বিষাদ-সিন্ধু/মহরম পর্ব্ব/ষোড়শ প্রবাহ

ষোড়শ প্রবাহ

 মায়মুনার সহিত জাএদার কথোপকথন হইতেছে। জাএদা বলিতেছেন, “ঈশ্বর যাহাকে রক্ষা করেন, কিছুতেই তাহার মরণ নাই। মানুষের পেটে,—বিষ হজম হয়; একবার নয়, কয়েকবার! আমি কেন জয়নাবের সুখের তরী ডুবাইতে বসিয়াছি? আমি কেন জয়নাবের সর্ব্বনাশ করিতে গিয়া আপন হাতে স্বামীর প্রাণ বিনাশ করিতে দাঁড়াইয়াছি? যে চক্ষু সর্ব্বদাই যাহাকে দেখিতে ইচ্ছা করিত, জয়নাবের চক্ষু পড়িয়া অবধি সেই চক্ষু আর তাহাকে দেখিতে চায় না। সেই প্রিয় বস্তুকে একেবারে চক্ষের অন্তর করিতে—জগৎ চক্ষুর অন্তর করিতে—কতই যত্ন, কতই চেষ্টা করিতেছি। যে হস্তে কতই সুখাদ্য দ্রব্য খাইতে দিয়াছি, এখন সেই হস্তে বিষ দিতেও একটু আগুপছু চাহিতেছি না।—কিন্তু কাহার জন্য? যে স্বামীর একটু অসুখ হইলে যে জাএদার প্রাণ কাঁদিত, এখন সেই স্বামীর প্রাণ হরণ করিতে না পারিয়া সেই জাএদা আজ বিরলে বসিয়া কাঁদিতেছে!—কিন্তু কাহার জন্য? মায়মুনা! আমি নিশ্চয় বুঝিলাম, হাসানের মরণ নাই! জাএদারও আর সুখ নাই।”

 মায়মুনা কহিল, “চেষ্টার অসাধ্য কিছুই নাই। একবার, দুবার, তিনবার, না হয় চারবার,—পাঁচবারের বারে আর কিছুতেই রক্ষা নাই। হতাশ হও কেন? এই দেখ, এজিদ্ এই সকল কথা শুনিয়াই এই ঔষধ পাঠাইয়া দিয়াছে। ইহাতে আর নিস্তার নাই।”—এই কথা বলিয়াই মায়মুনা আপন কটিদেশ হইতে একটি ক্ষুদ্র পুঁটুলি বাহির করিয়া জাএদাকে দেখাইল। জাএদা জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও কি?”

 “মহাবিষ।”

 “মহাবিষ কি?”

 মায়মুনা উত্তর করিল, “এ সর্পবিষ নয়, অন্য কোন বিষও নয়, —লোকে ইহা মূল্যবান জ্ঞানে ব্যবহার করিয়া থাকে। ইহার মুল্য অধিক, দেখিতেও অতি উজ্জ্বল। আকার পরিবর্ত্তনে অণুমাত্র পেটে পড়িলেই মানুষের পরমায়ু শেষ করে।”

 “কি প্রকারে খাওয়াইতে হয়?”

 মায়মুনা কহিল, “খাদ্যসামগ্রীর সহিত মিশাইয়া দিতে পারিলেই হইল। পানিতে মিশাইয়া খাওয়াইতে পারিলে ত আর কথাই নাই। অন্য অন্য বিষ পরিপাক হইলেও হইতে পারে, কিন্তু ইহা পরিপাক করিবার ক্ষমতা পাকযন্ত্রের নাই। এ একটি চূর্ণমাত্র। পেটের মধ্যে যেখানে পড়িবে নাড়ী, পাকযন্ত্র, কলিজা, সমস্তই কাটিয়া কাটিয়া খণ্ড খণ্ড করিবে।”

 “এতবড় ভয়ানক বিষ! ছুঁইতেও যে ভয় হয়!”

 “ছুঁইলে কিছু হয় না। হাতে করিয়া রগড়াইলেও কিছু হয় না, হুড়কমের {অন্ননালীর) নীচে না নামিলে কোন ভয় নাই। এ-ত অন্য বিষ নয়, এ হীরক-চূর্ণ”

 “হীরার গুঁড়া?—আচ্ছা, দাও।”

 মায়মুনা তখনি জাএদার হাতে পুঁটুলি দিল। পুঁটুলি হাতে লইয়া জাএদা পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “আমার ঘরে যে, আর আসিবেন,— সে আশা আর নাই। যেরূপ সতর্কতা, সাবধানতা দেখিলাম, তাহাতে খাদ্যসামগ্রীর সহিত মিশাইবার সুবিধা পাইব কোথায়?—হাসনেবানু কিম্বা জয়নাব, দু’য়ের একজন না মিশাইলে আর কাহারও সাধ্য নাই।”

 “সাধ্য নাই কি কথা? সুযোগ পাইলে আমিই মিশাইয়া দিতাম। খাদ্যসামগ্রীর সহিত মিশাইতে পারিব না, তাহা আমি বুঝিয়াছি, অন্য আর একটি উপায় আছে।”

 “কি উপায়?”

