বিলাত-প্রবাসী

 সন্ন্যাসীর চিঠি।

(৪)

অক্ষফর্ড নগরকে সংস্কৃত ভাষায়―ঊক্ষপার—শব্দে অভিহিত করিলে মন্দ হয় না। ইংরেজিতে অক্‌স্ অর্থে ঊক্ষ—আর ফোর্ড অর্থে পার। তা হোলে অর্থ ত বজায় থাকেই আর শাব্দিক মিলও কতকটা হয়। নগরটি তিন দিকে দুইটি নদীর দ্বারা বেষ্টিত। নদী দুটি আট দশ হাত চওড়া হবে। স্রোত অতি মৃদু এবং জল সুনির্ম্মল। নগরের চারিদিকে প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড তৃণাচ্ছাদিত মাঠ। কতকগুলি গোচারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অধিকাংশই ছাত্রদের ক্রিকেট বা ফুটবল বা গল্‌ফ খেলিবার নিমিত্ত অতি যত্নে ও ব্যয়ে সুরক্ষিত। মাঠের অপর পারে আবার শ্যামলবৃক্ষাচ্ছাদিত ছোট ছোট পাহাড়। নদী মাঠ ও পাহাড়―তিন মিলে স্থানটিকে অতি রমণীয় করিয়া তুলিয়াছে। পুরাকাল হোতে এই জায়গায় বিলাতী সন্ন্যাসীদের (মঙ্ক) বড় বড় মঠ ছিল। সেই মঠের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদিগের জন্য আয়তন (কালেজ) নির্ম্মিত হইয়াছিল। কালেজ কথাটির ধাতুগত যে অর্থ—আয়তনেরও সেই অর্থ। সংস্কৃতে কালেজকে আয়তন বলে—সেটা আমরা ভুলিয়া গিয়াছি। ধনবান্ ভক্তরা ছাত্রদিগের এ আবাস নির্ম্মাণ করিয়া দিত এবং ভরণপোষণের জন্য বিপুল অর্থ দান করিত। এইরূপে ঊক্ষপারে অনেক কলেজ স্থাপিত হইয়াছে। কিন্তু প্রায় চারি শত বৎসর পূর্ব্বে ইংলণ্ডে এক ভয়ানক ধর্ম্মবিপ্লব ঘটে। সেই অবধি ইংরেজজাতির মনে সন্ন্যাস-আশ্রমের উপর বিদ্বেষ জন্মিয়াছে। কালেজ ইংলণ্ডের রাজা সন্ন্যাসীদিগকে দূর করিয়া মঠ সকল ভাঙ্গিয়া দিয়াছেন ও দেবোত্তর সম্পত্তিগুলি বাজেয়াপ্ত করিয়াছেন। কাজে কাজেই আয়তনগুলি এখন সরকারি খাসে আসিয়াছে। এই মঠ ভাঙ্গার পর আরও গুটিকয়েক কালেজ হইয়াছে। এখন এখানে সর্ব্বশুদ্ধ তেইশটি কালেজ। প্রত্যেক কালেজেই ছাত্রাবাস আছে। তবে সকল ছাত্রেরই থাকিবার জায়গা হয় না। বাকি ছাত্রেরা বাসা করিয়া থাকে। কিন্তু সেই বাসা সকল কর্ত্তৃপক্ষের দ্বারা নির্দ্দিষ্ট হয় ও কতক পরিমাণে শাসিত হয়। কতকগুলি লোক নিযুক্ত আছে— যাহারা ছাত্রদের বাসার তত্ত্বাবধারণ করে এবং রাস্তা ঘাটে তাহাদের চালচলনের উপর নজর রাখে। তবে ছাত্রদের স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতা খুব। অধ্যাপকদের সামনে খুব চুরুট টানে ও তামাক (পাইপ) ফোঁকে। তারা থিয়েটারে প্রায়ই যায় ও সেখানে গিয়ে এমনি বেল্লেলাগিরি করে যে দেখে পিলে চমকে যায়। অধ্যাপক মহাশয়েরা সেই রসরঙ্গের ভিতর ডুবে লুপ্তপ্রায় হোয়ে বোসে থাকেন। ছাত্রেরা সুরাপান করে কিন্তু মাতাল হোলেই শাস্তি পায়। তবে কখন কখন নেশাটা একটু গোলাপিরকম হোলে ছাত্র মহাশয় দরজা জানালায় খড়খড়্ শব্দ কোরে অধ্যাপকদের ভীতি উৎপাদন বা নিদ্রাভঙ্গ করিতেও ছাড়েন না। বিলাতী সভ্যতা এইরূপই।

