বেল্লিক রামায়ণ/সৌভাগ্য
সৌভাগ্য।
দিন কত খুব মজা পুন অভারামে।
আবার কাটায় দিন মহা খোশ্ নামে॥
সবে বলে ভাগ্যবান্ অভারাম অতি।
কেমন গুছায়ে পুন নিল সে ঝটিতি॥
ভিতরের কথা কিছু নাহি যারা জানে।
তারা ভাবে এত টাকা, কত মজা প্রাণে॥
কিন্তু ঋণদায়ে তার যায় যে সকল।
কেহ নাহি জানে, জানে সেই সে কেবল॥
পেয়েছিল চারিটি হাজার টাকা বটে।
মগদে অর্দ্ধেক কিন্তু পেয়েছিল মােটে॥
অবশিষ্ট অর্দ্ধেকের অলঙ্কার পায়।
দুহাজার টাকা কিন্তু ঋণদায়ে যায়॥
সুদ তবু না মিটিল এক কড়াকড়ি।
সুদের বদলে দাস আজো বেশ্যাবাড়ী॥
অন্য অন্য খরচ যা হয়েছে বিবাহে।
তাতেও দু তিন শত টাকা ঋণ রহে॥
এ সব টাকাও সে আতরমণি দিল।
তাতেও অভার ভাগ্যে গােল না মিটিল॥
সুদের টাকাতে যোগ এই টাকা করি।
বেবাকে পাঁচটি শত রহে ঋণ ফিরি॥
কহিল আতর, “থাক্ এইগুলি বাকী।
এ কারণ নাহি আর হবে বকাবকি॥
অপিচ দশটি করি টাকা মাসে পাবে।
এই সে গােলামী হেতু মাহিনা হিসাবে॥
এমন গােলাম আর কোথা আমি পাব।
কিছুতে তােমারে আমি নাহি ত ছাড়িব॥
করিবেক কাজ যদি যােগাইয়ে মন।
অবশ্য শেষেতে কিছু হবে বিবেচন॥
বলেছি উইল আমি করিব বিষয়।
তােমার নামেতে শেষে জানিহ নিশ্চয়॥
তবে যদি বল কেন লই ঋণ শােধ।
সে কেবল আপেক্ষিক মনের প্রবােধ॥
তাহা ছাড়া এই জ্ঞান দানিতে তােমায়।
কখন মমতাশূন্য না হবে টাকায়॥
যতক্ষণ রবে প্রাণ ততক্ষণ টান।
কিছুতেই নাহি যেন হয় সমাধান॥
যখন জানিবে আর নিশ্চয় বাঁচি না।
তখন করিবে যাহা হয় বিবেচনা॥
জানি বটে তােমারেই দিয়ে ইহা যাব।
তবু হাতছাড়া কেন আগে হতে করিব॥
যতক্ষণ কাছে থাকে ততক্ষণ আশ।
হাত ছাড়ালেই তাহে করে ত নিরাশ॥”
এইরূপ বুঝাইয়ে রাখে অভারামে।
অভারাম(ও) দাঁও নাহি ছাড়ে কোনক্রমে॥
‘যা হবার হইয়াছে রটেছে ত নাম।
তবে আর লক্ষ্মী কেন ছাড়ে অভারাম॥
হেলায় হাতের লক্ষ্মী খােয়ায় যে জন।
নিশ্চয় বিপদাপন্ন হয় সেই জন॥
বার বার কত বার গিয়াছি ঠকিয়ে।
আর কেন ঠকি ছেড়ে দিয়ে হাতে পেয়ে॥
এবে দশ দশ টাকা প্রতি মাসে মাস।
অর্শিলে উইল সে ত আছে বারমাস॥
এইরূপ চিন্তা অভা করি মনে মনে।
বাহাল রহিল সেই কাজে সেইখানে॥
কিন্তু খেতে পাঁচ সাতজন সে সংসারে।
কেমনে সংসার সেই চলে সুশৃঙ্খলে॥
এক একখান করি যত অলঙ্কার।
তাহাও পড়িল বাঁধা সে বধূমাতার॥
লােকমুখে শুনে বার্ত্তা বধূর সে পিতা॥
লইয়ে গেলেন কন্যা নিজালয়ে সেথা॥
সকল গহনা গেছে সকল বসন।
গেল কন্যা কাছে তার প্রায় বিবসন॥
নাহি পেয়ে যথারীতি করিতে আহার।
শরীরে হয়েছে শীর্ণ অতি কদাকার॥
