বৌদ্ধ-ভারত/দ্বিতীয় অধ্যায়

দ্বিতীয় অধ্যায়

বুদ্ধ ও সংঘ

 বুদ্ধ-শিষ্যের তিনটি আশ্রয় বুদ্ধ, ধর্ম্ম ও সংঘ। সাধন-জীবনের আরম্ভেই তিনি প্রাণীহত্যা, চৌর্য্য, ব্যাভিচার, মিথ্যাভাষণ, মদ্যপান, অপরাহ্ণ ভোজন, নৃত্যগীত, মাল্যধারণ, গন্ধদ্রব্যলেপন, কোমল-শয়ন এবং স্বর্ণরোপ্য-প্রতিগ্রহ—এই দশটি বর্জ্জনের শিক্ষা গ্রহণ করিয়া থাকেন। এই দশটি “শীল” তিনি স্বেচ্ছায় বরণ করেন। দুঃখমোচনের নিমিত্ত বুদ্ধ-শিষ্য এই যে সাধনা গ্রহণ করেন, ইহা গভীর সংযমের সাধনা।

 লোকশ্রেষ্ঠ বুদ্ধ স্বয়ং এই দুঃখমুক্তির সাধনা আপন জীবনে আচরণ করিয়াছিলেন। তিনি সিদ্ধিলাভের পরে দীর্ঘকাল তাঁহার এই সদধর্ম্মের অমৃতবাণী লোকসমাজে প্রচার করিয়া আপন ধর্ম্মের প্রতিষ্ঠা করেন। শিষ্যদিগকে তিনি পদে পদে সংযমের সূত্রে বাঁধিতেন, তথাপি দলে দলে লোক তাঁহার শরণ লইয়াছিল কেন? বুদ্ধ তাঁহার জীবনে কি লাভ করিয়াছিলেন? এবং তাঁহার পুণ্যপ্রভাব যে মণ্ডলীর সৃষ্টি করিয়াছিল, সেই মণ্ডলী কোন্ লাভের আশায় সাংসারিক ভোগ-সুখ ত্যাগ করিয়া তাঁহাকেই অবলম্বন বলিয়া স্বীকার করিল?

 মানব জীবনে দুঃখ আছে তাহা একান্ত সত্য; এবং সেই দুঃখ দূর করিবার জন্য গভীর সংযমের প্রয়োজন রহিয়াছে, ইহাও সত্য। এই অপরিহার্য্য দুঃখ দূর করিবার জন্য মহাপুরুষ যে সাধনা গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহা কি কেবল বাসনা-বিলোপের সাধনা? বোধি লাভ করিয়া তিনি অমৃতমণ্ড পান করিয়াছিলেন। এই নির্ব্বাণ বা অমৃতলাভের নিমিত্তই তিনি দুঃখের মূলীভূত কারণ এবং তাহার নিবৃত্তির উপায় প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন। তিনি জানিয়াছিলেন,—

 “জিঘচ্ছা পরমা রোগা সঙ্খারা পরমা দুক্‌খা” গৃধ্নুতা পরম রোগ এবং রূপবেদনা-সংজ্ঞা সংস্কার-বিজ্ঞান এই প্রত্যয়জ পদার্থগুলি পরম দুঃখ। দুঃখের তথ্যটি যখন বোধগম্য হয়, তখনই দুঃখের উপশম হয়। ধর্ম্মপদে উক্ত আছে “এতং ঞাত্বা যথাভূতং নিব্বানং পরমং সুখং” এই তত্ত্ব বুঝিয়াই পণ্ডিতেরা পরম সখ লাভ করেন। ধম্মপদ বলেন,—

আরোগ্য পরম লাভা সন্তুট্‌ঠী পরমং ধনং
বিস্‌সাসা পরমা ঞাতী নিব্বানং পরমং সুখং

 “আরোগ্য পরম লাভ, সন্তুষ্টি পরম ধন, বিশ্বাস পরম জ্ঞাতি, নির্ব্বাণ পরম সুখ।”

