বৈকুণ্ঠের খাতা/প্রথম দৃশ্য



বৈকুণ্ঠের খাতা।

প্রথম দৃশ্য।

কেদার ও তিনকড়ি।

 কেদার। দেখ্ তিনকড়ে-অবিনাশ ত আমার গন্ধ পেলেই তেড়ে আসে —

 তিন। মানুষ চেনে দেখ্চি, আমার মত অবোধ নয়!

 কেদার। কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, আমার শ্যলীর সঙ্গে তার বিবাহ দিয়ে এই জায়গাটাতেই বসবাস করব, মার ঘুরে বেড়াতে পারিনে

 তিন। টিঁক্তে পারবে না দাদা। তোমার মধ্যে একটা ঘুর্ণি আছেন, তিনিই বরাবর ঘুরিয়েছেন এবং শেষ পর্য্যন্ত ঘোরাবেন।

 কেদার। এখন অবিনাশের দাদা বৈকুণ্ঠকে বশ কবতে এসে আমার কি দুর্গতি হয়েছে দেখ্। কে জানত বুড়ো বই লেখে! এত বড় একখানা খাতা আমাকে পড়তে দিয়ে লে গেছে—

 তিন। ওরে বাবা! ইঁদুরের মত চুরি করে খেতে এসে খাতার জাঁতাকলের মধ্যে পড়ে গেছ দেখ্‌চি!

 কেদার। কিন্তু তিনকড়ে, তুইই আমার সব প্ল্যান্ মাটি করবি।

 তিন। কিছু দরকার হবে না দাদা, তুমি একলাই মাটি করতে পারবে!

 কেদার। দেখ্ তিনু, এসব ব্যস্ত হবার কাজ নয়। গণেশকে সিদ্ধিদাতা বলে কেন—তিনি মোট লোকটি, খুব চেপে বসে থাকতে জানেন, দেখে মনে হয় না ষে তাঁর কিছুতে কোনো গরজ আছে —

 তিনকড়ি। কিন্তু তাঁর ইঁদুরটি—

 কেদার। ফের বক্‌চিস? লক্ষ্মীছাড়া, তুই একটু আড়ালে যা!

 তিন। চল্লুম দাদা। কিন্তু ফাঁকি দিয়ো না। সমস্ত্র কালে অভাগা তিনকড়েকে মনে রেখো!

(তিনকড়ির প্রস্থান)

বৈকুণ্ঠের প্রবেশ।

 বৈকুণ্ঠ। দেখ‍্চেন কেদার বাবু?

 কেদার। আজ্ঞে হাঁ, দেখ্চি বই কি! কিন্তু আমার মতে— ওর নাম কি—বইয়ের নামটা যেন কিছু বড় হয়ে পড়েচে।

 বৈকুণ্ঠ। বড় হোক্, কিন্তু বিষয়টা বেশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। “প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য প্রাচীন ও প্রচলিত সঙ্গীত শাস্ত্রের আদিম উৎপত্তি ও ইতিহাস এবং নুতন সার্ব্বভৌমিক স্বরলিপির সংক্ষিপ্ত ও সরল আদর্শ প্রকরণ।” এতে আর কোন কথাটি বাদ গেল না।

 কেদার। তা বাদ যায় নি। কিন্তু, ওর নাম কি, মাপ করবেন বৈকুণ্ঠ বাবু—কিছু বাদসাদ্ দিয়েই নাম রাথ তে হয়। কিন্তু লেখা যা হয়েছে সে পড়তে পড়তে, ও র নাম কি —শরীর রোমাঞ্চ হয়ে ওঠে!

 বৈকুণ্ঠ। হা হা হাহা! রোমাঞ্চ! আপনি ঠাট্টা করচেন!

 কেদার। সে কি কথা!

 বৈকুণ্ঠ। ঠাট্টার বিষয় বটে! ও আমার একটা পাগলামী! হাহাহাহা! সঙ্গীতের উৎপত্তি ও ইতিহাস—মাথা তার মুণ্ড! দিন খাতাটা! বুড়ো মানুষকে পরিহাস করবেন না কেদার বাবু!

 কেদার। পরিহাস! ওর নাম কি, পরিহাস কি মশায় ছ ঘণ্ট ধরে কেউ করে! ভেবে দেখুন দেখি, কখন থেকে আপনার খাতা নিয়ে পড়েছি! তা হলে ত রামের বনবাসকেও —ওর নাম কি—কৈকেয়ীর পরিহাস বল্তে পারেন!

 বৈকুণ্ঠ। হাহাহাহা! আপনি বেশ কথাগুলি বলেন!

