বেতালপঞ্চবিংশতি/পঞ্চবিংশ উপাখ্যান

পঞ্চবিংশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল মহারাজ

দক্ষিণ দেশে ধর্ম্মপুর নামে নগর আছে তথায় মহাবল নামে মহাবল পরাক্রান্ত নরপতি ছিলেন। এক প্রতিপক্ষ রাজা চতুরঙ্গিণী সেনা লইয়া তদীয় রাজধানী অবরোধ কহিলে রাজা মহাবল স্বীয় সমস্ত সৈন্য সামন্ত সহকারে সমরসাগরে অবগাহন করিয়া অশেষপ্রকার প্রতীকারচেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিন্তু ক্রমে ক্রমে স্বপক্ষ সৈন্য-সমস্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হইলে নিতান্ত নিৰুপায় ভাবিয়া মহিষী ও তনয়াকে সমভিব্যাহারিণী করিয়া অরণ্যপ্রয়াণ করিলেন। কিয়ৎ দূর গমন করিয়া তিন জনেই অতিশয় ক্ষুধার্ত্ত হইলেন। তখন রাজা মহিষী ও তনয়াকে এক সন্নিহিত তৰুতলে অবস্থিতি করিতে কহিয়া স্বয়ং ভক্ষ্য দ্রব্য আহরণার্থে অরণ্যের অনধিকদূরবর্ত্তী এক নগরে প্রবিষ্ট হইলেন।

সায়ংকাল উপস্থিত হইল। রাজা প্রত্যাগত হইলেন না। রাজমহিষী ও রাজকুমারী রাজার অনাগমনে নানা অনিষ্ট আশঙ্কা করিয়া অত্যন্ত বিষণ্ণ মনে অশেষপ্রকার চিন্তা করিতে লাগিলেন। ঐ দিবস কুণ্ডিনাধিপতি রাজা চন্দ্রসেন আপন জ্যেষ্ঠ পুত্ত্রকে সঙ্গে লইয়া সেই কাননে মৃগয়ায় আসিয়াছিলেন। তাঁহারা তাদৃশ নিবিড় অরণ্যমধ্যে অসম্ভাবিত নরচরণচিহ্ন দর্শন করিয়া বিস্ময়ান্বিত চিত্তে অশেষপ্রকার কল্পনা করিতে লাগিলেন। পরিশেষে পুংবিলক্ষণ লক্ষণাদি দ্বারা স্ত্রীলোকের পদচিহ্ন নিশ্চয় হইল। রাজা কহিলেন চরণচিহ্ন দ্বারা অনুমান হইতেছে দুই রমণী অচিরে এই স্থান দিয়া গমন করিয়াছে। অতএব চল চারি দিক্‌ অন্বেষণ করি।

পিতা পুত্ত্র কিয়ৎ ক্ষণ ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে করিতে সায়ংকালে দেখিতে পাইলেন এক তৰুমূলে দুই পরম সুন্দরী নারী অবিরলবিগলিতজলধারাকুল লোচনে পরস্পর বদননিরীক্ষণ করত যূথবিরহিত কুররীযুগলের ন্যায় প্রগাঢ় উৎকণ্ঠায় কালযাপন করিতেছে। অনন্তর প্রণয়গর্ভ সম্ভাষণাদি দ্বারা তৎকালোচিত সান্ত্বনা প্রদান করিয়া রাজা রাজকন্যাকে লইলেন এবং রাজকুমার রাজমহিষীকে গ্রহণ করিলেন।

ইহা কহিয়া বেতাল জিজ্ঞাসা করিল মহারাজ অতঃপর এই দুই স্ত্রীর পুত্ত্র জন্মিলে তাহাদের পরস্পর কি সম্বন্ধ হইবেক বল। রাজা বিক্রমাদিত্য স্থিত চিত্তে বহু ক্ষণ চিন্তা করিলেন কিন্তু কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া মৌনাবলম্বন করিয়া রহিলেন।