 বুদ্ধ আপনার জীবনে এই পরম সুখ লাভ করিয়াছিলেন। দুঃখোপশমে তিনি এমন সদাপ্রসন্ন, সৌম্যকান্তি লাভ করিয়াছিলেন যে, তাঁহার মুখশ্রী দেখিয়া দর্শকমাত্রের হৃদয়ই শ্রদ্ধায় অবনত হইত। ঋষিপত্তনে আগমনের সংবাদ পাইয়া তাঁহার পঞ্চশিষ্য পণ করিয়াছিলেন, গৌতমকে কিছুতেই গুরু বলিয়া স্বীকার বা সম্মান করিবেন না; কিন্তু, তাঁহারা তাহা পারিলেন না। তাঁহার মুখকান্তি দেখিয়াই তাঁহাদের মস্তক আপনা-আপনিই অবনত হইয়াছিল। বুদ্ধত্ব লাভের পূর্ব্বে গৌতম যখন একটি মহাভাবের প্রবল প্রেরণায় অন্তহীন উন্মুক্ত পথে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলেন, তখন তাঁহার প্রবল সত্যনিষ্ঠা এই পঞ্চ শিষ্যকে আকর্ষণ করিয়াছিল। নৈরঞ্জনা-তীরে উরুবিল্ব বনে তপশ্চর্য্যার সময়ে তাঁহারা গৌতমের সেবা করিয়াছেন। অতঃপর যখন কৃচ্ছ সাধনা ত্যাগ করিয়া তিনি নিয়মিত পানাহারে প্রবৃত্ত হইলেন, শিষ্যেরা তখন তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়া ঋষিপত্তনে গমন করেন।

 শিষ্যেরা বিমুখ হইয়া গুরুকে ছাড়িয়াছিলেন বটে, গুরু কিন্তু অমৃতমণ্ড পান করিয়া তাহা একাকী গোপনে সম্ভোগ করিতে পারিলেন না,—ক্ষুধার্ত্ত শিষ্যদের সন্ধানে ঋষিপত্তনে আসিলেন। অনন্যসুলভ মহিমায় মণ্ডিত হইয়া তিনি অমৃত পরিবেশনের নিমিত্ত শিষ্যদের সম্মুখে এমনভাবে আসিয়া উপস্থিত হইলেন যে, মহূর্ত্তমধ্যে তাঁহাদের মনের অবিশ্বাস ও অশ্রদ্ধা শূন্যে মিলাইয়া গেল। তাঁহারা বুদ্ধকে ও ধর্ম্মকে স্বীকার করিয়া নবধর্ম্মের আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। সত্যের পতাকা হস্তে এই যে পঞ্চ বীর সর্ব্বপ্রথমে বুদ্ধের পার্শ্বে দাঁড়াইয়াছিলেন, ইহাদের নাম কোল্ডাঞ্‌ঞ (কৌণ্ডিণ্য), ভদ্দীয় (ভদ্রীয়), বাপ্পা (বাষ্প), মহানাম ও অশ্বজি (অশ্বজিৎ)।

 এই পাঁচটি সত্যানুরাগী সাধককে লইয়া বুদ্ধের আশ্রয়ে আপনা-আপনি যে মণ্ডলীর সূত্রপাত হইল, সেই মণ্ডলীটি একটু বাড়িয়া উঠিয়াই “সংঘ” নাম ধারণ করিল। কোন্ সূত্র অবলম্বন করিয়া দানা বাঁধিয়া এই দলটি মূর্ত্তি পরিগ্রহ করিল? মহাপরুষের অন্তর্নিহিত অপার প্রেমই নিঃসন্দেহে এই মিলনের সূত্র। এই প্রেমিক মহাত্মার মধুর ব্যবহারে, মধুর বাক্যে মুগ্ধ হইয়াই, অনাগত শিষ্যেরা পরম সুখে নির্ব্বাণলাভের সাধনা গ্রহণ করিয়াছিলেন।

 সংঘের উদ্ভবকালে বুদ্ধের শিষ্যেরা যাঁহাকে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি প্রেমবান্ ও মহাপ্রাণ শিক্ষক;—শুষ্ক শাস্ত্র কিংবা বিশুদ্ধ জ্ঞান নহেন। নির্ব্বাণপ্রাপ্ত ব্যক্তির বাণী কি, ব্যবহার কি, মাননুষের সহিত এবং সমাজের সহিত তাঁহার সম্পর্ক কি, লোকশিক্ষক বুদ্ধ এই সকল প্রশ্নের মূর্ত্তিমান সমাধান ছিলেন।

 নির্ব্বানের সুখ কি গভীর, কেমন পরিপূর্ণ—তাহা বুদ্ধের জীবনে একান্ত সুস্পষ্টরূপে অভিব্যক্ত হইয়াছে। দেশদেশান্তরের সমস্ত প্রাণীর প্রতি তাঁহার হৃদয়ের যে অসীম করুণা ছিল, সেই করুণাই তাঁহাকে মহাসাধনায় প্রবৃত্ত করিয়াছিল। “সকলের দুঃখ দূর হউক, সকলে সুখী হউক” ইহাই তাঁহার সাধনার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। জ্ঞানানলে তিনি অবিদ্যা ভস্মীভূত করিয়াই সিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন এমন নহে; “জগতের সকল জীব সুখী হউক” এই মৈত্রীভাবনার দ্বারা তাঁহার অন্তরবাহির নিঃসন্দেহ প্রেমের পণ্যজ্যোতিঃতে উদ্ভাসিত হইয়াছিল। সাধন-সংগ্রামে এই মৈত্রীবলেই তিনি জয় লাভ করিয়া অমৃত লাভ করিয়াছিলেন।