 কেদার। কিন্তু হাসির কথা নয় বৈকুণ্ঠ বাবু, ওর নাম কি—অণপনার লেখার স্থানে স্থানে যথার্থই রোমাঞ্চ হয়— তা, কি বলে, আপনার মুখের সামনেই বল্লুম।

 বৈকুণ্ঠ। বুঝেছি আপনি কোন্ জায়গার কথা বল্চেন, সেখানটা লেখবার সময় আমারই চোখে জল এসেছিল যদি আপনার বিরক্তি বোধ না হয় ত সেই জায়গাটা এক বার পড়ে শোনাই।

 কেদার। বিরক্তি! বিলক্ষণ! ওর নাম কি, আমি আপনাকে ঐ জায়গাটা পড়বার জন্যে অনুরোধ করতে যাচ্ছিলুম। (স্বগত) শ্যালীটিকে পার করা পর্য্যন্ত, হে ভগবান্, আমাকে ধৈর্য্য দা ও—তার পরে আমার ও একদিন আসবে!

 বৈকুণ্ঠ। কি বল্চেন কেদার বাবু?

 কেদার। বলছিলুম যে,— ওর নাম কি—সাহিত্যের কামড় কচ্ছপের কামড়, যাকে এক বা র ধরে — ওর নাম কি —তাকে তার সহজে ছাড়তে চায় না। আহা, অমন জিনিষ কি আর আছে?

 বৈকুণ্ঠ। হাহাহাহা! কচ্ছপের কামড়! আপনার কথাগুলি বড় চমৎকার।—এই যে সেই জায়গাটা! তবে শুনুন্। — হে ভারতভূমি, এক সময়ে তুমি প্রবান বীর্য্যবান্ পুরুষদিগের তপোতুমি ছিলে; তখন রাজার রাজত্ব ও তপস্যা ছিল কবির কবিত্বও তপস্যারই নাম স্তর ছিল। তখন তাপস জনক রাজ্যশাসন করিতেন, তখন তাপস বাল্মীকি রামায়ণ গানে তপঃপ্রভাব উৎসারিত করিয়া দিতেন; তখন সকল জ্ঞান, সকল বিদ্যা, সংসারের সকল কর্ত্তব্য, জীবনের সকল আনন্দ সাধনার সামগ্রী ছিল। তখন গৃহাশ্রমও আশ্রম ছিল, অরণ্যাশ্রমও আশ্রম ছিল। আজ যে কুলত্যাগিনী সঙ্গীত বিদ্যা নাট্যশালায় বিদেশী বংশীর কাংস্যকণ্ঠে আর্ত্তনাদ করিতেছে, প্রমোদালধে সুরা সরোবরে স্খলিতচরণে আত্মহত্যা করিয়া মরিতেছে, সেই সঙ্গীত একদিন ভরতমুনির তপোবলে মুত্তিমান্ হইয়া স্বৰ্গকে স্বর্গীয় করিয়া তুলিয়াছিল, সেই সঙ্গীত সাধকশ্রেষ্ঠ নারদের ধীণাতন্ত্রী হইতে শুভ্ররশ্মিরাশির ন্যায় বিচ্ছুরিত হইয়া বৈকুণ্ঠাধিপতির বিগলিত পাদপদ্মনিসান্দিত পুণ্য নিঝরিণীকে ম্লান মর্ত্তালোকে প্রবাহিত করিয়াছিল। হে দুর্ভাগিণা ভারতভূমি, আজ তুমি কৃশকায় দীনপ্রাণ রোগজীর্ণ শিশুদিগের ক্রীড়াভূমি; আজ তোমার যজ্ঞবেদীর পুণ্য মৃক্তিকা লইয়া অবোধগণ পুণ্ডলিকা নির্ম্মাণ করিতেছে; আজ সাধনাও নাই সিদ্ধিও নাই; আজ বিদ্যার স্থলে বাচালতা; বীর্য্যের স্থলে অহঙ্কার, এবং তপস্যার স্থলে চাতুরী বিরাজ করিতেছে। যে বজ্রবক্ষ বিপুল তরণী একদিন উত্তাল তরঙ্গভেদ করিয়া মহাসমুদ্র পার হইত, আজ সে তরণীর কর্ণধার নাই; আমরা কয়েকজন বালকে তাহারই কয়েকধণ্ড জীর্ণ কাষ্ঠ লইয়া ভেলা বাঁধিয়া আমাদের পল্লিপ্রান্তেৱ পঙ্কপল্বলে ক্রীড়া করিতেছি এবং শিশুসুলভ মোহে অজ্ঞানসুলভ অহঙ্কারে কল্পনা করিতেছি এই ভগ্ন ভেলাই সেই অর্ণবতরী, আমরাই সেই আর্য্য, এবং আমাদের গ্রামের এই জীর্ণপত্রকলুষিত জলকুণ্ডই সেই অতলস্পশ সাধনসমুদ্র।

ঈশানের প্রবেশ।

 ঈশান। বাবু, খাবার এসেছে।

 বৈকুণ্ঠ। তাঁকে একটু বস‍্তে বল!

