বৈকুণ্ঠের খাতা/দ্বিতীয় দৃশ্য

দ্বিতীয় দৃশ্য।

কেদার ও অবিনাশ।

 কেদার। ওর নাম কি— আজ় তবে উঠি—অনেক বিরক্ত করা গেছে—

 অবি। বিলক্ষণ! বিরক্ত আবার কিসের! একটু বসে যাওনা! শোন না— আমি চলে আসার পর সে দিন মনোরমা আমার কথা কিছু বল্লে?

 কেদার। সে আবার কিছু বল্‌বে! তোমার নাম করবামাত্র তার গাল—ওর নাম কি—বিলিতি বেগুনের মত টক্‌টক্ করে ওঠে!

 অবিনাশ। (হাসিতে হাসিতে) বল কি কেদার—এত লজ্জা!

 কেদার। কি বলে, ঐটেই হল খারাপ লক্ষণ!

 অবিনাশ। (ধাক্কা দিয়া) দূর্! কি বলিস্ তার ঠিক নেই! খারাপ লক্ষণটা কি হল শুনি!

 কেদার। ওর্ নাম কি—ওটা স্বভাবের নিয়ম। যেমন তীর ছোঁড়া—গোড়ায় পিছনের দিকে প্রাণপণে পড়ে টান—তার পরে—ওর নাম কি— ছাড়া পাবামাত্রই সামনের দিকে একেবারে বোঁ করে দেয় ছুট্! গোড়ায় যেখানে বেশি লজ্জা দেখা যাচ্চে— ওর নাম কি— ভালবাসার দৌড়টাও সেখানে বড্ড বেশি হবে।

 অবিনাশ। বল কি কেদার! তা কি রকম লজ্জাটা তার দেখ্‌লে, শুনিই না! তোমরা বুঝি আমার নাম করে তাকে ঠাট্টা করেছিলে?

 কেদার। ভাই সে অনেক কথা। আজ একটু কাজ আছে—আজ তবে—

 অবিনাশ। আঃ বোসনা কেদার। শোননা—একটা কথা আছে। বুঝেছ কেদার— একটা আংটি কেনা গেছে। বুঝেছ?

 কেদার। খুব সহজ কথা ওর নাম কি—বুঝেছি!

 অবিনাশ। সহজ? আচ্ছা কি বুঝেছ বল দেখি।

 কেদার। টাকা থাক্‌লে অংট কেনা সহজ—ওর নাম কি—এই বুঝেছি।

 অবি। কিছু বোঝনি। এই আংটিটি আমি তোমার হাত দিয়ে মনোরমাকে উপহার পাঠাতে চাই! তাতে কিছু দোষ আছে!

 কেদার। আমি ত কিছু দেখিনে। যদি বা থাকে ত দোষটুকু বাদ দিয়ে—ওর নাম কি— আংটিটুকু নিলেই হবে।

 অবি। আঃ তোমার ঠাট্টা রাখ! শোননা কেদার — ঐ সঙ্গে একটা চিঠিও দিই না!

 কেদার। সে আর বেশি কথা কি!

 অবিনাশ। তবে চট্ করে লিখে দিই। (লিখিতে প্রবৃত্ত)

 কেদার। আংটিটা ত লাভ করা গেল। কিন্তু দুই ভাইয়ের মাঝখানে পড়ে মেহন্নৎটাও বড্ড বেশি হচ্চে। এখন, বিবাহটা শীঘ্র চুকে গেলে একটু জিরোবার সময় সময় পাওয়া যায়।

