বিশ্বকোষ/বঙ্গ
বঙ্গ (ক্লী) বঙ্গতীতি বগি-গতৌ অচ্। ধাতুবিশেষ। চলিত কথায় ইহাকে রাং বলে। পর্য্যায়—ত্রপু, স্বর্ণজ, নাগজীবন, মৃদঙ্গ, বঙ্গ, গুরুপত্র, পিচ্চট, চক্রসংজ্ঞ, নাগজ, তমব, কস্তীর, আলীনক, সিংহল, স্ববেত, নাগ।
ভাবপ্রকাশে লিখিত হইয়াছে, খুরক ও মিশ্রক ভেদে বঙ্গ দুই প্রকার। মিশ্রক অপেক্ষা ক্ষুরক বঙ্গ উত্তম। ইহার গুণ—লঘু ও সারক এবং প্রমেহ, কফ, কৃমি, পাণ্ডু ও শ্বাসরোগনাশক। ইহা শরীরের সুখদায়ক, ইন্দ্রিয়গণের প্রবলতাসম্পাদক ও মানবদেহের পুষ্টিসাধক।
রসেন্দ্রসারসংগ্রহে বঙ্গের বিভিন্ন প্রকার শোধন-প্রণালী লিখিত হইয়াছে। চূণের জলে চারি দণ্ড কাল স্বেদ দিলে বঙ্গ বিশুদ্ধ হয়। পরে হরিতাল আকন্দ দুগ্ধে মাড়িয়া সেই লেহ পদার্থ বিশুদ্ধ বঙ্গের পাতায় লেপ দিয়া অশ্বত্থের ছালের আগুনে সাতবার পুট দিবে, অথবা বিশুদ্ধ বঙ্গে প্রথমে হরিদ্রাচূর্ণ, দ্বিতীয়ে জোয়ান, তৃতীয়ে জীরা, চতুর্থে তেঁতুল ছাল চূর্ণ ও পঞ্চমে অশ্বত্থ ছাল চূর্ণ দিয়া যথাবিধান পাক করিলে বঙ্গ ভস্ম হইয়া থাকে।
“বঙ্গং খর্পরকে কৃত্বা চুল্ল্যাং সংস্থাপয়েৎ সুধীঃ।
দ্রবীভূতে পুনস্তস্মিন্ চূর্ণান্যেতানি দাপয়েৎ॥
প্রথমং রজনীচূর্ণং দ্বিতীয়ে চ যমানিকা।
তৃতীয়ে জীরকঞ্চৈব ততশ্চিঞ্চাত্বগুদ্ভবম্॥
অশ্বত্থবল্কলোত্থঞ্চ চূর্ণং তত্র বিনিঃক্ষিপেৎ।
এবং বিধানতো বঙ্গং ম্রিয়তে নাত্র সংশয়ঃ॥” (রসেন্দ্রসারসংগ্রহ)
বিশুদ্ধ বঙ্গ অন্য হাঁড়িতে গলাইয়া তৎপরিমাণ অপামার্গভস্মচূর্ণ তাহাতে মিলিত করিয়া স্থূলাগ্র লোহার হাতা দিয়া উত্তম রূপে মর্দ্দন করিতে থাকিবে। অনন্তর ছাই ফেলিয়া দিয়া শরাব পুটে তীব্রাগ্নি দ্বারা তাপ দান করিলে বঙ্গভস্ম হয়।
বঙ্গভস্মের গুণ—তিক্ত, অম্ল, রুক্ষ, বাতবর্দ্ধক, মেদ, শ্লেষ্ম, ক্রিমি ও মেহরোগনাশক।
অবিশুদ্ধ বঙ্গের গুণ—তিক্ত, মধুর, ভেদন, পাণ্ডু, কৃমি ও বাতনাশক, কিঞ্চিৎ পিত্তকর এবং লেখনোপযোগী।
