পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৫৫: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|৩৪৯|মুর্শিদাবাদ-কাহিনী|৩৪৯}}
{{rh||দেবীসিংহ|৩৪৯}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
আবদ্ধ রাখিতে বাধ্য হইয়া, যাহা কিছু অর্থ পাইল, তারা দেবীসিংহের করপরিশােধের জন্য চেষ্টা করিতে লাগিল। এদিকে তাহাদের ঋণ দিন দিন বন্যাস্রোতের ন্যায় বৃদ্ধি পাইয়া তাহাদিগকে চিরদিনের মত ভাসাইবার উপক্ৰম করিল। শুনিলে হৃদকম্প উপস্থিত হয় যে, সেই সমস্ত কুসীদজীবী বিপন্ন কৃষকদিগের নিকট হইতে শতকরা বাষিক ছয় শত টাকা সুদ আদায় করিতে চেষ্টা পাইয়াছিল ।
দেবীসিংহ එ8N.

আবদ্ধ রাখিতে বাধ্য হইয়া, যাহা কিছু অর্থ পাইল, তদ্বারা দেবীসিংহের করপরিশোধের জন্য চেষ্টা করিতে লাগিল । এদিকে তাহদের ঋণ দিন দিন বন্যাস্রোতের ন্যায় বৃদ্ধি পাইয়া তাহাদিগকে চিরদিনের মত ভাসাইবার উপরুম করিল। শুনিলে হদূকম্প উপস্থিত হয় যে, সেই সমস্ত কুসীদজীবী বিপন্ন কৃষকদিগের নিকট হইতে শতকরা বাষিক ছয় শত টাকা সুদ আদায় করিতে চেষ্টা পাইয়াছিল ! একদিকে দেবীসিংহের অন্যদিকে কুসীদজীবীগণের ভীষণ অত্যাচারে সেই নিরীহ প্রজাগণ প্রতিনিয়ত উধ্বমুখে ভগবানকে আহবান করিত ; কিন্তু জানি না, কি কারণে তাহারও করুণাকণা তাহদের উপর নিপতিত হয় নাই। তাহদের কঠোরপরিশ্রমোৎপাদিত শস্যরাশি বলপূর্বক বাজারে লইয়া এক-চতুর্থাংশেরও কম মূল্যে বিক্রীত হইতে লাগিল । হতভাগ্যগণের সংবৎসরের আহার্য সম্পত্তি অপহৃত হইল, অথচ তাহাদের ঋণপরিশোধের বিশেষ কোন সুবিধাও হইল না !! অবশেষে তাহাদের লাঙ্গল, বলদ, মই বিদা প্রভৃতি বিক্ৰয় করিতে আরম্ভ করা হয় । এইরূপে তাহাদিগের ভবিষ্যৎ শস্যোৎপাদনের পথও একবারে নিরুদ্ধ হইল । তাহার পর, তাহাদিগের জীর্ণ পর্ণকুর্টর লুণ্ঠন করিয়া, দেবীসিংহের অনুচরগণ সেই সকল কুর্টর অগ্নিমুখে সমপণ করিয়া চলিয়া যায়। দরিদ্রের দীর্ঘশ্বাসের সহিত সেই অগ্নিশিখা চতুদিকে পরিব্যাপ্ত হইয়া পড়িল । এতদিন যাহারা শত কষ্ট স্বীকার করিয়াও আপনাদের আশ্রয়স্থান পরিত্যাগ করে নাই, এক্ষণে তাহারা বাধ্য হইয়া বন্যপশুর ন্যায় বনে বনে ভ্রমণ করিতে লাগিল ! ইহাতেও নিস্তার নাই, তাহার উপরও আবার অত্যাচারের স্রোত চলিল ! অনাহারে রঙ্গপুরবাসী প্রজাগণের মধ্যে ঘোর কষ্ট দেখা দিল ; পিতা পুত্রকে বিক্রয় করিতে বাধ্য হইল, স্বামী স্ত্রীকে চিরবিসর্জন দিল। এইরূপে প্রত্যেক গৃহস্থসংসার হাহাকার ধ্বনিতে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল । আমরা এতক্ষণ সাধারণ অত্যাচারের কথা বলিতেছিলাম ; এক্ষণে দেবীসিংহের উস্তাবিত অত্যাচারের কতিপয় দৃষ্টান্ত দেখাইতেছি । দেখিবেন, এরূপ পাশবিক অত্যাচার কখনও সম্ভবপর কি না ! শত বৎসরের পর সেই সমস্ত অত্যাচার পড়িতে গেলে, উপন্যাস বলিয়া বোধ হয় । কিন্তু তাহা উপন্যাস বা কাহিনী নহে,—জ্বলন্ত সত্য । মনুষ্য-প্রকৃতিতে এরূপ পিশাচপ্রকৃতির সমাবেশ আর কোথাও আছে কি না জানি না । দেবীসিংহের পাইকবর্গ সেই নিরীহ প্রজাগণের অঙ্গুলিতে রজু বন্ধন করিয়া, ক্ৰমাগত পাক দিতে দিতে অঙ্গুলিগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেলিত এবং তাহারা যখন যন্ত্রণায় কাতর হইয়া, আর্তনাদ করিয়া উঠিত, সেই সময়ে হাতুড়ির দ্বারা তাহা চূণ-বিচূর্ণ করিয়া, একেবারে অকৰ্মণ্য করিয়া দিত। গ্রামের মণ্ডল, পঞ্চায়েৎ ও অন্যান্য প্রধানবগের দুই দুই জনকে শৃঙ্খলে বাধিয়া পদদ্বয় উধ্বমুখে ও মস্তক অধোমুখে লম্বমান করিয়া, পদতলে বেরাঘাত করিতে করিতে, অঙ্গুলি হইতে নখগুলি বিচুত করিয়া দিত ; অবশেষে মস্তকে আঘাত করিয়া মুখ, চক্ষু ও নাসিক হইতে রুধির বহির্গত না করিয়া ক্ষান্ত হইত না । বেত বা লাঠির দ্বারা যদি পদে
{{gap}}একদিকে দেবীসিংহের অন্যদিকে কুলীদজীবীগণের ভীষণ অত্যাচারে সেই নিরীহ প্রজাগণ প্রতিনিয়ত উধ্বমুখে ভগবানকে আহ্বান করিত ; কিন্তু জানি না, কি কারণে তাঁহারও করুণাকণা তাহাদের উপর নিপতিত হয় নাই। তাহাদের কঠোর পরিশ্রমােৎপাদিত শস্যরাশি বলপূর্বক বাজারে লইয়া এক-চতুর্থাংশেরও কম মূল্যে বিক্রীত হইতে লাগিল। হতভাগ্যগণের সংবৎসরের আহার্য সম্পত্তি অপহৃত হইল, অথচ তাহাদের ঋণপরিশােধের বিশেষ কোন সুবিধাও হইল না !! অবশেষে তাহাদের লাঙ্গল, বলদ, মই, বিদা প্রভৃতি বিক্রয় করিতে আরম্ভ করা হয়। এইরূপে তাহাদিগের ভবিষ্যৎ শস্যোৎপাদনের পথও একবারে নিরুদ্ধ হইল। তাহার পর, তাহাদিগের জীর্ণ পর্ণকুটীর লুণ্ঠন করিয়া, দেবীসিংহের অনুচরগণ সেই সকল কুটীর অগ্নিমুখে সমর্পণ করিয়া চলিয়া যায়। দরিদ্রের দীর্ঘশ্বাসের সহিত সেই অগ্নিশিখা চতুদিকে পরিব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। এতদিন যাহারা শত কষ্ট স্বীকার করিয়াও আপনাদের আশ্রয়স্থান পরিত্যাগ করে নাই, এক্ষণে তাহারা বাধ্য হইয়া বন্যপশুর ন্যায় বনে বনে ভ্রমণ করিতে লাগিল ! ইহাতেও নিস্তার নাই, তাহার উপরও আবার অত্যাচারের স্রোত চলিল! অনাহারে রঙ্গপুরবাসী প্রজাগণের মধ্যে ঘাের কষ্ট দেখা দিল ; পিতা পুত্রকে বিক্রয় করিতে বাধ্য হইল, স্বামী স্ত্রীকে চিরবিসর্জন দিল। এইরূপে প্রত্যেক গৃহস্থসংসার হাহাকার ধ্বনিতে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল।

{{gap}}আমরা এতক্ষণ সাধারণ অত্যাচারের কথা বলিতেছিলাম ; এক্ষণে দেবীসিংহের উদ্ভাবিত অত্যাচারের কতিপয় দৃষ্টান্ত দেখাইতেছি। দেখিবেন, এরূপ পাশবিক অত্যাচার কখনও সম্ভবপর কি না ! শত বৎসরের পর সেই সমস্ত অত্যাচার পড়িতে গেলে, উপন্যাস বলিয়া বােধ হয়। কিন্তু তাহা উপন্যাস বা কাহিনী নহে,-জ্বলন্ত সত্য। মনুষ্য-প্রকৃতিতে এরূপ পিশাচপ্রকৃতির সমাবেশ আর কোথাও আছে কি জানি না। দেবীসিংহের পাইকবর্গ সেই নিরীহ প্রজাগণের অঙ্গুলিতে রঞ্জু বন্ধন করিয়া, ক্রমাগত পাক দিতে দিতে অঙ্গুলিগুলির সংযােগ বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেলিত এবং তাহারা যখন যন্ত্রণায় কাতর হইয়া, আর্তনাদ করিয়া উঠিত, সেই সময়ে হাতুড়ির দ্বারা তাহা চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া, একেবারে অকর্মণ্য করিয়া দিত। গ্রামের মণ্ডল, পঞ্চায়েৎ ও অন্যান্য প্রধানবর্গের দুই দুই জনকে শৃঙ্খলে বাঁধিয়া পদদ্বয় উধ্বমুখে ও মস্তক অধােমুখে লম্বমান করিয়া, পদতলে বেত্রাঘাত করিতে করিতে, অঙ্গুলি হইতে নখগুলি বিচ্যুত করিয়া দিত; অবশেষে মস্তকে আঘাত করিয়া মুখ, চক্ষু ও নাসিকা। হইতে রুধির বহির্গত না করিয়া ক্ষান্ত হইত না। বেত বা লাঠির দ্বারা যদি পদে