 “মৈত্রী বলেন জিত্বা পীতো মেহম্মিন্নমৃতমণ্ড”। বিনয়পিটকে মহাবগ্‌গে বোধিলাভের পরে মহাপুরুষ বুদ্ধ তাঁহার নবলব্ধ মহাসত্য কিরূপে সম্ভোগ করিলেন, তাঁহার কিঞ্চিৎ বিবরণ পাওয়া যায়। প্রথমতঃ সপ্তাহকাল তিনি বেধিদ্রুমমূলে বিমুক্তি সুখ অনুভব করিলেন। দ্বিতীয় সপ্তাহও অজপালের ন্যগ্রোধতরুতলে মুক্তির বিমল আনন্দসম্ভোগে যাপন করিলেন। তৃতীয় সপ্তাহে মুচলিন্দতরুমূলে তিনি তাঁহার আনন্দ অমৃতময়ী বাণী ব্যক্ত করিয়া কহিলেন—“যিনি সকল বিষয়ে সন্তুষ্ট, ধর্ম্মজ্ঞাত, যিনি সত্যের সাক্ষাৎকার লাভ করিয়াছেন তাঁহার বিবেক সুখকর। সর্ব্বভূতে মৈত্রী ও অহিংসা সুখকর। এই পৃথিবীতে অনাসক্তি ও কামনাহীনতা সুখকর। কিন্তু, অহংবোধের বিলোপই পরমসুখ।”[] এই উদানটির মধ্যে ভগবান্ বুদ্ধ তাঁহার সাধনার সংক্ষিপ্ত বিবরণই বলিয়া থাকিবেন। তিনি যে সত্যলাভ করিলেন তাহা লোকসমাজে প্রচার করিবেন কিনা পঞ্চম সপ্তাহে এই চিন্তা তাঁহার মনে উদিত হইয়াছিল। সংশয় দূর হইবার পরে, তিনি যখন তাঁহার অমৃতমণ্ড সকলকে পান করাইবার জন্য কৃতসঙ্কল্প হইলেন, তখন যেন উপনিষদের ঋষির ভাষায়ই বলিলেন,—

 “অমৃত দুয়ার খুলিয়া গিয়াছে; যাহাদের কান কাছে, তাহারা শোন। শ্রদ্ধাদ্বারাই এই অমৃতের সাক্ষাৎকার লাভ হইবে।”[] এই বাণী ভারতবর্ষের চিরন্তন বাণী বলিয়াই মনে হয়। ধর্ম্মের মে মূলতত্ত্ব তিনি ব্যাখ্যা করিয়াছেন, তাহা নিজের নতুন সৃষ্টি বলিয়া চালাইবার চেষ্টা করেন নাই। তাঁহার নিজের কথায়ই মনে হয়, তিনি যেন হারানো ধন খুঁজিয়া বাহির করিরাছিলেন। সূত্রপিটকে সংযুক্ত নিকায়ে তিনি বলিয়াছেন,—

 “পার্ব্বত্যপথে চলিবার সময়ে কোন ব্যক্তি প্রাচীনকালের একটি পথ দেখিতে পাইলেন। সেই পথে প্রাচীনকালে কত লোক যাতায়াত করিত। সেই পথে চলিতে চলিতে তিনি সেকালের একটি পুরী দেখিলেন। মনোহর সে পুরী, তথাকার প্রাসাদ, উদ্যান কুঞ্জ, সরোবর ও প্রাচীরে বেষ্টিত; রমণীয় সেই স্থান। তিনি এখন কি করিবেন? ফিরিয়া আসিয়া রাজাকে কিংবা রাজমন্ত্রীকে তাহার বক্তব্য নিবেদন করিবেন এবং সেই প্রাচীন পুরী নূতন করিয়া নির্ম্মাণ করিতে অনুরোধ করিবেন। তাহা হইলে সেই নবাবিষ্কৃত প্রাচীন নগর আবার ধনে, জনে সমৃদ্ধ হইয়া উঠিবে। ভিক্ষুগণ! আমিও সেইরূপ একটি প্রাচীন পথ আবিষ্কার করিয়াছি। পুরাকালের মহাজ্ঞানীরা এই পথেই যাতায়াত করিতেন। এই পথে বিহার করিয়া আমি জন্মমৃত্যুর রহস্য বুঝিয়াছি। আমি যাহা বুঝিয়াছি তাহাই ভিক্ষুদের ও শ্রাবকদের নিকট প্রচার করিয়াছি।”

