গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড)/একটা আষাঢ়ে গল্প: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Jonoikobangali (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে
৮ নং লাইন:
<div style="padding-left:2em;font-size:1.3em">
__NOTOC__
== ==
দূর সমুদ্রের মধ্যে একটা দ্বীপ । সেখানে কেবল তাসের সাহেব , তাসের বিবি , টেক্কা এবং গোলামের বাস । দুরি তিরি হইতে নহলা-দহলা পর্যন্ত আরো অনেক-ঘর গৃহস্থ আছে, কিন্তু তাহারা উচ্চজাতীয় নহে ।
 
২৯ নং লাইন:
সমুদ্র অবিশ্রাম একতানশব্দপূর্বক তটের উপর সহস্র ফেনশুভ্র কোমল করতলের আঘাত করিয়া সমস্ত দ্বীপকে নিদ্রাবেশে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে — পক্ষীমাতার দুই প্রসারিত নীলপক্ষের মতো আকাশ দিগ্‌দিগন্তের শান্তিরক্ষা করিতেছে । অতিদূর পরপারে গাঢ় নীল রেখার মতো বিদেশের আভাস দেখা যায় — সেখান হইতে রাগদ্বেষের দ্বন্দ্বকোলাহল সমুদ্র পার হইয়া আসিতে পারে না ।
 
== ==
সেই পরপারে , সেই বিদেশে, এক দুয়ারানীর ছেলে এক রাজপুত্র বাস করে । সে তাহার নির্বাসিত মাতার সহিত সমুদ্রতীরে আপনমনে বাল্যকাল যাপন করিতে থাকে ।
 
৪৮ নং লাইন:
তিন বন্ধুতে বাহির হইয়া পড়িল ।
 
== ==
সমুদ্রে সদাগরের দ্বাদশতরী প্রস্তুত ছিল- তিন বন্ধু চড়িয়া বসিল । দক্ষিণের বাতাসে পাল ভরিয়া উঠিল, নৌকাগুলা রাজপুত্রের হৃদয়বাসনার মতো ছুটিয়া চলিল ।
 
৫৯ নং লাইন:
এই দ্বীপে তাসের টেক্কা , তাসের সাহেব , তাসের বিবি , তাসের গোলাম যথানিয়মে বাস করে এবং দহলা-নহলাগুলাও তাহাদের পদানুবর্তী হইয়া যথানিয়মে কাল কাটায় ।
 
== ==
তাসের রাজ্যে এতদিন কোনো উপদ্রব ছিল না । এই প্রথম গোলযোগের সূত্রপাত হইল ।
 
৮২ নং লাইন:
কোটালের পুত্র এবং সদাগরের পুত্র ব্যাকুল হইয়া রাজপুত্রকে কহিল , ভাই সাঙাত , এই নিরানন্দ ভূমিতে আর একদণ্ড নয় । এখানে আর দুই দিন থাকিলে মাঝে মাঝে আপনাকে স্পর্শ করিয়া দেখিতে হইবে জীবিত আছি কি না ।
 
রাজপুত্র কহিল , “ না ভাই , আমার কৌতূহল হইতেছে । ইহারা মানুষের মতো দেখিতে – ইহাদের মধ্যে এক-ফোঁটা জীবন্ত পদার্থ আছে কি না একবার নাড়া দিয়া দেখিতে হইবে । ”
 
== ==
এমনি তো কিছুকাল যায় । কিন্তু এই তিনটে বিদেশী যুবক কোনো নিয়মের মধ্যেই ধরা দেয় না । যেখানে যখন ওঠা , বসা , মুখ ফেরানো , উপুড় হওয়া , চিৎ হওয়া , মাথা নাড়া , ডিগবাজি খাওয়া উচিত , ইহারা তাহার কিছুই করে না বরং সকৌতুকে নিরীক্ষণ করে এবং হাসে । এই - সমস্ত যথাবিহিত অশেষ ক্রিয়াকলাপের মধ্যে যে - একটি দিগ্‌গজ গাম্ভীর্য আছে ইহারা তদ্দ্বারা অভিভূত হয় না ।
 
৯৭ নং লাইন:
ঐ সেটি যেমনি অনুভব করা অমনি তাসরাজ্যের আগাগোড়া অল্প অল্প করিয়া আন্দোলিত হইতে আরম্ভ হইল — গতনিদ্র প্রকাণ্ড অজগরসর্পের অনেকগুলা কুণ্ডলীর মধ্যে জাগরণ যেমন অত্যন্ত মন্দগতিতে সঞ্চলন করিতে থাকে সেইরূপ ।
 