 ঈশান। বস‍্তে বল্‌ব কাকে? খাবার এসেছে।

 কেদার। তাহলে আমি উঠি। ওর নাম কি, স্বার্থপর হয়ে আপনাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি—

 বৈকুণ্ঠ। কেন, আপনি উঠ‍্চেন কেন?

 ঈশান। নাঃ, ওঁর আর উঠে কাজ নেই! তামাম রাত ধরে তোমার ঐ লেখা শুনুন! (কেদারের প্রতি) যাও বাবু, তুমি ঘরে যাও। আমাদের বাবুকে আর ক্ষেপিয়ে তুলোনা!

(প্রস্থান)

 কেদার। ইনি আপনার কে হন?

 বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, আমার চাকর।

 কেদার। ওঃ, ওর নাম কি, এ'র কথাগুলি বেশ পষ্ট পষ্ট।

 বৈকুণ্ঠ। হাহাহাহা! ঠিক বলেচেন। তা কিছু মনে করবেন না—অনেকদিন থেকে আছে—আমাকে মানে টানে না!

 কেদার। ওর নাম কি, অল্পক্ষণের আলাপ যদিচ তবু আমাকেও বড় মানে না দেখলুম। কিন্তু ওর কথাটা অপিনি কানে তোলেন নি। থাবার এসেছে!

 বৈকুণ্ঠ। তা হোক্‌, রাত হয় নি -এই অধ্যায়টা শেষ করে ফেলি।

 কেদার। বৈকুণ্ঠ বাবু, খাবার আপনার ঘরে আসে এবং সে বসেও থাকে - ওর নাম কি - আমাদের ঘরে তাঁর ব্যবহার অন্য রকমের। দেখুন যখন ছেলেবেলায় কালেজে পড়তুম তখন – ওর নাম কি - খুব উচ্চ মাচার উপরেই বিশালতা চড়িয়েছিলুম – তাতে বড় বড় লাউয়ের মত দেড় হাত দু হাত ফলও ঝুলে পড়ে ছিল — কিন্তু – কি বলে – গোড়ায় জল পেলে না - ভিতরে রস প্রবেশ করলে না - এর নাম কি - সব ফাঁপা হয়ে রইল। এখন্‌ কোথায় পয়সা কোথায় অন্ন, এই করেই মরচি! ভিতরে সার যা ছিল সব চুপ্‌সে — ওর নাম কি — শুকিয়ে গেল!

 বৈকুণ্ঠ। আহা হাহা! এত বড় দুঃখের বিষয় আর কিছু হতে পারে না! অথচ সর্ব্বদাই প্রফুল্ল আছেন – আপনি মহানুভব ব্যক্তি! (কেদারের হাত চাপিয়া ধরিয়া) দেখুন আমার ক্ষুদ্র শক্তিতে যদি আপনার কোন সাহায্য করতে পারি খুলে বলবেন – কিছুমাত্র সঙ্কোচ–  কেদার। মাপ করবেন বৈকুণ্ঠ বাবু - ওর নাম কি – আমাকে টাকার প্রত্যাশী মনে করবেন না — আজ যে আনন্দ দিয়েছেন এর তুলনায় - ওর নাম কি - টাকার তোড়া -

তিনকড়ির প্রবেশ।

 তিন। (জনান্তিকে) খুসি হয়ে দিতে চাচ্চে, নে না -

 কেদার। সব মাটি করলে লক্ষ্মীছাড়া বাঁদর কোথাকার -

 বৈকুণ্ঠ। এ ছেলেটি কে?

 কেদার। দেনার সঙ্গে যেমন সুদ - ওর নাম কি - উনি আমার তেমনি! নিজের দায়ই সামলাতে পারিনে - তার উপর আবার ভগবান - কি বলে - ঢাকের উপর ঢেঁকি চড়িয়েছেন।

 তিন। উনি যদি হণ গোরু আমি হই ওঁড় ল্যাজ। যখন চরে খান্‌ আমি পিঠের মাছি তাড়াই, আবার যখন চাষার হাতে লাঞ্ছনা খেতে হয় তখন মলাটা আমার উপর দিয়েই যায়।

 বৈকুণ্ঠ। হাহাহাহাঃ! এ ছোকরাটা বেড়ে পেয়েছেন! এর যে খুব চোখেমুখে কথা! — দেখুন বিলম্ব হয়ে গেছে, আজ আমার এখানেই আহারাদি হোক্‌ না!

 কেদার। না, না, সে আপনার অসুবিধা করে কাজ নেই!

 তিনকড়ি। বিলক্ষণ! শুভকার্য্যে বাধা দিতে নেই-! খাওয়াতে ওঁর সামান্য অসুবিধে, না খেতে পেলে আমাদের অসুবিধে ঢের বেশি! ক্ষিধে পেয়েছে মশায়!

 বৈকুণ্ঠ। বেশ বাবা, তুমি পেট ভরে খেয়ে যাও! তৃপ্তির সঙ্গে খেতে দেখ্‌লে আমার বড় আনন্দ হয়!