বৈকুণ্ঠের প্রবেশ।

 বৈকুণ্ঠ। (উঁকি মারিয়া স্বগত) এই যে ভায়া আমার কেদার বাবুকে নিয়ে পড়েছে! কনে দেখে ইস্তিক ওঁকে আর এক মুহূর্ত্ত ছাড়ে না। বাতিকগ্রস্ত মানুষ কি না, সকল বিষয়েই বাড়াবাড়ি! কেদার বাবু বোধ হয় একে বারে অস্থির হয়ে উঠেছেন! বেচারাকে আমি উদ্ধার না করলে উপায় নেই। (ঘরে ঢুকিয়া) এই যে কেদার বাবু আমার সেই নতুন পরিচ্ছেদটি শোনাবার জন্যে আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্চি।

 কেদার। আর ত বাচিনে!—

 অবি। (চিঠি ঢাকিয়া) দাদা, কেদার বাবুর সঙ্গে একটা কাজের কথা ছিল।

 বৈকুণ্ঠ। কাজের ত সীমা নেই। ছোঁড়াটার মাথা একেবারে ঘুরে গেছে কিন্তু কেদার বাবুকে না পেলেত আমার চল্‌চে না!

ভৃত্যের প্রবেশ।

 ভৃত্য। বাবু, মাণিকতলা থেকে মালি এসেছে।

 অবিনাশ। এখন যেতে বলে দে! (ভৃত্যের প্রস্থান)

 বৈকুণ্ঠ। যাওনা, একবার শুনেই এস না! ততক্ষণ আমি কেদার বাবুর কাছে আছি—

 কেদার। আমার জন্যে ব্যস্ত হবেন না—ওর নাম কি আমি আজ তবে—

 অবিনাশ। না কেদার, একট বোস।

 বৈকুণ্ঠ। না, না, আপনি বসুন! দেখ অবিনাশ গাছপালা সম্বন্ধে তোমার যে আলোচনাটা ছিল সেটা অবহেলা কোরো না! সেটা বড় স্বাস্থ্যকর, বড়ই আনন্দজনক।

 অবিনাশ। কিছু অবহেলা করবনা দাদা— কিন্তু এখন একটা বড় দরকারী কাজ আছে।

 বৈকুণ্ঠ। আচ্ছা, তাহলে তোমরা একটু বোস। ভালমানুষ পেয়ে বেচারা কেদার বাবুকে ভারি মুষ্কিলে ফেলেছে— একটু বিবেচনা নেই— বয়সের ধর্ম্ম!

তিনকড়ির প্রবেশ।

 কেদার। আবার এখানে কি কর্ত্তে এলি?

 তিনকড়ি। ভয় কি দাদা, দুজন আছে— একটিকে তুমি নাও, একটি আমাকে দাও!

 বৈকুণ্ঠ। বেশ কথা বাবা, এস আমার ঘরে এস!

 কেদার। তিনকড়ে তুই আমাকে মাটি করলি!

 তিনকড়ি। সব্বাই বলে তুমিই আমাকে মাটি করেচ। (কাছে গিয়া) রাগ কর কেন দাদা—যে অবধি তোমাকে দেখেছি সেই অবধি আপন বাপ দাদা খুড়ো কাউকে দুচক্ষে দেখ্‌তে পারিনে! এত ভালবাসা!

 কেদার। বাজে বকিস্ কেন— তোর আবার বাপ দাদা কোথা!

 তিনকড়ি। বল্লে বিশ্বাস করবিনে কিন্তু আছে ভাই। ওতেত খরচও নেই মাহাত্মিও নেই— তিনকড়েরও বাপ দাদা থাকে— যদি আমার নিজে করে নিতে হত তবে কি আর থাক্‌ত? কখ্‌খন না!

 বৈকুণ্ঠ। হাহাহাহাঃ। ছেলেটি বেশ কথা কয়! চল বাবা, আমার ঘরে চল।

(উভয়ের প্রস্থান) 

 অবিনাশ। খুব সংক্ষেপে লিখ্‌লুম, বুঝেছ কেদার—কেবল একটি লাইন—“দেবী পদতলে বিমুগ্ধ ভক্তের পূজোপহার।”

 কেদার। তা কোন কথাটিই বাদ দেওয়া হয় নি—দিব্যি হয়েছে— তবে আজ উঠি!

