বেল্লিক রামায়ণ/মনোমোহিনী হরণ
মনােমােহিনী হরণ।
দ্বিতীয় বৎসর ক্রমে পড়িল যখন।
ঘটিল যে আর এক অপূর্ব্ব ঘটন॥
নামটী মােহিনী এক দ্বাদশ-বর্ষীয়া।
বেশ্যা-কন্যা ছিল রূপে পৃথ্বী উজলিয়া॥
দৈবাৎ পড়িল সেই বেল্লিক-নয়নে।
মােহিত বেল্লিক হয় দেখি সেইক্ষণে॥
সেই সে বালিকা এক রাজার রক্ষিত।
মাস গেলে মাসােহরা দেয় একশত॥
তাহা ছাড়া একখানি বাড়ী দেছে করি।
সােণার গহনা গায়ে দেড়শত ভরি॥
দুশুট্ গহনা চুড়্-বাউটি সে আর।
হীরকের আংটী শত উপরে তাহার॥
কিছুর অভাব কোন দিকে নাহি আছে।
দোরে দরােয়ান এক খাড়া রহিয়াছে॥
এ হেন রমণী প্রতি বেল্লিকের মন।
নাহি জানে কেমনেতে ঘটিবে মিলন॥
উপলক্ষ্য মাত্র দর্প বাবু মধ্যস্থলে।
তাঁহার কৃপায় যদি এই ধন মিলে॥
যে রাজা রেখেছে এই বেশ্যা-দুহিতায়।
দর্পের জনেক বন্ধু সেই জন হায়॥
বুদ্ধিতে দর্পের তুল্য অল্প লােক আছে।
পরামর্শ মাগিলেন দর্পেরি সে কাছে॥
দর্প বলে, “কুচ্ পরােয়াটী নাই ভাই।
আমি তব কার্য্যে রত আছি ত সদাই॥
তবে এক কার্য্য কিন্তু হবে হে করিতে।
লুকাইয়ে নিয়ে এরে পার কি পলাতে?
যদি পার সংযােগ সে দিব কোরে আমি।
কেবল লইয়ে সঙ্গে করি যাবে তুমি।”
বেল্লিক বলিল, “আমি পারিব তা খুব।
এককালে নিয়ে এরে মারিব যে ডুব॥
ত্রিভুবনে কেহ আর নাহি পাবে খুঁজে।
পলাইব একেবারে কিষ্কিন্ধ্যার মাঝে॥
বড় ভজকট সেই কিষ্কিন্ধ্যা সহর।
সহজে না পারে তথা যেতে কোন নর॥
তথা গিয়ে লুকাইয়ে রহিব হে আমি।
কেবল মিলায়ে যদি দিতে পার তুমি॥”
শ্রীদর্প বলিল, “তার ভাবনা কি আছে।
নিশ্চয় জুটায়ে তারে দিব তব কাছে॥
তার পর যাহা পার কর গিয়া তুমি।
সে বিষয়ে নহি দায়ী কিছুতেই আমি॥
তবে এক কথা আছে ইহার ভিতরে।
অর্থ যাহা পাবে তাহা দিবে অর্দ্ধ মোরে॥”
কহিল বেল্লিক, “তার কি ভাবনা আর।
অর্থ যাহা সকলি সে জানিও তোমার॥
নহিক এমন আমি নেমকহারাম।
নাহি দিব পুরস্কার, পূর্লে মনস্কাম॥”
দর্পের খুসীর আর নাহি রয় সীমা।
দেখাইল বুদ্ধি যার নাহিক উপমা॥
মাসেকের মধ্যে এক দিন স্থির হ’ল।
সেই দিন পলাবার পক্ষে খুব ভাল॥
আশ্বিনের সেই দিন পূজার সময়।
রাজার বাড়ীতে মহাধূমে পূজা হয়॥
নিজ বাড়ী নয়, এই বেশ্যার বাড়ীতে।
হয় পূজা, সুধীজন, জানিও গো চিতে॥
কত লােক আসে যায় এই পূজাকালে।
অবারিত দ্বার এবে কি সন্ধ্যা সকালে॥
কত নাচ-গান হয় পূজার সময়।
আমাদের স্রোত যেন চারিধারে বয়॥
এই সে সময়ে মহা অষ্টমীর দিনে।
মাতাল সকলে অতি মদ্য আদি পানে॥
নিমন্ত্রণে কত লােক আসিল নিশায়।
তার মধ্যে দর্পবাবুটীও স্থান পায়॥
মােহিনীর সঙ্গে তার আছিল সম্প্রীত।
দুঁহু প্রাণে ভালবাসা ছিল যথােচিত॥
রাজার ভয়েতে কিন্তু না করে প্রকাশ।
ভবিষ্যে নির্ভর মাত্র করি রাখে আশ॥
যদি ভবিষ্যতে ঘটে কোন সদুপায়।
দোঁহে দুঁহু প্রাপ্তে সুখ দিবে দুজনায়॥
বিবাহিত রাজার সে নাহি ছিল বটে।
তথাপিও রােকশােধ সহজে না ঘটে॥
দশ বৎসরের ‘বন্দোবস্ত’ করা ছিল।
কড়ারে করিয়ে বদ্ধ রাজা রেখেছিল॥
এই দশ বর্ষমধ্যে কেহ কারু সনে।
পারিবে না মিলিবারে প্রণয় কারণে॥
যদ্যপি তা মিলে দিতে হবে গুণাগার।
বুঝিয়ে বেবাক টাকা ফিরে পুনর্ব্বার॥
সুতরাং লুকায়ে পলায়ন ছাড়া অন্য।
ছিল উপায় তাহাদের আর কোন॥
আজি সে পালান তারা সাব্যস্ত করিল।
আরতির পরেতেই দোঁহে বাহিরিল॥
বেল্লিকের রামায়ণ শুনিতে অদ্ভুত।
একদণ্ডে নরদেহ পায় যত ভূত॥