বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি/১
(১)
আমি একজন ইংরেজি-পড়া সন্ন্যাসী। আজ কাল অনেকানেক সন্ন্যাসী বিলাতে গিয়ে শাস্ত্রের বুক্নি-মিশানাে-বক্তৃতা কোরে খুর হাততালি খায়। আমারও এক দিন সখ হােলাে যে বিলাতের হাততালি খাবাে। কলিকাতা মুম্বই ও মান্দ্রাজের হাততালি খুব খেয়েছি—এখন দেখি একবার চম্পকবরণ হাতের হাততালি কেমন মিষ্টি। সন্ন্যাসীর মন— যেমনি খেয়াল অমনি উঠা।
পাঠক—তােমরা বিলাতগামী সন্ন্যাসীর রূপ বােধ হয় কখনও দেখ নাই। সাধারণতঃ মাথা গোঁপ দাড়ি সব মুড়ানাে—রেশমের পাগড়ি রেশমের আলখাল্লা—পায়ে বিলাতী বুট—হাতে ছড়ি মুখে চুরুট—সঙ্গে পোর্টম্যাণ্ট গ্ল্যাডষ্টন-ব্যাগ স্ট্র্যাপ-বাঁধা বিলাতী-কম্বল-জড়ানাে বিছানা— গলায় টাকা-মােহর-ভরা কুরিয়ার ব্যাগ। আহা মরি—সেজেছে ভাল। আমিও ঐ রকম কতকটা ঢং ধরিলাম—কেবল পয়সার অভাবে রেশমটা জুটিল না। আর বুট চুরুট ছড়ি পোর্টম্যাণ্ট ইত্যাদি আমার সৎসঙ্গ অনেক দিন ত্যাগ কোরেছে হায়রে—আমার কেবল ইংরেজি পড়াই সার। আমার ছিল—গায়ে একখানি বনাত ও হাতে একখানি কম্বল। বন্ধুবান্ধবেরা ধোরে কোরে একটা গােদ্ধড় মােটা গরম কাপড়ের আলখাল্লা কোরে দিয়েছিল। দিয়েছিল তাই বেঁচেছি—নহিলে বিলাতের ঠাণ্ডায় দফা রফা হােয়ে যেতাে।
মুম্বইয়ে জাহাজে উঠিবার আগে ডাক্তারে পরীক্ষা করে—পেলেগ হোয়েছে কি না—আর সব বোঁচকা-বুচকি কলের ভিতর পূরে একরকম ঔষধ দিয়ে ধুয়ে দেয়। আমার জিনিস-পত্তর দেখিতে এলো—দেখে কিছুই নাই। একেবারে অবাক্। একটা ব্যাগ বা পুঁটুলিও নাই। শুধু হাতে বিলেত। ডাক্তার সাহেব একটু এদিক ওদিক চেয়ে একখানা পাস দিয়ে দিলে। আমি একেবারে নবাবের মত গিয়ে জাহাজে উঠিলাম। আর আমার সহযাত্রীদের দুর্দ্দশার সীমা রহিল না। ধাক্কাধাকি ঠেলাঠেলি পুলীশের গুতো খুব চলিতে লাগিল। আমি মনে মনে ভাবিলাম—কৌপীনবন্তঃ খলু ভাগ্যবন্তঃ। এ দুর্দ্দশা কেবল দেশী যাত্রীদের—শাদা-চামড়া দেবদেবীর নহে।
জাহাজে উঠে ভাবিতেছিলাম ভোজনের ব্যবস্থা কি কোরে করিব। মাছ মাংস রুচে না—আর সাহেবেরা তরকারি চর্ব্বি দিয়া রাঁধে। ঘৃত আমাদের নিকট অমৃত—তাহা কিন্তু কর্ত্তারা মুখে করিতে পারেন না— যেমন কপাল। জাহাজ ছাড়িবার সময় বড় গোলমাল। ছাড়িয়া দিলে দেখি যে কতকগুলি সিন্ধুদেশবাসী হিন্দু সওদাগর জাহাজে উঠিয়াছে। কেহ মল্টা (Malta) কেহ জিব্রলটার (Gibraltar) কেহ তুনিস (Tunis) যাইতেছে। সিন্ধীরা সর্ব্বত্র ব্যবসায় করিতে যায়। জাপান