২ সীসক। নাগবঙ্গ।
সীসক ও বঙ্গ ধাতু প্রায়ই অনুরূপ। স্থানান্তরে ইহাদের বৈজ্ঞানিক সংযোগ ও গুণাবলী উদ্ধৃত হইয়াছে।
বঙ্গ (পুং) দেশবিশেষ। বঙ্গভূমি। মহাভারতে এই জনপদের উল্লেখ আছে।
“অঙ্গস্যাঙ্গো ভবেদ্দেশো বঙ্গে বঙ্গস্য চ স্মৃতঃ।” (ভারত ১ǀ১০৪ǀ৫০)
এই দেশ পূর্ব্বদিকে অবস্থিত—
“অঙ্গবঙ্গা মদ্গুরকা অন্তর্গিরিবহির্গিরাঃ৷
শাল্বা মাগধগোনর্দ্দা প্রাচ্যাং জনপদা স্মৃতাঃ॥”
আবার জ্যোতিস্তত্ত্বধৃত কূর্ম্মচক্রে পূর্ব্বদিগ্বর্ত্তী জনপদসমূহের এইরূপ একট তালিকা প্রদত্ত হইয়াছে।
“আগ্নেয্যামঙ্গবঙ্গোপবঙ্গত্রিপুরকোশলাঃ৷
কলিঙ্গৌড্রান্ধ্রকিষ্কিন্ধ্যাবিদর্ভশবভাদয়ঃ॥”
এই প্রাচীন বঙ্গের সীমা কতদূর পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল, তাহা জানিবার উপায় নাই। অপেক্ষাকৃত পরবর্ত্তীকালে বঙ্গের যেরূপ সীমা নির্দ্দিষ্ট হইয়াছিল, তাহা নিম্নোক্ত শ্লোকে বিবৃত রহিয়াছে।
“রত্নাকরং সমারভ্য ব্রহ্মপুত্রান্তগং শিবে।
বঙ্গদেশো ময়া প্রোক্তঃ সর্ব্বসিদ্ধিপ্রদৰ্শকঃ” (শক্তিসঙ্গমতন্ত্র)
বঙ্গ (পুং) চন্দ্রবংশীয় বলিরাজের পুত্ত্র। (গরুড়পুরাণ ১৪৪ অঃ) দীর্ঘতমার ঔরসে বলির ক্ষেত্রজ এই পুত্রের উৎপত্তিবিবরণ মহাভারতে লিখিত আছে—
“ততঃ প্রসাদয়ামাস পুনস্তমৃষিসত্তমম্।
বলিং সুদেষ্ণাং ভার্য্যাং স্বাং তস্মৈ তাং প্রাহিণোৎ পুনঃ॥
তাং স দীর্ঘতমাঙ্গেষু স্পৃষ্ট্বা দেবীমথাব্রবীৎ।
ভবিষ্যন্তি কুমারাস্তে তেজসাদিত্যবর্চ্চসঃ॥
অঙ্গো বঙ্গঃ কলিঙ্গশ্চ পুণ্ড্রঃ সুহ্মশ্চ তে সুতাঃ।
তেষাং দেশাঃ সমাখ্যাতাঃ স্বনামপ্রথিতা ভুবি॥
অঙ্গস্যাঙ্গো ভবেদ্দেশো বঙ্গো বঙ্গস্য চ স্মৃতঃ॥
কলিঙ্গবিষয়শ্চৈব কলিঙ্গস্য চ স স্মৃতঃ॥
পুণ্ড্রস্য পুণ্ড্রা প্রখ্যাতা সুহ্মা সুহ্মস্য চ স্মৃতাঃ।
এবং বলেঃ পুরা বংশঃ প্রখ্যাতো বৈ মহর্ষিজঃ।”
এই বঙ্গ হইতে বাঙ্গালা জনপদের প্রতিষ্ঠা হয়।
২ কার্পাস। (মেদিনী) ৩ বার্ত্তাকু।