এখানে শীতকালে আটটার সময় সূর্য্য উঠে। তবে প্রায়ই উঠে না— মেঘে ঢাকা থাকে। আটটার সময় ছেলেদের গির্জ্জা হয়। বেলা নয়টার সময় আহার। দশটা হইতে একটা পর্য্যন্ত কালেজ। আবার আহার। তার পর দুটা থেকে চারিটা পর্য্যন্ত খুব খেলা বা নৌকাবাহন—যাহার যা ইচ্ছা। পাঁচটার সময় চা পান। আবার তার পর গির্জ্জা। সাতটার সময় শেষ আহার (ডিনার)। এই রাত্রি-ভোজনের পর ছেলেরা প্রায়ই সব বেড়াতে বেরোয় বা থিয়েটারে যায়। রাত বারটার মধ্যে কিন্তু সকলকেই ফিরে আসিতে হয়। এখানে খেলা আমোদটা খুব অধিক। পড়াশুনার চাপ বড় বেশি নয়। দুই মাস করিয়া পড়া হয় আর পাঁচ হপ্তা ছুটি। আর গ্রীষ্মকালে একটা মস্ত লম্বা চারি মাসের অবসর। প্রত্যেক কালেজে একজন কোরে অধ্যাপক (Tutor) আছেন—যিনি ছেলেদের অধ্যয়ন-বিষয়ে সাহায্য করেন ও কোন কালেজে গিয়ে কোন বিষয়ের বক্তৃতা শুনিলে ভাল হয়—তাও ঠিক করিয়া দেন। একটা কালেজে হয় ত ইতিহাস ভাল হয় আর একটা কালেজে হয়ত দর্শন বা ন্যায় ভাল। ছেলেরা এ-কালেজ থেকে ওকালেজে ছুটোছুটি করে আর ভিন্ন ভিন্ন কালেজের অধ্যাপকদের বক্তৃতা শুনে। তেইশটা কালেজ বটে—তবে সর্ব্বশুদ্ধ বোধ হয় দু হাজার ছেলে হবে।

এখানে ‘বড্‌লিয়ান লাইব্রেরি’ নাম একটি পুস্তকাগার আছে। তাহাতে প্রায় পাঁচলক্ষপুস্তক। বেলা দশটা হইতে রাত্রি দশটা পর্য্যন্ত খোলা থাকে। প্রত্যেক পাঠককে টেবিল চেয়ার দোয়াত কলম ও কাগজ দেওয়া হয়। একখানি কাগজে পুস্তকের নাম ও নম্বর (তালিকায় সব ঠিক করা আছে) লিখিয়া দিলেই অমনি একজন কর্ম্মচারী পুস্তকখানি দিয়া যায়। এখানে বড় বড় লোকেরা আসিয়া লেখা পড়া করে। অনেকে আসে যায় কিন্তু টুঁ শব্দটি নাই। ইহা সরস্বতী দেবীর একটি পীঠস্থান বলিলে কিছুমাত্র অত্যুক্তি হয় না। পড়িবার জন্য একটি কপর্দ্দকও দিতে হয় না। কেবল একজন মেম্বরের দ্বারা উপনীত হইলেই হইল। বাস্তবিক একবার এখানে গেলে আর সহজে ফিরে আসিতে ইচ্ছা করে না।

