পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৬৬: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

২১৬ রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ ।

অধঃকরণ বলিয়া মনে করিয়াছিলেন। তিনি এই সময়ে বিদ্রোহীদলের একজন প্রধান উৎসাহ-দাতা হইয়া দাড়াইলেন। র্তাহার দৃষ্টান্তে অযোধ্যার সহস্ৰ সহস্র ব্যক্তি বিদ্রোহে যোগ দিয়াছিল। তিনি নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়া যুদ্ধ করিতেও কুষ্ঠিত হন নাই। :

নানাসাহেব মহারাষ্ট্রীয় প্রসিদ্ধ বাজীরাওর পোষ্যপুত্র। তিনি পেনসন প্রাপ্ত হইয়া একপ্রকার বন্দীদশাতে কানপুরের সন্নিকটবৰ্ত্তা বিস্তুর নামক স্থানে বাস করিতেছিলেন । ইংরাজ গবর্ণমেণ্ট তাহার কোন কোন ও প্রার্থনা অগ্রাহ করাতে তিনি ইংরাজদিগের প্রতি চটিয়াছিলেন। তিনিও এই সুযোগ পাইয়া বিদ্রোহের অপর একজন সারথি হইলেন।

ঋান্সীর রাণীও ঐ প্রকার কোনও কারণে ইংরাজদিগের প্রতি চটয়াছিলেন । তিনিও এই বিদ্রোহে যোগ দিলেন । র্তাহার স্বাদশহিতৈষণা ও বীরত্ব দেখিয়া ইংরাজগণও মুগ্ধ হইয়া গিয়াছিলেন ।

কোন স্থানে কবে বিদ্রোহাগ্নি জলিল তাহার বিশেষ বিবরণ দেওয়া উদ্দেত নছে। এইমাত্র বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, বিদ্রোহাগ্নি উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের নানাস্থানে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল । এমন কি বক্সর, আর প্রভৃতির ন্তায় বেহারের অন্তর্গত স্থান সকলেও ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। তন্মধ্যে কানপুরেই লোমহর্ষণ হত্যাকাগু হইয়াছিল । নানাসাহেবের প্ররোচনাতে বিদ্রোহী সিপাহিগণ উৎসাহিত হইয়া সেখানকার ইংরাজগণকে করেক দিন একটা বাড়ীতে অবরুদ্ধ করিয়া রাখে ; তৎপরে তাহাদিগকে নৌকাযোগে অন্ত স্থানে প্রেরণ করিবার আশা ও অভয় দিয়া তাহাদিগকে বাহিরে আনিয়া, নৌকাতে আরোহণ করাইয়া, তাহাদের অধিকাংশকে গুলি করিয়া হত্যা করে। অবশেষে যে সকল ইংরাজ রমণী ও বালক বালিকা থাকে তাহাদিগকে কিছুদিন অবরুদ্ধ রাখা হয়; কিন্তু প্রতিশোধের দিম নিকটে আসিতেছে দেখিয় তাহাদিগকেও পদলে হত্যা করিয়া একটা কুপের মধ্যে তাহাদের মৃতদেহ নিক্ষেপ করে। এতদ্ব্যতীত ১২৬ জন ইংরাজ ( যাহাঁদের অধিকাংশ স্ত্রীলোক ও বালকবালিকা ছিল ) ফতেগড় হইতে নৌকাযোগে পলাইয়া আসিতেছিল, নানার আদেশে তাহাদিগকে নৌকা হইতে নামাইয়া হত্যা করা হয়। এই নিদারুণ হত্যা বিবরণ নানাসাহেবেন্ধ" নামের উপর অবিনশ্বর কলিঙ্কের রেখার দ্যায় চিরদিন বিদ্যমান থাকিবে। কারণ স্ত্রীলোক ও বালক বালিকার হত্য সকল দেশেৰু সামরিক নীতির বিরুদ্ধ-কাৰ্য্য।