ষষ্ঠকথা—স্নেহ, ভালবাসা, মনুষ্যত্ব।

 ভগবানের সৃষ্ট অপরাপর জীব জন্তুগণের অপেক্ষা মনুষ্য শ্রেষ্ট জীব। এই শ্রেষ্ঠত্ব কিসে? ক্রমবিকাশ নিয়মানুসারে আপনা হইতে প্রাকৃ- তিক নিয়মাধীনে মানুষ জন্মিয়াছে। মানুষে ও গবাদি জন্তুর ভিতর প্রভেদ কোথায়? প্রভেদ আছে বৈ কি। সে প্রভেদ, সে পার্থক্য নানাবিধ। দৈহিক প্রভেদ, প্রকৃতিগত প্রভেদ, প্রবৃত্তিগত প্রভেদ। মানুষের কতকগুলি জিনিস আছে যাহা গবাদিতে নাই, আর এমত কতকগুলি আছে যাহা গবাদিতেও আছে। সেই প্রভেদ, সেই প্রবৃত্তিগতও প্রকৃতিগত প্রভেদ মনুষ্যের মনুষ্যত্ব। গাভী বংস প্রসব করিল যত দিন বৎস ছোট থাকিবে, স্তন্যপায়ী থাকিবে, তত দিন গাভীর বৎসের উপর বড় যত্ন, বড় স্নেহ, বড় ভালবাসা, একবার চক্ষের আড়াল হইলে হাম্বারবে স্বর্গ মর্ত্ত্য রসাতলে দিবে, বৎসের গাত্রের ধুলা মাটী লেহন করিয়া পরিষ্কার করিয়া দিবে। আহা কত স্নেহ, কত যত্ন, কি চমৎকার বাৎসল্য।” তারপর দিনকতক গত হইলে, বাছুর একটু বড় হইলে, নিজে খুঁটিয়া খাইতে শিখিলে, গাভীর আর সে ভাব থাকে না, আযর বৎসের দিকে ফিরিয়া তাকায় না, কালে কাছে আসিলে তাড়াইয়া দেয়। আপনার বৎস বলিয়া যেন চিনিতে ও পারে না। এইত নিজ সন্তানের পক্ষে। পিতা মাতা ভ্রাতা ভগিনীর প্রতি কৈ গাভীকে ত কখন কোন প্রকার স্নেহ মমতা দেখাইতে দেখা যায় না। মানুষ কিন্তু তাহা পারে না। ছেলে বড় হইলে ভাবনা একটু কমে বটে, কিন্তু স্নেহ মমতার পরিমাণ বাড়ে বৈ কমে না। যতই বয়স বাড়ে ভালবাসা ততই অধিক হয়। মানুযের সন্তানের প্রতি ভালবাসা অপর জীবের অপেক্ষা অনেক বেশী, অধিককাল স্থায়ী, বহুদুর ব্যাপী। শুধু তাই নয়। মানুষ সন্তান ছাড়া আরও অনেককে ভালবাসে। মানুষ পিতা মাতাকে ভালবাসে, ভাই ভগিনীকে, ভাল বাসে, জ্ঞাতি বন্ধুকে ভাল বাসে, প্রতিবাসী স্বদেশ বাসীকে ভাল বাসে, মানুষ মানুষকে ভাল বাসে। মানুষ জীয়ন্ত মানুষকে ভাল বাসে, জীবমাত্রকেই ভালবাসে, মরা মানুষকেও ভালবাসে। আমি ইহাকেই মনুষ্যত্বের একটা প্রধান লক্ষণ বলিতেছিলাম। এই ভালবাসা কোথাও প্রেম, কোথাও প্রীতি, কোথাও ভক্তি, কোথাও স্নেহ, কোথাও আনুরক্তি বলিয়া আখ্যাত হইয়া থাকে। জিনিসটা এক কেবল রকম ও নামের পার্থক্য মাত্র। সকলই সেই অন্তরের ভালবাসা। যাহার এই ভালবাসাটা যত অধিক, যাহার ভালবাসাটা যত অসীম, সে ব্যক্তি মনুষ্যত্বে তত উন্নত। ভালবাসা সম্বন্ধে আর একটা কথা। এটা প্রকৃত ভালবাসা হওয়া চাই। ভাল বাসার জন্য ভালবাসা হওয়া চাই। তাহা না হইলে সেটা ভালবাসাই নহে। যে ভালবাসার বিনিময়ে কোন পার্থিব লাভের আশা থাকে, যে ভালবাসার বদলে আর কিছু না হয় অন্ততঃ “প্রতিদানে প্রীতিদান” পাইবার ও প্রত্যাশা থাকে, সেটা নিতান্ত ভালবাসার ব্যবসাদারি বলিয়া মনে হয়। সেটা ভালবাসা নহে। উহা অতি অপকষ্ট জিনিস। উহা স্বার্থপরতার বিকট রূপান্তর মাত্র।

 বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করিতে হইলে তাহার হৃদয়ের সেই অসীম, অনন্ত, দিগন্তব্যাপী ভালবাসার কথা না বলিলে কোন কথাই বলা হইল না। তাহার সে ভালবাসা বড় সহজ ভালবাসা নহে। ভালবাসার গভীরতা আমার কি সাধ্য স্থির করি। তিনি পিতা মাতাকে ভাল বাসিতেন, ভাই ভগিনীকে ভাল বাসিতেন, জ্ঞাতিকুটুম্বকে ভাল বাসিতেন, স্বজন বান্ধবকে ভাল বাসি তেন, স্বদেশী বিদেশীকে ভাল বাসিতেন, পরি- চিত অপরিচিতকে ভাল বাসিতেন, শত্রু মিত্রকে ভাল বাসিতেন। তিনি স্বধর্ম্মী বিধৰ্মীকে ভাল বাসিতেন। তিনি গরিবকে ভালবাসিতেন, ধনীকে ভাল বাসিতেন, সভ্যকে ভালবাসিতেন অসভ্যকে ভাল বাসিতেন, পণ্ডিতকে ভাল বাসিতেন মুখকে ভাল বাসিতেন, বৃদ্ধকে ভাল- বাসিভেন বালককে ভাল বাসিতেন, পুণ্যাত্মাকে ভাল বাসিতেন পাপীকে ভালবাসি তেন। তাঁহাকে যিনি ভালবাসিতেন তাহাকে তিনি ভালবাসিতেন, যিনি গালি দিতেন তাঁহাকেও তিনি ভালবাসিতেন। যিনি ধন্যবাদ দিতেন তাঁহাকেও তিনি ভালবাসিতেন, যিনি নি করিতেন তাহাকেও তিনি ভাল- বাসিতেন। তিনি ভালবাসিতেন না কাহাকে? সকলকে ভালবাসা, মানুষকে ভালবাসা, জীব- মাকে ভালবাসা, যেন তাহার জীবনের কার্য্য ছিল। তাঁহার জীবন যেন ভালবাসাময় ছিল। আর সে ভালবাসা, ভাষাভাষা নয়। পথ যাইতে যাইতে সাক্ষাৎ হইল আর একবার জিজ্ঞাসা করিলাম, মহাশয়, ভাল আছেন, আপ. নিওজিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি ভাল আছেন, তারপর আপনাপন গন্তব্য পথে চলিয়া গেলাম। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভালবাসা সে রকম নহে। তিনি শুনিলেন একজনের পীড়া হইয়াছে, অমনি তাহার প্রাণে বাজিল, হৃদয়তন্ত্রীতে ঘা লাগিল, রোগীর চিকিৎসায় রোগীর সেবায় দেহ মন ঢালিয়া দিলেন। আপনার লোকে যাহা না পারে তাহা করিতে লাগিলেন। যে ভাল বাসে সেই আপনার লোক। তিনি রোগী মাত্রেরই আপনার লোক ছিলেন। সে বিষয়ে তাঁহার জাতি বিচার ছিল না, অবস্থা বিচার ছিল না, সময় বিচার ছিল না। একজন মেথরের পত্নীর বিচিকা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ পাইয়া সারাদিন রাতি রোগি নীর মলমুত্রময় কুটীরে বসিয়া তাহার সেবা অশ্রুষা করা, তাহার চিকিৎসা করা, তাহার পথাপথ্যের আয়োজন করার কথা অনেকে জানেন। আর তাঁহার প্রিয় নিভূতাবাস কর্ম্মটাড়ে সাঁওতালদের চিকিৎসা করা, কখন বা তাহাদের বাটী গিয়া কখন তাহা দিগকে নিজ বাটীতে লইয়া আসিয়া কত যত্ন করিয়া তাহাদের আরোগ্য বিধান করিতেন, যেন তাহারা তাঁহার সন্তান। এই সকল সামান্য লোকদের তিনি এতই ভাল বাসিতেন। যাহাকে ভাল বাসিতে হইবে তাহার সহিত নিজের পার্থক্য থোধ থাকিলে, ছোট বড় জ্ঞান থাকিলে পুর ভালবাসা হইবে না। সুখে দুঃখে যে ব্যক্তি ভালবাসে তাহার ভালবাসাই এত। সুখের সময় অনেককে ভালবাসিতে পাওয়া যায়, কিন্তু দুঃখের সময়ই ভালবাসার পরীক্ষা। বিদ্যাসাগর মহাশয় সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছেন এমন কি সৰ্বশ্রেষ্ঠ হইয়াছেন। দুঃখীকে এমন ভাল বাসিতে বুঝি আর কাহাকেও দেখিতে পাইব না!