মার্কিণ ইউরোপ আফ্রিকা সকল স্থানেই ইহাদের দোকান আছে। ইহারা জাতিতে বণিক্ কিন্তু মাংস ও মদিরা খায়। সমুদ্রপারে যাইলে ইহারা জাতিচ্যুত হয় না। আমি সিন্ধুদেশে অনেক দিন ছিলাম তাই ইহাদের মধ্যে দুই এক জন আমাকে জানিত। খুব খাতির। সকাল বেলা চা ও হাতগড়া-রুটি—মধ্যাহ্নে ভাত ডাল তরকারি-অপরাহ্ণে চা ও রাত্রিতে রুটি তরকারি। ইহাদের সঙ্গে রাঁধুনি ও চাকর ছিল। সে খালাসিদের চুল্লীতে পাক করিয়া আনিত। বেশ আমোদ-প্রমোদে দিন কাটিত। সমস্ত দিন তাস পাশা ও সঙ্গীত চলিত। তাহাদের মদিরাপানও সঙ্গে সঙ্গে ছিল। সিন্ধীরা সুরাপান করে অল্প স্বল্প। মাতাল বড় একটা হয় না। জাহাজে একদিন একজন সিন্ধী উপরোধের দায়ে একটু বেশী খেয়ে মাতাল হোয়ে পোড়েছিল। সকলে তাহাকে এত ধিক্কার দিলে যে সে রেচারী লজ্জায় মরে।
জাহাজে তিন জন বুয়র ছিল। তাহারা বন্দী হইয়া ভারতবর্ষে আনীত হইয়াছিল। মুক্ত হইয়া দেশে যাইতেছে। ইহাদের মধ্যে একজন সেনাপতি (Commandant)। ইনি বেশ ইংরেজি জানেন। বুয়রযুদ্ধের এক প্রকাণ্ড ইতিহাস ইংরেজিতে লিখিয়াছেন। সর্ব্বসমেত পঁচিশ ত্রিশ খানা মোটা মোটা খাতা। শীঘ্রই ইহা মুদ্রিত হবে। আমি ইহা অনেকটা পড়িয়াছি। যে জাহাজে ইনি বন্দী হইয়া ভারতে আনীত হন—তাহাতে ৫০০ পাঁচ শত বুয়র ছিল। ইনি বলেন যে সেই পাঁচ শতের মধ্যে কেবল ৬৪ জন যোদ্ধা আর বাকি লোক কখন যুদ্ধ করে নাই। এলোপাতাড়ি কুড়িয়ে বাড়িয়ে তাহাদিগকে ধরিয়া আনা হইয়াছিল। ইনি ডিওয়েটের বন্ধু। ডিওয়েট একজন কৃষক (Farmer)। লেখা পড়া পঞ্চম শ্রেণী পর্য্যন্ত। যুদ্ধের আগে কে জানিত যে একজন গৃহস্থ কৃষক জগন্মান্য বীর হইয়া উঠিবে। ডিওয়েটের প্রস্থান বিবরণ শুনিয়া ইনি হাসিয়া উঠিলেন। গরুমহিষদের সঙ্গে সঙ্গে ডিওয়েটের পলায়ন —ইহা কেবল কাল্পনিক। ডিওয়েট ইংরেজদের ঘেরাওকে কিছুই গ্রাহ্য করিত না। কোলেনসো (Colenso) এবং মডার নদীর (Modder river) যুদ্ধে বুয়রেরা ইংরেজদিগকে বেশ বুঝাইয়া দিয়াছিল যে চড়াও কোরে ফতে করা একেবারে অসাধ্য। তাই কীচনর জাল পাতিয়া বসিয়া থাকিতেন কখন্ শীকার আসিয়া পড়ে। বোথা ইংরেজের Blockhouse অর্থাৎ জালের গাঁটের মতন ছোট ছোট কেল্লা দেখিয়া হাস্য সম্বরণ করিতে পারিতেন না। কিন্তু রসদের অভাবে বুয়রেরা বড় ঘাল হইয়া পড়িয়াছিল। ইংরেজ সেনাদের রসদ লুট করিয়া তাহাদিগকে চালাইতে হইত। ইহাতেও তাহারা পেছপাও হয় নাই। কিন্তু যখন হাজার হাজার বুয়র-রমণী ও বালক ইংরেজের কারাগৃহে