যারা শ্রমজীবী বা মসী-জীবী নয়—তারা সকলে মধ্যাহ্ন-ভোজনের পর বেড়াতে যায়। আমিও তার মধ্যে একজন। এখানের একটি সুবৃহৎ উদ্যান আছে। হন্ হন্ কোরে চলিলে পনেরো মিনিটে ঘুরে আসা যায়। ইহা একেবারে নদীর ধারে। মাঝখানে মস্ত মস্ত খেলার মাঠ আর চারিধারে বৃক্ষলতা। এই উদ্যান হইতে একটী সুদীর্ঘ পথ বাহির হইয়াছে। এই পথটীর দুইধারে নদী। ছেলেদের নৌকা বাওয়ার সুবিধার জন্য ক্রোশখানেক ধরে নদীটীকে আটকের দ্বারা ফাঁপিয়ে সদাই জলপূর্ণ কোরে রাখা হয়। তাতে যে জল উপচে উঠে তাহা পাশে একটি খালের দ্বারা বাহির করিয়া দেওয়া হয়। এই খালটী আটকের কাছে গিয়ে আবার নদীতে মিলেছে। নদী ও খালটীর মাঝখানে এই পথটি তৈয়ারী। ইহার দুই পার্শ্বে সারি সারি এলম্ গাছ। শীতে এখন গাছ গুলিতে একটিও পাতা নাই। এই পথটি অতি নিভৃত শান্ত। আমি এই রাস্তায় প্রায় বেড়াইতে যাই। এ রাস্তা ছাড়িয়ে একটা ছোট পাহাড়ে উঠি। আবার পাহাড় থেকে নেমে নিকটস্থ এক পল্লীগ্রামে যাই। যাওয়া আসাতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাগে। পল্লীগ্রামে চারিদিকে ক্ষেত ও বাগান। এমন আধ হাত জায়গা দেখিতে পাওয়া যায় না যার উপর মানুষের কারিকুরি নাই। গোচারণের মাঠগুলির ঘাসও বেশ কেয়ারী করা। চারিদিক একেবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। প্রকৃতিকে ছেঁটেছুটে দোরস্ত কোরে যেন সাজানো হোয়েছে। প্রথমটা দেখিলে বড় ভাল লাগে। তার পরে কিন্তু মনে হয়—খোদার উপর কিছু বেশি মাত্রায় খোদকারী করা হোয়েছে। স্বভাবের স্বাভাবিক শোভাটা লোপ পেয়েছে। আমাদের পাড়াগাঁয়ে কত না বন-জঙ্গল। কিন্তু তাতে একটা পরমানন্দের বাহুল্য দেখিতে পাওয়া যায়—যেন সৌন্দর্য্যের মেলা লেগেছে―শ্রীনিবাস যজ্ঞি ফেঁদে বোসেছেন—ফেলাফেলি ছড়াছড়ি। আর এখানে যেন হিসাব কোরে গুণে-গেঁথে ফুল-ফল-শস্য-গাছ-পালা আমদানী করা হোয়েছে।

লােকে বিলাতের শীতের বিষয়ে আমায় বড় ভয় দেখিয়েছিল। আর এখানে আমার সাহেব বন্ধুরা প্রায়ই আমায় দয়াপ্রকাশ কোরে বলেন―শীত সহিতে পারিতেছ ত। আমার কিন্তু মনে হয়—পঞ্জাবে এখানকার চেয়ে শীত অধিক। এখানে আমি যদি একটু বেড়িয়ে আসি ত অমনি দরদর কোরে ঘাম পড়ে। ঘরে সদাই আগুণ জ্বালাতে হয় কিন্তু আমার ত তত আবশ্যক বােধ হয় না। আমি সাতটার সময় উঠি আর একচক্র ঘুরে আসি। তখন অন্ধকার, ঠিক যেন আমাদের দেশে পাঁচটা বেজেছে। আর আমার কাপড় চোপড়ের অবস্থা তথৈব চ। তার উপর আবার মাংস মদিরা খাই না। লােকে বলে তােমার ধাতে গরমি বেশী। কিন্তু সত্য কথা বলিতে কি আমার মেজাজ একেবারেই গরম নয়। এখানকার শীত আমার বেশ লাগে। আমার শরীর বড় ভাল আছে। বোধ হয় যেন দশ বৎসর পরমায়ু বেড়ে গেছে। তবে পয়সার অভাবে ভাল কোরে দুধ ও ফল খেতে পাই না। তা না হােলে বােধ হয় বিশ বৎসর বেড়ে যেতাে। যাক্‌―বড়াই করিব না। নাহঙ্কারাৎ পরো রিপুঃ―অহঙ্কার করিলেই পড়িতে হয়। কেবল মনে মনে বড় রাগ হয় যে এখানে দিনের পর দিন চলে যায়—তবু সূর্য্য উঠে না। আকাশ সদাই মেঘে ঢাকা। যদি এক দিন সূর্য্য উঠিল ত লোকের মুখে আর হাসি ধরে না। সূর্য্যের তাপটা কিন্তু কি রকম। বেলা একটার সময় যেন কলিকাতায় আটটা বেজেছে। তাই তাদের হাসি দেখে আমার হাসি পায়।

