বেল্লিক রামায়ণ/অর্থ চুক্তিকরণ

অর্থ চুক্তিকরণ।

গলায় অঞ্চল বাঁধি,  অভারাম কাঁদি কাঁদি,
করযোড়ে এই কথা বলে।
“শুন লো আতরমণি,  তুমি মাের মহাজনী,
কে বা রাখে তুমি না রাখিলে॥
ত্যজ রােষ লো সুন্দরী, কে বলে তুমি সে বুড়ী,
রসের গুড়িকা সম গণি।
এতটা বয়েস তব,  কিন্তু তবু কোথা পাব,
তোমার সমান হেন ধনী॥

আহা মরি কিবা দন্ত,  যেন মৎস্য-কুল-অন্ত,
করিতে প্রকাশ মুখপুরে।
কিবে গাল টেঁপু টেঁপু,  যেন সে কামের ভেঁপু,
ভ্যাঁপো ভ্যাঁপো সদা বাদ্য করে॥
চরণ নহে ত অন্য,  চরণ-তরণী যেন,
যাহে সে তরায় ভবনদী।
দুটি কর টাঁকশাল,  কত টাকা সাল সাল,
জনম নিতেছে নিরবধি॥
আহা মরি মুখখানি,  ক্ষীরের ডেলাটি জিনি,
ক্ষীরভ্রমে ইচ্ছি সেই খাই।
রূপার নির্ম্মিত চুল,  যমেরো জন্মায় ভুল,
সেও ইচ্ছা দেখিতে সদাই॥
রাখিতে গেলাস্‌কেশে,  ইচ্ছা বুঝি করয়ে সে,
সাধ সদা দেখে সাধ পূরে।
তােমা সম ভাগ্যবতী,  কে আর কোথায় সতি,
পায়ে ধরি মেরো না আমারে॥
বেজায় বুদ্ধির দোষে, উদর-রাহুর গ্রাসে,
দিছি ফেলে বেবাক সে টাকা।
কোথা আর পাব এবে,  তোমারে যে দেওয়া যাবে,
বনিয়ে গিয়েছি মহাবােকা॥
আছয় উপায় এক,  শীঘ্রই ভরিবে ট্যাঁক,
দাঁও এক জল্‌দিই ঘটিবে।

পুত্র সে বেল্লিকরাম, শুনেছ অবশ্য নাম,
অচিরেই বিয়া তার হবে॥
কুলে সেরা মুখ্যি আমি,  শীলে গেরােবাজ তুমি,
কিবা নাহি জান সে বিষয়।
লেখাপড়া করা ছেলে, কে না তারে পাবে বলে,
সদা মনে কামনা করয়॥
তাই বলি রূপসী হে, দিন কত রহ সহে,
কি ভাবনা দিব টাকা ফিরে।
সুদ পাবে, প্রত্যাশায়,  দেছ যে টাকা আমায়,
অবশ্য তা দিব হে তােমারে॥”
কহিল, অতিরমণি,  “বটে, যা বলিলে তুমি,—
হতে পারে প্রকৃত সে কথা।
কিন্তু কি নিশ্চয় তার,  হবেই যে বিয়ে তার,
দু চার হাজার পাবে সেথা॥
আরো এক কথা হয়,  মরণের কি নিশ্চয়,
মরে যদি যাও ইতিমধ্যে।
কেবা দেয় বিয়ে তার, কে শােধে ঋণ তোমার,
মরিব যে আমি মহাবদ্ধে॥”
অভা কয়, “কর ক্ষমা,  বলো না ও কথা বামা,
তব ঋণ না শুধিয়ে ম’লে।
কি দুর্গতি হবে মাের,  দুঃখের না রবে ওর,
কাঁদায়ে না আর দীন বােলে॥

হাসিয়ে আতর কয়, “এত যদি মৃত্যুভয়,
ঋণ তবে কর কি কারণ।
যে সে ঋণ নয় আবার,  ঋণ সে আছে বেশ্যার,
কাক-মাংস করহ ভক্ষণ॥
সব মাংস খা(ও)য়া যায়,কাকে কিন্তু খা(ও)য়া দায়,
উগারিতে হবে সে তখনি।
বমন হইয়ে যাবে,  কিছু না পেটেতে রবে,
কিম্বা প্রাণ নিয়ে টানাটানি॥
আর এক কথা এই, মন্ত্র ত এমন নেই,
যাতে তোমা বাঁচাইতে পারি।
যে দিন মরার কথা,  কভু না হবে অন্যথা,
সেথা নাহি চলে জারিজুরি॥
এক পরামর্শ আছে, সত্য যদি কর কাছে,
তবে তাহা বলি হে তোমায়।
যত দিন বিবাহের, হয় ধার্য্য পুত্রের,
তত দিন নাহি কিছু দায়॥”
অভয়চরণ বাণী, কহে তবে যোড়পাণি,
“ভাল, বল, কিবা আজ্ঞা শুনি।
পালিবার যদি হয়, পালিব সে সুনিশ্চয়,
কিবা ভয়, অয়ি সুযৌবনি॥”
আতর কহিছে তবে,  “শুন সার বাণী এবে,
যাহাতে সুরাহা কিছু হবে।

কোন ক্লেশ নাহি ইথে,  অনাসে পার করিতে,
বল করিবে কি না করিবে॥
যতদিন টাকা দিতে,  না পারিবে কোন মতে,
রবে সে চাকর হয়ে মোর।
যখনি সুধাব যাহা, অমনি পালিবে তাহা,
মনে কিছু না হয়ে কাতর॥”
অভার শরীরে তবে,  ঘাম দিয়ে জ্বর যাবে,
এমনি লক্ষণ যেন দেখি।
হাসিয়ে সে অভা বলে, “এতে মন খুব চলে,
আছি রাজী শুন লো সুমুখী॥
তোমার চাকর হ’ব, তোমারে মুনিব ক’ব,
ইহা হতে কিবা ভাগ্যজোর।
আমি ত কি তুচ্ছ, হায়,  কত মহারাজচয়,
সেবেছে লো ঐ পদ তোর॥”
এইমত যুক্তি হয়ে, যায় কলহ মিটিয়ে,
ঋণদায়ে অভা বেশ্যাদাস।
বেল্লিকের রামায়ণ, অতি অদ্ভুত কথন,
পাঠমাত্রে যাহে স্বর্গে বাস॥