 অবিনাশ। কিন্তু “পদতলে” কথাটা কি ঠিক খাট্‌ল— ওটা কিনা আংটি—

 কেদার। কি বলে ভাল— তা “করতলে”ই লিখে দাও না।

 অবিনাশ। কিন্তু করতলে পূজোপহারটা কেমন শোনাচ্চে।

 কেদার। তা না হয় পূজোপহার নাই হল— ওর নাম কি—

 অবিনাশ। শুধু “উপহার” লিখ্‌লে বড় ফাঁকা শোনায়, “পূজোপহার”ই থাক্‌

 কেদার। তা থাক্ না—

 অবিনাশ। কিন্তু তা হলে “করতলে"টা কি করা যায়—

 কেদার। ওটা পদতলেই করে দাও না ওর নাম কি—তাতে ক্ষতি কি! আমি তা হলে উঠি!

 অবিনাশ। এক্‌টু রোস না— আংটি সম্বন্ধে পদতলে কথাটা খাপছাড়া শোনাচ্চে।

 কেদার। খাপছাড়া কেন হবে! তুমিত পদতলে দিয়ে খালাস্— তার পরে ওর নাম কি— তিনি করতলে তুলে নেবেন কি বলে— যদি স্বয়ং না নেন্ ত অন্য লোক আছে!

 অবিনাশ। আচ্ছা পূজোপহার না লিখে যদি প্রণয়োপহার লেখা যায়!

 কেদার। সেটা যদি খুব চট্ করে লেখা যায় ত সেইটেই ভাল!

 অবিনাশ। কিন্তু রোস একটু ভেবে দেখি।

ঈশানের প্রবেশ।

 ঈশান। খাবার ঠাণ্ডা হয়ে এল যে।

 অবিনাশ। আচ্ছ। সে হবে এখন— তুই যা!

 ঈশান। দিদি ঠাকরুণ বসে আছে—

 অবিনাশ। আচ্ছ। আচ্ছা তুই এখন পালা

 ঈশান। (কেদারের প্রতি) বড় বাবুর ত আহার নিদ্রা বন্ধ, আবার ছোট বাবুকেও ক্ষেপিয়ে তুলেছ?

 কেদার। ভাই ঈশেন, যদিচ আমার নিমক খাওনা তবু— ওর নাম কি— আমার কথাটাও একবার ভেবে দেখো! তোমার বড় বাবু খুব বিস্তারিত করে লিখে থাকেন আর তোমার ছোট বাবু—কি বলে— অত্যন্ত সংক্ষেপেই লেখেন—কিন্তু আমার কপালক্রমে দুইই সমান হয়ে ওঠে। অবিনাশ, তোমার খাবার এসেছে— ওর নাম কি— আমি উঠি!

 অবিনাশ। বিলক্ষণ! তুমিও খেয়ে যাও না। ঈশেন, বাবুর জন্যে খাবার ঠিক কর।

 ঈশান। সময়মত বল না, এখন আমি খাবার ঠিক করি কোত্থেকে!

 অবিনাশ। তোর মাথা থেকে! বেটা ভূত!

 ঈশান। এও যে ঠিক বড় বাবুর মত হয়ে এল, আমাকে আর টিক্‌তে দিলে না।

(প্রস্থান) 

 অবিনাশ। এখানে “প্রণয়োপহার” লিখ্‌লে “দেবী" কথাটা বদ্‌লাতে হয়! দেবীর সঙ্গে প্রণয় হবে কি করে!

 কেদার। কেন হবে না! তা হলে দেবতাগুলো— ওর নাম কি, বাঁচে কি করে? ভাই অবিনাশ, স্ত্রীজাতি স্বর্গে মর্ত্ত্যে পাতালে যেখানেই থাকুক্— ওর নাম কি— তাদের সঙ্গে প্রণয় হতে পারে—কি বলে ভাল— হয়েও থাকে। তুমি অত ভেবো না! (স্বগত) এখন ছাড়লে বাঁচি!