আমার চেহারাটা ক্রমশঃ লাল হোয়ে উঠছে। আমি চুণোগলি ছাড়িয়া চৌরঙ্গীর ঘেঁসাঘেসি ফিরিঙ্গিদের সঙ্গে মিলিতে পারি। তবু আমায় দেখে রাস্তায় শিহরুণি-আতকানি-হাসি ঘােচেনি। এখানে এক জন ভারতবাসী আছেন। ইনি ঝন্‌ঝনে সংস্কারক। ইংরেজদের উপর খুব টান। এঁর রঙটা একেবারে নবজলধর-শ্যাম। কিন্তু আমার কাছে এর বায়নাখ্যা ভাঙ্গেন নাই। সেদিন আমি খোলাখুলি জিজ্ঞাসা করিলাম। ইনিও আমায় খুলে বল্লেন যে মাঝে মাঝে ছেলের দল একে তাড়া করে। আমার কপাল ভাল যে অতটা দুর্দ্দশা এখনও হয় নাই। ইংরেজের উপর বেশি টান বোলেই বুঝি এ র সঙ্গে এত টানাটানি। ইনি ইংরেজের মতন পোযাক করেন। তবে যেদিন নাইট ক্যাপ (Night-Cap) ছেড়ে কালো রঙের উপর লাল পাগ্‌ড়ি চড়ান সেদিন একেবারে—ত্রাহি মধুসূদন।

এই বিদ্যার পীঠস্থানে কতকগুলি মহাবিদ্যা আছেন―যাঁরা কেবল নূতন খুজে বেড়ান। এরা ভারতবাসীদের সঙ্গে ভাব করিতে বড় অভিলাষিণী। কেহ প্রবীণা কেহ প্রৌঢ়া কেহ মধ্যম-বয়স্কা কেহ বা যুবতী। এদের চালচলনে শীলের কোন অভাব নাই। কিন্তু দেশের সমাজ বা সমাজবন্ধন―এ দের ভাল লাগে না। ছট্‌কে বেরুতে পারিলে এরা বাঁচেন। আমায় দুই একবার নিমন্ত্রণ কোরেছিলেন। কথাবার্ত্তা আলাপ-পরিচয় সব হোলো কিন্তু আমি বড় ঘেস দিই না। সব সওয়া যায় কিন্তু যারা নিজের দেশের উপর চটা—যে দেশেরই তারা হোক না কেন―তাহাদিগকে সওয়া যায় না। এরকম পুরুষও অনেক আছে। ঊক্ষপারে যাঁরা বিদ্বান্ ও প্রতিষ্ঠাপন্ন—তাঁরা ভারতের উপর বিশেষ ভক্তিমান্ নহেন। তবে গুর্‌খা ও শিখ ভারি যোদ্ধা আর রাজা রাজোয়াড়রা রাজভক্ত—এইটুকু স্বীকার করেন।

