বেল্লিক রামায়ণ/দর্পনারায়ণের অভিপ্রায়
দর্পনারায়ণের অভিপ্রায়।
মনেতে দর্পের এই ছিল অভিপ্রায়।
দেখায়ে পুলিস ভয় যদ্যপি তাহায়॥
সেই সে বেল্লিকে পারি তাড়াতে কৌশলে।
যাতে কোরে মোহিনীরে যায় সেই ফেলে॥
তার পরে মোহিনী সে আছে ত আমারি।
রব চিরকাল সুখে সঙ্গেতে তাহারি॥
সে আমার, আমি তার, আমা বই কারে।
সে আর জানায় হায় এই ত্রিসংসারে॥
কত আশা হৃদয়েতে আছিল যে পোষা।
একমাত্র আমি তার বিশ্বে ত ভরসা॥
না জানিত এ জগতে কারেও আপন।
দিবানিশি অন্তরেতে আমারি চিন্তন॥
সেই আমি এতদিন আছিনু যে পর।
পারিনি পাইতে তারে অন্তর-ভিতর॥
মনেদুঃখ মনেতেই রেখেছিনু চেপে।
তেঁই এ কৌশলজাল পাতিলাম চুপে॥
ভাবিল বেল্লিক মনে তাহারি কারণে।
এ কৌশলজাল আমি পাতিয়ে সেখানে॥
হরিনু মােহিনী ধনে অষ্টমীর রাতে।
পাঠানু কিষ্কিন্ধ্যাধামে তাহারি সে সাথে॥
মনের সুখেতে সেই লয়ে তারে গেল।
আমারে চূড়ান্ত বােকা ভাবিয়া লইল॥
জানে নাকো ভিতরেতে কি কল আমার।
কেমনে মােহিনী পুনঃ করিব উদ্ধার॥
এই যে যেতেছি আমি সঙ্গেতে পুলিস।
এই যাওয়াতেই সব হবে ডিস্মিশ্॥
যার ধন তার কাছে হইবে মিলিত।
মাঝে হতে বােকারাম হবে বুদ্ধিহত॥
বুদ্ধির গােড়ায় তার ধােরে যাবে ঘুণ।
কপালেতে একদণ্ডে লাগিবে আগুন॥
বুঝিবে তখন হায় কি কার্য্য করেছি।
কেন মাটী খেয়ে এরে নিয়ে পলায়েছি॥
একুল ওকুল তার দুই কুল যাবে।
তাহার উপরে স্ত্রীও চূড়ান্ত রাগিবে॥
তবে যে করেছি ইহা এত ফারফেরে।
সঙ্গেতে দিয়েছি ওর নিজে চুরি কোরে॥
তাহার কারণ নিজে সাফাই হইব।
সহজেতে ধরা-ছোঁয়া কারেও না দিব॥
কাছেই রাজার যদি রহি আমি দেখে।
কখন করিতে সন্দ না পারে আমাকে॥
নিশ্চয় ভাবিবে ইহা অপরের কাজ।
না হবে পাইতে মোরে একটুও লাজ॥
তার পর গোলমাল চুকিয়া যাইলে।
মনসুখে তার সাথে যাব পুন মিলে॥”
ভাবিয়ে এমন সুখে রওনা ত হয়।
একটি দিনেই তথা গিয়ে পঁহুছয়॥
পঁহুছিয়া মাত্র তথা না পাঠায়ে চর।
একেবারে উপনীত বেল্লিক-গোচর॥
কহিল বেল্লিকে গিয়ে, “শুনহ ব্যাপার।
সন্দেহ তোমার ’পরে হয়েছে রাজার॥
শুনিয়াছে কার মুখে আনিয়াছ তুমি।
পাঠায়েছে চর হেথা সেই কথা শুনি॥
বোধ হয় এতক্ষণে তারাও পৌঁছিল।
বিলম্ব নাহিক বড় এখনি ধরিল॥
কি করিবে কর তাহা আত্মরক্ষা তরে।
আসিনু ইহার তরে জানাতে তোমারে॥
অগাধ পয়সা তার রাজা সেই হয়।
কি জানি অনর্থ কিবা সংঘটি পড়য়॥
করিবারে সাবধান আসিলাম তাই।
এখন সুযুক্তি যাহা কর তুমি ভাই॥”