 এইখানে যাহা ব্যক্ত হইয়াছে তাহা হইতে স্পষ্টই বোঝা গেল—বুদ্ধ যে ধর্ম্মতথ্য ব্যাখ্যা করিয়াছেন তত্ত্বের দিক দিয়া তাহার মধ্যে তিনি কোনো মৌলিকতারই দাবী করিতে চাহেন না। প্রাচীন সুরায় নূতন পাত্র পূর্ণ করিয়া তিনি ধর্ম্মক্ষেত্রে অবতরণ করিয়াছিলেন। কপিল ও পতঞ্জলি প্রভৃতির প্রাচীন ভারতের দার্শনিক পণ্ডিতগণ মহাপুরুষ বুদ্ধের আবির্ভাবের পূর্ব্বেই তাহাদের দার্শনিক নানা মত সুকৌশলে ব্যক্ত করিয়াছেন। তত্ত্বের দিক দিয়া বুদ্ধ তাহাদেরই পন্থা অনুসরণ করিয়া থাকিবেন। তথাপি তিনি যাহা বলিয়াছেন তাহা অপূর্ধ্ব। পণ্ডিতবর মোক্ষমূলর ধর্ম্ম চক্র-প্রবর্ত্তন সূত্রের ভূমিকায় বলিয়াছেন— “Never in the history of the world had a scheme of salvation been put forth so simple in its nature, so free from any super-human agency,”—“পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেহ মুক্তির বাণী এমন সরলভাবে, এমন অতিপ্রাকৃত বর্জ্জন করিয়া বিবৃত করেন নাই।”

 পিটক অবলম্বন করিয়া পণ্ডিতেরা এই মুক্তি বা নির্ব্বাণকে তিনভাবে ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন। (১) নির্ব্বাণ——শূন্য, বিনাশ, মহাবিনাশ, অহং বোধের বিলোপ সাধন করিয়া গভীর শূন্যতার মধ্যে নিমজ্জন। (২) নির্ব্বাণ এক পরম রহস্য—স্বয়ং বুদ্ধ ইহার স্বরূপ খোলাখুলি বলেন নাই। (৩) নির্ব্বাণ মানব জীবনের গৌরবময়, সুখকর ও কল্যাণকর পরিণাম। এই সকল বিভিন্ন মতের কোন সমাধান আছে কিনা, তাহার আলোচনা করিবার অধিকার বিশেষজ্ঞ সুধীবর্গেরই আছে সুতরাং সেই আলোচনার দিকে আমরা যাইব না।

 সাধারণ বুদ্ধিতেই ইহা মনে হয় যে, বিশেষ একটি আকর্ষণ ভিন্ন মানুষ কোনোখানে দল বাঁধিতে চায় না। মহাপুরুষ বুদ্ধ যখন তাঁহার নবলব্ধ সত্যপ্রচারের জন্য লোকসমাজে আসিয়া উপস্থিত হইলেন, তখন তাঁহার চারিদিকে ধীরে ধীরে দল জমিয়া উঠিয়াছিল। তাঁহার সঙ্গ, তাঁহার চরিত্র, তাহার বাণী মনুষ্যকে নিঃসন্দেহ অতুল আনন্দ দান করিয়াছিল। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, তিনি মানুষের কাছে ঈশ্বরের নাম করেন নাই, আত্মাপরমাত্মার জটিল তত্ত্বকে তিনি একেবারে আমলই দিলেন না, অতি-প্রাকৃত কোনো-কিছুর কথা কহিলেন না; অথচ ছোটবড়, উচ্চ-নীচ সকলেই তাঁহার ধর্ম্ম ও সংঘ আগ্রহসহকারে স্বীকার করিল।

 সংঘের আদিম শিষ্যেরা তাঁহার কাছে কি পাইলেন? যাহা পাইলেন তাহা আর যাহাই হউক “শূন্য” নহে, “না” নহে। তাহা আশা আনন্দ, তাহা অভয় ও অশোক। শিষ্যেরা যাহা পাইলেন তাহা অনির্ব্বচনীয়; এবং তাহা এমন যাহার জন্য তাঁহারা অনায়াসে সাংসারিক সুখভোগ বর্জ্জন করিতে পারিয়াছিলেন! ঋষিরা যাহাকে বাক্যের মনের অগোচর বলিয়াছেন, সেই পরম সত্য মহাপুরুষ বুদ্ধের স্তব্ধ-শান্ত উপলব্ধির গোচর হইয়াছিল। এই সত্য লাভ করিয়াছিলেন বলিয়া তিনি বলিতে পারিয়াছেন, “অমৃতের দুয়ার খুলিয়া গিয়াছে” এবং পৃথিবীর নরনারী এই অমৃতের জন্যই তাঁহার ধর্ম্ম বরণ করিয়াছে!

