বিবিধ প্রসঙ্গ/দ্রুতবুদ্ধি
দ্রুত বুদ্ধি।
অসাধারণ বুদ্ধিমান লোকদের অনেকের সহসা নির্ব্বোধ বলিয়া ভ্রম হইয়া থাকে। তাহার কারণ—বুঝিবার পদ্ধতিকে, বুঝিবার ক্রম বিশিষ্ট সোপান গুলিকে অনেকে বুঝা মনে করেন। এই উভয়কে তাঁহারা স্বতন্ত্র করিয়া দেখিতে পারেন না, একত্র করিয়া দেখেন। যাঁহাদের বুদ্ধি বিদ্যুতের মত, বজবেগে যাঁহাদের মাথায় ভাব আসিয়া পড়ে; যাঁহাদের বুঝার সোপান দেখা যায় না, কঙ্কাল দেখা যায় না, ইঁট ও মালমসলাগুলা দেখা যায় না, কেবল বুঝাটাই দেখা যায়, সাধারণ লোকেরা তাঁহাদের নির্ব্বোধ মনে করে, কারণ তাহারা তাঁহাদের বুঝাকে বুঝিতে পারে না। যাদুকরেরা যাহা করে, তাহা যদি আস্তে আস্তে করে, তাহার প্রতি অঙ্গ যদি দেখাইয়া দেখাইয়া করে তবে দর্শক বেচারীরা সমস্ত বুঝিতে পারে। নহিলে তাহাদের ভেবাচেকা লাগিয়া যায়, কিছুই আয়ত্ত করিতে পারে না ও সমস্তই ইন্দ্রজাল বলিয়া ঠাহরায়। অসাধারণ বুদ্ধির এক দোষ এই যে, সে বুঝিতে যেমন পারে, বুঝাইতে তেমন পারে না। বুঝাইবে কিরূপে বল? নিজে সে একটা বিষয় এত ভাল জানে ও এত সহজে জানে যে, তাহাকেও আবার কি করিয়া সহজ করিতে হইবে ভাবিয়া পায় না। ইহারা আপনাকে অপেক্ষাকৃত নির্ব্বোধ না করিয়া ফেলিলে অন্যকে বুঝাইতে পারে না। ইহাদের বুদ্ধি একটা সিদ্ধান্তে উপস্থিত হইবামাত্র আবার তাহাকে সেখান হইতে বলপূর্ব্বক বাহির করিয়া দিতে হয়, যে পথ দিয়া বিদ্যুৎবেগে সে সেই সিদ্ধান্তে উপস্থিত হইয়াছিল, সেই পথ দিয়া অতিধীরে ধীরে এক পা এক পা করিয়া তাহাকে ফিরাইয়া লইয়া যাইতে হয়, সে ব্যক্তি অভ্যাস দোযে মাঝে মাঝে ছুটিয়া চলিতে চায়, অমনি তাহাকে পাক্ড়া করিয়া বলিতে হয়-“আস্তে!” কেহ বা ইচ্ছা করলে এইরূপ নির্ব্বোধ হইতে পারে, কেহ বা পারে না। অনেকের বুদ্ধি কোন মতেই রাশ মানে না, তাহাকে আস্তে চালাইবার সাধ্য নাই। এইরূপ লোকদের নির্ব্বোধ লোকেরা নির্ব্বোধ মনে করে। যাহারা স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়-টানা নৌকায় যায়, তাহারা প্রতি ঝাঁকানীতে প্রতি দাঁড়ের শব্দে বুঝিতে পারে যে, নৌকা অগ্রসর হইতেছে। যাহারা পালের নৌকায় চলে, তাহারা সকল সময়ে বুঝিতে পারে না নৌকা চলিতেছে কি না।