বিদ্যাসাগর/প্রথম অধ্যায়

প্রথম অধ্যায়।

জন্মস্থান, পুর্ব্ব-বংশ, পিতৃ-পরিচয়, মাতৃ-পরিচয়, পিতামহমাহাত্ম্য,

মাতৃব্যাধি ও গর্ভ-লক্ষণে জ্যোতিষী।

  মেদিনীপুর জেলার অন্তর্বত্তী বীরসিংহ গ্রাম বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মস্থান। পূর্ব্বে ইহা হুগলী জেলার অন্তভূক্ত ছিল। ভূতপূর্ব্ব বঙ্গেশ্বর স্যার জর্জ কাম্বেলের সময় ইহা মেদিনীপুরের অন্তর্ভূক্ত হয়। সার জর্জ কাম্বেলের শাসন-কাল,—১৮৭১–১৮৭৪ খৃষ্টাব্দ। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরসিংহ গ্রাম কলিকাতা হইতে ২৬ ক্রোশ দূরবর্তী। কলিকাতা হইতে জলপথে বীরসিংহ গ্রামে যাইতে হইলে গঙ্গা, রূপনারায়ণ নদীপ্রভূতি বহিয়া গিয়া ঘাটালে উপস্থিত হইতে হয়। ঘাটাল হইতে বীরসিংহ গ্রাম আড়াই ক্রোশ।[১]

 বীরসিংহ গ্রাম বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মস্থান বটে; কিন্তু তাহার পিতৃপিতামহ বা তৎপূর্ব্ব-পুরুষদিগের জন্মস্থান নহে। তাঁহাদের জন্মস্থান হুগলী জেলার অন্তর্গত বনমালিপুর গ্রাম। এই গ্রাম তারকেশ্বরের পশ্চিমে ও জাহানাবাদ মহকুমার পুর্ব্বে চারি ক্রোশ
ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
দূরে অবস্থিত। এখন ইঁহাদের কিঞ্চিৎ পরিচয় দেওয়া,আবশ্যক। ইঁহাদের অবস্থা-তুলনায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনীর গুরুত্ব সবিশেষরূপে উপলব্ধি হইবে। এতৎসম্বন্ধে বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বয়ং যাহা লিখিয়াছেন, তাহা উদ্ধৃত হইল।

 “প্রপিতামহ-দেব ভুবনেশ্বর বিদ্যালঙ্কারের পাঁচ সন্তান। জ্যেষ্ঠ নৃসিংহরাম, মধ্যম গঙ্গাধর, তৃতীয় রামজয়, চতুর্থ পঞ্চানন, পঞ্চম রামচরণ। তৃতীয় রামজয় তর্কভূষণ আমার পিতামহ। বিদ্যালঙ্কার মহাশয়ের দেহত্যাগের পর, জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম, সংসারে কর্তৃত্ব করিতে লাগিলেন। সামান্য বিষয় উপলক্ষে, তাঁহাদের সহিত রামজয় তর্কভূষণের কথান্তব উপস্থিত হইয়া, ক্রমে বিলক্ষণ মনস্তর ঘটিয়া উঠিল। * * * তিনি কাহাকেও কিছু না বলিয়া এক’ কালে, দেশত্যাগী হইলেন।

 “বীরসিংহ গ্রামে উমাপতি তর্কসিদ্ধান্ত নামে এক অতি প্রসিদ্ধ পণ্ডিত ছিলেন। * * * রামজয় তর্কভূষণ এই উমাপতি তর্কসিদ্ধান্তের তৃতীয়া কন্যা দুর্গা দেবীর পাণিগ্রহণ করেন। দুর্গা দেবীর গর্ভে তর্কভূষণ মহাশয়ের দুই পুত্র ও চারি কন্যা জন্মে। জ্যেষ্ঠ ঠাকুরদাস, কনিষ্ঠ কালিদাস; জ্যেষ্ঠ মঙ্গল, মধ্যম কমল, তৃতীয় গোবিন্দমণি, চতুর্থ অন্নপূর্ণা। জ্যেষ্ঠ ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আমার জনক।

 “রামজয় তর্কভূষণ দেশত্যাগী হইলেন; দুর্গ দেবী পুত্রকন্যা লইয়া বনমালিপুরের বাটীতে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। অল্প দিনের মধ্যেই দুর্গ দেবীর লাঞ্ছনাভোগ ও তদীয় পুত্রকন্যাদের উপর কর্তৃপক্ষের অযত্ন ও অনাদর, এত দূর পর্যন্ত হইয়া উঠিল যে, দুর্গা দেবীকে পুত্রদ্বয় ও কন্যাচতুষ্টয় লইয়া, পিত্রালয়ে যাইতে হইল। * * * কতিপয় দিবস অতি সমাদরে অতিবাহিত হইল। দুর্গাদেবীর পিতা, তর্কসিদ্ধান্ত মহাশয়, অতিশয় বৃদ্ধ কইরাছিলেন; “এজন্য সংসারের কর্তৃত্ব তদীয় পুত্র রামসুন্দল বিদ্যাভূষণের হস্তে ছিল।