 এক দিন বিদ্যাসাগর মহাশয় গল্প করিয়াছিলেন তিনি কোন ধনী লোকের বাড়ীতে বেড়াইতে গিয়াছিলেন। বৈঠক থানায় বসিয়া গৃহস্বামীর সহিত গল্প গুজব করিতেছেন, এমন সময় তিনি শুনিতেগাইলেন সেই বৈঠক থানার নীচে একজন ভিক্ষুক অনেক ক্ষণ ভিক্ষার্থী হইয়া চিৎকার করিতেছে। ভিক্ষা র্থির চিৎকার শুনিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় কতক্ষণ চুপ করিয়া থাকিবেন। তিনি গৃহ-স্বামীকে বলিলেন, এই যে একটা লোক কতক্ষণ ধরিয়া চিৎকার করিতেছে ইহা কি তোমার কর্ণ কুহরে প্রবেশ করে না। গৃহ স্বামী মনে করিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গল্পের ব্যাঘাত জন্মিয়াছে বলিয়া ভিক্ষুকের চিৎকারে তিনি বিরক্ত হইয়াছেন। তৎক্ষণাৎ বাবুজী জলদ গম্ভীর স্বরে বলিলেন-কৈ হায়? অমনি দুই চারিজন যমদূতের ন্যায় চাকর, দ্বারবান বাবুজীর সম্মুখে উপস্থিত। হুকুম হইল ভিক্ষুককে তাড়াইয়া দাও। দ্বারবান তাড়াইতে হুকুম পাইয়াছে সে ভিক্ষুককে আধ- মারা করিয়া গলা টিপিয়া দরজার বাহির করিয়া দিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় ভাবিলেন ইহাকেই বলে হিতে বিপরীত। গরিব না হয় খানিক ক্ষণ চিৎকার করিয়া, ভিক্ষা না পাইয়া, চলিয়া যাইত। আমার জন্য সে বেচাৰি আধমরা হইল। তাহার দেব হৃদয় গলিয়া গেল। তিনি তৎক্ষণাৎ গাত্রোখান করিলেন। গৃহস্বামী বলিলেন “যান কোথায়?” বিদ্যা- সাগর মহাশয় “আসিতেছি” বলিয়া বাটীর বাহির হইয়া সেই ভিক্ষুককে অন্বেষণ করিলেন। একটু যাইয়াই পথে তাহাকে ধরিলেন। মনিব্যাগ হইতে একটী টাকা বাহির করিয়া ভিক্ষুককে জিজ্ঞাসা করিলেন"এটা কি।” সে বলিল—টাকা। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহাতে কত পয়সা হয়? ভিক্ষুক তাহা ও ঠিক বলিল। তৎপরে বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহাকে বলিলেন, বাপু তুমি যদি আমার কাছে সত্য করিয়া বল যে ঐ বাড়ীতে ভিক্ষা করিতে আর কখন যাইবে না, তাহা হইলে আমি তোমাকে এই টাকাটা দি। আমি ও সত্য করিতেছি আমি ঐ পাপিষ্ঠের আলয়ে আর কথনই যাইৰ না। ইহা বলিয়া টাকাটী ভিক্ষুককে দিয়া চলিয়া গেলেন। খানিক গিয়া ভাবিলেন সেত ভিক্ষুক একেবারে একটা গোটাটাকা পাইয়াছে, হয়ত ক্ষুধায় মরিবে তবুও টাকা ভাঙ্গাইয়া খাইবে না, ভাবিয়া আর দুইটা পয়সা তাহার হাতে দিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় উক্ত ধনী বাবুটীর নামটী আমাদের বলেন নাই, কিন্তু একথা বলিয়াছেন যে তাহার বাটীতে সেই অবধি তিনি আর কখনও যান নাই। গরিবের প্রতি এত ভালবাসা কি আর কখন দেখিতে পাওয়া যাইবে।

