পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|২৬০|গল্পগুচ্ছ|}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
$èo গল্পগুচ্ছ কক্ষটি হেমশশীকে সেইরূপ বগ মরীচিকা দেখাইয়া আকর্ষণ করিত। সে গভীর রায়ে একাকিনী জাগিয়া বসিয়া সেই অদর বাতায়নের আলোক ছায়া ও সংগীত এবং আপন মনের আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনা লইয়া একটি মায়ারাজ্য গড়িয়া তুলিত, এবং আপন মানসপত্তেলিকাকে সেই মায়াপরাঁর মাঝখানে বসাইয়া বিস্মিত বিমাধনেত্রে নিরীক্ষণ করিত, এবং আপন জীবন-যৌবন সুখ-দঃখ ইহকাল-পরকাল সমস্তই বাসনার অগারে ধাপের মতো পড়াইয়া সেই নিজন নিস্তদ্ধ মন্দিরে তাহার পজা করিত। সে জানিত না, তাহার সম্মুখবতী ঐ হম'বাতায়নের অভ্যন্তরে ঐ তরঙ্গিত প্রমোদপ্রবাহের মধ্যে এক নিরতিশয় ক্লান্তি, গ্লানি, পঙ্কিলতা, বীভৎস ক্ষুধা এবং প্রাণক্ষয়কর দাহ আছে। ঐ বীতনিদ্র নিশাচর আলোকের মধ্যে যে এক হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতার কুটিলহাস্য প্রলয়ক্ৰীড়া করিতে থাকে, বিধবা দরে হইতে তাহা দেখিতে পাইত না।
কক্ষটি হেমশশীকে সেইরূপ স্বর্গমরীচিকা দেখাইয়া আকর্ষণ করিত। সে গভীর রাত্রে একাকিনী জাগিয়া বসিয়া সেই অদূর বাতায়নের আলোক ছায়া ও সংগীত এবং আপন মনের আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনা লইয়া একটি মায়ারাজ্য গড়িয়া তুলিত, এবং আপন মানসপুত্তলিকাকে সেই মায়াপুরীর মাঝখানে বসাইয়া বিস্মিত বিমুগ্ধনেত্রে নিরীক্ষণ করিত, এবং আপন জীবন-যৌবন সুখ-দুঃখ ইহকাল-পরকাল সমস্তই বাসনার অঙ্গারে ধূপের মতাে পড়াইয়া সেই নির্জন নিস্তব্ধ মন্দিরে তাহার পূজা করিত। সে জানিত না, তাহার সম্মুখবতী ঐ হর্ম্যবাতায়নের অভ্যন্তরে ঐ তরঙ্গিত প্রমােদপ্রবাহের মধ্যে এক নিরতিশয় ক্লান্তি, গ্লানি, পঙ্কিলতা, বীভৎস ক্ষুধা এবং প্রাণক্ষয়কর দাহ আহে। ঐ বীতনিদ্র নিশাচর আলােকের মধ্যে যে এক হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতার কুটিলহাস্য প্রলয়ক্রীড়া করিতে থাকে, বিধবা দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইত না।

হেম আপন নিজন বাতায়নে বসিয়া তাহার এই মায়াসবগ এবং কল্পিত দেবতাটিকে লইয়া চিরজীবন সবগুনাবেশে কাটাইয়া দিতে পারিত, কিন্তু দভাগ্যক্রমে দেবতা অনুগ্রহ করিলেন এবং সবগ নিকটবতী হইতে লাগিল। সবগ যখন একেবারে পথিবীকে আসিয়া পশ করিল তখন সবগও ভাঙিয়া গেল এবং যে ব্যক্তি এতদিন একলা বসিয়া সবগ গড়িয়াছিল সেও ভাঙিয়া ধুলিসাৎ হইল।
{{gap}}হেম আপন নির্জন বাতায়নে বসিয়া তাহার এই মায়াস্বর্গ এবং কল্পিত দেবতাটিকে লইয়া চিরজীবন স্বপ্নাবেশে কাটাইয়া দিতে পারি, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে দেবতা অনুগ্রহ করিলেন এবং স্বর্গ নিকটবর্তী হইতে লাগিল। স্বর্গ যখন একেবারে পৃথিবীকে আসিয়া স্পর্শ করিল তখন স্বর্গও ভাঙিয়া গেল এবং যে ব্যক্তি এতদিন একলা বসিয়া স্বর্গ গড়িয়াছিল সেও ভাঙিয়া ধুলিসাৎ হইল।
এই বাতায়নবাসিনী মগধ বালিকাটির প্রতি কখন মোহিতের লালায়িত দণ্টি পড়িল, কখন তাহাকে বিনোদচন্দ্র’-নামক মিথ্যা স্বাক্ষরে বারবার পত্র লিখিয়া অবশেষে একখানি সশঙ্ক উৎকণ্ঠিত অশুদ্ধ বানান ও উচ্ছসিত হদয়াবেগ -পাণ উত্তর পাইল, এবং তাহার পর কিছুদিন ঘাতপ্রতিঘাতে উল্লাসে-সংকোচে সন্দেহে-সম্প্রমে