  • * * *

 “কিছু দিনের মধ্যেই, পুত্রকন্যা লইয়া, পিত্রালয়ে কালযাপন করা দুর্গা দেবীর পক্ষে বিলক্ষণ অসুখের কারণ হইয়া উঠিল। তিনি ত্বরায় বুঝিতে পারিলেন, তাহার ভ্রাতা ও ভ্রাতৃভার্য্যা তাহার উপর অতিশয় বিরূপ। * * অবশেষে দুর্গ দেবীকে পুত্রকন্যা লইয়া, পিত্রালয় হইতে বহির্গত হইতে হইল। তর্কসিদ্ধান্ত মহাশয় সাতিশয় ক্ষুব্ধ ও দুঃখিত হইলেন এবং স্বীয় বাটীর অনতিদুরে এক কুটীর নির্মিত করিয়া দিলেন। দুর্গা দেবী পুত্রকন্যা লইয়া, সেই কুটীরে অবস্থিত ও অতি কষ্টে দিনপাত করিত্বে লাগিলেন।

 “ঐ সময়ে, টেকুয়া ও চরকায় সুতা কাটিয়া, সেই সুতা বেচিয়া অনেক নিঃসংশয় নিরুপায় স্ত্রীলোক আপনাদের দিন গুজরান করিতেন। দুর্গা দেবী সেই বৃত্তি অবলম্বন করিলেন। • • তাদৃশ স্বল্প আয় দ্বারা নিজের, দুই পুত্রের ও চারি কন্যার ভরণপোষণ সম্পন্ন হওয়া সম্ভব নহে। তাহার পিতা সময়ে সময়ে, যথাসম্ভব সাহায্য করিতেন; তথাপি তঁহাদের আহারাদি সর্ব্ববিষয়ে ক্লেশের পরিসীমা ছিল না। এই সময়ে জ্যেষ্ঠ পুত্র ঠাকুরদাসেব বয়ঃক্রম ১৪।১৫ বৎসর। তিনি মাতৃদেবীর অনুমতি লইয়া, উপার্জনের চেষ্টায় কলিকাতা প্রস্থান করিলেন।

 “সভারাম বাচস্পতি নামে আমাদের এক সন্নিহিত জ্ঞাতি কলিকতায় বাস করিয়াছিলেন। তাঁহার পুত্র জগন্মোহন ন্যায়ালঙ্কার, সুপ্রসিদ্ধ চতুর্ভূজ ন্যায়রত্নের নিকট অধ্যয়ন করেন। ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়, ন্যায়রত্ন মহাশয়ের প্রিয় শিষ্য ছিলেন, তাহার অনুগ্রহে ও সহায়তায় তিনি, কলিকাতায় বিলক্ষণ প্রতিষ্ঠাপন্ন হয়েন ঠাকুরদাস, এই সন্নিহিত জ্ঞাতির আবাসে উপস্থিত হইয়া, আত্মপরিচয় দিলেন এবং কি জন্য আসিয়াছেন, অশ্রুপূর্ণলোচনে তাহা ব্যক্ত করিয়া, আশ্রয় প্রার্থনা করিলেন। ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের সময় ভাল, তিনি অকাতরে অন্ন-ব্যয় করিতেন, এমন স্থলে, দুর্দশাপন্ন আসন্ন জ্ঞাতিসন্তানকে অন্ন দেওয়া দুরূহ ব্যাপার নহে। তিনি সাতিশয় দয়া ও সবিশেষ সৌজন্ত প্রদর্শনপূর্বক, ঠাকুরদাসকে আশ্রয় প্রদান করিলেন।