 কেদার। এই ছোঁড়াটাকে ভগবান্—ওর নাম কি— অন্তরিন্দ্রিয়ের মধ্যে কেবল একটি জঠর দিয়েছেন মাত্র! আপনার এই আশ্রমটিতে এলে পেট বলে যে একটা গভীর গহ্বর আছে—কি বলে—সে কথা একেবারে ভুলে যেতে হয়। মনে হয় যেন কেবল একযোড়া হৃৎপিণ্ডের উপরে, ওর নাম কি, একখানি মুণ্ডু নিয়ে বসে আছি!

 বৈকুণ্ঠ। হাহাহাহাঃ। আপনি বড় সুন্দর রস দিয়ে কথা বল্‌তে পারেন— বা, বা, আপনার চমৎকার ক্ষমতা!

 তিনকড়ি। কথায় মত্ত হয়ে প্রতিজ্ঞে ভুল্‌বেন না বৈকুণ্ঠবাবু! ক্ষিধে ক্রমেই বাড়চে!

 বৈকুণ্ঠ। বটে, বটে! ঈশেন, ঈশেন, একবার এই দিকে শুনে যাওত ঈশেন!

ঈশানের প্রবেশ।

 ঈশান। এক্‌টি ছিল, দুটি জুটেছে!

 তিনকড়ি। রেগো না দাদা, তোমাকেও ভাগ দেব!

 ঈশান। এখনো লেখা শোনানো চল্‌চে বুঝি!

 বৈকুণ্ঠ। (লজ্জিতভাবে খাতা আড়াল করিয়া) না, না, লেখা কোথায়! দেখ ঈশেন, ইয়ে হয়েছে— এই দুই বাবু— বুঝেছ, এঁদের জন্যে কিছু খাবার এনে দিতে হচ্চে!

 ঈশান। খাবার এখন কোথায় যোগাড় করব!

 তিন। ও বাবা!

 বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, বুঝেছ, তুমি একবার বাড়ির মধ্যে গিয়ে আমার মাকে বলে এস গে যে—

 ঈশান। সে হবে না বাবু, দিদি ঠাকরুণকে আমি আবার এই দিবসান্তে বেড়ি ধরাতে পারব না তিনি তোমার ভাত কোলে নিয়ে সেই অবধি বসে আছেন—

 বৈকুণ্ঠ। তা এঁদের না খাইয়েত আমি যেতে পারি না, তুমি একবার মাকে বল্লেই—

 ঈশান। তা জানি, তাঁকে বল্লেই তিনি ছুটে যাবেন কিন্তু আজ সমস্ত দিন একাদশী করে আছেন। বাবু আজকের মত তোমরা ঘরে গিয়ে খাওগে!

 তিনকড়ি। দাদা, পরামর্শ দেওয়া সহজ, কিন্তু খাবার না থাক লে কি করে খাওয়া যায় সে সমিস্যে ত কেউ মেটাতে পারলে না!

 কেদার। তিনকড়ে, থাম্! বৈকুণ্ঠ বাবু, ব্যস্ত হবেন না—ওর নাম কি —আজ থাক্ না—

 বৈকুণ্ঠ। দেখ্‌ ঈশেন, তোর জ্বালায় কি আমি বাড়ি ঘর দোর ছেড়ে বনে গিয়ে পালাব! বাড়িতে দুজন ভদ্রলোক এলে তাদের দুমুঠো খেতে দিবিনে! হারামজাদা লক্ষ্মীছাড়া বেটা! বেরো তুই আমার ঘর থেকে—

(ঈশানের প্রস্থান।) 

 তিনকড়ি। আহা রাগ করবেন না! আমি ঠাউরেছিলুম খাওয়াতে আপনার কোন অসুবিধে নেই— ঠিক বুঝ্‌তে পারিনি—একটু অসুবিধে আছে বৈ কি! এ লোকটিকে ইতিপূর্ব্বে দেখি নি—তা ছাড়া আপনার বুড়ো মা—

 বৈকুণ্ঠ। না না সেটি আমার একমাত্র বিধবা মেয়ে, আমার নীরু, আমার মা নেই।

 তিনকড়ি। মা নেই! ঠিক আমারি মত!

 কেদার। বৈকুণ্ঠ বাবু—ওর নাম কি—আজ তবে উঠি— ঈশান-কোণে ঝড়ের লক্ষণ দেখা যাচ্চে!

