বেল্লিক রামায়ণ/গ্রন্থারম্ভ
বেল্লিক রামায়ণ।
গ্রন্থারম্ভ।
কহিতে আশ্চর্য্য অতি আজব কথন।
বেল্লিক রামের জন্মে হয় যে ঘটন॥
হইয়ে ব্রহ্মাণ্ড-সৃষ্টি এ কাল পর্য্যন্ত।
জন্মিল যতেক সাধু আর যে মহান্ত॥
ফকির, সন্ন্যাসী, ঋষি, মুনি, যোগী আর।
যতবিধ হতে পারে লোক সদাচার॥
শচীমার উপাসক সত্যধর্ম্মাশ্রিত।
পরমহংসের শিষ্য কিম্বা যে পণ্ডিত॥
ব্রহ্মজ্ঞানে জ্ঞানবান্ অথবা যে জন।
হতে পারে সকলেই খ্যাত মহাজন॥
কিন্তু এ বেল্লিক শ্রীরামের মত কেহ।
নাহিক দ্বিতীয় আর নিশ্চিত জানিহ॥
অতি সুচরিত ইনি অতি পুণ্যবান্।
কোথা পাবে সাধু আর ইঁহার সমান॥
চৌদ্দটী ভুবন ছাড়ি আরো উচ্চতরে।
উড়িছে ইঁহার যশোধ্বজা নিরন্তরে॥
ইঁহার চরিত্র পাঠ যে জন করয়।
সকায়ে স্বরগে গতি করে সে নিশ্চয়॥
যতেক বেল্লিক যেথা আছে অবস্থিত।
এই সে বেল্লিকে পাবে সবারি চরিত॥
এই রামায়ণ সর্ব্ব-রামায়ণ-সার।
ধর্ম্ম অর্থ কাম মােক্ষ চতুর্ব্বর্গাধার॥
পুণ্যের জাহাজ ইহা নাহিক সংশয়।
প্রতি লহমায় পুণ্য আম্দানী করয়॥
কোথা আফেরিকা কোথা আমেরিকাখণ্ড।
হতেছে আমদানী পুণ্য বেগেতে প্রচণ্ড॥
মুহূর্ত্ত হইয়ে স্থির যুড়ি দুই কর।
কর যদি এই পুঁথি শ্রবণগােচর॥
দেখিবে কি মজা ইথে,—হবে দেল খােশ্।—
খাইবে পােলাও যেন গরোস্ গরােস্॥
অথবা ব্রাণ্ডির সহ মটনের রােষ্ট্।
সঙ্গে সস, মাস্টার্ড, পাঁউরুটি-টোষ্ট॥
আহা মরি কারিকুরি বলি হারি যাই।
বেল্লিক রামের তুল্য ব্যক্তি আর নাই॥
অতি শুভক্ষণে জাত এই মহাত্মন্।
সদ্য স্বর্গে গতি এঁরে করিলে দর্শন॥
যেই দিন জন্ম ইনি নিলেন ভূতলে।
শত শত উল্কাপাত হয় এক কালে॥
গভীর নিনাদে যত সুকণ্ঠী গর্দ্দভ।
এককালে আনন্দেতে কৈল সবে রব॥
কি কব সে রব-কথা কহিতে লোমাঞ্চ।
কোটি বজ্রপাতধ্বনি নিন্দিত বরঞ্চ॥
শিশুর ক্রন্দন তারি সঙ্গেতে মিলিত।
সুধার সমুদ্র আহা যেন উথলিত॥
ট্যাঁ ট্যাঁ করি কাঁদে শিশু কাঁপে বসুন্ধরা।
থুড়ি!—আনন্দেতে নৃত্য করে তাহে ধরা॥
বলে পৃথ্বী,—“আহা মরি, কে ভক্ত জন্মিল।
নির্ব্বাণ-মুকতি বুঝি এতদিনে হ’ল॥
এখনি উদ্ধার আমি হইব নিশ্চয়।
পাতার পরম পদে হ’ব গিয়া লয়॥
দেহধারণের কষ্ট হবে না সহিতে।
হবে না আর ত কষ্ট কোনমতে পেতে।
জন্মিয়াছে শক্র মোর যতেক যেথায়।
আর না পারিবে কেহ ঠেকাইতে দায়॥
হবে না কাহারে আর মুখ দেখিবারে।
কে আর পারিবে বল মোরে জ্বালাবারে?
দেহ থাকিলেই তাহে আছয়ে যন্ত্রণা।
দেহ গেলে কোন্ দায় আর বা বল না।
ভাগ্যেতে বেল্লিকে পেটে ধরিলাম আমি।
তেঁই এতদিনে মুখ চান্ অন্তর্যামী।”
যেমনি বেল্লিক রাম প্রসূত ভূমিতে।
বিনা মেঘে বজ্রাঘাত অমনি শূন্যেতে॥
রাজারাজ্ড়ার কোন স্থানে গতিকালে।
যেমতি তােপের ধ্বনি হয় সেই স্থলে॥
তেমতি এ বজ্রপাত জানিহ নিশ্চয়।
মহাপুরুষের জন্মে এমনি যে হয়।
স্বর্গ মর্ত্ত্য রসাতল ত্রিলােক জানাতে।
ডাকিয়া উঠে এ বজ্র গভীর নাদেতে॥
জন্মিয়াই শিশু শূন্যপানে তাকাইল।
অমনি মুহূর্ত্তে দিগ্দাহ যে হইল॥
ভয়াকুল-নেত্রে যত পাষণ্ডেতে চায়।
ধর্মিষ্ঠ যে জন সুখ সে ত তাহে পায়॥
বলে, “কে রে ভাগ্যবান্ জনম লইল।
অপরূপ অঘটন তেঁই দেখা গেল॥”
এইমত কত দিকে কত সংঘটন।
লিখিয়ে কত বা পারি করিতে বর্ণন॥
যে বলে বলুক যত নিন্দাকারী জনে।
বেল্লিক না গ্রাহ্য করি তােলে তাহা কাণে॥
‘হরি’ বল ভাই করি গ্রন্থ আরম্ভন।
অতীব অপূর্ব্ব এ বেল্লিক রামায়ণ॥
বন্ধ্যানারী পুত্র পায় এ পুঁথি শুনিলে।
মুখেতে ফুটয়ে বােল এর পাঠফলে॥