বেল্লিক রামায়ণ/পাত্রান্বেষণ
কন্যার নিমিত্ত বৃহচ্চক্ষু রুদ্রের
পাত্র অন্বেষণ।
বৃহচ্চক্ষু রুদ্র নাম, উলো গ্রামে হয় ধাম,
আছয়ে কিঞ্চিৎ জমিদারী।
না হলেও প্রকাণ্ড সে, গণে বটে তবু দশে
দেশে খ্যাতি বিস্তর তাঁহারি॥
মহাশয় বলি তাঁরে, সবে সমাদর করে,
লেখা-পড়া-জানা বিচক্ষণ।
নাহি স্বভাবের দোষ, নাহি রিপু হিংসা রােষ,
ধন্য ধন্য করে সর্ব্বজন॥
একমাত্র কন্যা তাঁর, নাহি অন্য পুত্র আর,
সেই কন্যা পাত্রস্থ হইবে।
সুতরাং দেখে শুনে, বহুতর অন্বেষণে,
সেই পাত্র আনিতে ত হবে॥
এ গ্রাম সে গ্রাম করি, কত পাত্র চক্ষে হেরি,
পছন্দ কোনটি কিন্তু নয়।
অবশেষে অন্বেষিতে, আসেন এ সহরেতে,
ফিরিলেন কলিকাতাময়॥
ঘটক ঘটকী যত, দেখাইল পাত্র কত,
বড় বড় ঘরােয়ানা ঘরে।
হলো না কারেও মন, অবশেষে যা লিখন—
পছন্দ করেন বেল্লিকেরে॥
সকলে বারণ তাঁরে, করিল দিতে এ ঘরে,
বলিল, “হাবাতে এরা অতি।
দিও না এ ঘরে মেয়ে, মরিবে না খেতে পেয়ে,
বাপ হয়ে করো না এ মতি॥
বাড়ী ঘর সব গেছে, গাছতলাতে যে আছে,
ভাড়াবাড়ী গাছতলা সে ত।
এমন স্থানেতে মেয়ে, দিতে চাও কি বুঝিয়ে,
দেখে শুনে মােরা মর্ম্মাহত॥”
বৃহচ্চক্ষু মহাশয়, তদুত্তরে এই কয়,
“বটে গাছতলে বাস করে।
কিন্তু কালে এই ছেলে, এই সে গাছেরি তলে,
বানাইবে অট্টালিকা পরে॥
দেখিতেছ আর যত, অট্টালিকা-অবস্থিত,
ভাঙ্গি অট্টালিকা বুদ্ধিদোষে।
গাছের তলেতে বাস, করিবেক বার মাস,
বড় ঘরে ছেলে সর্ব্বনেশে॥
অতএব মিছে কহে, না জ্বালাও তােমরা হে,
যা বুঝেছি কোরেছি তা আমি।”
সুতরাং তারাও সে, কোন কথা নাহি ভাষে,
যা করে করুক অন্তর্যামী॥
“কপালে লিখন যাহা, কে করে খণ্ডন তাহা,”
এই হেতু কহে তা সবাই।
বেল্লিকের বিয়ে হল, বল ভাই হরি বল,
এমন কাহিনী আর নাই॥
চারিটি হাজার টাকা, গহনা ও রােক টাকা,
পায় অভারাম এ বিবাহে।
অব্যাহতি ঋণদায়, কিছু কাল সুখে যায়,
তার না আপদ কিছু রহে॥