বেতালপঞ্চবিংশতি/চতুর্বিংশ উপাখ্যান
চতুর্বিংশ উপাখ্যান
বেতাল কহিল মহারাজ
কলিঙ্গদেশে যজ্ঞশর্ম্মা নামে ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি অনেক দেবতার আরাধনা করিয়া বহু কালের পর এক পুত্ত্র পাইয়াছিলেন। ঐ পুত্ত্র অল্পকালমধ্যে সর্ব্ব শাস্ত্রে সুপণ্ডিত হইল এবং অনন্যকর্ম্মা ও অনন্যধর্ম্মা হইয়া নিরন্তর পিতৃসেবা করিতে লাগিল। পিতা মাতার ভাগ্যদোষে ঐ বালক পঞ্চদশ বষ বয়ঃক্রমকালে কালগ্রাসে পতিত হইল। তাহার পিতা মাতা প্রথমতঃ যৎপরোনাস্তি বিলাপ ও পরিতাপ করিলেন পরিশেষে অগ্নিসংস্কারার্থে গ্রামোপান্তবর্ত্তী শ্মশানে লইয়া গিয়া চিতারচনা করিতে লাগিলেন।
এক বৃদ্ধ যোগী বহুকালাবধি ঐ শ্মশানে যোগাভ্যাস করিতেছিলেন। তিনি পঞ্চদশবর্ষীয় ব্রাহ্মণকুমারের মৃত দেহ পতিত দেখিয়া মনে মনে বিবেচনা করিলেন আমার এই প্রাচীন দেহ জরায় জীর্ণ ও শীর্ণ হইয়া কার্য্যাক্ষম হইয়াছে অতএব এই যুবদেহে প্রবেশ করি তাহা হইলে বহু কাল যোগাভ্যাস করিতে পারিব। এই বলিয়া জগদীশ্বরের নাম স্মরণপূর্ব্বক সেই শরীরে প্রবেশ করিলেন। ব্রাহ্মণকুমার তৎক্ষণাৎ জাবিত হইয়া উঠিল। যজ্ঞশর্ম্মা পুত্ত্রকে প্রত্যাগতজীবিত দেখিয়া প্রথমতঃ প্রফুল্ল বদনে হাস্য করিলেন কিন্তু এক নিমেষ পরেই পুনর্বার পূর্ব্ববৎ বিষণ্ণ বদনে রোদনে প্রবৃত্ত হইলেন।
ইহা কহিয়া বেতাল জিজ্ঞাসিল মহারাজ ব্রাহ্মণ পুত্ত্রকে পুনর্জীবিত দেখিয়া হৃষ্ট মনে হাস্য করিয়া কি কারণে পর ক্ষণেই রোদন করিলেন বল। রাজা কহিলেন ব্রাহ্মণ প্রথমতঃ পুত্ত্রকে পুনর্জীবিত বোধ করিয়া আহ্লাদে হাস্য করিয়াছিলেন। কিন্তু তিনি পরশরীরপ্রবেশনী বিদ্যা জানিতেন তৎপ্রভাবে পর ক্ষণেই বুঝিতে পারিলেন পুত্ত্র জীবিত হয় নাই যোগীর প্রবেশ দ্বারা এইরূপ হইয়াছে অতএব রোদন করিলেন।
ইহা শুনিয়া বেতাল ইত্যাদি।