 “ঠাকুরদাস, প্রথমতঃ বনমালিপুরে, তৎপরে বীরসিংহে; সংক্ষিপ্তসার ব্যাকরণ পড়িয়াছিলেন। এক্ষণে তিনি, ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের চতুষ্পাঠীতে, রীতিমত সংস্কৃত বিদ্যার অনুশীলন করিবেন, প্রথমতঃ এই ব্যবস্থা স্থির হইয়াছিল এবং তিনিও তাদৃশ অধ্যয়ন-বিষয়ে, সবিশেষ অনুরক্ত ছিলেন; কিন্তু, ষে উদ্দ্যেশ্যে, তিনি কলিকাতায় আসিয়াছিলেন, সংস্কৃতপাঠে নিযুক্ত হইলে,তাহা সম্পন্ন হয় না। তিনি, সংস্কৃত পড়িবার জ্ন্য, সবিশেষ ব্যাগ্র ছিলেন, যথার্থ বটে, এবং সর্ব্বদাই মনে মনে প্রতিজ্ঞ করিতেন, যত কষ্ট, যত অসুবিধা হউক না কেন, সংস্কৃতপীঠে প্রাণপণে যত্ন করিব; কিন্তু, জননীকে ও ভাই, ভগিনীগুলিকে কি অবস্থায রাখিয়া অসিয়াছেন, যখন তাহা মনে হইত, তখন সে ব্যগ্রতা ও সে প্রতিজ্ঞা, তদীয় অন্তঃকরণ হইতে, একেবারে অপসারিত হইত। যাহা হউক, অনেক বিবেচনার পর, অবশেষে ইহাই অবধারিত হইল, যাহাতে তিনি শীঘ্র উপাৰ্জনক্ষম হন, সেরূপ পড়া-শুনা করাই কর্ত্তব্য।

 “এই সময়ে, মোটামুটি ইঙ্গরেজী জানিলে, সওদাগর সাহেবদিগের হৌসে, অনায়াসে কর্ম্ম হইত। এজন্য সংস্কৃত না পড়িয়া, ইঙ্গরেজী পড়াই, তাহার পক্ষে, পরামর্শসিদ্ধ স্থির হইল। কিন্তু, সে সময়ে, ইঙ্গরেজী পড়া সহজ ব্যাপার ছিল না। তখন, এখনকার মত, প্রতি পল্লীতে ইঙ্গরেজী বিদ্যালয় ছিল না। তাদৃশ বিদ্যালয় থাকিলেও, তাঁঁহার ন্যায় নিরুপায় দীন বালকের তথায় অধ্যয়নের সুবিধা ঘটিত না। ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের পরিচিত এক ব্যক্তি কার্য্যেপযোগী ইঙ্গরেজী জানিতেন। তাঁহার অনুরোধে; ঐ ব্যাক্তি ঠাকুরদাসকে ইঙ্গরেজী পড়াইতে সম্মত হইলেন। তিনি বিষয়কর্ম্ম করিতেন; সুতরাং, দিবাভাগে, তাহার পড়াইবার অবকাশ ছিল না। এজন্য, তিনি ঠাকুরদাসকে সন্ধ্যার সময় তাহার নিকটে যাইতে বলিয়া দিলেন। তদনুসারে, ঠাকুরদাস, প্রত্যহ সন্ধ্যার, পর তাঁহার নিকটে গিয়া ইঙ্গরেজী পড়িতে আরম্ভ করিলেন। -

 “ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের বাটীতে, সন্ধ্যার পরেই, উপরি লোকের আহারের কাণ্ড শেষ হইয়া যাইত। ঠাকুরদাস ইঙ্গরেজী পড়ার অনুরোধে সে সময় উপস্থিত থাকিতে পারিতেন না; যখন আসিতেন, তখন আর আহার পাইবার সম্ভাবনা থাকিত না; সুতরাং তাহাকে রাত্রিতে অনাহারে থাকিতে হইত। এইরূপে নক্তস্তন আহারে বঞ্চিত হইয়া তিনি দিন দিন শীর্ণ ও দুর্ব্বল হইতে লাগিলেন। একদিন তাঁহার শিক্ষক জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি এমন শীর্ণ ও দুর্ব্বল হইতেছ কেন? তিনি কি কারণে সেরূপ অবস্থা ঘটতেছে, অশ্রুপূর্ণনয়নে তাহার পরিচয় দিলেন। ঐ সময়ে সেই স্থানে শিক্ষকের আত্মীয় শূদ্রজাতীয় এক দয়ালু ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সবিশেষ সমস্ত অবগত হইয়া তিনি অতিশয় দুঃখিত হইলেন এবং ঠাকুরদাসকে বলিলেন, যেরূপ শুনিলাম, তাহাতে আর তোমার ওরূপ স্থানে থাকা কোনও মতে চলিতেছে না। যদি তুমি রাঁধিয়া খাইতে পার, তাহা হইলে আমি তোমায় আমার বাসায় রাখিতে পারি। এই সদয় প্রস্তাব শুনিয়া, ঠাকুরদাস, যার-পর-নাই আহ্লাদিত হইলেন এবং পর দিন অবধি তাঁহার বাসায় গিয়া অবস্থিতি করিতে লাগিলেন।