তিনকড়ির প্রবেশ।

 তিনকড়ি। ও দাদা! তোমার বদল ভেঙ্গে নাও! তুমি সেখানে যাও, আমি বরঞ্চ এখানে একবার চেষ্টা করে দেখি।

 কেদার। কেনরে কি হয়েছে!

 তিনকড়ি। ওরে বাস্‌রে! সে কি খাতা! আমি তার মধ্যে সেঁধলে আমাকে আর খুঁটে পাওয়া যাবে না! সেইটে পড়তে দিয়ে বুড়ো কোথায় উঠে গেল— আমি ত এক দৌড়ে পালিয়ে এসেচি।

বৈকুণ্ঠের প্রবেশ।

 বৈকুণ্ঠ। কি তিনকড়ি পালিয়ে এলে যে!

 তিনকড়ি। আপনি অত বড় একখানা বই লিখ্‌লেন আর এইটুক বুঝ্‌লেন না!

 বৈকুণ্ঠ। কেদার বাবু, আপনি যদি একবার আসেন তাহলে—

 কেদার। চলুন! (স্বগত) রামে মারলেও মরব, রাবণে মারলেও মরব— কিন্তু অবিনাশের ঐ একটি লাইন নিয়ে ত আর পারিনে!

 অবিনাশ। কেদার তুমি যাও কোথায়! দাদা আমার সেই কাজটা!

 বৈকুণ্ঠ। (রাগিয়া উঠিয়া) দিন রাত্তির তোমার কাজ। কেদার বাবু ভদ্রলোক— ওঁকে একটু বিশ্রাম দেবে না। তোমাদের একটু বিবেচনা নেই! আসুন্ কেদার বাবু।

 কেদার। ওর নাম কি, চলুন্। (উভয়ের প্রস্থান)

 অবিনাশ। মনোরমা তোমার কে হন তিনকড়ি?

 তিনকড়ি। তিনি আমার দূর সম্পর্কে বোন হন কিন্তু সে পরিচয় প্রকাশ হলে তিনি ভারি লজ্জা পাবেন!

 অবিনাশ। তাঁর খুব লজ্জা।—না তিনকড়ি!

 তিনকড়ি। আমার সম্বন্ধে ভারি লজ্জা! কাউকে মুখ দেখাবার যো নেই!

 অবিনাশ। না, তোমার সম্বন্ধে বল্‌চিনে— আমার সম্বন্ধে! জান ত তিনকড়ি, আমার সঙ্গে তাঁর একটা সম্বন্ধ—

 তিনকড়ি। ওঃ বুঝেছি! তা ত হতেই পারে! আমার সঙ্গেও একটি কন্যের সম্বন্ধ হয়েছিল—বিবাহের পূর্ব্বে সেত লজ্জায় মরেই গেল।

 অবিনাশ। আঃ, কি বল তিনকড়ি।

 তিনকড়ি। শুধু লজ্জা নয় শুন্‌লুম তার যকৃৎও ছিল

 অবিনাশ। মনোরমার—

 তিনকড়ি। যকৃতের দোষ নেই।

 অবিনাশ। আঃ সে কথা আমি জিজ্ঞাসা করচি নে— আমি হৃদয়ের কথা বল্‌চি—

 তিনকড়ি। মশায় ও সব বড় শক্ত কথা— আমি বুঝিনে। মেয়ে মানুষের হৃদয় তিনকড়ি কখনো পায়নি কখনো প্রত্যাশাও করেনি। দিব্যি আছি।

 অবিনাশ। আচ্ছ। সে থাক্— কিন্তু মনোরমাকে আমি একটি আংট উপহার দেব—বুঝলে? সেই সঙ্গে এক লাইন চিঠি দিতে চাই—

 তিনকড়ি। ক্ষতি কি! একটা লাইন্ বই ত নয় চট্ করে হয়ে যাবে!