মরিতে লাগিল তখন তাহারা মায়াবশে ও নির্ব্বংশ হইবার ভয়ে ইংরেজের বশ্যতা স্বীকার করিল। এই ত আমার সহযাত্রী বুয়র সেনাপতির ইতিহাসের দুই একটি কথা। আমার একটি ছোট তামার লোটা ছিল। সেইটীর উপর এঁর খুব নজর পোড়েছিল। তাই আমি ঐ লোটাটি তাঁহাকে উপহাররূপে দিয়া ফেলিলাম। ভারি খুসি। কিন্তু লোটা বিনা আমার বড় দুর্দ্দশা হইতে লাগিল।
মুম্বই হইতে অদন (Aden) পর্য্যন্ত সমুদ্র কিছু বিক্ষুব্ধ ছিল। তাই আমি বড় পীড়িত (Sea-sick) হোয়েছিলাম। মনে হইতেছিল কি কুক্ষণে জাহাজে উঠিয়াছিলাম। অনেকেরই আমার মতন অবস্থা হোয়েছিল। কিন্তু অদনে আসিয়া সব সারিয়া গেল। অদন—লোহিত সাগরের ফটক। লোহিত সাগর অতি সুন্দর। দুই দিকে দুই ভূখণ্ডের উপকূল। মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম। মধ্যে নীল পায়োধি। জল ও স্থল দুইই দেখিতে পাওয়া যায় বলিয়া চোখের ক্লান্তি হয় না। যেতে যেতে আফ্রিকার উপকূলে একটা পাহাড় দেখা গেল—তাহার নাম জবল শয়তান অর্থাৎ শয়তানের পাহাড়। দুই একজন আরব-দেশীয় সওদাগর বলিল যে এখানে জিনেরা অর্থাৎ ভূতেরা রাত্রিতে বড় ধা-ধাঁ লাগিয়ে দেয়। দেখা যায় যে দিব্য দীপালোকশোভিত জাহাজ বেগে ধাবিত হইতেছে। একেবারে যেন সত্যিকারের জাহাজের ঘাড়ে এসে পড়ো পড়ো হয়—নিশান (Signal) মানে না। যখন সকলে নিরাশ—ঠোকর লেগে ডুবে যাবার ভয়ে আকুল হয়—তখন কোথায় বা জাহাজ আর কোথায় বা আলোকমালা—সব একেবারে অদৃশ্য। আরব-সওদাগরের কথা আমি হেসে উড়িয়ে দিলাম। কিন্তু নাবিকেরাও ঐ কথা বলিল। আশ্চর্য্যের বিষয় যে একজন লেখাপড়া জানা জাহাজি ইঞ্জিনিয়রও সাক্ষ্য দিলেন যে তিনি ঐরূপ ব্যাপার স্বচক্ষে দেখিয়াছেন। এর পরে আর কি বলিব।
অদনে খুব গরমি। কিন্তু যত জাহাজ উত্তরে উঠিতে লাগিল তত ঠাণ্ডা পড়িতে লাগিল। আমার শরীর তখন বেশ ভাল ছিল। আমি অনেক রাত্রি অবধি জাহাজের উপরিস্থ ছাদে (Upper deck) বসিয়া বসিয়া সমুদ্রের বাহার দেখিতাম। চাঁদ উঠিলে বড়ই শোভা হয়। রাত্রিতে একরকম মাছ দেখা যায়—সেই মাছের মুখ হইতে আলো (Phosphorus) বাহির হয়। ইহারা ঝাঁকে ঝাঁকে জাহাজের সঙ্গে ছোটে। দেখিলে, বোধ হয় যেন সমুদ্র থেকে তুবড়ি বাজি উঠিতেছে। আমি ইহাদের নাম রাখিয়াছি পরী মাছ। উড়ন্ত মাছও দেখিলাম। তবে আর ওসব লিখিব না। সমুদ্রযাত্রার বর্ণন চর্ব্বিত-চর্ব্বণ হোয়ে গেছে। থোড়বড়ি-খাড়াকে খাড়া-বড়ি-থোড় বলিয়া আর কি হবে।