দেখিয়ে সে বৃহচ্চক্ষু কন্যার দুর্গতি।
ভাবে মনে অতঃপর হয় কি যুকতি॥
যা হবার হইয়াছে, তার জন্যে কিবা।
এখন জামাই কিসে বাঁচে চাহি ভাবা॥
চতুর্থ ক্লাসেতে মােটে পড়ে ত বালক।
কেমনে উন্নতি তার হয়,—কে চালক॥
অবস্থা পিতার তার এরূপ যখন।
নিশ্চয় সাহায্য কিছু হয় প্রয়ােজন॥
ভাবি এইরূপ ক্রমে পিতায় তাহার।
লিখিলেন পত্র এক করিয়ে বিস্তার॥
প্রতিমাসে পনেরাে কি কুড়ি টাকা করি।
দিবেন জামাই তরে অঙ্গীকার করি॥
বলিয়া পাঠান এক রাখিতে শিক্ষক।
যাহাতে অচিরে কিছূ শিখে সে বালক॥
পেয়ে সেই পত্র অভা অতি হৃষ্টমন।
ভাবে সেই টাকা হেথা আসে কতক্ষণ॥
বলা সে বাহুল্য টাকা আসিলও ক্রমে।
অতুল আনন্দ প্রাণে হয় অভারামে॥
সৌভাগ্য-সঞ্চার হেন হয় সে অভার।
ধরায় পড়ে না আর পদ ত তাহার॥
শিক্ষক রাখিল নাম মাত্র একজন।
তিনটি করিয়ে টাকা দানিয়ে বেতন॥
অবশিষ্ট যাহা, যায় পেটের গর্ত্তেতে।
সঙ্কুলান তবু কিন্তু নাহি কোন মতে॥
নিত্য নাই নাই রব, নিত্য পুন ঋণ।
কিছুতে আবার তার নাহি চলে দিন॥
এদিকে ওদিকে ঋণ হয় পুনর্ব্বার।
আতর আর ত টাকা নাহি দেয় ধার॥
কে জানে কি মনোভাব আতরের এবে।
আজকাল অভারে সে শত্রু যেন ভাবে॥
বলে “যাহা পাই আমি কাছেতে তোমার।
না দাও না দিবে তুমি, চাই না আবার॥
কিন্তু না রাখিব আর তোমারে ত বাড়ী।
আজি হতে খসাইয়ে নিলাম চাকরী॥
চাকরের প্রয়োজন না আছে আমার।
নাহিক এ বাড়ী তুমি মাড়াইবে আর॥
যদি ভুলিয়েও আর প্রবেশ হেথায়।
নিশ্চয় পুলিসে আমি দিব ত তোমায়॥”
শুনি বাণী বজ্রাঘাত সম অকস্মাৎ।
ঘরে গিয়ে অভারাম হয় চিৎপাত॥
বলে, “হায় হায় মোর এ কি সর্ব্বনাশ।
তাড়ায় আতরমণি করিয়ে নিরাশ॥”
কত আশা আগেতে সে দিল যে আমারে।
এই কি সে পরিণাম, ফেলে দুঃখনীরে॥
কায়স্থ-সন্তান হয়ে বেশ্যার গােলাম।
ভাল নাম রাখিলাম, ভাল করিলাম॥
তাহাও আবার গেল—কাজ সে গােলামী
দিল তাড়াইয়ে দিয়ে আক্কেল-সেলামী॥
ধিক্ ধিক্ শতধিক্ জীবনে আমার।
বাঁচিয়ে কি সুখ মাের আছে বল আর॥
এমন বাঁচার চেয়ে মঙ্গল মরণে।
রাখিব এ প্রাণ আর কোন্ প্রয়ােজনে॥”
এরূপে বিলাপ দুঃখ করি বহুতর।
অভারাম হইল যে অতীব কাতর॥
বেল্লিকের রামায়ণ মিষ্টরসে গােলা॥
যে শুনে কর্ণেতে তার মধু যেন ঢালা॥
শতবার বিলাত-গমন ফল পাঠে।
বিলাতী আনন্দ তার হয় একচেটে॥
রহস্য-পূরিত প্রাণ আরো সে রহস্যে।
হইবে পূরিত, দিন যাবে মহা হাস্যে॥
এই বেলা মন স্থির করি কর পাঠ
বেল্লিকগিরীর জ্ঞাত হবে আট-ঘাট॥
পারিবে বনিতে এক চূড়ান্ত বেল্লিক।
এমন সুযােগ যেই ছাড়ে তারে ধিক্॥