শুনিয়া বেল্লিক এই বাণী তার মুখে।
মুহূর্ত্তে ভয়েতে যেন উঠিল চমকে॥
বলিল, “তাই ত দাদা, কি হয় উপায়।
তুমি বই এ বিপদে কে আর তরায়॥
তোমারি ভরসা আমি সর্ব্বদা হে করি।
কেমনে বল না ভাই এ বিপদে তরি॥”
দর্প কয় “শীঘ্র এরে সঙ্গে মোর দাও।
একাকীই দিনকত থেকে হেথা যাও॥
আসিবে যখন তারা বাসাতে তোমার।
মোহিনীর দেখা তারা পাবে না ত আর॥
কাজে কাজে অবিশ্বাস না করিবে তারা।
তোমারেও ভেবে নাহি হতে হবে সারা॥
কলিকাতা সহরেই লইয়া ইহায়।
এই দণ্ডে চলে আমি যাব পুনরায়॥
কোন এক পাড়াগ্রামে নিকটে উহারি।
থাকিব একটি কোন বাসা স্থির করি॥
তার পর পত্র লিখে নে যাবো তোমায়।
সুখেতে মিলিব তিনজনে পুনরায়॥
আপাতত দিন কত একা রই হেথা।
অচিরে ঘুচিয়ে যাবে যত মনোব্যথা॥”
বেল্লিক বলেন, “ভাল তাই নয় কর।
তুমি এরে দিনকত কর স্থানান্তর॥
তুমি মোর চিরদিন আছ উপকারী।
যা হোক কিনারা কিছু কর দয়া করি॥”
এত বলি মোহিনীর নিকটেতে গিয়ে।
বেল্লিক সকল কথা বলে বুঝাইয়ে॥
বলে, “দর্প বলে, রাজা পাইয়াছে টের।
প্রেরণ করেছে চর সন্ধানে মোদের॥
নিয়ে যেতে চায় দর্প তোমা হেথা হতে।
দিন কতকের মত অপর স্থানেতে॥
দিন কত আমি হেথা রহিব একাকী।
পুনশ্চ মিলিব গিয়া দিন কত থাকি॥
শীঘ্রই আসিবে তারা খুঁজিতে এখানে।
দেখিবে অথচ তুমি নাহি কোনখানে॥
কোন সন্দ নাহি রবে ঘুচিবেক গোল।
ফিরে যাবে চর যত হইয়ে চঞ্চল॥
তোমারে না পেলে পরে কি কার্য্যে আমায়।
অচিরে দেশেতে চ’লে যাবে পুনরায়॥
অতএব কহি তোমা শুন দিয়া মন।
যাও তুমি শীঘ্র ওর সঙ্গেতে এখন॥
দিন কত ওর বশে থাকহ সুন্দরি।
আবার মিলিব তব সঙ্গে ত্বরা করি॥
দর্পবাবু সম আর নাহি বুদ্ধিমান্।
হিতৈষীও নাহি মম উঁহার সমান॥
উঁহারি বুদ্ধির বলে পেয়েছি তোমারে।
উঁহারি কৃপায় পুন পাব সুখে তােরে॥
এই যে বিপদ্বারি নাহি পারাপার।
বদন ব্যাদানি ভীম সম্মুখে আমার॥
তরিব তা অনায়াসে ওঁরি বুদ্ধিবলে।
ওঁর সম বন্ধু মম নাহিক ভূতলে॥”
সুন্দরী কহেন, “তবে করহ শ্রবণ।
হে বেল্লিক বন্ধু মম হৃদয়-রতন॥
সরল অন্তর না কি এদিকে তােমার।
তেঁই না বুঝিছ এর মধ্যে ফেরকার॥
সহজ যতটা ওঁরে কর বিবেচনা।
ততটা নিশ্চয় উনি কভু না কভু না॥
বড় গােলযোেগ রহে ওর অন্তরেতে।
অমন কুচক্রী আর নাহিক ভারতে॥
যদি বল সে কেমন শুন দিয়া মন।
আশ্চর্য্য কাহিনী যাহা করিব কীর্ত্তন॥”
বেল্লিকের রামায়ণে সকলি বেল্লিক।
যে না পাঠ করে তার জীবনেই ধিক॥