 মহাপুরুষেরা মানবজাতির হৃদয়-সরোবরের প্রস্ফুটিত শ্বেত শতদল। তাঁহারা অম্লান জ্যোতিঃতে মানবহৃদয়ে নিত্যকাল বিরাজ করিতেছেন। মানুষের মনো-ভ্রমর গন্ধ, বর্ণ, মধুলোভে উন্মত্ত হইয়া এই কমলই আশ্রয় করিয়া থাকে। মহাপুরুষ বুদ্ধ সকল মানবের এমনই আশ্রয়স্থল ছিলেন। সিংহলী কবি মেধাঙ্কর তাঁহার “জিনচরিত” গ্রন্থে এই মহাপুরুষকে “নিব্বানমধুদং” বলিয়াই প্রণাম নিবেদন করিয়াছেন।

 এই নির্ব্বাণমধুলাভ করিবার জন্য ভিক্ষুকে সকল জীবের সুখ ও কল্যাণ ভাবনা করিতে হইবে। তাঁহাকে বুদ্ধের অনুশাসন প্রসন্ন মনে মানিয়া চলিতে হইবে। এইরূপ জীবন যাপন করিতে করিতে যখন তাঁহার বাসনার উপশম হইবে তখন তিনি সুখকর শাশ্বত নির্ব্বাণ প্রাপ্ত হইবেন। ধম্মপদে উক্ত লইয়াছে—

মেত্তাবিহারী যো ভিক খু পসন্নো বুদ্ধ সাসনে।
অধিগচ্ছে পদং সন্তং সঙ্খারূপসমং সুখং॥

নির্ব্বাণ-মধু বা অমৃতলাভের জন্য বুদ্ধ তাঁহার শিষ্যকে সাধনার যে পথ নির্দ্দেশ করিয়া দিয়াছেন, তাহা ইন্দ্রিয়বিজয়ের কল্যাণ-পন্থা। সাধককে প্রত্যেক পাদবিক্ষেপে সংযত হইয়া পথ চলিতে হয়। এই চলার পথেও তিনি আনন্দ লাভ করিয়া থাকেন:—

 “নিদ্দরো হোতি নিপ্পাপো ধম্মপীতি রসংপিব” ধর্ম্মপ্রীতিরস পান করিতে করিতে সাধক নির্ভীক ও নিষ্পাপ হইয়া থাকেন। নিষ্পাপ হইবার জন্য সাধক যে মানস-সংগ্রাম করেন, সেই সংগ্রামে আনন্দ আছে; এবং তিনি যখন জয়লাভ করেন, সেই বিজয়গৌরবেও আনন্দ আছে। সাধনপথে প্রত্যহ আনন্দরস পান করিতে করিতে সাধকের চিত্ত বিকশিত হইয়া উঠে, তিনি সকল পাপ পরিহার করিয়া সকল মঙ্গলের অনুষ্ঠান করেন। তিনি যে সুখ লাভ করেন তাহা ভোগের সুখ নহে, ত্যাগের সুখ, সংযমের সুখ। এই সুখকেই পরম আনন্দ বলিয়া বৌদ্ধশাস্ত্র প্রকাশ করিয়াছেন। এই সাধনার শেষেই তিনি “নিব্বানং পরমং সুখং” লাভ করেন। নির্ব্বাণ ও বিশ্বমৈত্রীর বক্তা ও প্রচারক ভগবান্ বুদ্ধ তাঁহার শিষ্যদিগকে অষ্টাঙ্গিক সাধনা ও ধ্যানের কথা শুনাইয়াই তাঁহার কর্ত্তব্য শেষ করেন নাই। তিনি তাঁহার সংঘের ভিক্ষুদিগকে সংঘের নিকটে, লোকসমাজে এবং আপনাদের অন্তরে বাহিরে সত্য হইবার জন্য উপদেশ দিয়াছেন। বৌদ্ধভিক্ষু এইরূপে সকলদিক দিয়া সত্য হইয়াই পরিণামে বৃহৎ সত্যের সাক্ষাৎকার লাভ করেন।

 বিনয়-পিটকে ভিক্ষুজীবনের প্রতিপাল্য নিয়মাবলী, আহার বিহার, বেশভূষা প্রভৃতি সকল বিষয়ের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম খুঁটিনাটি এমন বিস্তৃত-ভাবে আলোচিত হইয়াছে যে, সেগুলি কেহ বাহুল্য মনে করিতে পারেন। সংঘের যখন উদ্ভব হইয়াছিল, সেই সুদূর অতীতকালের সহিত আমাদের ঐতিহাসিক যোগসূত্র এমন ছিন্ন হইয়া গিয়াছে যে, এখন আমরা সকল কথা কিছুতেই বঝিতে পারিব না। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, প্রাচীন বৌদ্ধ সংঘের মধ্যে সভ্যতার এমন একটি উজ্জ্বল ছবি দৃষ্ট হয় যে, সে ছবির গৌরব কখনো ম্লান হইবে না।