 তিনকড়ি। দাঁড়াও না যাবে কোথায়?— দেখুন বৈকুণ্ঠ বাবু লজ্জা পাবেন না—এই তিনকড়ের পোড়াকপালের আঁচ পেলে অন্নপূর্ণার হাঁড়ির তলা দুফাঁক হয়ে যায়। যা হোক্ আমার উপর সম্পূর্ণ ভার দিন্ আমি বড়বাজার থেকে আহারের যোগাড় করে আন্‌চি! আপনাকে আর কিছু দেখ্‌তে হবে না।

 কেদার। (কৃত্রিম রোষে) দেখ্‌ তিনকড়ি! এত দিন—ওর নাম কি—আমার সহবাসে এবং দৃষ্টান্তে তোর এই—কী বলে—হেয় জঘন্য লুব্ধ প্রবৃত্তি ঘুচ্‌ল না! আজ থেকে—ওর নাম কি—তোর মুখ দর্শন করব না!  (প্রস্থান।)

 বৈকুণ্ঠ। আহা, আহা, রাগ করে যাবেন না কেদার বাবু—কেদার বাবু শুনে যান্—

 তিনকড়ি। কিছু ভাবেন না! কেদারদাকে আমি বেশ জানি। ওকে আমি আধ ঘণ্টার মধ্যে জুড়িয়ে ঠাণ্ডা করে আপনার এখানে হাজির করে দেব। বুঝচেন না পেটে আগুন জললেই বাক্যিগুলো কিছু গরম গরম আকারে মুখ থেকে বেরতে থাকে।

 বৈকুণ্ঠ। হাহাহাহাঃ! বাবা, তোমার কথা গুলি বেশ তা দেখ, এই তোমাকে কিঞ্চিৎ জলপানি দিচ্চি (নো দিয়া) কিছু মনে কোরো না!

 তিনকড়ি। কিচ্ছু না কিচ্ছু না! এর চেয়ে বেশি দিলেও কিছু মনে করতুম না— আমার সে রকম স্বভাব, নয়!

(প্রস্থান।)

ঈশানের প্রবেশ।

 ঈশান। বাবু! (বৈকুণ্ঠ নিরুত্তর) বাবু! (নিরুত্তর) বাবু থাবার এসেছে! (নিরুত্তর) খাবার ঠাণ্ডা হয়ে গেল যে!

 বৈকুণ্ঠ। (রাগিয়া) যা—আমি খাব না!

 ঈশান। আমায় মাপ কর— থাবার জুড়িয়ে গেল।

 বৈকুণ্ঠ। না আমি খাব না।

 ঈশান। পায়ে ধরি বাবু—থেতে চল -রা। কোরো

 বৈকুণ্ঠ। যাঃ বেরো তুই —বিরক্ত করিস্ নে!

 ঈশান। দাও আমার কান মলে দাও—বাবু—

অবিনাশের প্রবেশ।

 অবিনাশ। কি দাদা! এখনে বসে বসে লিখচ বুঝি?

 বৈকুণ্ঠ। না না কিচ্ছু না—এখন লিখ্‌তে যাব কেন?—শনের সঙ্গে বসে বসে গল্প করচি।—ঈশেন তুই যা, আমি যাচ্চি। (ঈশানের প্রস্থান)

 অবা। দাদা মাইনের টাকাগুলো এনেছি—এই কুড়ি আর পাঁচ কেতা নোট—আর এই পাঁচশো টাকার এক—!

 বৈকুণ্ঠ। ঐ পাঁচশো টাকার খানা তুমিই রাখনা অবু!

 অবি। কেন দাদা!

 বৈকুণ্ঠ। যদি কোন আবশ্যক হয়—খরচ পত্র—

 অবিনাশ। আবশ্যক হলে চেয়ে নেব—

 বৈকুণ্ঠ। তবে এইখানে রাখ। তোমার হাতে টাকা ও ত থাকে না। যে আসে তাকেই বিশ্বাস করে বস! রাখ‍্তে হলে লোক চিন্‌তে হয় ভাই।

 অবিনাশ। (হাসিয়া) সেই জন্যেই ত তোমার হাতে নিশ্চিত্ত হই দাদা!

 বৈকুণ্ঠ। অবি, হাস্‌চিস্ যে! কেন, আমাকে কেউ ঠকিয়েছে বল্‌তে পারিস্? সে দিন সেই স্বরসূত্রসার কিন্‌লেম তোরা নিশ্চয় মনে করেছিস্ ঠকেছি—কিন্তু সঙ্গীত সম্বন্ধে অমন প্রাচীন বই আর আছে? হীরে দিয়ে ওজন করলেও ওর দাম হয় না। তিনশো টাকায় ত অমনি পেয়েছি।

 অবি। ও বই সম্বন্ধে আমি কি কিছু বলেছি?

 বৈকুণ্ঠ। তাতেইত বুঝতে পারলুম তোরা মনে মনে করচিস্ বুড়ো ঠকেছে। নইলে একবার জিজ্ঞাসা কর্‌তে হয়, একবার নেড়েচেড়ে দেখ্‌তে হয়—

 অবিনাশ। ওর আর আছে কি দাদা, নাড়তে চাড়তে গেলে যে গুঁড়িয়ে ধূলো হয়ে যাবে!

 বৈকুণ্ঠ। সেইত ওর দাম! ও ধুলো কি আজকের ধুলো! ও ধুলো লাখ্‌টাকা দিয়ে মাথায় রাখতে হয়!