 “এই সদাশয় দয়ালু মহাশয়ের দয়া ও সৌজন্য যেরূপ ছিল, আয় সেরূপ ছিল না। তিনি দালালি করিয়া, সামান্যরূপ উপার্জ্জন করিতেন। যাহা হউক, এই ব্যক্তির আশ্রয়ে আসিয়া, ঠাকুরদাসের, নির্বিঘ্নে, দুই বেলা আহার ও ইঙ্গরেজী পড়া চলিতে লাগিল। কিছু দিন পরে, ঠাকুরদাসের দুর্ভাগ্যক্রমে তদীয় আশ্রয়দাতার আয় বিলক্ষণ খর্ব্ব হইয়া গেল; সুতরাং, তাঁহার নিজের ও তাঁহার আশ্রিত ঠাকুরদাসের অতিশয় কষ্ট উপস্থিত হইল। তিনি প্রতিদিন, প্রাতঃকালে বহির্গত হইতেন এবং কিছু হস্তগষ্ঠ হইলে, কোনও দিন দেড় প্রহরের, কোনও দিন দুই প্রহরের,কোনও দিন আড়াই প্রহরের সময়,বাসায় আসিতেন; যাহা আনিতেন, তাহা দ্বারা, কোনও দিন বা কষ্টে,কোনও দিন সচ্ছন্দে, নিজের ও ঠাকুরদাসের আহার সম্পন্ন হইত। কোনও কোনও দিন, তিনি দিবাভাগে বাসায় আসিতেন না। সেই সেই দিন, ঠাকুরদাসকে সমস্ত দিন উপবাসী থাকিতে হইত।

 “ঠাকুরদাসের সামান্যরূপ একখানি পিতলের পালা ও একটী' ছোট ঘটী ছিল। থালাখানিতে ভাত ও ঘটীটিতে জল খাইতেন। তিনি বিবেচনা করিলেন, এক পয়সার সালপাত কিনিয়া রাখিলে, ১০।১২ দিন ভাত খাওয়া চলিবেক; সুতরাং থালা না থাকিলে, কাজ আটকাইবেক না, অতএব, থালাখানি বেচিয়া ফেলি; বেচিয়া যাহা পাইব, তাহা আপনার হাতে রাখিব। যে দিন, দিনের খেলায় আহারের যোগাড় না হইবেক, এক পয়সার কিছু কিনিয়া খাইব। এই স্থির করিয়া, তিনি সেই থালাখানি, নূতন বাজারে, কাঁসারিদের দোকানে বেচিতে গেলেন। কাঁসারিরা বলিল, আমরা অজানিত লোকের নিকট হইতে পুরাণ বাসন কিনিতে পারিব না, পুরাণ বাসন কিনিয়া কখনও, কখনও বড় ফেসাতে পড়িতে হয়। অতএব আমরা তোমার থালা লইব না। এইরূপে কোনও দোকানদারই সেই থালা কিনিতে সম্মত হইল না। ঠাকুরদাস, বড় আশা করিয়া, থালা বেচিতে গিয়াছিলেন; এক্ষণে, সে আশায় বিসর্জ্জন দিয়া, বিষন্ন মনে বাসায় ফিরিয়া আসিলেন।

 “এক দিন, মধ্যাহ্ন সময়ে ক্ষুধায় অস্থির হইয়া, ঠাকুরদাস বাসা হইতে বহির্গত হইলেন এবং অন্যমনস্ক হইয়া, “ক্ষুধার যাতনা ভূলিবার অভিপ্রায়ে, পথে পথে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ ভ্রমণ করিয়া, তিনি অভিপ্রাযের সম্পূর্ণ বিপরীত ফল পাইলেন। ক্ষুধার যাতনা ভুলিয়া যাওয়া দূরে থাকুক, বড়বাজার হইতে ঠনঠনিয়া পর্যন্ত গিয়া, এত ক্লাস্ত এবং ক্ষুধায় ও তৃষ্ণায় এত অভিভূত হইলেন যে, আর তাঁহার চলিবার ক্ষমতা রহিল না। কিঞ্চিৎ পরেই, তিনি এক দোকানেব সম্মুখে উপস্থিত ও দণ্ডায়মান হইলেন; দেখিলেন এক মধ্যবয়স্কা বিধবা নারী ঐ দোকানে বসিয়া মুড়ি মুড়কি বেচিতেছেন। তাঁহাকে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া, ঐ স্ত্রীলোক জিজ্ঞাসা করিলেন, বাপাঠাকুর, দাঁড়াইয়া আছ কেন। ঠাকুরদাস, তৃষ্ণার উল্লেখ করিয়া পানার্থে জল প্রার্থনা করিলেন। তিনি, সাদর ও সস্নেহ বাক্যে, ঠাকুরদাসকে বসিতে বলিলেন এবং ব্রাহ্মণের ছেলেকে শুধু জল দেওয়া অবিধেয়, এই বিবেচনা করিয়া, কিছু মুড়কি ও জল দিলেন। ঠাকুরদাস যেরূপ ব্যগ্র হইয়া, মুড়কিগুলি খাইলেন, তাহা এক দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করিয়া, ঐ স্ত্রীলোক জিজ্ঞাসা করিলেন, বাপাঠাকুর আজ বুঝি তোমার খাওয়া হয় নাই। তিনি বলিলেন, না মা আজ আমি, এখন পর্যন্ত্য, কিছুই খাই নাই। তখন, সেই স্ত্রীলোক ঠাকুরদাসকে বলিলেন, বাপাঠাকুর জল খাইও না, একটু অপেক্ষা কর। এই বলিয়া নিকটবর্ত্তী গোয়ালার দোকান হইতে, সত্বর,দই কিনিয়া আনিলেন এবং আরও মুড়কি দিয়া, ঠাকুরদাসকে পেট ভরিয়া ফলার করাইলেন; পরে তাঁঁহার মুখে সবিশেষ সমস্ত অবগত হইয়া, জিদ করিয়া বলিয়া দিলেন, যে দিন তোমার এরূপ ঘটিবেক, এখানে আসিয়া ফলার করিয়া যাইবে।”[২]