 নির্ব্বাণ বা মুক্তিলাভের বাসনা ছোটবড় পণ্ডিত-মূর্খ সাধু-অসাধু, ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল, আর্য্য-অনার্য্য সকলের মনেই স্বভাবতঃ জাগিয়া থাকে। বুদ্ধ এই জন্য সাধনার পথটি এমন সুনির্দ্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন যে, সেখানে কাহাকেও অন্ধকারে হাত্‌ড়াইতে হইবে না। তিনি স্বয়ং যাহাদের কাছে ধর্ম্মব্যাখা করিয়াছেন তাহাদের অধিকাংশই অনার্য্য ও অশিক্ষিত। সুতরাং তিনি সোজা কথা, সাধারণের ভাষায় সরস আখ্যান সৃষ্টি করিয়া, শিষ্যদিগকে শিক্ষা দিয়াছেন। শিষ্যেরা যাহাতে কথাগুলি মনে রাখিতে পারে, সেইজন্য তিনি এককথার পুনরুক্তি করিতেও দ্বিধা মনে করেন নাই। এই পুনরুক্তি সুপণ্ডিত ব্যক্তির পক্ষে অনাবশ্যক হইতে পারে কিন্তু শাস্ত্রজ্ঞানহীন সাধারণ শ্রোতার কাছে তাহা অত্যাবশ্যক ছিল। সংঘে প্রবেশের দ্বার খুলিয়া দিয়া তিনি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিমাত্রকেই আহ্বান করিলেন। সে আহ্বান যাহাদের মর্ম্ম স্পর্শ করিয়াছিল, তাহারা শোকেতাপে জর্জ্জরিত বলিয়াই তাঁহার শরণাপন্ন হইয়াছিল। সংসার ত্যাগ করিয়া সঙ্ঘে প্রবেশাধিকার পাইলেই, কেহ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহের হাত এড়াইলেন এমন হইতেই পারে না। তাঁহাকে প্রত্যেক মহূর্ত্তে এই সকলের সহিত সংগ্রাম করিয়া সাধনপথে অগ্রসর হইতে হয়। সাধনার প্রভাবে একদিন বিষয়বাসনা সংযত করিয়া তিনি উপশান্ত হইবেন সন্দেহ নাই। সে দিন তাঁহার দেহ শান্ত, বাক্য শান্ত ও চিত্ত শান্ত হইবে।

 কিন্তু এই বাঞ্ছিত জীবনলাভের পূর্ব্বে সংঘের ভিক্ষু সাধারণ মানুষ মাত্র; সুতরাং তাহার সাধনার পথের সমস্ত বাধা তাহার নিকটে বিস্তৃত ভাবে বর্ণনা করিবার প্রয়োজন আছেই। ছোট ছোট দুর্ব্বলতাগুলি মানুষকে কতখানি দুর্ব্বল ও অসহায় করিয়া ফেলে লোক-শিক্ষক বুদ্ধ তাহা সম্যক জ্ঞাত ছিলেন বলিয়াই, তিনি গৃহত্যাগী ভিক্ষুকেও আচারে ব্যবহারে, আহারে-বিহারে কোন দিক্ দিয়া বিন্দুমাত্র অশিষ্ট বা উচ্ছৃঙ্খল হইতে দিতেন না। ভিক্ষর জীবনে কোন কার্য্যে শিথিলতা বা নিরুদ্যম প্রকাশ পাইবে না। ভিক্ষুকে সংঘের ও সমাজের মধ্যে সর্ব্বত্রই সমভাবে ভদ্র হইতে হইবে।

 ধর্ম্মনৈতিক উচ্চ উপদেশের সঙ্গে সঙ্গে ভিক্ষুকে বিশেষ করিয়া বলা হইল যে, আর কোন ভিক্ষুর প্রতি দুর্ব্বাক্য ব্যবহার, কাহাকেও নিন্দা করা, কাহারও প্রতি অযথা দোষারোপ, ভিক্ষুমণ্ডলীর সহিত অকারণ বাগ্ বিতণ্ডা বা ছলনা ক্রোধের বশবর্ত্তী হইয়া কাহাকেও সংঘের আবাসস্থান হইতে বহিষ্কৃত করা কিংবা আঘাত করা তাঁহার পক্ষে নিষিদ্ধ। যখন অপর ভিক্ষুরা কলহ করেন তিনি আড়ালে থাকিয়া তাঁহাদের বিবাদ শুনিবেন না। কোন কার্য্যের আরম্ভে তিনি সম্মতি দিয়া পরে কখনো তাহাতে আপত্তি তুলিতে পারিবেন না। সংঘের ভিক্ষুরা যখন কোন প্রশ্নের মীমাংসার জন্য সম্মিলিত হইবেন তখন তিনি নিজের মত না জানাইয়া চলিয়া যাইতে পারিবেন না। যাহাতে সঙ্ঘে ভিক্ষুদের ভেদসংঘটন হইতে পারে, তিনি স্বয়ং এমন আচরণ করিবেন না, কিংবা অন্য কাহারো দৃষ্টি তেমন কোন বিষয়ে আকর্ষণ করিবেন না।