 “ঐ সোরাহীর জলে।”

 “কি প্রকারে?—সেই সোরাহী যে প্রকারে শীলমোহর-বাঁধা, তাহা খুলিতে সাধ্য কার?”

 “খুলিতে হইবে কেন? সোরাহীর উপরে যে কাপড় বাঁধা আছে, ঐ কাপড়ের উপরে এই গুঁড়া অতি অল্প পরিমাণে ঘসিয়া দিলেই আর কথা নাই। যেমন সোরাহী তেমনি থাকিবে; যেমন শীলমোহর, তেমনি থাকিবে, পানির রং বদল হইবে না, কেহ কোন প্রকারে সন্দেহ করিতে পারিবে না।”

 “তাহা যেন পারিবে না, কিন্তু ঘরের মধ্যে যাওয়া ত চাই? যদি কেহ দেখে?”

 “দেখিলেই বা। ঘরের মধ্যে যাওয়া ত আর দোষের কথা নয়! তুমি কেন গেলে, এ কথা জিজ্ঞাসা করিবার কাহারও অধিকার নাই। যদি ঘরের মধ্যে যাইতে কোন বাধা না থাকে, তবে দেখিবে সুযোগ আছে কি না। যদি সুযোগ পাও, সোরাহীর কাপড়ের উপরে ইহা ঘসিয়া দিও। এইমাত্র আসিয়াছ, এখন যাওয়ার আবশ্যকতা নাই। সন্ধ্য উত্তীর্ণ হউক, রোগীও নিদ্রাবশে শয়ন করুক। যাহারা সেবা-শুশ্রূষা করিতেছে, তাহারাও বিশ্রামের অবসর পাক। একটু রাত্রি হইলেই যাওয়া ভাল।”

 মায়মুনা তখন জাএদার গৃহেই থাকিল। জাএদা গোপনে সন্ধান লইতে লাগিলেন। হাসানের নিকট কে কে রহিয়াছে, কে কে যাইতেছে, কে কে আসিতেছে, কে কি করিতেছে, প্রতি মুহূর্ত্তেই জাএদা গুপ্তভাবে যাইয়া তাহার অনুসন্ধান করিতেছেন। সন্ধান ও পরামর্শ করিতে করিতে অনেক সময় উত্তীর্ণ হইল। জাএদা আজ অত্যন্ত অস্থির। একবার আপন ঘরে মায়মুনার নিকটে, আবার বাহিরে! আবার সামান্য কার্য্যের ছল করিয়া হোসেনের গৃহসমীপে বা হাসনেবানুর গৃহের নিকটে, অথবা জয়নাবের গৃহের দ্বারে। কে কোথায় কি বলিতেছে, কি করিতেছে, সমুদয় তিনি সন্ধান লইতে লাগিলেন। বাড়ীর লোক—বিশেষতঃ হাসানের স্ত্রী, শত শত বার আনাগোনা করিলেও কাহারও কিছু বলিবার সাধ্য নাই। কিন্তু হাসনেবানুর চক্ষে পড়িলে অবশ্যই তিনি সতর্ক হইতেন। স্বামীর সেবাশুশ্রূষায় হাসনেবানু সর্ব্বদাই ব্যতিব্যস্ত, আহার-নিদ্রা একেবারে ছাড়িয়াছেন। জীবনে নামাজ (উপাসনা) কাজা[১] করিয়াছেন কি না সন্দেহ, সে নামাজ এখন আর সময়মত হইতেছে না। নানা প্রকার সন্দেহ ও চিন্তায় হাসনেবানু একেবারে বিহ্বলপ্রায় হইয়াছেন। স্বামীর কাতর শব্দে, প্রতি বাক্যে তাঁহার অন্তরের গ্রন্থিসকল ছিঁড়িয়া যাইতেছে। যখনই অবসর পাইতেছেন, তখনই তিনি ঈশ্বরের উপাসনা করিয়া স্বামীর আরোগ্য কামনা করিতেছেন। জয়নাব মনের দুঃখ মনেই রাখিতেন; হাসনেবানুর কথাক্রমেই তিনি দিবানিশি খাটিতেন। বিনাকার্য্যে তিলার্দ্ধকালও স্বামীপদ-ছাড়া হইতেন না। নিজ প্রাণ ও নিজ শরীরের প্রতি তাঁহার মায়া-মমতা নাই। হাসানের চিন্তাতেই বাড়ীর সকলেই (জাএদা ছাড়া) মহাচিন্তিত ও মহাব্যস্ত!