== ==
নির্বিকারমূর্তি বিবি এতদিন কাহারো দিকে দৃষ্টিপাত করে নাই , নির্বাক্‌ নিরুদ্‌বিগ্নভাবে আপনার কাজ করিয়া গেছে । এখন একদিন বসন্তের অপরাহ্নে ইহাদের মধ্যে একজন চকিতের মতো ঘনকৃষ্ণ পক্ষ্ম ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত করিয়া রাজপুত্রের দিকে মুগ্ধনেত্রের কটাক্ষপাত করিল । রাজপুত্র চমকিয়া উঠিয়া কহিল , এ কী সর্বনাশ! আমি জানিতাম , ইহারা এক-একটা মূর্তিবৎ তাহা তো নহে , দেখিতেছি এ যে নারী ।
 
১১১ নং লাইন:
এই পুরাতন দ্বীপে বসন্তের কোকিল অনেকবার ডাকিয়াছে, কিন্তু সেইবার যেমন ডাকিল এমন আর-কখনো ডাকে নাই । সমুদ্র চিরদিন একতান কলধ্বনিতে গান করিয়া আসিতেছে; কিন্তু এতদিন সে সনাতন বিধানের অলঙ্ঘ্য মহিমা একসুরে ঘোষণা করিয়া আসিয়াছে — আজ সহসা দক্ষিণবায়ুচঞ্চল বিশ্বব্যাপী দুরন্ত যৌবনতরঙ্গরাশির মতো আলোতে ছায়াতে ভঙ্গীতে ভাষাতে আপনার অগাধ আকুলতা ব্যক্ত করিতে চেষ্টা করিতে লাগিল ।
 
== ==
এই কি সেই টেক্কা , সেই সাহেব , সেই গোলাম । কোথায় গেল সেই পরিতুষ্ট পরিপুষ্ট সুগোল মুখচ্ছবি । কেহ বা আকাশের দিকে চায় , কেহ বা সমুদ্রের ধারে বসিয়া থাকে , কাহারো বা রাত্রে নিদ্রা হয় না , কাহারো বা আহারে মন নাই ।
 
১৩২ নং লাইন:
একটা বসন্তে তিনটে বিদেশী যুবক আসিয়া মরা গাঙে এমনি একটা ভরা তুফান তুলিয়া দিল ।
 
== ==
রাজপুত্র দেখিলেন , জোয়ার-ভাঁটার মাঝখানে সমস্ত দেশটা থম্‌থম করিতেছে — কথা নাই , কেবল মুখ চাওয়াচাওয়ি ; কেবল এক পা এগোনো , দুই পা পিছনো ; কেবল আপনার মনের বাসনা স্তূপাকার করিয়া বালির ঘর গড়া এবং বালির ঘর ভাঙা । সকলেই যেন ঘরের কোণে বসিয়া আপনার অগ্নিতে আপনাকে আহুতি দিতেছে , এবং প্রতিদিন কৃশ ও বাক্যহীন হইয়া যাইতেছে। কেবল চোখ-দুটা জ্বলিতেছে , এবং অন্তর্নিহিত বাণীর আন্দোলনে ওষ্ঠাধর বায়ুকম্পিত পল্লবের মতো স্পন্দিত হইতেছে ।
 
১৪৭ নং লাইন:
রাজপুত্র সমস্তদিন একাকী সমুদ্রতীরে পদচারণা করিতে করিতে সেই সন্ত্রস্ত নেত্রক্ষেপ এবং সলজ্জ লুণ্ঠন মনে মনে আলোচনা করিতে লাগিলেন ।
 
== ==
রাত্রে শতসহস্র দীপের আলোকে , মালার সুগন্ধে , বাঁশির সংগীতে , অলংকৃত সুসজ্জিত সহাস্য শ্রেণীবদ্ধ যুবকদের সভায় একটি বালিকা ধীরে ধীরে কম্পিত চরণে মালা হাতে করিয়া রাজপুত্রের সম্মুখে আসিয়া নতশিরে দাঁড়াইল । অভিলষিত কণ্ঠে মালাও উঠিল না , অভিলষিত মুখে চোখও তুলিতে পারিল না । রাজপুত্র তখন আপনি শির নত করিলেন এবং মাল্য স্খলিত হইয়া তাঁহার কণ্ঠে পড়িয়া গেল । চিত্রবৎ নিস্তব্ধ সভা সহসা আনন্দোচ্ছ্বাসে আলোড়িত হইয়া উঠিল ।
 
সকলে বরকন্যাকে সমাদর করিয়া সিংহাসনে লইয়া বসাইল । রাজপুত্রকে সকলে মিলিয়া রাজ্যে অভিষেক করিল ।
 
== ১০ ==
সমুদ্রপারের দুঃখিনী দুয়ারানী সোনার তরীতে চড়িয়া পুত্রের নবরাজ্যে আগমন করিলেন ।
 
১৬০ নং লাইন:
আষাঢ় ১২৯৯
</div>
 
[[Categoryবিষয়শ্রেণী:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]]
[[Category:গল্প]]
[[বিষয়শ্রেণী:গল্প]]
[[Categoryবিষয়শ্রেণী:গল্পগুচ্ছ]]