 সংঘের সমস্ত দ্রব্যাদি সংঘবাসীদের সাধনার সম্পত্তি। সেইগুলি রক্ষার সম্বন্ধে ভিক্ষুকে উদাসীন হইলে চলিবে না। শয্যা, আসন, পীঠ প্রভৃতি কোন জিনিষ যদি তিনি রৌদ্রে বা বাতাসে বাহির করেন, কিম্বা অন্যের দ্বারা বাহির করাইয়া থাকেন, তাহা হইলে, সেগুলি তুলিয়া না রাখিয়া কিম্বা তোলাইবার ব্যবস্থা না করিয়া স্থানান্তরে যাইতে পারিবেন না। সংঘের অভ্যন্তরস্থ গৃহের শয্যা ও আসনগুলির উপর ধপাস করিয়া তাড়াতাড়ি শয়ন বা উপবেশন নিষিদ্ধ। এইরূপ করিলে দ্রব্যাদি ভাঙ্গিয়া চুরিয়া সমস্ত গৃহ শ্রীহীন হইবার কথা।

 গৃহত্যাগী ভিক্ষুকে তাঁহার বৃহৎ ধর্ম্মপরিবারের মধ্যে এইরূপ সংযত ও শিষ্ট হইতে হইবে। তাঁহার আহার প্রণালীও অশোভন বা অসংযত হইলে চলিবে না। ছোট গোলাকার গ্রাস তুলিয়া তিনি মুখে দিবেন, আহার্য্য দ্রব্য মুখের কাছাকাছি আসিবার পূর্ব্বেই মুখব্যাদান করিবেন না। খাবার জিনিষগুলি সমস্ত হাতে মাখা, সমস্ত হাতটা মুখের ভিতর প্রবেশ করান, গ্রাসগুলি হাতে লইয়া নাড়াচাড়া, খাইতে খাইতে গ্রাসগুলি মুখে পুরিয়া অনাবশ্যক নাড়াচাড়া, গাল ফুলান, আহার সময়ে হাত ঝুলান, ভাত ছড়ান, জিভ্ বাহির করা, হুস্‌হাস্ শব্দ করা, আঙ্গুল, ওষ্ঠ, অধর কিম্বা ভোজন পাত্র লেহন, এবং উচ্ছিষ্ট হাতে জলপাত্র ধারণ নিষিদ্ধ।

 জনপদে যাতায়াত বা বাস করিবার সময়েও ভিক্ষুকে সর্ব্বতোভাবে ভদ্র হইতে হইবে। পরিশুদ্ধ বহির্ব্বাস ও অন্তর্ব্বাস দ্বারা তিনি সকল অঙ্গ আবৃত করিবেন, তাঁহার হাঁটু ও নাভি দেখা যাইবে না, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযত হইবে ও তিনি অধোদৃষ্টিতে রহিবেন। কি চলিবার সময়ে, কি স্থিরভাবে অবস্থান সময়ে—তিনি কখনও উচ্চহাস্য করিতে পারিবেন না, এবং মৃদু কণ্ঠে কথা কহিবেন। তাঁহার পক্ষে এই সময়ে, শরীর, মস্তক ও বাহু দোলান নিষিদ্ধ। কটিদেশে হাত রাখিয়া, কিম্বা মস্তকে অবগুণ্ঠন দিয়া তিনি জনপদে বিচরণ করিতে পারিবেন না।

