বেতালপঞ্চবিংশতি/দ্বাবিংশ উপাখ্যান

দ্বাবিংশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল মহারাজ

বিশ্বপুর নগরে নারায়ণ নামে ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি এক দিন মনে মনে বিবেচনা করিতে লাগিলেন এক্ষণে বার্দ্ধক্যবশতঃ আমার শরীর শীর্ণ ও ইন্দ্রিয় সকল জীর্ণ হইয়াছে কিন্তু ভোগাভিলাষ পূর্ব্বাপেক্ষা প্রদীপ্ত হইতেছে। আমি পরকলেবরপ্রবেশনী বিদ্যা জানি। অতএব এই জরাজীর্ণ ভোগাক্ষম শীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করিয়া কোন যুবশরীরে প্রবিষ্ট হই তাহা হইলে আর কিছু কাল অনায়াসে অভিলাষানুরূপ সুখ সম্ভোগ করিতে পারিব। কিন্তু সহসা এই দেহ ত্যাগ করিয়া দেহান্তরে প্রবেশ করিলে আমার এই অভিপ্রায়ের প্রকাশসম্ভাবনা। অতএব প্রথমতঃ যোগাভ্যাসচ্ছলে পরিবারের নিকট বিদায় লইয়া বনপ্রবেশ করি পরে তথা হইতে আপন অভিপ্রায় সম্পন্ন করিব। নারায়ণ মনে মনে এইরূপ সঙ্কল্প করিয়া পুত্ত্র পৌত্ত্র দুহিতৃ দৌহিত্র কলত্র আদি সমস্ত পরিবার একত্র করিয়া তাঁহাদের সম্মুখে কহিতে লাগিলেন দেখ আমি এতাবৎ কাল পর্য্যন্ত সংসারাশ্রমে বদ্ধ থাকিরা বিষয়বাসনায় আসক্ত হইয়া কালযাপন করিলাম। এক দিন এক মুহূর্ত্তের নিমিত্তেও পর কালের হিতচিন্তা করি নাই। এক্ষণে আমার শেষ দশা উপস্থিত। অতএব অভিলাষ করিয়াছি অরণ্য প্রবেশপূর্ব্বক যোগাভ্যাস দ্বারা তনুত্যাগ করিব। ফলতঃ আর আমার এক ক্ষণের নিমিত্তেও এই মায়াময় অকিঞ্চিৎকর সংসারে লিপ্ত থাকিতে বাসনা নাই। এক্ষণে তোমরা ঐকমত্য অবলম্বনপূর্ব্বক অনুমতি কর নির্মমও নিঃসঙ্গ হইয়া মোক্ষপথের পথিক হই।

নারায়ণ এইরূপ কপটবাক্যে পরিবারে নিকট বিদায় লইয়া বনপ্রস্থান করিল। পরে তথায় বৃদ্ধ দেহ পরিত্যাগ করিয়া অন্য এক যুবশরীরে প্রবেশপূর্ব্বক বিষয়াভিলাষ পূর্ণ করিতে লাগিল। কিন্তু মহারাজ সে পূর্ব্বদেহপরিত্যাগের অব্যবহিত পূর্ব্ব ক্ষণে রোদন করিয়া পরদেহপ্রবেশকালে বিকসিত আস্যে হাস্য করিয়াছিল। অতএব জিজ্ঞাসা করি ইহার রেদিন ও হাস্যের কারণ কি। রাজা বিক্রমাদিত্য কহিলেন শুন বেতাল পূর্ব্ব কলেবর পরিত্যাগ করিলেই বহু কালের বহু যত্নের পরিবারের সহিত আর কোন সম্বন্ধ থাকিল না এই মমতায় মুগ্ধ হইয়া রোদন করিয়াছিল। আর পরশরীরপ্রবেশ সম্পন্ন হওয়াতেই ভোগপথ অকণ্টক হইল তাহাতেই আহ্লাদিত হইয়া হাস্য করিয়াছিল।

ইহা শুনিয়া বেতাল ইত্যাদি।