 “যে যে দিন, দিবাভাগে আহারেব যোগাড় ন হইত; ঠাকুরদাস সেই সেই দিন, ঐ দয়াময়ীর আশ্বাসবাক্য অনুসারে তাঁহার দোকানে গিয়া, পেট ভরিয়া ফলার করিয়া আসিতেন।

 “কিছুদিন পরে ঠাকুরদাস, আশ্রয়দাতার সহায়তায় মাসিক দুই টাকা বেতনে, কোনও স্থানে নিযুক্ত হইলেন। এই কর্ম্ম পাইয়া, তাঁহার আর আহ্লাদের সীমা রহিল না। পূর্বাবৎ আশ্রয়দাতার আশ্রয়ে থাকিয়া, আহারের ক্লেশ সহ করিয়াও, বেতনের দুইটি টাকা, যথানিয়মে জননীর নিকট পাঠাইতে লাগিলেন। তিনি বিলক্ষণ বুদ্ধিমান ও যার-পর-নাই পরিশ্রমী ছিলেন, এবং কখনও কোনও ওজর না করিয়া সকল কর্ম্মই সুন্দররূপে সম্পন্ন করিতেন; এজন্য, ঠাকুরদাস যখন যাহার নিকট কর্ম্ম করিতেন, তাঁহারা সকলেই তাঁহার উপর সাতিশয় সন্তুষ্ট হইতেন।

 “দুই তিন বৎসরের পরেই, ঠাকুরদাস মাসিক পাঁচ টাকা বেতন পাইতে লাগিলেন। তখন তাঁহার জননীর ও ভাইভগিনীগুলির অপেক্ষাকৃত অনেক অংশে কষ্ট দূর হইল। এই সময়ে, পিতামহদেবও দেশে প্রত্যাগমন করিলেন। তিনি প্রথমতঃ বনমালিপুরে গিয়াছিলেন; তথায় স্ত্রী পুত্র কন্যা দেখিতে না পাইয়া, বীরসিংহ আসিয়া পরিবারবর্গের সহিত মিলিত হইলেন। সাত আট বৎসরের পর, তাঁহার সমাগমলাভে, সকলেই আহ্লাদসাগরে মগ্ন হইলেন। শ্বশুরালয়ে, বা শ্বশুরালয়ের সন্নিকটে, বাস করা তিনি অবমাননা জ্ঞান করিতেন; এজন্য কিছু দিন পরেই, পরিবার লইয়া, বনমালিপুরে যাইতে উদ্যত হইয়াছিলেন। কিন্তু দুর্গা দেবীর মুখে ভ্রাতাদের আচরণের পরিচয় পাইয়। সে উত্তম হইতে বিরত হইলেন, এবং নিতান্ত অনিচ্ছাপূর্ব্বক বীরসিংহে অবস্থিতি বিষয়ে সম্মতি প্রদান করিলেন। এইরূপে, বীরসিংহগ্রামে আমাদের বাস হইয়াছিল। '.

 “বীরসিংহে কতিপয় দিবস অতিবাহিত করিয়া, তর্কভূষণ মহাশয়, জ্যেষ্ঠ পুত্র ঠাকুরদাসকে দেখিবার জন্য কলিকাতা প্রস্থান করিলেন। ঠাকুরদাসের আশ্রয়দাতার মুখে, তদীয় কষ্টসহিষ্ণুতা প্রভৃতির প্রভূত পরিচয় পাইয়া, তিনি যথেষ্ট আশীর্ব্বাদ ও সবিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করিলেন। বড়বাজারের দয়েহাটায় উত্তর-রাঢ়ীয় কায়স্থ ভাগবতচরণ সিংহ নামে এক সঙ্গতিপন্ন ব্যক্তি ছিলেন। এই ব্যক্তির সহিত তর্কভূষণ মহাশয়ের বিলক্ষণ পরিচয় ছিল। সিংহ মহাশয় অতিশয় দয়াশীল ও সদাশয় মনুষ্য ছিলেন। তর্কভূষণ মহাশয়ের মুখে তদীয় দেশত্যাগ অবধি যাবতীয় বৃত্তান্ত অবগত হইয়া, প্রস্তাব করিলেন, আপনি অতঃপর ঠাকুরদাসকে আমার বাটীতে রাখুন, আমি তাহার আহার প্রভৃতির ভার লইতেছি; সে যখন স্বয়ং পাক করিয়া থাইতে পারে, তখন আর তাহার কোনও অংশে অসুবিধা ঘটবেক না।,