 কেহ কোথাও কোন প্রকার কষ্ট পড়িয়াছে শুনিলেই তিনি ভাবিয়া আকুল, কেমন করিয়া তাহার সেই কষ্ট দূরকরিবেন। যেন তিনিই তাহার একমাত্র আত্মীয়, তিনিই তাহার এক মাত্র সহায়। যে মানুষকে ভাল বাসে তাহার এমনি হয়। ইহাতে অনেক ভাবনা ভাবিতে হয়, অনেক কষ্ট সহিতে হয়, অনেক ব্যয় বহিতে হয়, সত্য, কিন্তু ইহাতে যে একটু সুখ আছে তাহা স্বর্গীয় সুখ। বিদ্যাসাগর মহা- শয়ের ভালবাসার কথা বলিবার নহে তাহা ভাবিবার জিনিস। উহা বচনাতীত, বর্ণনাতীত, কল্পনাতীত। সকল মানুষই যেন তাঁহার পিতা মাতা, ভাই ভগিনী, পুত্র কন্যা ছিল। এই ন্য তাহার কাছে পাছে কেহ যাইতে না পারে সেই ভয়ে তিনি স্বীয় দ্বারদেশে কখন দ্বার বান রাখিতেন না। সে জন্য তাহাকে কত কষ্ট ভোগই করিতে হইত। সময়ে সময়ে পীড়ার যাতনা সত্ত্বেও দিবানিশি লোকসমাগম, তাহার উপর প্রত্যেকের সহিত কথা বার্তা কহিতে হইবে। সকলের সকল সংবাদ লইতেই হইবে, তাহা না হইলে তাহার হৃদয় মানিত না, মন সন্তুষ্ট হইত না।

 বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভালবাসার কথা বশিতে গিয়া তাঁহার পিতা মাতার প্রতি ভাল বাসার কথা না বললে তার ভালবাসা বর্ণনা বিষম অঙ্গহীন হয়। মনুষ্য-প্রকৃতিতে সকল প্রযুক্তির বাজ নৈসর্গিক নিয়মানুসারে অন্তর্নিহিত থাকে, তবে যিনি যে প্রবৃত্তির উৎ কর্ষ সাধন করেন তাহার সেইটাই ফুর্ত্তি পায়। ভালবাসাও মানুষের সেইরূপ একটী হৃদয়ের অন্তনিহিত প্রবৃত্তি। জন্তুদের ভিতর যত উচ্চ স্তরে উঠা যায় যেন ভালবাসার সঞ্চার তত বেশী দেখিতে পাওয়া যায়। সরীসৃপের ভিতর কিছু মাত্র ভালবাসার চিহ্র দেখিতে পাওয়া যায় না। মৎস্যে যেন ভালবাসার একটু সূচনা আছে বলিয়া বোধ হয়, অন্ততঃ ইহাদের ভিতর অসঙ্গলি আছে ও সরীসৃপের ন্যায় সন্তান দ্রোহিতা নাই, স্বজাতিহিংসা নাই, পক্ষীদের ভিতর তদপেক্ষা ভালবাসার চিহু অধিক লক্ষিত হয়। পক্ষী পক্ষীকে ভালবাসে, পুষিলে পোষ মানে, যে পোষে তাহাকে ভালবাসে সর্বদাই দেখা যায়। তৎপরে এক স্তর উঠিলে স্তন্যপায়ীদের ভিতর হস্তীর পালকপ্রীতি, কুকুরের প্রভুভক্তি, অশ্বের মনুষ্যানুরক্তি, ইহাদের নিজ সন্তানে স্নেহ,পরস্পর ভালবাসা অম্লাধিক পরিমাণে শক্ষিত হয়। তার পর মানুষের ভিতর যাহারা অশিক্ষিত তাহারা অপরকে তলবাসিতে শিক্ষা না করুক অন্তুত: আপনার সন্তানকে ভালবাসে। আবার যাহাদের তাহাও নাই তাহারা কুকুর, বিড়াল, পাখী প্রভৃতিতে সেই ভালবাসা নিয়োজিত করে দেখা যায়। ইহা কেবল মাত্র শিক্ষার অভাব, ভালবাসার বিকাশের চেষ্টার অভাব। ইহার সম্যক্ বিকাশের জন্য চেষ্টা করিতে হয়, শিক্ষা করিতে হয়, সাধনা করিতে হয়। এই চেষ্টা, শিক্ষা ও সাধনার দীক্ষাগুরু পিতামাতা। মানুষ জন্মিয়া বুদ্ধির প্রথম বিকাশের সঙ্গে, জ্ঞানের প্রারম্ভ হইতে,মাতা পিতার স্নেহ মমতা দেখিয়া, মাতা পিতার সংসর্গে থাকিয়া, তাঁহাদিগকে আপনা হইতে ভাল বাসিতে আরম্ভ করে, পরে যত বয়স বাড়ে, জ্ঞানের স্মৃর্ত্তি হয়, বুদ্ধির বিকাশ হয়, কৃতজ্ঞতায়, কর্ত্তব্য জ্ঞানে, ও অপর নানা কারণে মাতা পিতার উপর ভালবাসা বৃদ্ধিপায় ভক্তির একাগ্রত হয়। ক্রমে সেই একান্ত ভালবাসা বা ভক্তি এরূপ অবস্থায় দাঁড়ায় যে মানুষ জগতে পিতামাতাকে একমাত্র ভক্তির আধার, ভালবাসার সামগ্রী আদরের জিনিস, সম্মানের পাত্র, পূজার পদার্থ, স্বর্গের দেবতা দেখে। তাঁহারা যেন প্রীত হইলেই জীবন সার্থক, তাঁহারা সন্তুষ্ট