 অবিনাপ। এই দেখ না— আমি লিখেছিলুন—“দেবীপদতলে বিমুগ্ধ ভক্তের পূজোপহার।” তুমি কি বল?

 তিন। তোমার কথা তুমি বল্‌বে— ওর মধ্যে আমার কিছু বলা ভাল হয় না—সে হল আমার ভগ্নী!

 অবিনাশ। না, না, তা বলচিনে! আংটি কি ঠিক পদতলে দেওয়া যায়! করতলে লিখ্‌লে—

 তিনকড়ি। তা ওটা লেখা বইত না— পদতলে লিখে করতলে দিলেই হবে—সে জন্যে ত কেউ আদালতে নালিশ করবে না!

 অবিনাশ। না হে না, লেখার ত একটা মানে থাকা চাই—

 তিনকড়ি। আংটি থাকলে আর মানে থাকার দরকার কি? ওতেই ত বোঝা গেল!

 অবিনাশ। আংটির চেয়ে কথার দাম বেশি তা জান?

 তিনকড়ি। তা হলে আজ আর তিনকড়েকে হাহাকার করে বেড়াতে হত না।

 অবি। আঃ কি বক্‌চ তুমি তার ঠিক নেই! একটু মন দিয়ে শোন দিখি। ও লাইনটা যদি এই রকম লেখা যায় ত কেমন হও—“প্রেয়সীর করপদ্মে অনুরক্ত সেবকের প্রণয়োপহার!”

 তিনকড়ি। বেশ হয়!

 অবিনাশ। বেশ হয়! একটা কথা বলে দিলেই হল “বেশ হয়!” একটু ভেবে চিন্তে বল না!

 তিনকড়ি। ও বাবা! এ যে আবার রাগ করে! বুড়োর শরীরে কিন্তু রাগ নেই! (প্রকাশ্যে) তা ভেবে চিন্তে দেখ্‌লে বোধ হয় গোড়ারটাই ছিল ভাল!

 অবিনাশ। কেন বল দেখি! এটাতে কি দোষ হয়েছে!

 তিনকড়ি। ও বাবা! এটাতে যদি দোষই না থাক্‌বে ত খামকা আমাকে ভাব্‌তে বলে কেন? এত বড় মুষ্কিলেই পড়া গেল দেখ্‌চি!— দোষ কি জানেন অবিনাশ বাবু, ও ভাব্‌তে গেলেই দোষ না ভাব্‌লে কিছুতেই দোষ নেই আমি ত এই বুঝি!

 অবি। ওঃ বুঝেছি— তুমি বল্‌চ, আগে থাকতে ঐ প্রেয়সী সম্বোধনটায় লোকে কিছু মনে ভাব্‌তে পারে—

 তিন। বাঁচা গেল! হাঁ তাই বটে! কিন্তু কি জানেন আপনাআপনির মধ্যে না হয় তাকে প্রেয়সীই বল্লেন! তা কি আর অন্য কেউ বলে না! ঐটেই লিখে ফেলুন্!

 অবি। কাজ নেই গোড়ায় যেটা ছিল সেইটেই—

 তিনকড়ি। সেইটেইত আমার পছন্দ

 অবিনাশ। কিন্তু একটু ভেবে দেখ না, ওটা যেন—

 তিনকড়ি। ও বাবা! আবার ভাব্‌তে বলে! অবিনাশ বাবু, শিশুকাল থেকে আমিও কারো জন্যে ভাবি নি, আমার জন্যেও কেউ ভাবে নি, ওটা আমার আর অভ্যাস হলই না! এরকম আরো আমার অনেক গুলি শিক্ষার দোষ আছে—

 অবিনাশ। আঃ তিনকড়ি, তুমি একটু থাম্‌লে বাঁচি! নিজের কথা নিয়েই কেবল বক্‌বক্ করে মরচ, আমাকে একটু ভাব্‌তে দাও দেখি!

