ের রাজি কর্ত্তে পার তা হ’লে এই অগ্রহায়ণ মাসেই বিয়ে দিয়ে দি।
চন্দ্রমুখী। ওমাঃ সে কি? তোমার বুঝি সে বৌ পছন্দ হয় নি—তবে তুমিও বৌ দেখেছ। আমার এম্নি পোড়া অদেষ্ট যে মাখনের বৌ দেখ্তেও পেলাম না। (ক্রন্দন।)
গৌরহরি। আরে তুমি কাঁদ কেন? তোমার পাগল ছেলের সঙ্গে বে দেবে কে? লেখা পড়া শিখে ছেলে বেগড়াতে দেখা, এই আমার প্রথম।
চন্দ্রমুখী। তুমি আর বিগ্ড়েছে বিগ্ড়েছে বলো না; তুমি আমার মাখনের বিয়ে দেবে কি না বল? যদি না দাও আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বিদেশে চলে যাব, সেই খানে গিয়ে দেখি তার বিয়ে দিতে পারি কি না।
গৌরহরি। আ আমার পোড়া কপাল, বিয়ে দেবো কি? সে বলে তার বিয়ে বিজ্ঞানের সঙ্গে হয়েছে। সে আর অন্য বিয়ে করবে না।
চন্দ্রমুখী। এ পোড়া বিয়েন কি? আমায় দেখাতে পার, কে সে বিয়েন, তা হ’লে বেটিকে দাসী দিয়ে ঝ্যাঁটা খাওয়াই।
গৌরহরি। গিন্নি! তুমি যদি পার দেখ; মাখন যদি বিয়ে কর্ত্তে রাজি হয় আমি অগ্রহায়ণ মাসেই বিয়ে দেবো।
চন্দ্রমুখী। আচ্ছা তুমি এক কাজ কর; তুমি বিয়ের কথা সব ঠিক্ করগে আমি মাখনকে বুঝিয়ে বল্চি।
গৌরহরি। যা হয় কর, এখনকার বোধ হচ্চে কালেজের পড়ারই এই দোষ। আগে জানতেম লেখা পড়া শিখ্লে স্বভাব চরিত্র ভাল হয়, কিন্তু এখন দেখ্চি ইংরাজি লেখা পড়া শিখিয়ে রাজ্যের ছেলে বিগ্ড়ে দিলে। যাই এ বুড়ো বয়েসেও ত নিস্তার নাই, মুটে মজুরের মত খাটতে এসেছি খেটে যাই।
চন্দ্রমুখী। আমার মাখন কি সত্তি সত্তিই পাগল হ’ল, না কখনই নয়, এ কথা মনে লাগে না। লেখা পড়া শিখে শুনেছি ছেলেদের মাথা একটু গরম হয়; তাতে আমার মাখন যে আবদেরে ছেলে; বোধ হয় কর্ত্তার কাছে কিছু চেয়ে থাকবে কর্ত্তা দেয় নি, তাই আমার মাখন রাগ করেছে। এক ছেলে, যদিই একটা বায়না নিয়ে থাকে, তাকে না দেওয়া কি ভাল। একটা ভাল মন্দ হ’লে এর পরে আমার মাখনেরই ত সব; এখন নিলেও নেবে তখন নিলেও নেবে। মাখন আমার যা চাইবে আমি তাই দেবো। বাবার রাগ ঠাণ্ডা হ’লে আমি বিয়ের কথা পাড়বো। ওঝি ঝি! ঝি! একবার এদিকে আয়।
(নেপথ্যে)। যাই মাঠাক্রুণ।
এই চাবি নিয়ে আমার ঘর থেকে গয়নার বাক্স টা নিয়ে আয় ত।
বৌমাকে কি কি গয়না দেবো সে গুলো দেখে আলাদা করে রাখি। আমার সে দিন যে গয়না হয়েছে, সেগুনো এখন আমায় পরতে হবে, তার পর বৌমা বড় হ’লে আমার যে গুলো ছোট হয়ে যাবে সে গুলো তাকে দেবো কিনা তখন বুঝবো। বৌটিকে পরির মতন সাজাব।
দাসী। হ্যেঁ গা মাঠাকৃরুণ! দাদা বাবুর বুঝি বিয়ে হবে? আহা হোক্ হোক্।
চন্দ্রমুখী। তোকে কে বল্লে?