থাকিলেই জীবনের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইল, তাঁহাদিগকে প্রাণপণে সেবা করিতে পারিলে, সম্যক্ সমাদর করিতে পারিলেই হইল। প্রাণ আর কিছু চায় না। জীবনের উহাই ব্রত আর এ ব্রতের উজ্জাপন নাই। উজ্জাপন করিতে বাসনাও হয় না। পিতামাতা পীড়ায় ভিষক, শিক্ষায় গুরু, পরামর্শে প্রধান মন্ত্রী, জীবনের প্রধান সহায়, ইহা যিনি বোধ করিতে পারেন তাঁহার ভালবাসাই সম্যক্ বিকশিত হইয়াছে। আবার যিনি তাহার উপর পিতা মাতাকে ঐহিক সুখের আকর এবং পারত্রিক মঙ্গলের হেতু মনে করেন, যিনি পিতা মাতাকেই ইষ্টদেবতা জ্ঞানে তদ‍্গত চিত্তে তাঁহাদের ধ্যান ধারণা, পূজা উপাসনা করেন, যিনি এই পিতা মাতাকে সেই পরম পিতা মাতা হইতে অভিন্ন বোধ করিতে শিখিয়াছেন তিনিই পিতামাতার মর্ম্ম বুঝেন, তাঁহাদের গুরুত্ব বুঝেন, তাঁহাদিগকে ভালবাসেন। এইরূপে ক্রমে ক্রমে স্তরে স্তরে ভালবাসার পরিমাণ বাড়াইতে শিক্ষা করিবার পিতা মাতা ভিন্ন অপর কোন উপায় নাই বলিয়া আমার ধারণা, বিদ্যাসাগর মহাশয়েরও বোধকরি সেই ধারণা ছিল। পিতা মতা নিরক্ষর হইলেও অশেষ শাস্ত্রধ্যাপক পুত্র তাহাদিগকে বিদ্বান,বুদ্ধিমান জ্ঞান করেন। ইহার দৃষ্টান্ত ও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনে। যখন তিনি বিধবাবিবাহের বিচারে ও আন্দোলনে প্রবৃত্ত হন, তিনি সিদ্ধান্ত করিলেন, শাস্ত্র তাঁহার স্বপক্ষে যুক্তি তাঁহার স্বপক্ষে, রাজ পুরুষগণ তাঁহার সহায়, তবুও তিনি পিতা মাতার অনুমতি না লইয়া সেই বিষম আন্দোলনে হস্তক্ষেপ করেন নাই। তাঁহাকে তাঁহার পিতা ভালই চিনিতেন, তবুও যেন তাহার মন পরীক্ষার জন্য জিজ্ঞাসা করিলেন যে যদি তিনি নিষেধ করেন, তাহা হইলে বিদ্যাসাগর মহাশয় কি করিবেন। তাহাতে বিদ্যাসাগর মহাশয় উত্তর দিয়াছিলেন যে যত দিন তাঁহারা জীবিত থাকিবেন তিনি সে বিষয়ের কিছুই করিবেন না, পরে তাঁহাদের স্বর্গারোহণ হইলে পর সেই আন্দোলনে হস্ত ক্ষেপ করিবেন। হিন্দুবালবিধবার বিষম কষ্টময় জীবন দেখিয়া তাঁহার অতুল দয়ার ভাণ্ডার, অসীম স্নেহের আধার, কোমল হৃদয় ব্যথিত হইতেছিল। সে প্রাণের জ্বালা তিনি মর্ম্মে সহিয়া, অন্তরের বৃশ্চিক দংশন সহ্য করিয়া থাকিবেন তবুও পিতা মাতার মতের অন্যথা কার্য্য করিবেননা। এ কি কম ভক্তির কথা। এইত ভালবাসার পূর্ণ বিকাশ। সুবিধা মত ভালবাসিতে সকলেই পারে তাহাকে ভালবাসা বলে না। ভালবাসার জন্য যিনি যত টুকু স্বার্থত্যাগ করিতে পারেন, যতটুকু আত্মসংযম করিতে পারেন, ক্ষতি স্বীকার করিতে পারেন, কষ্ট ভোগ করিতে পারেন, তাঁহার ভালবাসা তত অধিক। পিতা মাতার জন্য অবাধ্য ভাই ভগ্নীর অন্যায় আব্দার, কত লোকের কত অত্যাচার, সমাজের অবিচার, সকলই অম্লান বদনে সহিতে হইবে, তবে ত ভালবাসা। এ সকল পিতা মাতার ভালবাসার যেন পরীক্ষা। বিদ্যাসাগর মহাশয় সে পরীক্ষায় খুব উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। যিনি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে পারেন, ইহ কালে তাঁহার অপার