 তিনকড়ি। আপনি ভাবুন্ না। আমাকে ভাবতে বলেন কেন? একটু বসুন্ অবিনাশ বাবু— আমি কেদারদাকে ডেকে আনি। সে আমার চেয়ে ভাব্‌তেও জানে ভেবে কিনারা করতেও পারে!—আমার পক্ষে বুড়োই ভাল!  (প্রস্থান।)

কেদার, বৈকুণ্ঠ এবং তিনকড়ির প্রবেশ।

 বৈকুণ্ঠ। অবিনাশ, কেদার বাবুকে আবার তোমার কি দরকার হল! আমি ওঁকে আমার নতুন পরিচ্ছেদটা শোনাচ্ছিলুম তিনকড়ি কিছুতেই ছাড়লে না শেষকালে হাতে পায়ে ধরতে লাগ্‌ল।

 অবিনাশ। আমার সেই কাজটা শেষ হয় নি, তাই।

 বৈকুণ্ঠ। (রাগিয়া) তোমার ত কাজ শেষ হয় নি, আমারি সে পরিচ্ছেদটা শেষ হয়েছিল না কি?

 অবিনাশ। তা দাদা, ওঁকে নিয়ে যাওনা—

 কেদার। (ব্যস্ত হইয়া) ওর নাম কি অবিনাশ— তোমারও সে কাজটাত জরুরি কি বলে— আর ত দেরী করা চলে ন!

 বৈকুণ্ঠ। বিলক্ষণ! আপনি সে জন্যে ভাব্‌বেন না। নিজের কাজ নিয়ে কেদার বাবুকে এরকম কষ্ট দেওয়া উচিত হয় না অবিনাশ! অমন করলে উনি আর এখানে আস্‌বেন না!

 তিনকড়ি। সে ভয় করবেন না বৈকুণ্ঠ বাবু— আমাদের দুটিকে না চাইলেও পাওয়া যায়, তাড়ালেও ফিরে পাবেন— মলেও ফিরে আস্‌ব এম্‌নি সকলে সন্দেহ করে!

 কেদার। তিনকড়ে! ফের!

 তিনকড়ি। ভাই, আগে থাকতে বলে রাখাই ভাল— শেষকালে ওঁয়ারা কি মনে করবেন!

ঈশানের প্রবেশ।

 ঈশান। (অবিনাশ ও কেদারের প্রতি) বাবু, তোমাদের দুজনেরই খাবার জায়গা হয়েছে!

 তিন। আর আমাকে বুঝি ফাঁকি! জন্মাবামাত্র যার নিজের মা ফাঁকি দিরে মল, বন্ধুবা তার আর কি করবে! কিন্তু দাদা, তিনকড়ে তোমাকে ভাগ না দিয়ে খায় না!

 কেদার। তিনকড়ে, ফের!

 তিনকড়ি। তা যা ভাই, চট্‌ করে খেয়ে আর গে! দেরী করলে বড় লোভ হবে— মনে হবে ছত্রিশ ব্যঞ্জন লুঠ্‌চিস্!

 বৈকুণ্ঠ। সে কি কথা তিনকড়ি! তুমি না খেয়ে যাবে! সে কি হয়! ঈশেন!

 ঈশান। আমি জানিনে! আমি চল্লুম!

(প্রস্থান।)

 অবিনাশ। চলনা তিনকড়ি! একরকম করে হয়ে যাবে!

 তিনকড়ি। টানাটানি করে দরকার কি। আপনারা এগোন্! খাওয়াবার রাস্তা বৈকুণ্ঠ বাবু জানেন্ —সেদিন টের পেয়েছি।  (তিনকড়ি ও বৈকুণ্ঠের প্রস্থান।)

 অবিনাশ। তা হলে ও লাইনটা—

 কেদার। ওর নাম কি, খেয়ে এসে হবে!