অল্পে অল্পে জাহাজ সুয়েজের (Suez) খালে প্রবেশ করিল। খালটি আমাদের কলিকাতার খালের অপেক্ষা কিছু চওড়া। দুই ধারে মরুভূমি ধূ ধূ করিতেছে। মাঝে মাঝে বৃক্ষলতা-শোভিত ইষ্টিশাণ। খালটি প্রায় ৫০ ক্রোশ দীর্ঘ। এই মরুভূমির মধ্য দিয়া অত লম্বা খাল কাটা অতিমানুষিক ব্যাপার। খালের প্রারম্ভে সুয়েজ বন্দর আর শেষে সৈয়দ বন্দর।
সৈয়দ বন্দর ছাড়াইয়া ভূমধ্য সাগরে আসিয়া পড়িলাম। আমার আবার রাত্রিতে বাহিরে বোসে ঠাণ্ডা লাগিয়ে কোমরে খুব ব্যথা ধরেছিল। কতকটা উত্থান-শক্তি-রহিত হোতে হয়েছিল। মেরেকেটে এক এক বার জাহাজের উপর আসিতাম। সৈয়দ বন্দর থেকে তিন দিন কেবল জলরাশি। তার পরে সিসিলি দ্বীপ দেখা গেল। সিসিলির এট্না আগ্নেয় পর্ব্বত দেখিতে অতি ভীষণ। অম্বর-চুম্বিত শিখর-দেশ হইতে অবিরত দীপ্ত ধূমরাশি উদ্গীর্ণ হইতেছে। ধূসরকৃষ্ট জলদজাল কটিদেশকে জড়াইয়া রহিয়াছে।
আমাদের জাহাজখানি এক ইতালীয় কোম্পানীর। ইহার গম্যস্থান জেনোয়া (Genoa) সহর। ৫ই অক্টোবর মুম্বই ছাড়িয়াছিল। ১লা নভেম্বর নেপল্স্ সহরে আসিয়া পঁহুছিল। ইতালীয়েরা এই সহরকে নাপলী (Napoli) বলে। ইংরেজ বাহাদুর এই সুন্দর নামটীকে বিকৃত করিয়া তুলিয়াছেন। নাপলী একটি ছবি বলিলে অত্যুক্তি হয় না। দুর থেকে ঠিক যেন চিত্রার্পিতারম্ভ বলিয়া বোধ হয়। আমার টিকিট জেনোয়া অবধি ছিল। তথায় শুনিলাম নাপলী হইতে রোম (ইহার ইতালীয় নাম রোমা) রেলে চারি ঘণ্টার রাস্তা রোমা দেখিবার বড় সখ হইল। জাহাজ হইতে নামিয়া পড়িলাম। ভয়ানক কোমরে ব্যথা নিয়ে অতি কষ্টে ইষ্টিশানে গেলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা কোরে ডাকগাড়িতে উঠিলাম। গাড়ি রোমে রাত্রি নয়টার সময় পঁহুছিবে শুনিয়া একটু ভাবনা হোলো। বিদেশ ভূঁই—কি জানি কিরকম। গাড়ি খুব বেগে চলিল! আগ্নেয় পর্ব্বত বিসুবিয়স অতি নিকটে। ইহারও মাথায় ধূমরাশি। বিস্ময়ের কথা যে ইহার পৃষ্ঠে ও তলদেশে বড় বড় বসতি আছে। কতবার ভস্মসাৎ হইয়াছে তবুও ভয় নাই। রাস্তার দুই দিকে পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে গায়ে সুন্দর সুন্দর গ্রাম। সমস্ত দেশটি যেন একখানি বাগান। বাহিরে ত এই প্রকৃতির শোভা। আবার গাড়ীর ভিতরেও প্রকৃতির লীলা। আমার গাড়িতে এক যুবক ও এক যুবতী উঠিয়াছিল। যুবক একটু স্থির গম্ভীর কিন্তু নারীটি কিছু চঞ্চলা। এই যুগল মুরতির হাব-ভাব ব্যবহার দেখিয়া অমি ত একেবারে আড়ষ্ট। যুবক মাঝে মাঝে যুবতীর মুখ রুমাল দিয়া মুছাইয়া দিতেছে―পাছে কয়লার