 জাএদার চিন্তায় জাএদা ব্যস্ত। জাএদা কেবল সময় অনুসন্ধান করিতেছেন, সুযোগের পথ খুঁজিতেছেন। ক্রমে ক্রমে রাত্রিও অধিক হইয়া আসিল। সকলেই আপন আপন স্থানে নিদ্রাদেবীর উপাসনায় স্ব স্ব শয্যায় শয়ন করিলেন। হাসনেবানু প্রতি নিশিতেই প্রভু মোহাম্মদের “রওজা শরীফে” যাইয়া ঈশ্বরের নিকট স্বামীর আরোগ্য কামনা করিতেন। আজও নিয়মিত সময়ে সকলে নিদ্রিত হইলে তসবীহ্ হস্তে করিয়া ঘরের বাহির হইলেন। জাএদা জাগিয়াছিলেন বলিয়াই দেখিলেন যে, হাসনেবানু রওজা মোবারকের দিকে যাইতেছেন। গোপনে গোপনে তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে যাইয়া আরও দেখিলেন যে, হাসনেবানুর ঈশ্বরের উপাসনার্থ দণ্ডয়ামান হইলেন। দেখিয়া আসিয়াই তিনি মায়মুনাকে বলিলেন, “মায়মুনা! বোধ হয়, এই-ই উত্তম সুযোগ। হাসনেবানু এখন ঘরে নাই, রওজা হইতে ফিরিয়া আসিতে বিলম্ব আছে। এখন একবার যাইয়া দেখি, যদি সুযোগ পাই, তবে এই-ই উপযুক্ত সময়।”

 জাএদা বিষের পুঁটুলি লইয়া চলিলেন। মায়মুনাও তাঁহার অজ্ঞাতসারে পাছে পাছে চলিল। অন্ধকার রজনী,চান্দ্রমাস রবিয়ল আওয়ালের প্রথম তারিখ। চন্দ্র উঠিয়াই অমনি অস্ত গিয়াছে। ঘোর অন্ধকার। জাএদা সাবধানে সাবধানে পা ফেলিয়া ফেলিয়া যাইতে লাগিলেন। স্বামীর শয়ন-গৃহের দ্বারের নিকটে যাইয়া কিছুক্ষণ দাঁড়াইয়া, গৃহমধ্যস্থিত সকলে জাগরিত কি নিদ্রিত, তাহা পরীক্ষা করিলেন। গৃহদ্বার যে বদ্ধ নাই, তাহা তিনি পূর্ব্বেই লক্ষ্য করিয়া গিয়াছেন। কারণ, হাসনেবানু স্বামীর আরোগ্যলাভার্থ ঈশ্বরের উপাসনা করিতে গিয়াই জাএদার গৃহপ্রবেশের সুবিধা করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন।

 গায়ের ভর গায়ে রাখিয়া, হাতের জোর হাতে রাখিয়া, অল্পে অল্পে দ্বার মুক্ত করিয়া গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া জাএদা দেখিলেন—দীপ জ্বলিতেছে। এমাম হাসান শয্যায় শায়িত,—জয়নাব বিমর্ষ বদনে হাসানের পা-দুখানি আপন বক্ষে রাখিয়া শুইয়া আছেন। অন্যান্য পরিজনেরা শয্যার চতুষ্পার্শ্বে ভিন্ন ভিন্ন শয্যায় শয়ন করিয়াছেন। নিশ্বাসের শব্দ ভিন্ন সে গৃহে তখন আর কোন শব্দই নাই।