সুখ, পরকালে তাহার অনন্ত স্বর্গ। বিদ্যাসাগর মহাশয় কেন, সকলের ভালবাসার এই একই প্রকরণ। পিতা মাতাকে ভালবাসিলে তাঁহারা যাহাকে ভালবাসেন তাহাকে ভালবাসতে হইবে। ভাই ভগিনীকে ভাল বাসিতে হইবে, আত্মায় কুটুম্বকে ভালবাসিতে হইবে, পুরবাসী, প্রতিবাসী, স্বদেশবাসী সকলকে ভাল বাসিতে হইবে। সকলেই সেই পিতামাতার সম্পর্কে সম্পর্কিত তাঁহাদের প্রবিত্র সম্বন্ধে আবদ্ধ। তাহাদিগকে ভালবাসলে তাহাদের অন্যায় আচরণ, নিষ্ঠুর ব্যবহার ভুলিয়া, তাহাদিগকে ভালবাসিলে পিতামাতা সন্তুষ্ট হইবেন, কাজেই তাহাদিগকে ভাল বাসিতে হইবে। এইরূপে ভালবাসা একাধার হইতে ক্রমশঃ ছড়াইয়া পড়ে। এইরূপে ভালবাসার বিকাশ হয়। ক্রমে ভালবাসা পরিবার ছাড়াইয়া স্বগ্রামে, গ্রাম ছাড়িয়া দেশে, দেশ ছাড়িয়া পৃথিবীময় ছড়াইয়া পড়ে। আবার ক্রমশঃ পৃথিবী ছাড়িয়া স্বর্গে উঠে, নরলোক ছাড়িয়া পিতৃলোকে, পিতৃলোক ছাড়িয়া দেবলোকে এবং পরিশেষে দেবলোক ছাড়াইয়া ভালবাসা প্রেম ভক্তি প্রীতির একমাত্র আধার সেই সচ্চিদানন্দে বিলীন হয়। ইহাই ভালবাসার পবিত্র পরিণাম। কথাটা বড় জটীল হইয়া উঠিল। ছোট মুখে বড় কথা হইতেছে। এ সকল কথার বুঝি কি, যে তাহা বুঝাইব। ও কথা ছাড়িয়া যে কথা বলিতেছিলাম। বিদ্যাসাগয় মহাশয়ের ভালবাসা কেমন সার্ব্বজনিক, সার্ব্বকালিক ছিল। তিনি যাহা করিতেন, যাহা বলিতেন,যাহা ভাৰিতেন তাহা সংশ্লেষণ করিয়া দেখিলে বুঝা যায়, সকলকথার অন্তরে তাহার সেই কোমল হৃদয়, সেই ভালবাসা। তিনি দেখিলেন হিন্দু বালবিধবার কি কষ্ট। তাহাদের আজীবন কষ্ট। তাহারা ভাল খাইতে পায় না, পরিতে পায় না। জীবনে তাহাদের কোন সুখই নাই। তাহাদের জীবন একটা দীর্ঘকাল ব্যাপী কঠোর ব্রত। সে বিষয়ে তাহার সহিত আমার ন্যায় ক্ষুদ্র লোকের মত বৈধ আছে একথা বলিতে সাহস হয় না, যাহা হউক তাহা সত্বেও বলিতে হয়, বিধবার এই সকল শারীরিক দারুণ কষ্ট দেখিয়া তাহার হৃদয় ব্যথিত হইল। তিনি সমাজ সংস্কারক বেশে বঙ্গ সমাজে অবতীর্ণ হইলেন। মানুষের কষ্ট দেখিয়া থাকিতে পারিতেন না, তজ্জন্য নিজের ক্ষমতার প্রতি একটু মাত্র লক্ষ না করিয়া ঋণ দায়ে জর্জরিত হইয়া ও পরের দুঃখ মোচন করিতে অগ্রসর। তাহাতে তাঁহার দিগবিদিক্ জ্ঞান থাকিত না। সকলই তাঁহার সেই ভালবাসা পূর্ণ হৃদয়ের পরিচায়ক। তাঁহার জনৈক পরম বন্ধুর মৃত্যুর পর তাঁহার একজন পার্শ্বচর বিদ্যাসাগর মহাশয় উক্ত বন্ধুর নিকট কিছু টাকা পাইতেন তাহা আদায়ের কোন উপায় নাই, ইহ উল্লেখ করায়, তিনি সাশ্রু লোচনে বলিয়া ছিলেন কি তোমরা দুই চারি হাজার টাকার কথা বলিতেছ, আমি লক্ষটাকা দিতেছি কৈ আমাকে তাঁহার মত একটা বন্ধু মিলাইয়া দেও দেখি। তাঁহার অন্যতম বন্ধু শ্রীযুক্ত রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের প্রভাবতী নাম্নী ক্ষুদ্র বালিকাটীর মৃত্যুতে বিদ্যাসাগর মহাশয় যেরূপ আন্তরিক ব্যথা পাইয়াছিলেন, তাতে তাঁহার ভালবাসার গভীরতা বেশ প্রকাশ পাইয়াছিল। তদুপলক্ষে তিনি যে একটা প্রবন্ধ লিপি বদ্ধ করিয়া গিয়াছেন