পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||গল্পগুচ্ছ|২৭৩}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||আপদ|}}
গল্পগুচ্ছ
সন্ধ্যার দিকে ঝড় ক্রমশ প্রবল হইতে লাগিল। বৃষ্টির ঝাপট, বজ্রের শব্দ এবং বিদ্যুতের ঝিক্‌মিকিতে আকাশে যেন সুরাসুরের যুদ্ধ বাধিয়া গেল। কালাে কালাে মেঘগুলাে মহাপ্রলয়ের জয়পতাকার মতাে দিগ্‌বিদিকে উড়িতে আরম্ভ করিল, গঙ্গার এ পারে ও পারে বিদ্রোহী ঢেউগলাে কলশব্দে নৃত্য জুড়িয়া দিল, এবং বাগানের বড়ো বড়ো গাছগুলাে সমস্ত শাখা ঝট্‌পট্ করিয়া হাহুতাশসহকারে দক্ষিণে বামে লুটোপুটি করিতে লাগিল।
আপদ

সন্ধ্যার দিকে ঝড় ক্রমশ প্রবল হইতে লাগিল। বটির ঝাপট, বঞ্জের শব্দ এবং বিদ্যতের ঝিকমিকিতে আকাশে যেন সরাসরের যুদ্ধ বাধিয়া গেল। কালো কালো মেঘগলো মহাপ্রলয়ের জয়পতাকার মতো দিগবিদিকে উড়িতে আরম্ভ করিল, গঙ্গার এ পারে ও পারে বিদ্রোহী ঢেউগুলো কলশব্দে নত্য জড়িয়া দিল, এবং বাগানের বড়ো বড়ো গাছগুলো সমস্ত শাখা ঝটপট করিয়া হাহতাশসহকারে দক্ষিণে বামে লাটোপটি করিতে লাগিল।
তখন চন্দননগরের বাগানবাড়িতে একটি দীপালোকিত রদ্ধ কক্ষে খাটের সম্মুখবতী নীচের বিছানায় বসিয়া সী-পরীষে কথাবাত চলিতেছিল।
{{gap}}তখন চন্দননগরের বাগানবাড়িতে একটি দীপালােকিত রুদ্ধ কক্ষে খাটের সম্মুখবর্তী নীচের বিছানায় বসিয়া স্ত্রী-পুরুষে কথাবার্তা চলিতেছিল।

সারিয়া উঠিবে, তখন আমরা দেশে ফিরিতে পারিব।”
কিরণময়ী বলিতেছিলেন, “আমার শরীর সম্পণে সারিয়া উঠিয়াছে, এখন দেশে ফিরিলে কোনো ক্ষতি হইবে না।”
{{gap}}শরৎবাবু বলিতেছিলেন, “আর কিছুদিন থাকিলেই তােমার শরীর সম্পূর্ণ সারিয়া উঠিবে, তখন আমরা দেশে ফিরিতে পারিব।”

বিবাহিত ব্যক্তিমাত্রেই বঝিতে পারিবেন, কথাটা যত সংক্ষেপে রিপোর্ট করিলাম তত সংক্ষেপে শেষ হয় নাই। বিষয়টি বিশেষ দরহ নয়, তথাপি বাদপ্রতিবাদ কিছতেই মীমাংসার দিকে অগ্রসর হইতেছিল না; কণহীন নৌকার মতো ক্ৰমাগতই ঘরে ধাইয়া মরিতেছিল; অবশেষে অশ্রতরঙ্গে ডুবি হইবার সম্ভাবনা দেখা দিল।
{{gap}}কিরণময়ী বলিতেছিলেন, “আমার শরীর সম্পূর্ণ সারিয়া উঠিয়াছে, এখন দেশে ফিরিলে কোনাে ক্ষতি হইবে না।”
শরৎ কহিলেন, “ডাক্তার বলিতেছে, আর কিছুদিন থাকিয়া গেলে ভালো হয়।” কিরণ কহিলেন, “তোমার ডান্তার তো সব জানে!” শরৎ কহিলেন, “জান তো, এই সময়ে দেশে নানাপ্রকার ব্যামোর প্রাদাভাব হয়, অতএব আর মাস দায়েক কাটাইয়া গেলেই ভালো হয়।” •

