পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৩৩: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Pywikibot touch edit
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||বিবিধ প্রবন্ধ|৮৩৩}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{C|{{xx-larger|একটি অন্ধ সীলের<ref>প্রাণীবৃত্তান্তে সীলের বাঙ্গালা মকর লেখা হইয়াছে, আমাদের বড় ভালাে না লাগাতে, আমরা সীলই রাখিলাম।</ref> কথা}}}}
বিবিধ প্রবন্ধ し^○○

একটি অন্ধ সীলের কথা
সে প্রায় চল্লিশ বছরের কথা। ব্লু উপসাগরে একটি সীলের ছানা ধরা পড়ে। সমুদ্রের ধারেই একটি ভদ্রলোক থাকিতেন, তিনি তাকে তাঁর রান্নাঘরে পুষিতে লাগিলেন। সে খুব বাড়িতে লাগিল;চাকরদের সঙ্গে তাহার খুব ভাব, বাড়ির এবং লোকের প্রতি বেশ মমতা। স্বভাবটি অতি মৃদু, কারুর কিছু ক্ষতি করে না, ছেলেদের সঙ্গে খেলা করে, আর কর্তার ডাক শুনলেই কাছে হাজির হয়। তার প্রভুভক্তির কথা বলিতে হইলে বুড়ো বলিতেন ‘যেমন কুকুরটি ; আর আমোদ তামাশার কথা বলিতে হইলে বলিতেন ‘যেমন বিড়ালছানাটি
{{gap}}সে প্রায় চল্লিশ বছরের কথা। ব্লু উপসাগরে একটি সীলের ছানা ধরা পড়ে। সমুদ্রের ধারেই একটি ভদ্রলােক থাকিতেন, তিনি তাকে তাঁর রান্নাঘরে পুষিতে লাগিলেন। সে খুব বাড়িতে লাগিল; চাকরদের সঙ্গে তাহার খুব ভাব, বাড়ির এবং লােকের প্রতি বেশ মমতা। স্বভাবটি অতি মৃদু, কারুর কিছু ক্ষতি করে না, ছেলেদের সঙ্গে খেলা করে, আর কর্তার ডাক শুনলেই কাছে হাজির হয়। তার প্রভুভক্তির কথা বলিতে হইলে বুড়াে বলিতেন যেমন কুকুরটি; আর আমােদ তামাশার কথা বলিতে হইলে বলিতেন যেমন বিড়ালছানাটি।

সীলটি রোজ মাছ ধরিতে যাইত, আর নিজের জোগাড় হইলে পর প্রায়ই কর্তার জন্য দু-একটি মাছ আনিত। গ্রীষ্মের সময় রৌদ্রে বসিয়া থাকিত আর শীতের সময় ঘরের আগুনের এক পাশে একটা জায়গা পাইলে বড় খুশি হইত। আর হুকুম পাইলে তুন্দুরটার’ ভিতর যাইয়া বাসা লইত ।
{{gap}}সীলটি রােজ মাছ ধরিতে যাইত, আর নিজের জোগাড় হইলে পর প্রায়ই কর্তার জন্য দু-একটি মাছ আনিত। গ্রীষ্মের সময় রৌদ্রে বসিয়া থাকিত আর শীতের সময় ঘরের আগুনের এক পাশে একটা জায়গা পাইলে বড় খুশি হইত। আর কুম পাইলে তুন্দুরটার<ref>রুটি প্রস্তুত করিবার বড় উনুনকে তন্দুর’ বলে। উপেন্দ্র-১০৫</ref> ভিতর যাইয়া বাসা লইত।
বারো বছর এইরূপে সীলটিকে পোষা হইল। এরপর একবার কর্তার ‘গোয়ালে’ একপ্রকার রোগ দেখা দিল। কতকগুলি পণ্ড মরিয়া গেল;অন্যান্য পশুদের রোগ ধরিল। অনালোকের গোরু স্থান পরিবর্তনে ভালো হয়;কিন্তু কর্তর গোরুর তাহা হইল না। কতা একটি স্ত্রী-ওঝার নিকট পরামর্শ লইলেন। সে বলিল ওগো ! তুমি ওটা কি ধরে এনেছো, তাতেই তোমার গোক মরে যায়। ওটাকে তাড়িয়ে দাও নৈলে আমার ওষুধেও ধরবে না, রোগও সারবে না।’ সুতরাং সীলটিকে একটি নৌকায় তুলিয়া অনেক দূরে গিয়া ছাড়িয়া দেওয়া হইল, সেখানে তার যা খুশি তাই করুক। নৌকা ফিরিয়া আসিল;বাড়ির সকলে ঘুমাইল। সকালে একটি চাকরানী আসিয়া কতাঁকে খবর দিল সীল তুন্দুরের ভিতরে শুয়ে আছে। বাড়ির মায়ায় বেচারা রাত্রি করিয়া ফিরিয়া আসিয়াছে। একটি জানালা খোলা পাইয়া ঘরে ঢুকিয়া তাহার জায়গা দখল করিয়া বসিয়াছে।