 লোকালয়ে নরনারীর সম্মুখে তিনি সোজা হইয়া বসিবেন; কাৎ হইয়া চিৎ হইয়া বা জানুর উপর চীবর তুলিয়া বসিবেন না। তাঁহাকে পিণ্ডপাত্রের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া আদরপূর্ব্বক প্রয়োজনানুরূপ আহার্য্য গ্রহণ করিতে হইবে। যাহাতে পিণ্ডদাতা গৃহীর অসুবিধা ঘটিতে পারে, কিম্বা ভিক্ষুর মমুখরোচক উপাদেয় আহার্য্য গ্রহণের প্রতি লালসা প্রকাশ পাইতে পারে—ভগবান্ বুদ্ধ এমন অসংযত ব্যবহারের কদাচ প্রশ্রয় দিতেন না। নিয়ম আছে, সুস্থকায় ভিক্ষুরা পান্থশালায় একবেলামাত্র আহার করিতে পারিবেন। দিবা দ্বিপ্রহরের পরে পিণ্ডগ্রহণ নিষিদ্ধ। দল বাঁধিয়া পাঁচ ছয় জনে কাহারো গৃহে ভিক্ষায় যইবেন না। গৃহী যেমন ভাবে যাহার পরে যাহা খাইতে দিবেন, ভিক্ষুরা তেমনি আহার করিবেন। “আগে ইহা চাই” এমন ভাবে ফরমাস করিতে পারিবেন না। সুস্থকায় ভিক্ষু কখনো মধু নবনীতাদি চাহিয়া খাইতে পারিবেন না। কোন ভিক্ষু ভোজন সমাপ্ত করিবার পরে অন্য কোন ভিক্ষু তাঁহাকে আহার করিবার জন্য অনুরোধ করিতে পারিবেন না। সময়ান্তরে আহার করিবার জন্য ভিক্ষু কোন খাদ্যদ্রব্য সরাইয়া রাখিতে পারিবেন না। কোনো গৃহী ভিক্ষুকে যত খুসী আহার গ্রহণ করিতে অনুরোধ করিলেও, তিনি দুই তিন পাত্রের বেশী লইবেন না। ঐ খাদ্য অন্য ভিক্ষুদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিবেন। কোন ভিক্ষু ভোজবেলায় বলপূর্ব্বক কোন গৃহীর ঘরে প্রবেশ করিবেন না।

 ভিক্ষুরা যেখানে-সেখানে যাকে-তাকে বিনা প্রয়োজনে উপদেশ দিয়া বেড়াইবেন—লোকশ্রেষ্ঠ বুদ্ধের অনুশাসন তেমন হইতেই পারে না। যে ব্যক্তি বিলাসে মগ্ন, উপদেশ পাইবার নিমিত্ত যাহার মনে আগ্রহ জাগিয়া উঠে নাই, অথবা যাহার শ্রদ্ধা নাই, তাহাকে ধর্ম্ম কথা শুনান নিষিদ্ধ। ভিক্ষু কখনো ছত্রধারী, যষ্টিধারী, অস্ত্রধারী পাদুকাপরিহিত, যানারোহী, শায়িত, হেলান দিয়া উপবিষ্ট, উষ্ণীষধারী কিম্বা রোগী ব্যক্তিকে ধর্ম্মোপদেশ দিবেন না। পথিমধ্যে ধর্ম্মকথা শুনান বিধেয় নহে

 ছোট বড় এমন অনেক বিধিনিষেধ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে মানিয়া চলিতে হইত। বৌদ্ধ গৃহী বা শ্রাবকেরও প্রতিপাল্য নিয়মের অভাব নাই। বৌদ্ধসাধনা বাসনা বর্জ্জনের সাধনা হইলেও প্রকৃত বৌদ্ধ ঘরে-বাহিরে, বিহারে-জনপদে কোনোখানেই শিষ্টতা, ভদ্রতা ও লৌকিকতা বর্জ্জন করিতে পারেন না। বৈরাগ্যের উচ্চ চূড়ায় আরোহণ করিয়া তিনি যদি সংসারের সাধারণ লোকের সুখ সুবিধা উপেক্ষা করিয়া, সমাজের উপদ্রবের কারণ হন, তাহা হইলে তিনি অপরাধী বলিয়া গণ্য হইতেন।

 বৈরাগ্যের সাধক হইলেও বুদ্ধ-শিষ্যের আচরণে কোন শিথিলতা, অশিষ্টতা ও জড়তা স্থান পাইত না। ইহারই ফলে সংঘের মধ্যে যে অপর্ব্ব সভ্যতার বিকাশ হইয়াছিল, তাহা এক সময়ে সমগ্র ভারতবর্ষ সাদরে গ্রহণ করিয়াছিল। বুদ্ধ-শিষ্যদের শিক্ষণীয় শিষ্টতা এক্ষণে ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসের অস্পষ্ট অন্ধকার মধ্যে বিলুপ্ত হইয়া থাকিলেও উপেক্ষনীয় নহে।


  1. সুখো বিবেকো তুট্‌ঠস্‌স, সুতধম্মস্‌স পস্‌সতো,
    অব্যাপজ কং সুখং লোকে পাণভূতেসু সংযমো।
    সুখা বিরাগতা লোকে কামানং সমতিক্কমো,
    অগ্নিমানস্‌স যো বিনয়ো এতং বে পরমং সুখং। (মহাবগ্‌গ)

  2. অপারূতা তেসং অমতস্‌স ধারা
    যে সোতবন্তো পমুঞ্চন্তু সদ্ধং,
    বিহিংসসঞ্‌ঞী পগুণং ন ভাসিং,
    ধম্মং পণীতং মনুজেসু ব্রহ্মে। (মহাবগ্‌গ)