কালিমা লাগে—কখনও বা সুরা ঢালিয়া উভয়ে পান করে আর কত যে কথা কত যে ভঙ্গিমা বর্ণনায় কুলাইয়া উঠা দায়। গাড়িভরা ভদ্রলোক। তাহারা ওরূপ আচরণ দেখে ভ্রূক্ষেপও করিল না —যেন ওটা সচরাচর হোয়ে থাকে। কিন্তু আমার প্রাণটা হাঁপ হাঁপ করিতেছিল। কেননা আমার মনে ধারণা হয়েছিল যে নারীটি বারাঙ্গনা নহে—কুলাঙ্গনা। সত্য সত্যই সে কুলাঙ্গনা। আমার ত দেখে শুনে চক্ষুস্থির। যাহা হউক এইরূপ অন্তঃপ্রকৃতির ও বহিঃপ্রকৃতির মধ্যে দোদুল্যমান হইতেছি এমন সময় দুইটি ইতালীয় ভদ্রলোক গাড়িতে চড়িল। পরে জানা গেল তাহারা মামা-ভাগিনেয়। মামা অল্প ইংরেজি জানে― ভাগিনেয় বেশ জানে। মামা একজন যোদ্ধা। তাঁহার সঙ্গে একটি খোদিত লাঠি আছে। উহাতে তিনি যত যুদ্ধ করিয়াছেন সব উহাতে সংক্ষেপে বিবৃত আছে। আমার সহিত কথা আরম্ভ হইল। আমি ইতালী দেশের সাহিত্য ইতিহাস শিল্পকলা ও রাজনীতির বিষয় কিছু কিছু জানি। যখন এঁরা—পেলিকো (Pellico) কি প্রকার দেশের জন্য কারাকষ্ট সহিয়াছিলেন—আর কবি পেত্রার্কা লরার জন্য কি প্রকার কাঁদিয়াছিলেন— ও আরো আরো ইতালীদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের কথা এই কম্বলমাত্র-সম্বল বাঙ্গালি সন্ন্যাসীর নিকট শুনিলেন—তখন তাঁহারা বিস্মিত হইলেন। বাস্তবিক ইতালী দেশকে আমি বড় ভালবাসি। ইতালীর ভাষা অতি সুমিষ্ট। ইতালীর লোকেরা বড় সৌজন্য গুণ-সম্পন্ন। আমার ইতালীর বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও পক্ষপাতিতা দেখিয়া মামা ও ভাগিনেয় খুব আপ্যায়িত হইল। তাঁহারা রোমনিবাসী নহেন। তাহাদের বড় ইচ্ছা যে আমি তাঁহাদের দেশে যাই। যাহা হউক আমার আর কিছু ভাবিতে হইল না। তারা আমাকে এক হোটেলে লইয়া গিয়া বাসা দিল। খরচটরচ আমার এক পয়সাও লাগিল না। রোমের বিশেষ বিবরণ আগামী সপ্তাহে লিখিব।
আমি ইংলণ্ডে আসিয়া পঁহুছিয়াছি। (Oxford) ঊক্ষপারে আছি। হাততালি খাবার খুব যোগাড় হোয়েছে। আগামী সপ্তাহে আমি একটি বক্তৃতা দিব। বিষয়—হিন্দুর চিন্তাপ্রণালী ও পাশ্চাত্য বিদ্যা। সভাপতি হইবেন এখানকার সংস্কৃত অধ্যাপক (Boden Professor of Sanskrit) এ-এ-মগ্দানল এম-এ। কলেজের ছাত্রদের মধ্যে একটা গোলমাল শুরু হয়েছে যে হিন্দুদর্শনের বিষয় বলিবার জন্য একজন কে কলিকাতা হোতে এসেছে। ছেলেবেলা কলিকাতার রাস্তায় অনেক দুয়ো হাততালি পেয়েছি। তবে বাঙ্গালি আর ইংরেজি হাততালিতে অনেক ভেদ। দেখি কপালে কি আছে। বিলাতের অনেক কথা আছে। আজ এই পর্য্যম্ভ।