তাহাতে একটী নিঃসম্পর্কীয়া, ক্ষুদ্র বালিকার জন্য মানুষে যে কত ভালবাসিতে পারে তা দেখা যায়। তাহার এক স্থানে বিদ্যাসাগর মহাশয় লিখিয়াছেন “বৎসে তোমার কিছুমাত্র দয়া ও মমতা নাই। যদি তুমি এত সত্বর পলাইবে বলিয়া স্থির করিয়া ছিলে, সংসারে না আসাই সর্ব্বতোভাবে বিধেয় ছিল। তুমি অল্পদিনের জন্য আসিয়া সকলকে কেবল মর্ম্মান্তিক বেদনা দিয়া গেলে, আমি যে তোমার অদর্শনে কি বিষম সন্ত্রণা ভোগ করিতেছি তাহা তুমি এক বার ও ভাবিতেছ না। আমার যে আহার বিহার, শয়ন, উপবেশন কোন সময়ে অণুমাত্র সুখ নাই। আহারের সময় অধিক দিন শোকসংবরণে অসমর্থ হইয়া নয়ন জলে অন্ন ব্যঞ্জন দূষিত করি, একাকী উপবিষ্ট হইলে তোমার চিন্তায় একান্ত মগ্ন হইয়া, অবিশ্রান্ত অশ্রুপাত করি; রাত্রি কালে শয়ন করিয়া অধিকাংশ সময়ই অনন্যচিত্তে তোমায় চিন্তা করি। কখন কখন ভাবনা ভরে, যেন যথার্থই তোমার কথা শুনিতে পাইলাম, এই মনে করিয়া চকিত হইয়া উঠি। ফলতঃ তুমি যে আমায় কিরূপ যাতনায় নিক্ষিপ্ত করিয়া গিয়াছ, তাহার কিঞ্চিন্মাত্র অনুভব করিতে পরিতেছ না।” প্রবন্ধের শেষ ভাগে লিখিয়াছেন “বৎসে, তোমায় আর অধিক বিরক্ত করিব না। একমাত্র বাসনা ব্যক্ত করিয়া বিরত হই—যদি তুমি পুনরায় নরলোকে জন্ম পরিগ্রহ করিয়া থাক যেন অবিচ্ছিন্ন সুখ সম্ভোগে কালহরণ কর আর যাঁহারা তোমার স্নেহপাশে বদ্ধ হইবেন, যেন তাঁহাদিগকে আমাদের মত যন্ত্রণা ভোগ করিতে না হয়।” ইহাই প্রকৃত হিন্দুর আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ—ইহা হৃদয়ের দৌর্ব্বল্য বলিয়া ঘৃণা করিবার জিনিস নয়। ইহা প্রকৃত ভালবাসা জনিত হৃয়ের আবেগ। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনে এরূপ অনেক দৃষ্টান্ত আছে। এই সম্বন্ধে আর এক দিনের কথা বলি।

 কথাটা বলিতে যেন আমার মন ভরিতেছে না,না বলিয়াও থাকিতে পারিতেছিনা। তাঁহার স্বর্গারোহণের কিছু দিন পূর্ব্বে যখন তাহার শেষ পীড়ার প্রথম সূচনা হয়। একদিন তিনি একাকী বসিয়া আছেন, বেলা দ্বিপ্রহরের সময়, আমি গিয়া প্রণাম করিয়া জিজ্ঞাসা করলাম, আজ আপনি কেমন আছেন। তিনি বলি লেন, ভাল নয়। ক্রমেই অসুখ বাড়িতেছে। তাহার উপর এখানে পরিশ্রমের ত্রুটী নাই, কাজেই সুস্থ হইবার উপায় নাই। আমি বলিলাম আপনি কর্ম্মাটাড়ে যাইলে থাকেন ভাল, আর সেখানে যাইলে অনেকটা বিশ্রাম ও হয়। কিছুদিনের জন্য তাহাই করুন না? ইহার উত্তরে তিনি বলিলেন আমার পক্ষে আজকাল সবই সমান। সেখানে ও বড় ভাল থাকি না। এই কথা বলিয়া ক্ষণিক চুপ করিয়া থাকিয়া পরে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, বাপু সেখানে যাইলে থাকি ভাল বটে, কিন্তু আমার যদি অতুল ঐশ্বর্য থাকিত তাহলে সেখানে গিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া থাকিতে পারিতাম, মন ও ঠাণ্ডা থাকিত, শরীর ও সুস্থ হই। আমার সে অদৃষ্ট কৈ? আমার সে ক্ষমতা কৈ? আমি সেখানে গিয়া দিব্য অন্ন বাঞ্জন আহার করিব, আর আমার চারি পার্শ্বে অসংখ্য নরনারী