কিরণ কহিলেন, “এখানে এখন বুঝি কোথাও কাহারও কোনো ব্যামো হয় না।” পবে ইতিহাসটা এই। কিরণকে তাহার ঘরের এবং পাড়ার সকলেই ভালোবাসে, এমন-কি, শাশুড়ি পৰ্যন্ত। সেই কিরণের যখন কঠিন পীড়া হইল তখন সকলেই চিন্তিত হইয়া উঠিল, এবং ডাক্তার যখন বায় পরিবর্তনের প্রস্তাব করিল তখন গহ এবং কাজকর্ম ছাড়িয়া প্রবাসে যাইতে তাহার স্বামী এবং শাশুড়ি কোনো আপত্তি করিলেন না। যদিও গ্রামের বিবেচক প্রাজ্ঞ ব্যক্তিমানেই, বায় পরিবতনে আরোগ্যের আশা করা এবং সন্ত্রীর জন্য এতটা হলপথল করিয়া তোলা নব্য সৈন্ত্রণতার একটা নিলাজ আতিশয্য বলিয়া স্থির করিলেন এবং প্রশ্ন করিলেন, ইতিপবে কি কাহারও পীর কঠিন পীড়া হয় নাই, শরৎ যেখানে যাওয়া স্থির করিয়াছেন সেখানে কি মানষেরা অমর, এবং এমন কোনো দেশ আছে কি যেখানে অদন্টের লিপি সফল হয় না-তথাপি শরৎ এবং তাঁহার মা সে-সকল কথায় কৰ্ণপাত করিলেন না; তখন গ্রামের সমস্ত সমবেত বিজ্ঞতার অপেক্ষা তাঁহাদের হদয়লক্ষী কিরণের প্রাণটুকু তাঁহাদের নিকট গরে্তর বোধ হইল। প্রিয়ব্যক্তির বিপদে মানুষের এরূপ মোহ ঘটিয়া থাকে।
{{gap}}বিবাহিত ব্যক্তিমাত্রেই বুঝিতে পারিবেন, কথাটা যত সংক্ষেপে রিপাের্ট করিলাম তত সংক্ষেপে শেষ হয় নাই। বিষয়টি বিশেষ দুরূহ নয়, তথাপি বাদপ্রতিবাদ কিছুতেই মীমাংসার দিকে অগ্রসর হইতেছিল না; কর্ণহীন নৌকার মতাে ক্রমাগতই ঘুর খাইয়া মরিতেছিল; অবশেষে অশ্রুতরঙ্গে ডুবি হইবার সম্ভাবনা দেখা দিল।
শরৎ চন্দননগরের বাগানে আসিয়া বাস করিতেছেন, এবং কিরণও রোগমতে

{{gap}}শরৎ কহিলেন, “ডাক্তার বলিতেছে, আর কিছুদিন থাকিয়া গেলে ভালাে হয়।”

{{gap}}কিরণ কহিলেন, “তােমার ডাক্তার তাে সব জানে!”

{{gap}}শরৎ কহিলেন, “জান তাে, এই সময়ে দেশে নানাপ্রকার ব্যামোর প্রাদুর্ভাব হয়, অতএব আর মাস দুয়েক কাটাইয়া গেলেই ভালাে হয়।”

{{gap}}কিরণ কহিলেন, “এখানে এখন বুঝি কোথাও কাহারও কোনাে ব্যামাে হয় না!”

{{gap}}পূর্ব ইতিহাসটা এই। কিরণকে তাহার ঘরের এবং পাড়ার সকলেই ভালােবাসে, এমন-কি, শাশুড়ি পর্যন্ত। সেই কিরণের যখন কঠিন পীড়া হইল তখন সকলেই চিন্তিত হইয়া উঠিল, এবং ডাক্তার যখন বায়ুপরিবর্তনের প্রস্তাব করিল তখন গৃহ এবং কাজকর্ম ছাড়িয়া প্রবাসে যাইতে তাহার স্বামী এবং শাশুড়ি কোনাে আপত্তি করিলেন না। যদিও গ্রামের বিবেচক প্রাজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রেই, বায়ুপরিবর্তনে আরােগ্যের আশা করা এবং স্ত্রীর জন্য এতটা হুলস্থূল করিয়া তােলা নব্য স্ত্রৈণতার একটা নির্লজ্জ আতিশয্য বলিয়া স্থির করিলেন এবং প্রশ্ন করিলেন, ইতিপূর্বে কি কাহারও স্ত্রীর কঠিন পীড়া হয় নাই, শরৎ যেখানে যাওয়া স্থির করিয়াছেন সেখানে কি মানুষরা অমর, এবং এমন কোনাে দেশ আছে কি যেখানে অদৃষ্টের লিপি সফল হয় না—তথাপি শরৎ এবং তাঁহার মা সে-সকল কথায় কর্ণপাত করিলেন না; তখন গ্রামের সমস্ত সমবেত বিজ্ঞতার অপেক্ষা তাঁহাদের হৃদয়লক্ষী কিরণের প্রাণ তাঁহাদের নিকট গুরুতর বােধ হইল। প্রিয়ব্যক্তির বিপদে মানুষের এরূপ মােহ ঘটিয়া থাকে।

{{gap}}শরৎ চন্দননগরের বাগানে আসিয়া বাস করিতেছেন, এবং কিরণও রোগমুক্ত