 “এই প্রস্তাব শুনিয়া, তর্কভূষণ মহাশয়, সাতিশয় আহ্লাদিত হইলেন; এবং ঠাকুরদাসকে সিংহ মহাশয়ের আশ্রয়ে রাখিয়া, বীরসিংহে প্রতিগমন করিলেন। এই অবধি ঠাকুরদাসের আহারক্লেশের অবসান হইল। যথাসময়ে আবশ্যকমত, দুই বেলা আহার পাইয়া তিনি পুনর্জন্ম জ্ঞান করিলেন। এই শুভ ঘটনার দ্বারা, তাঁহার যে কেবল আহারের ক্লেশ দূর হইল, এরূপ নহে, সিংহ মহাশয়ের সহায়তায় মাসিক আট টাকা বেতনে এক স্থানে নিযুক্ত হইলেন। ঠাকুরদাসের আট টাকা মাহিয়ানা হইয়াছে শুনিয়া তদীয় জননী দুর্গ দেবীর আহ্লাদের সীমা রহিল না।

 “এই সময়ে ঠাকুরদাসের বয়ঃক্রম তেইশ চব্বিশ বৎসর হইয়াছিল। অতঃপর তাঁহার বিবাহ দেওয়া আবশ্যক বিবেচনা করিয়া তর্কভূষণ মহাশয় গোঘাট-নিবাসী রামকান্ত তর্কবাগীশের দ্বিতীয় কন্যা ভগবতী দেবীর সহিত, তাঁহার বিবাহ দিলেন।[৩] এই ভগবতী দেবীর গর্ভে আমি জন্ম গ্রহণ করিয়াছি। ভগবতী দেবী, শৈশবকালে মাতুলালয়ে প্রতিপালিত হইয়াছিলেন।”

 রামকান্ত তর্কবাগীশ শব-সাধনায় সিদ্ধ হইতে গিয়া উন্মাদগ্রস্ত হইয়া যান। এই জন্য পাতুলগ্রাম-নিবাসী তদীয় শ্বশুর পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশ মহাশয় তাহাকে সস্ত্রীক নিজ ভবনে আনিয়া রাখেন। বহুবিধ চিকিৎসাতে তর্কবাগীশ মহাশয় আরোগ্য লাভ করেন নাই। মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি উন্মাদগ্রস্ত ছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জননী ভগবতী সেই জন্য মাতুলালয়ে প্রতিপালিত হন। তর্কবাগীশ মহাশয়ের দুই কন্যা। ভগবতী দেবী কনিষ্ঠ। ভগবতী দেবীর জননীর নাম গঙ্গা দেবী। ইনি পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশ মহাশয়ের জেষ্ঠ কন্যা। বিদ্যাবাগীশ মহাশয়ের চারি, পুত্র ও আর একটি কন্যা ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তেজস্বিতা, স্বাধীনতা-প্রিয়তা, সত্যবাদি্তা ও সরলতা চির-প্রসিদ্ধ। তিনি এই সব গুণ পিতা ও পিতামহের নিকট হইতে প্রাপ্ত হইয়াছেন বলিয়া মনে হয়। পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ অসীম তেজস্বী পুরুষ ছিলেন। তিনি কাহারও মুখাপেক্ষা করিতেন না এবং পর-শ্রীকাতর ব্যক্তিবর্গের ভ্রভঙ্গীতে ভীত হইতেন না। তিনি এইরূপ স্বাধীন-প্রকৃতি লোক ছিলেন বলিযা তাঁহার শ্যালক ও তৎপক্ষীয় লোক তাঁহার বিপক্ষ ছিলেন। তাঁহার মতে দেশে মানুষ ছিল না, সবই গরু। তিনি যেমন সৎসাহসী, তেমনই নিরহঙ্কার ও সত্যবাদী ছিলেন। ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণের একটু শ্লেষাত্মক রসিকতার পরিচয় লউন। এক দিন তিনি গ্রামের পথ দিয়া যাইতেছিলেন; এক জন বলিল,—“ও পথ দিয়া যাইবেন না; বড় বিষ্ঠা।” ব্রাহ্মণ উত্তর করিলেন,—“বিষ্ঠা কৈ? সবই তো গোবর, এ দেশে মানুষ কৈ, সবই তো গরু।” কথিত আছে, তিনি যখন গৃহত্যাগ করিয়া তীর্থ পর্যটন করেন, তখন এক দিন রাত্রিকালে স্বপ্ন দেখেন,—“তোমার পরিবার তোমার জন্মস্থান বনমালিপুর পরিত্যাগ করিয়া বীরসিংহ গ্রামে বাস করিতেছে। তাহাদের এখন কষ্টের একশেষ।” ইঁহার পর তিনি বীরসিংহে প্রত্যাগমন করিয়া পুনরায় পরিবারবর্গের ভার গ্রহণ করেন।