 দ্বীপের আলোতে জয়নাবের মুখখানি জাএদা আজ ভাল করিয়া দেখিলেন। নিদ্রিত অবস্থায় স্বাভাবিক আকৃতির শোভা যেরূপ দেখায়—জাগ্রত অবস্থায় বোধ হয় তেমন শোভা কখনই দেখা যায় না। কারণ, জাগ্রত অবস্থায় কৃত্রিমতার ভাগ অনেক অংশে বেশী হইয়া পড়ে। জাএদা গৃহের মধ্যস্থ শায়িত ব্যক্তি ও দ্রব্যসমূহের প্রতি একে একে কটাক্ষপাত করিলেন। সোরাহীর প্রতি দৃষ্টি পড়িবামাত্রই তিনি সোরাহীর দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। দুই এক পদ অগ্রসর হইয়া, ক্ষণেক দাড়াইয়া, পশ্চাতে ও অন্যান্য দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া, আবার দুই এক পদ অগ্রসর হইতে লাগিলেন। ক্রমে সোরাহীর নিকটে যাইয়া দাঁড়াইলেন। আবার গৃহমধ্যস্থিত সকলের মুখের দিকে তাকাইয়া, এমামের মুখের দিকে চক্ষু ফেলিলেন। তাহার পর বিষের পুঁটুলি খুলিতে আরম্ভ করিলেন। খুলিতে খুলিতে ক্ষান্ত দিয়া, কি আবার ভাবিয়া, আর খুলিলেন না! হাসানের মুখের দিকে আবার চাহিয়া রহিলেন, ক্রমে ক্রমে তাঁহার মুখ, বক্ষ, ঊরু ও পদতল পর্যন্ত সর্ব্বাঙ্গে চক্ষু পড়িলে জাএদার আর সে ভাব থাকিল না। তাড়াতাড়ি বিষের পুঁটুলি লইয়া তিনি সোরাহীর মুখের কাপড়ের উপর সমুদয় হীরকচূর্ণ ঢালিয়া দিলেন এবং দক্ষিণ হস্তে সোরাহীর মুখবন্ধ বস্ত্রের উপর বিষ ঘসিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি হাসানের পদতলে যাহাকে দেখিলেন, তাহাকেই বার বার বিষনয়নে দেখিতে লাগিলেন; স্বামীর মুখপানে আর ফিরিয়া চাহিলেন না। সমুদয় চূর্ণ জলে প্রবেশ করিলে তিনি ত্রস্তভাবে ঘর হইতে বাহিরে যাইবার সময়, স্বামীর মুখের দিকে তাকাইয়া পা ফেলিতেই দ্বারে আঘাত লাগিয়া একটু শব্দ হইল। ঐ শব্দে এমাম হাসানের নিদ্রাভঙ্গ হইল। নিদ্রাভঙ্গ হইল বটে, কিন্তু চক্ষের পাতা খুলিল না। দ্বার পূর্ব্বমত রাখিয়া জাএদা অতি ত্রস্তে গৃহের বাহিরে আসিয়া কিঞ্চিৎ ভীতা হইলেন। শেষে দেখিলেন, আর কেহ নহে—মায়মুনা! জাএদার হাত ধরিয়া লইয়া মায়মুনা অতি চঞ্চলপদে ব্যস্তভাবে জাএদার গৃহে প্রবেশ করিল।

 দ্বারে জাএদার পদাঘাত-শব্দে এমাম হাসানের নিদ্রাভঙ্গ হইয়াছিল; চক্ষু খুলিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে ঐ শব্দের প্রকৃত কারণ কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। গৃহমধ্যে সকলেই নিদ্রিত;—দীপ পূর্ব্বমত জ্বলিতেছে যেখানে যাহা ছিল, সমস্তই ঠিক রহিয়াছে। হঠাৎ শব্দে তাঁহার সুখস্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেল, ইহাই কেবল আক্ষেপের কারণ হইল। তিনি জয়নাবকে ডাকিতে লাগিলেন। জয়নাব জাগিবামাত্রই হাসান তাঁহাকে বলিলেন, “জয়নাব। শীঘ্র শীঘ্র আমাকে পানি দাও। অজু (উপাসনার পূর্ব্বে হস্তপদমুখাদি বিধিমতে ধৌত) করিয়া ঈশ্বরের উপাসনা করিব। এইমাত্র পিতামাতা এবং মাতামহকে স্বপ্নে দেখিলাম। তাঁহারা যেন আমার অপেক্ষায় দাঁড়াইয়া আছেন। একটু জল পান করিব,—পিপাসা অত্যন্ত হইয়াছে।”

 জল আনিতে জয়নাব বাহিরে গেলেন। হাসনেবানু তস্‌বীহ্ হাতে ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। এমাম হাসানকে জাগরিত দেখিয়া তাঁহার শরীরের অবস্থা জিজ্ঞাসা করিবার অগ্রেই তিনি নিজেই হাসনেবানুকে স্বপ্ন বিবরণ বলিলেন, এবং “অত্যন্ত জলপিপাসা হইয়াছে এক পেয়ালা পানি দাও” বলিয়া উঠিয়া বসিলেন। স্বপ্নবিবরণ শুনিবামাত্রই হাসনেবানুর চিত্ত আরও অস্থির হইল; বিবেচনা-শক্তির লাঘব হইয়া গেল, মস্তক ঘুরিয়া পড়িল। সোরাহীর বস্ত্রের প্রতি পুর্ব্বে যেরূপ লক্ষ্য করিয়া দেখিতেন, তাহা আর দেখিবার তাঁহার ক্ষমতা থাকিল না। হাসনেবাসু স্বাভাবিক অবস্থায় থাকিলে বস্ত্রের উপরিস্থ হীরকচূর্ণ ঘর্ষণের কোন না কোন চিহ্ন অবশ্যই তাঁহার চক্ষে পড়িত, কিন্তু স্বপ্নবৃত্তান্ত শ্রবণে তিনি এমনি বিহ্বল হইয়াছেন যে, সোরাহীর মুখ বন্ধ না থাকিলেও তিনি নিঃসন্দেহে জল ঢালিয়া স্বামীকে পান করিতে দিতেন! এক্ষণে তিনি অন্যমনস্কে সোরাহী হইতে জল ঢালিয়া পেয়ালা পরিপূর্ণ করিয়া স্বামীর হস্তে প্রদান করিলেন। এমাম হাসানের এই শেষ পিপাসা;—হাসনেবানুর হস্তে এই শেষ জলপান। তিনি প্রাণ ভরিয়া জল পান করিলেন। জয়নাবও পূর্ব্ব আদেশমত জল লইয়া উপস্থিত হইলেন। হাসান হস্তপদাদি প্রক্ষালন করিয়া ঈশ্বরের উপাসনায় প্রবৃত্ত হইলেন; বসিয়া বসিয়া জীবনের শেষ-উপাসনা,—ইহজগতের শেষ আরাধনা আজ শেষ হইল; অন্তরও জ্বলিয়া উঠিল।