বালক বালিকা অনাহারে মারা যাইতেছে দেখিব। এটা কি প্রাণে সয়। এই বলিয়া তিনি তথাকার লোকের দারিদ্র্য বর্ণনা করিতে লাগিলেন। কিরূপে যে ব্যক্তি একসের চাউলের অন্ন,আধসের অরহরের ডাল আধসের আলু ও একসের মাংস অন- মাসে ভক্ষণ করিতে পারে সেই ব্যক্তি প্রতি- নিয়ত পোয়াটাক ভুট্টার ছাতু খাইয়া প্রাণ ধারণ করিয়া দিন দিন ক্ষীণ হইয়া স্বভাবের অনিবার্য নিয়মে অল্পদিন মধ্যেই কালের করাল কবলে নিপতিত হয়। যখন তিনি এই সকল বর্ণনা করিতে লাগিলেন তাঁহার দুই নেত্র হইতে অজস্রধারে অশ্রু বর্ষণ হইতে লাগিল ক্রমে স্বর বিকৃত হইয়া করুদ্ধ হইয়া আসিল। আমার ন্যায় পাষাণহৃদয় নরাধম ৩ অসম্বরণ করিতে পারিল না। কিন্তু আমার অশ্রুপাত ও তাঁহার অশ্রুপাত বিভিন্ন কারণে। তিনি কঁদিলেন দুঃখীয় দুঃখের জন্য, আমি কাঁদিলাম তাহার জন্য। তাহার কান্না কেবল মানুষের দুঃখে, আমার কান্না সুখ দুঃখ মিশ্রিত এক অনির্বচনীয় ভাবে। আমি ভাবিলাম আমি কি মানুষের সতি কথা কহিতেছি, দেবতা সাক্ষাতে দাঁড়াইয়া আছি। ব্যক্তি পয়ের দুঃখে এত কাতর, তাহার হৃদয় সাধারণ নয়, সে দেব হৃদয় সে দেবতার স্নেহ, দেবতার ভালবাসা, দীন হীন মানরের একমাত্র সহায়। আমি চর্মচক্ষে এ হেন দেবতা দর্শন করিলাম আমার জীবন সাথক হইল। তাহার পর একটু সামলাইয়া বলিতে লাগিলেন। বাবুর কংগ্রেস করিতেছেন, আন্দোলন করিতেছেন, আস্ফালন করিতেছেন, বক্তৃতা করিতেছেন, ভারত উদ্ধার করিতেছেন। দেশের সহস্র সহ লোক অনাহারে প্রতিদিন মরিতেছে তাহার দিকে কেহই দেখিতেছেন না। রাজনীতি লইয়া কি হইবে? যে দশের লোক দলে দলে না খাইয়া প্র এই যমালয়ে যাইেেছ সে দেশে আবার রাজনী ৩ কি? এই সম্বন্ধে অনেক কথা বললেন মে টকথা আমি সেদিন, যে মানুষকে মানুষ কত দূর ভাল বাসিতে পারে তাহা দেখলাম। জনের অঃ কষ্টে অন্যের হৃদয়, এ ব্যথা পাহতে পারে তাহা পূব্বে জনি ৩ ম না। ইতি পূৰ্বেত পূর্ণ হৃদয় বিশিষ্ট সম্পূর্ণ মনুষ্য দেখি নাই, এজন্মে আর কখন দেখি। সে প্রত্যাশা ও নাই। ইহাই বলি মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশ, মানুষের দেবত্বে পরিণতি। এ হেন পূণ পুরুষ সব্বদা দেখা দেন না। দেবতা সদ। ধরাধামে বিচরণ করিলে, এই জগৎই স্বর্গ হইত। বহুদিন অন্তুর,স্থানে স্থানে এ হেন মানবের আবির্ভাব হয়। আমরা ধন্স ষে তাহাকে স্বচক্ষে দেখিয়াছি। তার মূর্তি মরে খোদিত করিয়া সে সুকোমল দেব হৃদয় পাষাণ ময় করিবার চেষ্টা করি ও না, ধাতুর কাঠিন্যে পরিণত করিও না। সে সৌম্য প্রেমময় দেবমুর্ত্তি আমরা আমাদের ক্ষুদ্র হৃদয় মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করিয়া রাখিয়াছি। সেখানে তাঁহাকে যেন মনশ্চক্ষু উন্মীলিত করিয়া এক এক বার প্রত্যহ দর্শন করি, আর তাঁহার গুণ, তাহার চরিত্র, এবং সর্ব্বাপেক্ষা তাঁহার সেই জগৎ জোড়া সুধামাখা ভালবাসার কণামাত্র পাইবার প্রার্থনায় একান্ত ভক্তি ভরে তাঁহার চরণোদ্দেশে প্রত্যহ প্রণাম করি ও তাঁহার কাছে আমরা সেই আশীর্ব্বাদ ভিক্ষা করি।

সম্পূর্ণ