দাসী। আমি সব শুনিছি, তা না হলে, দাদা বাবু হাতে মাথায় নোয়া বাঁধবে কেন? আমি শুনিছি কল্কেতার বড়মানুষের ছেলেরা বিয়ের আগে হাতে মাথায় শিখ বাঁধে। শিখটা বুঝি প্রজাপতির ঘটক। হ্যেঁ গা মাঠাকুরুণ কলকেতার আইবুড়ো ছেলের বুঝি চিহ্ণি ঐ!
চন্দ্রমুখী। দেবো দেবো; আমার মাখনের বিয়ের সময় তোকে দানা গড়িয়ে দেবো।
দাসী। দাদা বাবুর কোথায় বিয়ে হ’বে মাঠাক্রুণ!
চন্দ্রমুখী। এখনও কিছু ঠিক্ হয়নি, কর্ত্তা কত লোক পাঠাচ্চেন, মিন্সে গুনো খালি মুটো মুটো টাকা নিয়ে যাচ্চে,কিন্তু, কৈ একটাও রাঙ্গা বৌ এনে দিতে পাল্লেনা।
দাসী। হ্যেঁ গা মা! তোমাদের মেয়েরাও কি নোয়া-বাঁধে, তারাও বুঝি বিয়ে হ’লে হাতে নোয়া পরে না?
চন্দ্রমুখী। বিয়ে হ’লে হাতে নোয়া পরে না ত কি? তুই কি পাগ্লি না কি? এয়িস্ত্রি মান্সে কি নোয়া ছাড়া আছে?
দাসী। পুরুষ এয়িস্ত্রি কি এখানে নোয়া পরে?
চন্দ্রমুখী। পুরুষ এয়িন্ত্রি আবার কি?
দাসী। কেন যাদের দাদাবাবুর মত বিয়ে হয়েছে।
চন্দ্রমুখী। তোর দাদাবাবুর কি এখনও বিয়ে হয়েছে?
দাসী। বিয়ে না হউক, কিন্তু মাঠাক্রুণ! আমি তোমায় বলচি ওই নোয়া হ’তেই দাদাবাবুর বিয়ের ফুল ফুটবে।
চন্দ্রমুখী! নোয়াতেই ফুল ফুটবে কি?
দাসী। হিঁ গো। মুক্ষী কুলীনের বিয়ের ফুল অমনি করে ফোটে। তবে শুন্বে, আমার বনপো, হেতাকার একজনাকার বাড়িতে থাকে, তাদের নাকি পাথরে বিয়ের ফুল ফুটে, আর বিয়ে হ’লেই সেই পাথর হাঁড়ি চাপা দিয়ে রেখে দেয়। দাদাবাবুরও তাই হ’বে কিন্তু নোয়াতে।
চন্দ্রমুখী। তুই আশীর্ব্বাদ কর, আমার সেই অদেষ্টই হক।
দাসী। ওমা ছিঃ কি বল মা। হ্যেঁ গা মা! ঐয়ে দাদাবাবুর শিখ দেখা যাচ্চে। দেখ দেখ, পাছে শিখ দেয়ালে ঠেকে তাই দাদাবাবু এঁকে বেঁকে সিঁড়িতে উঠচেন। দাদাবাবুকে দেখলেই গঙ্গার ঘাটে যে একটা ঠাকুর আছে দেখেছ মাঠাক্রুণ, এক হাতে একটা মুগুর তুলে, এক পা সাম্নে, এক পা পিছিয়ে আছে তাকে মনে পড়ে।
চন্দ্রমুখী। যাই, আমার মাখনকে বুঝিয়ে দেখিগে। আমি বাক্সটা বন্ধ করেছি; তুই নিয়ে আয়।
দাসী। যাই ঝাঁট পাঁট সব পড়ে রয়েছে।