 কাতর হইয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, “আজ আবার কি হইল! জাএদার ঘরে যে প্রকার শরীরে জ্বালা উপস্থিত হইয়া প্রাণ অস্থির করিয়াছিল, এ সেরূপ নয়! কালিজা, হৃদয় হইতে নাভি পর্য্যন্ত কি এক প্রকারের বেদনা, যাহা মুখে বলিতে শক্তি নাই! ঈশ্বর একি করিলেন! আবার বুঝি বিষ! এ-ত আর জাএদার ঘর নহে! তবে এ কি!—এ কি যন্ত্রণা! উঃ!— কি যন্ত্রণা!”

 বেদনায় হাসান অত্যন্ত কাতর হইলেন;—জাএদার ঘরে যেরূপ যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছিলেন, তাহার চতুর্গুণ যন্ত্রণা ভোগ করিতে লাগিলেন। ব্যগ্রভাবে তিনি কাসেমকে কহিলেন, “শীঘ্র শীঘ্র হোসেনকে ডাকিয়া আন। আমি নিতান্তই অস্থির হইয়াছি। আমার হৃদয়, অন্তর, শরীর, —সমুদয় যেন অগ্নিসংযোগে জুলিতেছে, সহস্র সূচিকার দ্বারা যেন বিদ্ধ হইতেছে! অন্তরস্থিত প্রত্যেক শিরা যেন, সহস্র সহস্র খণ্ডে খণ্ডিত হইয়া পড়িতেছে!”

 অতি ত্রস্তে কাসেম পিতৃব্য হোসেনের সহিত পুনরায় সেই গৃহমধ্যে গিয়া উপস্থিত হইলেন। বাড়ীর আর আর সকলে আসিয়া জুটিলেন। সকলের সহিত আসিয়া জাএদাও এক পাশে বসিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। হোসেনকে দেখিয়া হাসান অতি কাতরস্বরে বলিতে লাগিলেন, “ভাই, আর নিস্তার নাই। আর সহ্য হয় না। আমার বোধ হইতেছে যে, কে যেন আমার অন্তরমধ্যে বসিয়া আঘাতে বক্ষঃ, উদর এবং শরীরমধ্যস্থ মাংসপেশী, সমস্তই খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিতেছে। ভাই! আমি এইমাত্র মাতামহ, মাতা এবং পিতাকে স্বপ্নে দেখিয়াছি। মাতামহ আমার হস্ত ধরিয়া স্বর্গীয় উদ্যনে বেড়াইতেছেন। মাতামহ ও মাতা আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিয়া বলিতেছেন, ‘হাসান! তুমি তুষ্ট হও যে, শীঘ্রই পার্থিব শত্রুদের অত্যাচার হইতে রক্ষা পাইলে। এইরূপ স্বপ্ন দেখিতে দেখিতে হঠাৎ একটি শব্দ আমার কর্ণে প্রবেশ করিল। অমনি নিদ্রাভঙ্গের সহিত স্বপ্নও ভাঙ্গিয়া গেল। অত্যন্ত জলপিপাসা হইয়াছিল, সোরাহীর জল যেমন পান করিয়াছি, মুহূর্ত্ত না যাইতেই আমাকে অস্থির করিয়া তুলিয়াছে। এত বেদনা, এত কষ্ট, আমি কখনই ভোগ করি নাই।”

