বিবিধ প্রসঙ্গ/জগতের জন্ম-মৃত্যু

জগতের জন্ম মৃত্যু।

 কত অসংখ্য, কত বিচিত্র জগৎ আছে, তাহ একবার মনোযোগ পূর্ব্বক ভাবিয়া দেখা হউক্ দেখি! আমার কথা হয় ত অনেকে ভুল বুঝিতেছেন। অনেকে হয় ত চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র একটি একটি গণনা করিয়া জগতের সংখ্যা নিরপণ করিতেছেন। কিন্তু আমি আর এক দিক হইতে গণনা করিতেছি। জগৎ একটি বই নয়। কিন্তু প্রতি লোকের এক একটি যে পৃথক জগৎ আছে, তাহাই গণনা করিয়া দেখ দেখি! কত সহস্র জগৎ! আমি যখন রোগ-যন্ত্রণায় কাতর হইয়া ছটফট্ করিতেছি তখন কেন জ্যোৎস্নার মুখ ম্লান হইয়া যায়, উষার মুখেও শ্রান্তি প্রকাশ পায়, সন্ধ্যার হৃদয়েও অশান্তি বিরাজ করিতে থাকে? অথচ সেই মুহূর্ত্তে কত শত লোকের কত শত জগৎ আনন্দে হাসিতেছে, কত শত ভাবে তরঙ্গিত হইতেছে। না হইবে কেন? আমার জগৎ যতই প্রকাণ্ড, যতই মহান্ হউক্ না কেন, “আমি” বলিয়া একটি ক্ষুদ্র বালুকণার উপর তাহার সমস্তটা গঠিত। আমার সহিত সে জন্মিয়াছে, আমার সহিত সে লয় পাইবে। সুতরাং আমি কাঁদিলেই সে কাঁদে, আমি হাসিলেই সে হাসে। তাহার আর কাহাকেও দেখিবার নাই, আর কাহারও জন্য ভাবিবার নাই। ত্যাহার লক্ষ তারা আছে, কেবল আমার মুখের দিকে চাহিয়া থাকিবার জন্য। একজন লোক যখন মরিয়া গেল, তখন আমরা ভাবি না যে একটি জগৎ নিভিয়া গেল। একটি নীলাকাশ গেল, একটি সৌরপরিবার গেল, একটি তরুলতাপশুপক্ষীশোভিত পৃথিবী গেল।