বেল্লিক রামায়ণ/আতরমণির মহিমা বর্ণন
দ্বিতীয় কাণ্ড।
(লীলাখেলা—বাবুর ম্যারেজ।)
আতরমণির মহিমা বর্ণন।
ধন্য ধন্য ধন্য বাবু অভয়চরণ।
কায়স্থ-কুলেতে তুমি একটি রতন॥
তব সম পুণ্যবান্ নাহিক নিরখি।
আদর্শ মহাত্মা তুমি,—যাবে নাম রাখি॥
হইলে যে বেশ্যাদাস তুমি ঋণদায়ে।
কার সাধ্য বলে কিন্তু তােমারে তা গিয়ে॥
সরস্বতী-বরপুত্র তুমি সে সাক্ষাৎ।
একদণ্ডে বুঝাইয়ে, করিবে তফাৎ॥
অবাক্ মানিবে সবে কথাতে তােমার।
কথাতে তােমার কাছে কেবা পাবে পার॥
এমনি বুঝাবে তারে করে দিবে জল।
জগতেতে বুদ্ধি যার তারি ত সে বল॥
পাঠক-পাঠিকাগণ শুন দিয়া মন।
অতঃপর ঘটিল যা অপূর্ব্ব ঘটন॥
অভারাম বেশ্যাদাস যে দিন হইল।
সেইদিন(ই) কেহ তারে জিজ্ঞাসা করিল॥
“হাঁ হে বাবু এ কি দেখি, তুমি বেশ্যাদাস?
কেন হেন সংঘটন কর ত প্রকাশ॥
বড় লজ্জাকর এ যে অতি ঘৃণ্যকাজ।
কি এতে বল ত তোমা কহিবে সমাজ॥
এমন নীচের কর্ম্ম কিছু ত সে নাই।
কি হেতু এ কর্ম্মে বল, তুমি এলে ভাই॥
তােমার না হয় লজ্জা করিতে এ কাজ।
মােরা কিন্তু বড় ব্যথা পাই মনােমাঝ॥
কায়স্থ-কুলেতে তুমি নিয়েছ জনম।
এই কি হে তব যােগ্য হয় সে করম॥
যদ্যপি পেটের জ্বালা এতই তােমার।
ভিক্ষা কেন নাহি কর ফিরি দ্বার দ্বার॥
তা হলেও এতটা ত নীচতা না হয়।
এর চেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শ্রেয় সুনিশ্চয়॥
মােরা শতবর্ষ যদি নাহি পাই খেতে।
তথাপি প্রবৃত্তি নাহি হয় এ কার্য্যেতে॥
ছেড়ে দাও হেন কার্য্য ধরি ভাই পায়।
আর যে কিছুতে মােরা বাঁচি না ঘৃণায়॥
বড় ঘৃণা হইতেছে অন্তরে মোদের।
আর যেন দেখিতে এ নাহি হয় ফের॥”
এত যদি সেই ব্যক্তি বচন হে দিল।
হাসিয়ে তবে ত অভারাম সে কহিল॥
“এত যদি লজ্জা ভাই হয় তোমাদের।
ভুলেও এ পথে নাহি এসো আর ফের॥
এলেই এ পথে ইহা হবেই দেখিতে।
কিছুতে আমি ত ইহা নারিব ছাড়িতে॥
আর এক যুক্তি ভাই অতি চমৎকার।
এতই অসহ্য যদি হয় হে তােমার॥
থালায় রাখিয়া জল মর গিয়া ডুবে।
কোন জ্বালা আর মনে পাইতে না হবে॥
তােমরা কোমলপ্রাণ সবে বা কেমন।
মঙ্গল নিশ্চয় যদি হয় হে মরণ॥
‘লজ্জা’ যে বলিছ, কেন কিসের বা লজ্জা!
তুমি যে দেখি হে বড় করিতেছ মজা॥
বেশ্যাদাস হইয়াছি এই ত হে দোষ।
ইহার কারণে কেন কর এত রােষ॥
বেশ্যাদাস কলিকালে কোন্ বেটা নয়।
বেশ্যার গােলামী কে না পছন্দ করয়?
কেহ বা লুকায়ে করে কেহ বা দেখায়ে।
সবাই ত বেশ্যাদাস জগৎ ব্যাপিয়ে॥
ঘর থেকে টাকা এনে ঢালে বেশ্যা-পায়।
নিজ প্রাণ বলি কেহ দেয় বেশ্যা দায়॥
থাকিতে ঘরেতে নারী পরেতে যে রত।
কেন বল দেখি হেন ঘটে অবিরত॥
বেশ্যার গােলামী শুধু বাসনা সে মনে।
যা কিছু করয় তারা গােলামী-কারণে॥
চরণ সেবিছে কেহ মন পাবে বােলে।
মন পেতে কেহ বা গুয়ের সরা ফেলে॥
খাওয়ায়ে দেয় অন্ন সে ত থোড়া কাজ।
আরো হেন সাধ যাহা কহিতেও লাজ॥
আমি ত বাজার করি খাতা রাখি আর।
বিছানাটা কোরে নয় দিই একবার॥
তামাক নিজেও খাই, তারেও খাওয়াই।
এতে লজ্জা কিবা, কিবা ভার বােঝা ছাই॥
জঘন্য ইতরপণা কাজ যে সকল।
তাহা ত না করি আমি, করি এই কেবল॥
অধিকন্তু টাকা এতে নাহি হয় দিতে।
বিনা খরচায় বাস বেশ্যা-আলয়েতে॥
সাক্ষাৎ স্বর্গের দ্বার ভাবে লোক যায়।
কতই খরচা করে যাইয়ে সেথায়॥
হেন বেশ্যালয়ে আমি বিনা অর্থব্যয়ে।
দেখ না কেমন থাকি মজাটী করিয়ে॥
হেন থাকা অপছন্দ কি হেতু তােমার।
কাজ ত কিছুই আমি না করি নিন্দার॥
সার্থক জনম যেই লইয়াছি আমি।
তেঁই ত এ হেন স্থানে হের মােরে তুমি॥
আরাে এক কথা শুন, অতি চমৎকার।
শুনিলে সে কথা হবে লোমাঞ্চ তােমার॥
স্বপ্নে জ্ঞাত হইয়াছি এক নিশিযােগে।
সাক্ষাৎ শ্রীঅন্নপূর্ণা ইনি কলিযুগে॥
শাপেতে এ বেশ্যারূপে মর্ত্ত্যে অধিষ্ঠান।
এরে সেবি অন্তে আমি যাব মােক্ষধাম॥
থাকে তব ভাগ্যে সেবা তুমিও করিবে।
এমন সুযােগ নাহি কদাচ ছাড়িবে॥
মহামায়া পূজি যদি থাকে কিছু ফল।
আতরমণিরে তবে পূজ অবিরল॥
ধনে-পুত্রে লক্ষ্মীলাভ হবে ত তা হলে।
কি হেতু এ দিন বল কাটাও বিফলে॥
দেখ দিন বয়ে যায়, ধরম-করম।
কবে আর করিবে বা গেলে এ জনম॥”
অবাক্ সে জন শুনি অভার এ বাণী।
ভাবিল বুঝি বা সত্য হবে এ কাহিনী॥
মনেতে তখন তারো উঠে এ চিন্তন।
“আমি বা ফাঁকেতে সত্য পড়ি কি কারণ॥”
অতঃপর সেইজন হয় বেশ্যাদাস।
বেল্লিকের রামায়ণ অদ্ভুত প্রকাশ॥