 বীরসিংহ গ্রামের ভূস্বামী তাঁহাকে তাহার বাস্তুভিটার ভূমিটুকু নিষ্কর ব্রহ্মোত্তর করিয়া দিতে চাহেন এবং তাঁহার আত্মীয়-স্বজন তাঁহাকে তদগ্রহণার্থ অনুরোধ করেন। তেজস্বী রামজয়ের বিশ্বাস ছিল যে, নিষ্কর ভূমিতে বাস করিলে ভূস্বামী তাহার পুণ্যাংশ গ্রহণ করিবেন এবং তাঁহার অহঙ্কার বাড়িবে। এই জন্য তিনি নিষ্কর ভূমি লইতে সন্মত হন নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বরচিত চরিতে পিতামহ সম্বন্ধে এইরূপ লিখিয়াছেন,—

 “তিনি কখন,পরের উপাসনা বা আনুগত্য - করিতে পারেন নাই। তাঁহার স্থির সিদ্ধান্ত ছিল, অন্যের উপাসনা বা আনুগত্য অপেক্ষা প্রাণ ত্যাগ করা ভাল। তিনি একাহারী, নিরামিষাশী, সদাচারপূত ও নৈমিত্তিক কর্ম্মে সবিশেষ অবহিত ছিলেন।”

 রামজয়ের বিপুল হৃদয়-বলের ন্যায় শারীরিক বল ছিল মনের বল থাকিলে, দেহের বল যেন আপনি আসিয়া পড়ে। দেহ-মনের এমনই নিত্য নিকট সম্বন্ধ। বিদ্যাসাগর মহাশয়ে ইহা আমরা প্রত্যক্ষ করিয়াছি; পিতামহ রামজয়ের কথা শুনিয়াছি। রামজয় সর্ব্বদাই লৌহদণ্ড হস্তে নির্ভীকচিত্তে ভ্রমণ করিতেন। এক সময় তিনি বীরসিংহ হইতে মেদিনীপুরে যাইতেছিলেন, পথের মধ্যে এক ভল্লুক তাঁহাকে আক্রমণ করে। তিনি ভল্লুককে দেখিয়াই এক বৃক্ষের অন্তরালে দণ্ডায়মান হন। ভল্লুকও তাঁহাকে ধরিবার চেষ্টা করে। ভল্লুক যেমন দুইটি হস্ত প্রসারণ করিয়া ধরিতে যাইল, তিনি অমনই তাঁহার দুইটি হাত ধরিয়া বৃক্ষে ঘর্ষণ করিতে লাগিলেন। ভল্লুক তখনই মৃতপ্রায় হইয়া পড়িল রামজয় তাঁহাকে মৃতপ্রায় দেখিয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম করিলেন। ভল্লুক কিন্তু তাহার পশ্চাদভাগে নখরাঘাত করে। রামজয় অনন্যোপায় হইয়া হস্তস্থিত লৌহদণ্ড-আঘাতে তাঁহার প্রাণনাশ করেন। তঁহাকে প্রশষ মাসাধিক নখরাঘাতের ক্ষতজনিত ক্লেশ ভোগ করিতে হইয়াছিল। মৃত্যুকাল পর্যন্ত নখরাঘাতের চিহ্ন

 ঠাকুরদাস কার্যক্ষম হইলে রামজয় পুনরায় তীর্থভ্রমণে বহির্গত 
বিদ্যাসাগর জননী ভবগতী দেবী
হন। বিদ্যাসাগরের জন্মগ্রহণ করিবার পূর্ব্বে তুিনি আবার ফিরিয়া আসেন।