সমস্ত জগৎসংসার বিধবার চারি দিকে কেমন করিয়া ঘুরিতে লাগিল, এবং ঘুরিতে ঘুরিতে ঘণনবেগে সমস্ত জগৎ অমলেক ছায়ার মতো কেমন করিয়া অদশ্য হুইয়া গেল, এবং অবশেষে কখন একদিন অকস্মাৎ সেই ঘণমান সংসারচক্র হইতে বেগে বিচ্ছিন্ন হইয়া রমণী অতি দরে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িল, সে-সকল বিবরণ বিস্তারিত করিয়া বলিবার আবশ্যক দেখি না।
{{gap}}এই বাতায়নবাসিনী মুগ্ধ বালিকাটির প্রতি কখন মােহিতের লালায়িত দৃষ্টি পড়িল, কথন তাহাকে ‘বিনােদচন্দ্র'-নামক মিথ্যা স্বাক্ষরে বারম্বার পত্র লিখিয়া অবশেষে একখানি সশঙ্ক. উৎকণ্ঠিত অশুদ্ধ বানান ও উচ্ছ্বসিত হদয়াবেগ -পূর্ণ উত্তর পাইল, এবং তাহার পর কিছুদিন ঘাতপ্রতিঘাতে উল্লাসে-সংকোচে সন্দেহে-সন্দ্রমে আশায়-আশঙ্কায় কেমন করিয়া ঝড় বহিতে লাগিল, তাহার পরে প্রলয়সুখােন্মত্ততায় সমস্ত জগৎসংসার বিধবার চারি দিকে কেমন করিয়া ঘুরিতে লাগিল, এবং ঘুরিতে ঘরিতে ঘুর্ণনবেগে সমস্ত জগৎ অমূলক ছায়ার মতাে কেমন করিয়া অদৃশ্য হইয়া গেল, এবং অবশেষে কখন একদিন অকস্মাৎ সেই ঘূর্ণমান সংসারচক্র হইতে বেগে বিচ্ছিন্ন হইয়া রমণী অতি দূরে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িল, সে-সকল বিবরণ বিস্তারিত করিয়া বলিবার আবশ্যক দেখি না।
একদিন গভীর রাত্রে পিতা মাতা শ্রাতা এবং গহ ছাড়িয়া হেমশশী বিনোদচন্দ্রছদ্মনামধারী মোহিতের সহিত এক গাড়িতে উঠিয়া বসিল। দেবপ্রতিমা যখন তাহার সমস্ত মাটি এবং খড় এবং রাংতার গহনা লইয়া তাহার পাবে আসিয়া সংলগ্ন হইল, তখন সে লঙ্গজায় ধিক্কারে মাটিতে মিশিয়া গেল।

অবশেষে গাড়ি যখন ছাড়িয়া দিল তখন সে কাঁদিয়া মোহিতের পায়ে ধরিল; বলিল, “ওগো, পায়ে পড়ি আমাকে আমার বাড়ি রেখে এসো।” মোহিত শশব্যস্ত হইয়া তাহার মুখ চাপিয়া ধরিল। গাড়ি দ্রুতবেগে চলিতে লাগিল।
{{gap}}একদিন গভীর রাত্রে পিতা মাতা ভ্রাতা এবং গৃহ ছাড়িয়া হেমশশী বিনােদচন্দ্র-ছদ্মনামধারী মােহিতের সহিত এক গাড়িতে উঠিয়া বসিল। দেবপ্রতিমা যখন তাহার সমস্ত মাটি এবং খড় এবং রাংতার গহনা লইয়া তাহার পার্শ্বে আসিয়া সংলগ্ন হইল, তখন সে লজ্জায় ধিক্কারে মাটিতে মিশিয়া গেল।
জলনিমগ্ন মরণাপন্ন ব্যক্তির যেমন মাহতের মধ্যে জীবনের সমস্ত ঘটনাবলী পষ্ট মনে পড়ে, তেমনি সেই বাররখে গাড়ির গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেমশশীর মনে পড়িতে লাগিল, প্রতিদিন আহারের সময় তাহার বাপ তাহাকে সম্মুখে না লইয়া খাইতে বসিতেন না; মনে পড়িল, তাহার সবকনিষ্ঠ ভাইটি ইস্কুল হইতে আসিয়া তাহার দিদির হাতে খাইতে ভালোবাসিত; মনে পড়িল, সকালে সে তাহার মায়ের

{{gap}}অবশেষে গাড়ি যখন ছাড়িয়া দিল তখন সে কাঁদিয়া মােহিতের পায়ে ধরিল; বলিল, “ওগাে, পায়ে পড়ি আমাকে আমার বাড়ি রেখে এসাে।” মােহিত শশব্যস্ত হইয়া তাহার মুখ চাপিয়া ধরিল। গাড়ি দ্রুতবেগে চলিতে লাগিল।

{{gap}}জলনিমগ্ন মরণাপন্ন ব্যক্তির যেমন মুহূর্তের মধ্যে জীবনের সমস্ত ঘটনাবলী স্পষ্ট মনে পড়ে, তেমনি সেই দ্বাররুদ্ধ গাড়ির গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেমশশীর মনে পড়িতে লাগিল, প্রতিদিন আহারের সময় তাহার বাপ তাহাকে সম্মুখে না লইয়া খাইতে বসিতেন না; মনে পড়িল, তাহার সর্বকনিষ্ঠ ভাইটি ইস্কুল হইতে আসিয়া তাহার দিদির হাতে খাইতে ভালােবাসিত; মনে পড়িল, সকালে সে তাহার মায়ের