বেল্লিক রামায়ণ/ধড়পাকড়, কিষ্কিন্ধ্যা গমন
পঞ্চম কাণ্ড।
ধরপাকড়্—কিষ্কিন্ধ্যাগমন।
দরােয়ান যারা যারা দ্বারদেশে ছিল।
সকলেই সেই দিন মাতাল আছিল॥
কেহ না রুকিল গতি,—দেখিল না চেয়ে।
সটান দুজনে দ্বার গেল পার হয়ে॥
টাকা-কড়ি গহনাদি যাহা যাহা ছিল।
সমস্তই গাঁট বাঁধি সঙ্গেতে লইল॥
কেবল বাড়ীটী মাত্র রহিল সেথায়।
আর সে পালকমাতা একাকিনী, হায়॥
“যা করে করুক সেই, মাের কিবা ডর।
আমি ত পলায়ে বাঁচি, মােতে কি নির্ভর॥”
এইরূপ চিন্তি মনে পলায় বালিকা।
পালক-মাতাটী মাত্র রহে সেথা একা॥
কিছু দূর গিয়ে দর্প বেল্লিকের সনে।
তাহার বাড়ীতে দেখা করিল গােপনে॥
বেল্লিক অমনি সেজে গুজে বাহিরিল।
সেই দণ্ডেতেই কিষ্কিন্ধ্যাতে পলাইল॥
যাবার কালেতে মোহিনীর কাণে কাণে।
গুটীকত কথা কি কহিয়ে সঙ্গোপনে॥
বিদায় মাগিল রূপসীর স্থানে সেই।
কিছুদিন যাবৎ দেখাটি আর নেই॥
ট্রেণে চড়ি বেল্লিক কিষ্কিন্ধ্যা চলি যায়।
কত মজা কিছুদিন লুটিল সেথায়॥
এদিকেতে অভাগিনী একাকিনী সেথা।
নাহি জানে এদিকের কিছুই বারতা॥
যাবার কালেতে শুধু এই বোলে যায়।
বিশেষ কার্য্যেতে কোন চলি কিষ্কিন্ধ্যায়॥
জিজ্ঞাসা যদ্যপি কেহ করয় তোমারে।
স্বরূপ কাহিনী কিছু না বলিও তারে॥
বলিও, “সঠিক আমি কিছু নাহি জানি।
মুখেতে তাহার কোন কথা ত শুনিনি॥
তবে শীঘ্র আসিবেন আছে ইহা জানা।
পত্র আদি এ অবধি কিছু লিখেন না॥”
পত্নী অভাগিনী তাই মাত্র শুনিয়াছে।
অন্য কথা কিছু নাহি জানা তার আছে॥
ভাবে শুধু, “এ কি হলো, গেল চলে কোথা।
ভাঙ্গিয়ে কি হেতু নাহি কহে কোন কথা॥
গোপন করার কিবা আছয়ে কারণ।
আমি পত্নী আমারে বা কিসের গোপন॥
হেন কথা কিবা তার জগতে বা আছে।
ভেঙ্গে যা বলিতে নাহি পারে মাের কাছে॥
আমা হতে প্রিয়বস্তু কিবা আছে তার।
হেন দ্রুত পলায় সে নিমিত্তে যাহার॥
ধিক্ ধিক্ শত ধিক্ আমার কপালে।
আমারে আমার স্বামী সত্য নাহি বলে॥
টাকা দিয়ে পিতা মাের পালিল তাহায়।
তাের কি না অবিশ্বাস এতটা আমায়॥”
অতঃপর পিতারে সে পত্র এক লিখে।
যাহা যাহা স্বামী তার বলেছে তাহাকে॥
পত্র পেয়ে পিতা মহা চিন্তিত হইল।
“কি করিলে ভাল হয়,” ভাবিতে লাগিল॥
ভাবিতে ভাবিতে এই সিদ্ধান্ত সে করে।
“দেখিতে অবশ্য হবে মাসেকের তরে॥
তার পর যাহা করিবার করা যাবে।
আগে থেকে বৃথা কেন মরি আমি ভেবে॥”
পরে সেইমত পত্র লিখেন কন্যারে।
“চুপ কোরে, দিন কত থাক ধৈর্য্য ধোরে॥
লেখা-পড়া শিখিয়াছে মূর্খ সেই নয়।
প্রয়োজন কিছু তার পড়েছে নিশ্চয়॥
নতুবা এমন ভাবে কেন সেই যাবে।
লেখা-পড়া-ফল তার কি ধরিল তবে॥
চুপ কোরে কিছুদিন থাক তুমি সেথা।
করিব ব্যবস্থা সব থাকি আমি হেথা॥
ধন যার বল তার আছয় নিশ্চিত।
কেন মাতঃ চিন্তা তুমি কর বিপরীত॥
যত শীঘ্র পার তার ঠিকানা জানিবে।
দিন কত দেখে এক পত্র লেখা যাবে॥
সেই পত্র পেলে সে করিবে বিবেচনা।
মন তার তখন যাইবে ভাল জানা॥
একমাত্র কন্যা তুমি হও তো আমার।
কিসের ভাবনা বল, আছয় তােমার॥”
পত্র পেয়ে অভাগিনী—রহে ধৈর্য্য ধােরে।
এ দিকেতে শুন যাহা ঘটে অতঃপরে॥
বেল্লিকের রামায়ণ অতীব রসাল।
পাঠ মাত্রে রস মুখে হয় এক গাল॥