 অবিনাশ। দাদা, এ মাসে আমাকে পঁচাত্তর টাকা দিতে হবে।

 বৈকুণ্ঠ। কেন কি করবি? (অবিনাশ নিরুত্তর) নিলেম থেকে বিলিতি গাছ কিন্‌বি বুঝি? ঐ তোর এক গাছ-পোঁতা বাতিক হয়েছে, দিনরাত যত রাজ্যের উড়েমালী নিয়ে কারবার! কত মিথ্যে গাছের নাম করে কত লোক যে তোমাকে ঠকিয়ে নিয়ে যাচ্চে তার আর সংখ্যে করা যায় না।— অবু তুই বিয়ে থাওয়া করবিনে।

 অবিনাশ। তার চেয়ে অন্য বাতিকগুলো যে ভাল! বয়স প্রায় চল্লিশ হল আর কেন?

 বৈকুণ্ঠ। সে কি, এরি মধ্যে চল্লিশ?

 অবিনাশ। এরি মধ্যে আর কই? ঠিক্ পূরো সময়ই লেগেছে—যেমন অন্য লোকের হয়ে থাকে!

 বৈকুণ্ঠ। আমারি অন্যায় হয়েছে। ছি, ছি! লোকে স্বার্থপর বল্‌বে! আর দেরি করা নয়!

 অবিনাশ। একটি লোক বসে আছে। আমি তবে চল্লুম।

(প্রস্থান।)

 বৈকুণ্ঠ। নিশ্চয় সেই মাণিকতলার মালী! একেই বলে বাতিক!

কেদারের প্রবেশ।

 বৈকুণ্ঠ। এই যে কেদার বাবু ফিরে এসেছেন—বড় খুশি হলুম— তা হলে—

 কেদার। দেখুন্— ওরনাম কি—আপনার লাইব্রেরিতে সকল রকম সঙ্গীতের বই আছে, কিন্তু— কি বলে— চীনেদের সঙ্গীত পুস্তক বোধ করি নেই!

 বৈকুণ্ঠ। (ব্যস্ত হইয়া) আজ্ঞে না! আপনি কোথাও সন্ধান পেয়েছেন?

 কেদার। একখানি যোগাড় করে এনেছি—আপনাকে উপহার দিতে চাই। বইখানি, ওরনাম কি, বহুমূল্য। এই দেখুন্। —(স্বগত) বেটা চীনেম্যানের কাছ থেকে ত পুরাণোজুতোর হিসেব চেয়ে এনেছি!

 বৈকুণ্ঠ। তাইত! এ যে আদৎ চীনে ভাষা দেখ্‌চি। কিচ্ছু বোঝবার যো নেই! আশ্চর্য্য! একেবারে সোজা অক্ষর! বা, বা, চমৎকার! তা এর দাম—

 কেদার। মাপ করবেন্ ওর নাম কি—

 বৈকুণ্ঠ। না, সে হবে না! আপনি যে কষ্ট করে বইখানি খুঁজে এনেছেন এতেই আমি আপনার কেনা হয়ে রইলুম—আমার ঋণ আর বাড়াবেন না!

 কেদার। (নিশ্বাস ফেলিয়া) কিন্তু কি বল্‌ব— দামটা বোধ হয় ঠকেছি।

 বৈকুণ্ঠ। আজ্ঞে না—তা কখনো হতেই পারে না। আমি জানি কিনা— এ সব জিনিষের দাম বেশি!

 কেদার। আজ্ঞে, বেটাত পঁয়ত্রিশ টাকা চেয়ে বসেছে! বোধকরি— ওর নাম কি—ত্রিশেই রফা হবে!

 বৈকুণ্ঠ। পঁয়ত্রিশ! এ ত জলের দর! টাকাটা এখনই নিয়ে দিন্—আবার যদি মত বদ্‌লায়! চীনেম্যান্ বোধ হয় নিতান্ত দায়ে পড়েছে।

 কেদার। দায় বলে দায়! শুন্‌লুম দেশে তার তিন শ্যালী আছে—তিনটিকেই এক কুলীন চীনেম্যানের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে। কন্যাদায় দায় কিন্তু— কি বলে ভাল— শ্যালী দায়ের সঙ্গে তার তুলনাই হয় না!

 বৈকুণ্ঠ। (হাসিয়া) বল কি কেদার বাবু!

 কেদার। সাধে বলি! ভুক্তভোগীর কথা! ওর নাম— শ্বশুর বাড়িতে শ্যালী অতি উত্তম জিনিষ— অমন জিনিষ আর হয় না—কিন্তু সেখান থেকে চ্যুত হয়ে হঠাৎ স্কন্ধের উপর এসে পড়লে, ওর নাম কি, সকলে সাম্‌লাতে পারে না!

 বৈকুণ্ঠ। সামলাতে পারে না! হাহা হাহা!