 হোসেন দুঃখিত এবং কাতরস্বরে বলিতে লাগিলেন আমি সকলই বুঝিয়াছি। আমি আপনার নিকট আর কিছুই চাহি না। আমার এই ভিক্ষা যে, ঐ সোরাহীর জল পান করিতে আমায় অনুমতি করুন। দেখি, জলে কি আছে।” হাসান পীড়িত অবস্থাতেই শশব্যস্তে “ও-কি কর? হোসেন ও-কি কর?”—এই কথা বলিতে বলিতে শয্যা হইতে উঠিলেন,—অনুজের হস্ত হইতে সোরাহী কাড়িয়া লইয়া মাটিতে ফেলিয়া দিলেন। সোরাহী শত খণ্ডে ভাঙ্গিয়া চূর্ণ হইয়া গেল।

 হস্তে ধরিয়া নিজের অনুজকে শয্যার উপর বসাইয়া মুখে বার বার চুম্বন দিয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, “ভাই! আমি যে কষ্ট পাইতেছি, তাহা মুখে বলিবার শক্তি নাই। পূর্ব্বের আঘাত, পূর্ব্ব পীড়া, এই উপস্থিত যন্ত্রণায় সকলই ভুলিয়াছি। ভাই! দেখ ত,—আমার মুখের বর্ণ কি পরিবর্ত্তিত হইয়াছে?”

 ভ্রাতার মুখপানে দৃষ্টিপাত করিয়া হোসেন কাঁদিতে লাগিলেন। আর আর সকলে বলিতে লাগিল, “আহা!—জোতির্ম্ময় চন্দ্রবদনে বিষাদ-নীলিমা-রেখা পড়িয়াছে।”

 এই কথা শুনিয়া হাসান অনুজকে বলিলেন, “ভাই! বৃথা কাঁদিয়া লাভ কি? আমার আর বেশী বিলম্ব নাই, চিরবিদায়ের সময় অতি নিকট। মাতামহ যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, সকলই প্রত্যক্ষ করিতেছি। ভাই! মাতামহ সশরীরে ঈশ্বরের আদেশে একবার ঈশ্বরের স্থানে নীত হইয়াছিলেন। সেখানে কোন নির্দ্দিষ্ট স্থানে তিনি অতি রমণীয় দুইটি ঘর সুসজ্জিত দেখিলেন। একটি সবুজ বর্ণ, আর একটি লোহিত বর্ণ। কাহার ঘর, প্রহরীকে এই কথা জিজ্ঞাসা করাতে প্রহরী উত্তর করিল, “আপনার অন্তরের নিধি, হৃদয়ের ধন এবং নয়নের পুত্তলী হাসান-হোসেনের জন্য এই দুইটি প্রস্তুত হইয়াছে। ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে প্রহরী চোখের জল ফেলিয়া নতশির হইল, কোন উত্তর করিল না। জিব্‌রাইল তাঁহার সঙ্গে সঙ্গেই ছিলেন। তিনিই মাতামহকে বলিলেন, ‘অয়ে মোহাম্মদ! দ্বারবান কারণ প্রকাশে লজ্জিত হইতেছে, আমি প্রকাশ করিব! আজ আপনি যাহা জিজ্ঞাসা করিবেন, আমি তাহাই বলিতে আজ্ঞাপ্রাপ্ত হইয়াছি। নিদারুণ গুপ্তকথা হইলেও আজ আমি আপনার নিকট তাহা ব্যক্ত করিব। ঐ দুইটি ঘর ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের হইবার কারণ কি, উহার সবিশেষ বৃত্তান্ত বলিতেছি শ্রবণ করুন:—সবুজ বর্ণ গৃহ কনিষ্ঠ দৌহিত্র হোসেনের জন্য প্রস্তুত হইয়াছে। আপনার অবর্ত্তমানে একদল পিশাচ শত্রুতা সাধন করিয়া হাসানকে বিষপান করাইবে এবং মৃত্যুর সময় হাসানের মুখ সবুজ বর্ণ হইবে; তন্নিমিত্তই ঐ গৃহটি সবুজবর্ণ। ঐ শত্রুগণ অস্ত্র দ্বারা আপনার কনিষ্ঠ দৌহিত্র হোসেনের মস্তকচ্ছেদন করবে। ঐ রক্তমাখা মুখের চিহ্নই লোহিত বর্ণের কারণ।—মাতামহের বাক্য আজ সফল হইল। আমার মুখের বর্ণ যখন বিবর্ণ হইয়াছে, তখন পরমায়ুও আজ শেষ হইয়াছে। মাতামহের বাক্য অলঙ্ঘনীয়। ভাই! ঈশ্বরের কার্য্যও অখণ্ডনীয়।”

 সবিষাদে এবং সরোষে হোসেন বলিতে লাগিলেন, “আমি আপনার চির আজ্ঞাবহ দাস, বিশেষ স্নেহের পাত্র, এবং চির-আশীর্ব্বাদের আকাঙক্ষী— মিনতি করিয়া বলিতেছি, বলুন ত, আপনাকে এ বিষ কে দিয়াছে?”