 রামজয় যখন বীরসিংহ গ্রামে প্রত্যাগমন কঁরেন, তখন তাহার পুত্রবধু ভগবতী দেবী গর্ভবতী; কিন্তু উন্মাদগ্রস্ত।[৪] ভগবতী দেবী ঈশ্বরচন্দ্রকে গর্ভে ধারণ করিয়া অবধি উন্মাদগ্রস্ত হন। দশ মাস কাল এই উন্মাদ-অবস্থাই ছিল। বিচিত্র ব্যাপার! দশ মাস কাল নানা চিকিৎসায় কোন ফলোদয় হয় নাই; কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্রকে প্রসব করিবার পরেই ভগবতী দেবী রোগমুক্ত হন। তিনি আর কখনও এরূপ রোগে আক্রান্ত হন নাই। চিরকালই তিনি অটুট অবস্থাতেই দীনহীন কাঙ্গলকে অন্ন-বস্ত্র বিতরণ করিতেন; পরন্তু স্বয়ং রন্ধন এবং পরিবেশনাদি করিয়া দিবা-রাত্র অতিথি-অভ্যাগত জনকে ভোজন করাইতেন। বিদ্যাসাগরের জননীর মত দয়া-দক্ষিণকৃতী রমণী প্রায় দেখা যায় না। এই অন্নপূর্ণ স্বর্ণগর্ভা জননীর পরিচয় পাঠক পরে পাইবেন। এই করুণাময়ীরই করুণা-কণা পাইয়া, অতুল মাতৃভক্তিবলে বিদ্যাসাগর মহাশয় জগতে করুণাময় নাম রাখিয়া গিয়াছেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিতেন, যদি আমার দয়া থাকেত মা’র নিকট হইতে পাইয়াছি, বুদ্ধি থাকেত বাবার নিকট হইতে পাইয়াছি। ইংরেজীশিক্ষিত যুবক! যদি জর্জ হারবটের সেই বাণীব সার্থকতা দেখিতে চাও, একমাত্র জননীই শত শিক্ষকের সমান দেখিতে পাইবে, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জননী-জীবনেও—“One good' mother is worth a hundred school-masters.”

 আজকাল অনেক জ্যোতিষ-ব্যবসায়ীর প্রতি লোকে নানা কারণে বীতশ্রদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে; কিন্তু পূর্ব্বে এরূপ ছিল না। পুর্ব্বে জ্যোতিষীর গণনার ফল প্রায়ই মিথ্যা হইত না। বিদ্যাসাগর মহাশয় জন্মগ্রহণ করিবার পূর্ব্বে, তদানীন্তন জ্যোতিষী ভবানন্দ ভট্টাচার্য্য মহাশয় গণনা করিয়া বলিয়াছিলেন,—“ভগবতী দেবীর গর্ভে দয়ার অবতার জন্মগ্রহণ করিবেন। ইনি জন্মগ্রহণ করিলে ভগবতী দেবীর রোগ সারিয়া যাইবে।” হইলও তাহাই। ভবানন্দের অব্যর্থ বাণী প্রত্যক্ষীভূত হইল। এইজন্যেই হউক বা অন্য কারণেই হউক, বিদ্যাসাগর মহাশয় জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি চিরকালই ভক্তিমান ছিলেন।

  1. বি, এন, রেলওয়ে হইবার পূর্ব্বে হোরমিলার কোম্পানীর ষ্টীমারে চড়িয়া ঘাটাল যাইবার সুবিধা ছিল। ষ্টীমারের সুযোগে তখন এক দিনে বীরসিংহ গ্রামে যাওয়া যাইত। যখন ষ্টীমার চলিত না,তখন নৌকা করিয়া চারি পাঁচ দিন লাগিত।স্থলপথে যাইতে হইলে গঙ্গার পরপারে শালিমার বাঁধা রাস্তা দিয়া যাইতে হয়।দুই দিনে পৌছান যায়।আজ কাল হাওড়া হইতে কোলা পর্যন্ত রেলগাড়িতে যাওয়া যায়।
  2. পিতা ঠাকুরদাসের মুখে এই উপাখ্যান শুনিয়া স্ত্রীজাতির উপর বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রগাঢ় ভক্তি জন্মিয়াছিল। স্ত্রীজাতির প্রতি তিনি চিরকাল ভক্তিমান।
  3. শুনিয়াছি, এই সময়ে ঠাকুরদাসের কনিষ্ঠ কালিদাস কলিকাতায় আসিয়া ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেন। কনিষ্ঠ ভ্রাতা কার্য্যক্ষম হইলে তাঁহাকে নিজ কার্য্যে রাখিয়া ঠাকুরদাস প্রথমে রেশন ও তৎপরে বাসনের ব্যবস্থা করেন।, কনিষ্ঠ দ্বারা সুন্দর রূপে না চলায়, তিনি আবার ইচ্ছাপূর্ব্বক সত্ত্বর স্বকর্ম্মে নিযুক্ত হন।
  4. কথিত আছে,—রামজয় ক্রদার পাহাড়ে স্বপ্ন দেখেন যে,তাঁহার বংশে এক সুপুত্র জন্মগ্রহন করিবেন। তাঁহার কীর্তি চিরস্থায়িনী হইবে।সেই সুপুত্র এই বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্বরচিত চরিতে ইঁহার উল্লেখ পাই।