মাইণ্ড (অর্থাৎ মনঃ) নামক একটি দার্শনিক পত্র আছে। যত বড়বড় ইংরেজ দার্শনিক তাঁরা সকলেই ইহাতে লিখেন। হিন্দু ব্রহ্মজ্ঞান―নামক আমার বক্তৃতাটি প্রবন্ধাকারে লিখে মাইণ্ডের সম্পাদকের নিকট লইয়া গিয়াছিলাম। তিনি প্রথমে প্রবন্ধটি গ্রহণ করিতে স্বীকার করিলেন না—কেননা তাঁহার মাসিক পত্রের জন্য এক বৎসরের কাপি জমে পােড়ে আছে। কিন্তু আমার সঙ্গে আলাপ করিতে লাগিলেন। বেদান্তের কথা শুনে হেসে বলিলেন—খুব একটা ব্যাপার বটে, কিন্তু এখনকার কালে ও সব চক্ষুবুজুনি দর্শন আর চলিবে না।—কথা চলিতে লাগিল। কিছু আকৃষ্ট হোলেন। আমায় আর একদিন কথাবার্ত্তার জন্যে নিমন্ত্রণ করিলেন। আমার প্রবন্ধটা রেখে এলাম তার পরে যে দিন গেলাম সে দিন তিনি বলিলেন—প্রবন্ধতে নূতন কথা আছে—যে রকম ব্যাখ্যা করা হোয়েছে তাতে বােধ হয়―বেদান্ত পাশ্চাত্য দর্শনের অপেক্ষা অধিকতর সঙ্গত—আমি এ প্রবন্ধ প্রকাশ করিব।―আমার প্রবন্ধে জীব ও জগৎ যে মিথ্যা ও মায়ার রাজ্যে যে কোন স্বাধীনতা নাই—তাহাই প্রতিপাদিত হইয়াছে। আর পাশ্চাত্য দর্শনে যে মায়িক অলীকতার প্রতিবাদ আছে তাহারও খণ্ডন করা হইয়াছে। যাহা হউক আনন্দের বিষয় যে আমার প্রবন্ধ মাইণ্ডের মতন সুপ্রসিদ্ধ পত্রিকায় বাহির হইবে। আরও আরও অনেক বিদ্বান্ এখানে আছেন যাঁরা দেশের মাথা — কিন্তু ভারতের দর্শন-জ্ঞান তাঁদের কাছে কোন পুরাণ কালের বৃহৎ জন্তুর (ম্যামথের) মত—মিউজিয়মে রেখে দিবার জিনিস। মােক্ষমূলর অনেক দিন ঊক্ষপারে পরিশ্রম করিয়াছেন বটে কিন্তু তার ফল দাঁড়িয়েছে যে বেদ অল্প-অল্প-সভ্য কৃষকদের গান—উপনিষদ সকল প্রাণের উচ্চ আকাঙ্ক্ষামাত্র—বর্ণাশ্রমধর্ম্ম রাহ্মণদের অত্যাচার—যা কিছু ভারতবর্ষের সার তা বৌদ্ধধর্ম্ম আর জগৎ অলীক—এটা খুব সাহসের কথা বটে তবে প্রলাপ। বেদান্তের মহাবাক্য—সর্ব্বং খল্বিদং ব্রহ্ম ও যেমন রজ্জু ভ্রমবশত সর্পরূপে প্রতিভাত হয় তেমনি ব্রহ্মই অবিদ্যা প্রভাবে দ্বৈত-প্রপঞ্চরূপে প্রতিভাত—এই সার কথা কোন য়ুরোপীয় পণ্ডিত বুঝিয়াছেন কি না—সে বিষয়ে গভীর সন্দেহ। যে সন্ন্যাস-পারম্পর্য্য ধরিয়া এই অদ্বৈতজ্ঞান চলিয়া আসিতেছে তাহার সঙ্গ না করিলে বেদান্ত-বোধ সুদুর্লভ।

যাঁহারা সমাজদ্রোহী নহেন―প্রতিষ্ঠাবান্ সুধী—তাঁহারা যদি হিন্দু-দর্শনচিন্তার সমাদর করেন তবে সুফল ফলিবে। কিন্তু এ সফলতা হুড়ুদ্দুমের কাজ নয়। ইংরেজ সহজে ভেজে না। তুড়ি দিয়ে যে উড়িয়ে দেবে —তা হবেনা। আর আমার মতন সামান্য লোকের দ্বারা ত কিছু হবেই না।

আমার বিশ্বাস যে ভারত জ্ঞানবলে বিশ্ববিজয়ী হইবে। এই বিশ্ববিজয়ী ইংরেজকে অগ্রে জ্ঞানযোগে জয় করিয়া আমাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ লওয়া চাই। ইতি।

৯ই জানুয়ারি ১৯০৩।