 “ভাই তুমি কি জন্য বিষদাতার নাম জিজ্ঞাসা করিতেছ? তুমি কি ইহার প্রতিশোধ লইবে?”

 হোসেন শষ্যা হইতে উঠিয়া অতিশয় রোষতরে দুঃখিতস্বরে বলিতে লাগিলেন, “আমার প্রাণের পূজনীয় ভ্রাতাকে,—এক মাতার উদরে যে ভ্রাতা অগ্রে জন্মিয়াছে, সেই ভ্রাতাকে—আমি বাঁচিয়া থাকিতে যে নরাধম বিষপান করাইয়াছে —সে কি অমনি বাঁচিয়া যাইবে? আমি কি এমনি দুর্ব্বল, আমি কি এমনি নিঃসাহসী, আমি কি এমনি ক্ষীণকায়, আমি কি এমনি কাপুরুষ, আমার হৃদয়ে কি রক্ত নাই, ভ্রাতৃস্নেহ নাই যে, ভ্রাতার প্রাণনাশক বিষপ্রদায়কের প্রতিশোধ লইতে পারি না? যে আজ আমার একটি বাহু ভগ্ন করিল, অমুল্য ধন সহোদর-রত্ন হইতে যে আজ আমাকে বঞ্চিত করিল, যে পাপিষ্ঠ আজ তিনটি সতী স্ত্রীকে অকালে বিধরা করিল, আমি কি তার কিছুই করিব না? যদি সে নরাধমের কোন সন্ধান জানিয়া থাকেন, যদি তাহাকে চিনিয়া থাকেন, যদি অনুমানে কিছু অনুভব করিয়া থাকেন, এ আজ্ঞাবহ চিরকিঙ্করকে বলুন, আমি এখনই আপনার সম্মুখে তাহার প্রতিবিধান করিতেছি। সেই পাপাত্মা বিজন বনে, পর্ব্বতগুহায়, অতলজলে, সপ্ততল মৃত্তিকা মধ্যে যেখানেই থাকুক, হোসেনের হস্তে তাহার পরিত্রাণ নাই। হয় আমার প্রাণ তাহাকে দিব, নয় তাহার প্রাণ আমি লইব।”

 অনুজকে হস্তে ধরিয়া নিকটে বসাইয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, “ভাই। স্থির হও। আমি আমার বিষদাতাকে চিনি। সে আমার সহিত যেরূপ ব্যবহার করিল, আমি সমুদয় জানিতে পারিয়াছি। ঈশ্বরই তাহার বিচার করিবেন। আমার কেবল এইমাত্র আক্ষেপ যে, বিনা কারণে সে আমাকে নির্য্যাতন করিল। আমার ন্যয় অনুগত স্নেহশীল বন্ধুকে বধ করিয়া সে কি সুখ লাভ করিল, তাহা বুঝিতে পারিলাম না। যে কারণেই হউক, যে লােভেই হউক, যে আশায়-ই হউক, নিরপরাধে সে আমাকে নির্য্যাতন করিয়া চিরবন্ধুর প্রাণবধ করিল, দয়াময় পরমেশ্বর তাহার আশা কখনই পূর্ণ করিবেন না। দুঃখের বিষয় এই যে, সে আমাকে চিনিতে পারিল না। যাহা হউক, ভাই! তাহার নাম আমি কখনই মুখে আনিব না। তাহার প্রতি আমার রাগ, হিংসা, দ্বেষ—কিছুই নাই। ঈশ্বরের নামে শপথ করিয়া বলিতেছি, আমার বিষদাতার মুক্তির জন্য ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিব। যে পর্য্যন্ত ঈশ্বরের নিকট হইতে তাহাকে মুক্ত করাইতে না পারি, সে পর্য্যন্ত স্বর্গের সােপানে পা রাখিব না। ভাই! ক্রমেই আমার বাকশক্তি রােধ হইতেছে। কত কথা মনে ছিল, কিছুই বলিতে পারিলাম না। চতুর্দ্দিক যেন আমি অন্ধকারময় দেখিতেছি।” আবুল কাসেমের হস্ত হােসেনের হস্তে সমর্পণ করিয়া স্নেহাচিত্তে হাসান কাতরস্বরে পুনরায় কহিতে লাগিলেন, “ভাই! ঈশ্বরের দোহাই, আমার অনুরােধ,— তােমার কন্যা সখিনার সহিত কাসেমের বিবাহ দিও। আর ভাই! আমার বিষদাতার যদি সন্ধান পাও, কিম্বা কোন সূত্রে সে যদি ধরা পড়ে,—তবে তাহাকে কিছু বলিও না;—ঈশ্বরের দোহাই তাহাকে ক্ষমা করিও।”—যন্ত্রণাকুল এমাম ব্যাকুলভাবে অনুজকে এই পর্য্যন্ত বলিয়া সস্নেহে কাসেমকে বলিলেন, “কাসেম! বৎস! আশীর্ব্বাদ করি, তুমি চিরজীবী হও। আর বাপ! এই কবচটি সর্ব্বদা হস্তে বাঁধিয়া রাখিও। যদি কখনও বিপদগ্রস্ত হও, সে বিপদ হইতে রক্ষা পাইবার উপায় যদি নিজ বুদ্ধিতে কিছুই স্থির করিতে না পার, তবে এই কবচের অপর পৃষ্ঠে লক্ষ্য করিও; যাহা লেখা দেখিবে, সেইরূপ কার্য্য করিবে। সাবধান! তাহার অন্যথা করিও না।”