 কেদার। আজ্ঞে আমি ত পারচিনে! একে শ্যালী, তাতে নিখুঁৎসুন্দরী, তাতে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছেন, ওর নাম কি ঘরে ত আর টেঁকা যায় না! চোখ মেলে চাইলে স্ত্রী ভাবে শ্যালীকে খুঁজচি, ওরনাম কি— চোখ বুজে থাকলে স্ত্রী ভাবে আমি শ্যালার ধ্যান করচি! কাশ্‌লে মনে করে কাশীর মধ্যে একটা অর্থ আছে— আবার, কি বলে ভাল— প্রাণপণে কাশি চেপে থাক্‌লে মনে করে তার অর্থ আরও সন্দেহজনক!

অবিনাশের প্রবেশ।

 অবিনাশ। কি দাদা! খাবার ঠাণ্ডা হয়ে এল, এখনো লেখা নিয়ে বসে আছ!

 বৈকুণ্ঠ। না, না, লেখাটেখা কিছু নয়, কেদার বাবুর সঙ্গে গল্প করচি।

 অবিনাশ। তাইত,কেদার দেখ্‌চি! কি সর্ব্বনাশ! তুমি কোথা থেকে হে! দাদাকে পেয়ে বসেছ বুঝি!

 কেদার। হাহাহাহাঃ! অবিনাশ, চিরকালই তুমি ছেলে মানুষ রয়ে গেলে হে!

 অবিনাশ। দাদা, তোমার লেখা শোনাবার আর লোক পেলে না! শেষকালে কেদারকে ধরেছ? ও যে তোমাকে ধরলে আর ছাড়বে না!

 বৈকুণ্ঠ। আঃ অবিনাশ—ছিঃ, কি বক্‌চ?

 কেদার। বৈকুণ্ঠ বাবু আপনি ব্যস্ত হবেন না—ওর নাম কি— অবিনাশের সঙ্গে একক্লাসে পড়েছি —আমার সঙ্গে দেখা হলেই ওর আর ঠাট্টা ছাড়া কথা নেই!

 অবিনাশ। তোমার ঠাট্টা যে আমার ঠাট্টার চেয়ে গুরুতর! এই সে দিন আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেলে আবার বুঝি দরকার পড়েছে তাই দাদার বই শুনতে এসেছ?

 কেদার। ভাই অবিনাশ, ওর নামকি— এক এক সময় তোমার কথা শুনে হঠাৎ ভ্রম হয় যে, যা বল্‌চ বুঝি, সত্যিই বল্‌চ! কি জানি বৈকুণ্ঠ বাবু মনে ভাবতে পারেন যে, কি বলে ভাল—

 বৈকুণ্ঠ। (ব্যস্ত হইয়া) না, না, কেদার বাবু! আমি কিছু মনে ভাব্‌চিনে! কিন্তু অবিনাশ, সত্যি কথা বল্‌তে কি তোমার ঠাট্টাগুলো কিছু রূঢ় হয়ে পড়চে! বন্ধুকেও—

 অবিনাশ। আমি ত ঠাট্টা করচিনে—

 বৈকুণ্ঠ। অ্যাঁ! ঠাট্টা নয়! অভদ্র কোথাকার। কেদার বাবু আমার ঘরে আসেন সে আমার সৌভাগা! তুই আমার সামনে তাঁকে অপমান করিস্!

 কেদার। আহা, রাগ করবেন না, বৈকুণ্ঠবাবু—

 অবিনাশ। দাদা মিথ্যা রাগ করচ কেন? কেদারের আবার অপমান কিসের?

 বৈকণ্ঠ। আবার! তোর সঙ্গে আর আমি কথা কবনা।

 অবিনাশ। মাপ কর দাদা! (বৈকুণ্ঠ নিরুত্তর) মাপ কর আমার অপরাধ হয়েছে! (নিরুত্তর) দাদা রাগ করে থেকো না—

 বৈকুণ্ঠ। তবে শোন্! কেদার বাবুর একটি বিবাহযোগ্যা পরমাসুন্দরী বয়ঃপ্রাপ্ত শ্যালী আছে, তোরও ত বিবাহযোগ্য বয়স হয়েছে— এখন

 কেদার। যোগ্যং যোগ্যেন যোজয়েৎ।

 বৈকুণ্ঠ। ঠিক বলেছেন, আমার মনের কথাটি বলেছেন।

 কেদার। আমারও ঠিক ঐ মনের কথা!

 অবিনাশ। কিন্তু দাদা, আমার মনের কথা একটু স্বতন্ত্র! আমার বিবাহ করবার ইচ্ছে নেই—

 কেদার। অবিনাশ তুমি হাসালে! বিবাহ করবার পূর্ব্বেই অনিচ্ছে! ওর নাম কি, করবার পরে যদি হত ত মানে পাওয়া যেত!

 বৈকুণ্ঠ। মেয়েটি ত সুন্দরী—

 অবিনাশ। তাকে দেখেচ না কি?