পরদিন আর একটি গোরুর ব্যারাম হইল। সীলটাকে আর রাখা হইল না। অনেক দূর হইতে জেলে-নৌকা মাছ লইয়া আসিয়াছিল, তাহার মাঝি দু-তিন দিনের পথ লইয়া গিয়া তাহাকে ছাড়িয়া দিতে স্বীকার পাইল। তাহাই করা হইল। একদিন একরাত্রি গেল। পরদিন সন্ধার সময় চাকর আগুন উস্কিয়া দিতেছিল, এমন সময় দরজার কাছে খট্‌মট্‌ শব্দ হইল। চাকর মনে করিল কুকুরটা বুঝি, অমনি দরজা খুলিয়া দিল—আর থপথপ করিয়া সীলটা ঘরে আসিল। অনেক পথ হাঁটিয়া ক্লান্ত হইয়া বাড়ি আসিয়াছে তাই একপ্রকার অব্যক্ত শব্দ করিয়া মনের সন্তোষ জানাইল, তারপর হাত-পা ছড়াইয়া আগুনের কাছে সুখে নিদ্রা গেল। এই অমঙ্গলের খবর কর্তার কানে গেল। কর্তা বিপদ ভাবিয়া জান'কে জাগাইয়া পরামর্শ চাহিলেন। জান বলিল, সীল মারলে অশুভ হয়, তবে চোখ দুটো খুঁড়ে ফের সমুদ্রে ফেলে দিয়ে এসো।” কতার বুদ্ধি চড়ায় ঠেকিয়াছে কত তাহাতেই রাজি। নিষ্ঠুরেরা সেই নিদোষ ১. প্রাণীবৃত্তাস্তে সীলের বাঙ্গালা মকর লেখা হইয়াছে আমাদের বড় ভালো না লাগাতে, আমরা *সীলই রাখিলাম।
{{gap}}বারাে বছর এইরূপে সীলটিকে পােয়া হইল। এরপর একবার কর্তার ‘গােয়ালে’ একপ্রকার রোগ দেখা দিল। কতকগুলি পশু মরিয়া গেল; অন্যান্য পশুদের রােগ ধরিল। অন্যলােকের গাের স্থান পরিবর্তনে ভালাে হয়; কিন্তু কর্তর গােরুর তাহা হইল না। কতা একটি স্ত্রী-ওঝার। নিকট পরামর্শ লইলেন। সে বলিল ‘ওগগা! তুমি ওটা কি ধরে এনেছে, তাতেই তােমার গােৰু মরে যায়। ওটাকে তাড়িয়ে দাও নৈলে আমার ওষুধেও ধরবে না, রােগও সারবে না। সুতরাং সীলটিকে একটি নৌকায় তুলিয়া অনেক দূরে গিয়া ছাড়িয়া দেওয়া হইল, সেখানে তার যা খুশি তাই করুক। নৌকা ফিরিয়া আসিল;বাড়ির সকলে ঘুমাইল। সকালে একটি চাকরানী আসিয়া কাকে খবর দিল সীল তুন্দুরের ভিতরে শুয়ে আছে। বাড়ির মায়ায় বেচারা রাত্রি করিয়া ফিরিয়া আসিয়াছে। একটি জানালা খােলা পাইয়া ঘরে ঢুকিয়া তাহার জায়গা দখল করিয়া বসিয়াছে।
২. কটি প্রস্তুত করিবার বড় উনুনকে তন্দুর’ বলে।

উপেন্দ্ৰ—১০৫
{{gap}}পরদিন আর একটি গােরুর ব্যারাম হইল। সীলটাকে আর রাখা হইল না। অনেক দূর হইতে জেলে-নৌকা মাছ লইয়া আসিয়াছিল, তাহার মাঝি দু-তিন দিনের পথ লইয়া গিয়া তাহাকে ছাড়িয়া দিতে স্বীকার পাইল। তাহাই করা হইল। একদিন একরাত্রি গেল। পরদিন সন্ধ্যার সময় চাকর আগুন উস্কিয়া দিতেছিল, এমন সময় দরজার কাছে খটমট শব্দ হইল। চাকর মনে করিল কুকুরটা বুঝি; অমনি দরজা খুলিয়া দিল—আর থপথপ করিয়া সীলটা ঘরে আসিল। অনেক পথ হাঁটিয়া ক্লান্ত হইয়া বাড়ি আসিয়াছে তাই একপ্রকার অব্যক্ত শব্দ করিয়া মনের সন্তোষ জানাইল, তারপব হাত-পা ছড়াইয়া আগুনের কাছে সুখে নিদ্রা গেল।

{{gap}}এই অমঙ্গলের খবর কর্তার কানে গেল। কর্তা বিপদ ভাবিয়া জান'কে জাগাইয়া পরামর্শ চাহিলেন। জান বলিল, সীল মারলে অশুভ হয়, তবে চোখ দুটো খুঁড়ে ফের সমুদ্রে ফেলে দিয়ে এসাে।” কতার বুদ্ধি চড়ায় ঠেকিয়াছে, কত তাহাতেই রাজি। নিষ্ঠুরেরা সেই নিদোষ