 পরে কিয়ৎক্ষণ নিস্তব্ধ থাকিয়া উপর্যুপরি তিন চারিটি নিশ্বাস ফেলিয়া হােসেনকে সম্বোধনপূর্ব্বক মুমূর্ষু হাসান পুনরায় কহিলেন, “ভাই, ক্ষণকালের জন্য তােমরা সকলে একবার বাহিরে যাও; কেবল জাএদা একাকিনী এখানে উপস্থিত থাকুক। জাএদার সহিত নির্জ্জনে আমার একটি বিশেষ কথা আছে।”

 সকলেই আজ্ঞা পালন করিলেন। শয্যার নিকটে জাএদাকে ডাকিয়া হাসান চুপিচুপি বলিতে লাগিলেন, “জাএদা! তোমার চক্ষু হইতে হাসান এখন চিরদিনের জন্য দূর হইতেছে-আশীর্ব্বাদ করি, সুখে থাক। তুমি যে কার্য্য করিলে, সমস্তই আমি জানিতে পারিয়াছি। তোমাকে বড়ই বিশ্বাস করিতাম, বড়ই ভালবাসিতাম,—তাহার উপযুক্ত কার্য্যই তুমি করিয়াছি। ভাল! সুখে থাক, আমি তোমাকে ক্ষমা করিলাম। হোসেনকেও ক্ষমা করিতে বলিয়াছি, তাহাও তুমি স্বকর্ণে শ্রবণ করিয়াছ। ভিতরের নিগূঢ় কথা যদি আমি হোসেনকে বলিতাম, তাহা হইলে যে কি অনর্থ সংঘটিত হইত, তাহা ত তুমি বুঝিতেই পারিতেছ। যাহা হউক আমি তোমাকে ক্ষমা করিলাম, কিন্তু যিনি সর্ব্বসাক্ষী, সর্ব্বময়, সর্ব্বক্ষমার অধীশ্বর, তিনি তোমাকে ক্ষমা করিবেন কি না বলিতে পারি না। তথাপি তোমার মুক্তির জন্য সর্ব্ব প্রযত্নে আমি সেই মুক্তিদাতার নিকট পুনঃপুনঃ প্রার্থনা করিব।—যে পর্যন্ত তোমাকে মুক্ত করাইতে না পারিব, সে পর্য্যন্ত আমি স্বর্গের সোপানে পা রাখিব না।”

 জাএদা অধোমুখে অশ্রু বিসর্জ্জন করিলেন। একটিও কথা কহিলেন না। সময়োচিত সঙ্কেতধ্বনি শ্রবণে হোসেনের সহিত আর আর সকলেই সেই গৃহমধ্যে পুনঃ প্রবেশ করিলেন। হাসান একে একে সকলের নিকট বিদায় লইলেন, হাসনেবাসু ও জয়নাবের নিকট বিদায় গ্রহণ করিয়া নিজকৃত অপরাধের মার্জ্জনা চাহিলেন। শেষে হোসেনকে তিনি কহিলেন,“হোসেন এস ভাই। জন্মের মত তোমার সহিত আলিঙ্গন করি।”—এই বলিয়া অনুজের গলা ধরিয়া সাশ্রুনয়নে আবার বলিতে লাগিলেন, “ভাই, সময় হইয়াছে! মাতামহ স্বর্গের দ্বারে দাঁড়াইয়া ঐ ডাকিতেছেন! চলিলাম!” এই শেষ কথা করিয়াই ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে দয়াময় এমাম হাসান সর্ব্বসমক্ষে প্রাণত্যাগ করিলেন। যে দিন এমাম হাসান মর্ত্যলীলা সংবরণ করেন, সেইদিন হিজরী ৫০ সনের ১লা রবিয়ল আউওল তারিখ। হাস্‌নেবানু, জয়নাব, কাসেম ও আর আর সকলে হাসানের পদলুষ্ঠিত হইয়া মাথা ভাঙ্গিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। জাএদা কাঁদিয়াছিলেন কি না, তাহ কেহ লক্ষ্য করেন নাই।

  1. কাজা—নিয়মিত সময়ের অতিক্রম