 বৈকুণ্ঠ। দেখ্‌তে হবে কেন? কেদার বাবু যে বলচেন! (অবিনাশ নিরুত্তর)

 কেদার। বিশ্বাস হল না? কি বলে, আমার আকৃতি দেখেই ভয় পেলে কিন্তু ওর নাম কি— সে যে আমার শ্যালী, আমার স্ত্রীর সহোদরা, আমার বংশের কেউ নয় একবার স্বচক্ষে দেখে এলে হয় না?

 বৈকুণ্ঠ। সে ত বেশ কথা— দেখে এসনা অবিনাশ।

 অবিনাশ। দেখে আর করব কি? ঘরের মধ্যে বাইরের লোক আন্‌তে চাইনে—

 কেদার! তা এনোনা— কিন্তু ওর নাম কি, বাইরের লোকের পানে একবার তাকাতে দোষ কি— কি বলে,— একবার দেখে এলে ঘরেরও ক্ষতি নেই, ওর নাম কি, বাইরের ও বিশেষ ক্ষয় হবে না।

 অবিনাশ। আচ্ছা তাই হবে। এখন খেতে যাও দাদা নীরু আমাকে পাঠিয়ে দিলে!

 বৈকুণ্ঠ। এই যে, কেদার বাবু এখনো— আগে ওঁর—

 কেদার। বিলক্ষণ!

 অবিনাশ। তা খাবার না বলে দিলে খাবার আসবে কোথা থেকে! ঈশেনকে একবার ডাকা যাক।

 কেদার। ঈশেনকে ডেকোনা ভাই— ওর নাম কি—তার সঙ্গে পূর্ব্বেই দুটো একটা কথাবার্ত্তা হয়ে গেছে।

খাবার চাঙারি হস্তে তিনকড়ির প্রবেশ।

 তিনকড়ি। এই নাও বসে যাও— আমি পরিবেশন করচি।

 বৈকুণ্ঠ। তুমিও বসনা বাপু—পরিবেশনের ব্যবস্থা আমি করচি!

 তিনকড়ি। ব্যস্ত হবেন না মশায়— নিজে আগে খেয়ে নিয়েছি।

 কেদার। দূর্ লক্ষীছাড়া পেটুক!

 তিন। ভাই তিনকড়ের ভাগ্যে বিঘ্নি ঢের আছে বরাবর দেখে আস্চি। জন্মাবামাত্র দুধ খাবার জন্যে কান্না ধরলুম, তার ঠিক পূর্ব্বেই মা গেল মরে! ভাই সবুর করতে আমার সাহস হয় না!

 অবিনাশ। এ ছোকরাটিকে কোথায় যোগাড় করলে কেদার!

 কেদার। ওর নাম কি—দেশ দেশান্তর খুঁজ্তে হয় নি আপনি জুটেছে। এখন এঁকে থোব কোথায়— কি বলে ভাল—তাই খুঁজচি।

 অবিনাশ। দাদা তাহলে তুমি এখন খেতে যাও!

 বৈকুণ্ঠ। বিলক্ষণ! আগে এঁদের হোক্!

 কেদার। সে কি কথা বৈকুণ্ঠ বাবু—

 বৈকুণ্ঠ। কেদার বাবু, আপনি কিছু সঙ্কোচ করবেন না— খেতে দেখ্‌তে আমার বড় আনন্দ!

 তিনকড়ি। বেশ ত আবার কাল দেখ্‌বেন! আমরা ত পালাচ্চিনে! কিছুতেই না!

 কেদার। তিনকড়ে, বরঞ্চ তুই ঐ চাঙারিটা বাড়ি নিয়ে চল্। কি বলে— এঁদের আর কেন মিছে বিরক্ত করা।

 তিন। আজ ত আর দরকার দেখিনে! আবার কাল আছে!

(অবিনাশের হাস্য)

 বৈকুণ্ঠ। এ ছোকরাটি বেশ কথা কয়। একে আমার বড় ভাল লাগ্‌চে। কিন্তু আহারটা এই খানেই করতে হচ্চে সে আমি কিছুতেই ছাড়চিনে—

ঈশানের প্রবেশ।

 ঈশান। বাবু!

 বৈকুণ্ঠ। আরে শুনেছি, এই যে যাচ্চি! আপনার তাহলে যাবেন দেখ্‌চি! তবে আর ধরে রাখ্‌ব না।

 তিনকড়ি। আজ্ঞে না, তাহলে বিপদে পড়বেন।

(বৈকুণ্ঠ অবিনাশ ও ঈশানের প্রস্থান।)

 (কেদারের প্রতি) এই নে ভাই— টাকা কটা বেঁচেছে— এ জিনিষ আমার হাতে ঢেঁকে না।

 কেদার। তোর বাবা তোর নাম দিয়েছে তিনকড়ি— তোকে ডাক্‌ব মাণিক। লাখো টাকা তোর দাম।

প্রস্থান।