বৌ-ঠাকুরাণীর হাট/চতুর্থ পরিচ্ছেদ
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
বিজন পথের ধারে অশথ গাছের তলায় বাহকশূন্য ভূতলস্থিত এক শিবিকার মধ্যে বৃদ্ধ বসন্তরায় বসিয়া আছেন। কাছে আর কেহ নাই, কেবল একটি পাঠান শিবিকার বাহিরে। একটা জনকোলাহল দূরে মিলাইয়া গেল। রজনী স্তব্ধ হইয়া গেল। বসন্তরায় জিজ্ঞাসা করিলেন—
“খাঁ সাহেব, তুমি যে গেলে না?”
পাঠান কহিল “হুজুর, কি করিয়া যাইব? আপনি আমাদের ধন প্রাণ রক্ষার জন্য আপনার সকল অনুচরগুলিকেই পাঠাইলেন। আপনাকে এই পথের ধারে রাত্রে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলিয়া যাইব, এত বড় অকৃতজ্ঞ আমাকে ঠাহরাইবেন না। আমাদের কবি বলেন, যে আমার অপকার করে সে আমার কাছে ঋণী, পরকালে সে ঋণ তাহাকে শােধ করিতে হইবে; যে আমার উপকার করে আমি তাহার কাছে ঋণী, কিন্তু কোন কালে তাহার সে ঋণ শোধ করিতে পারিব না।”
বসন্তরায় মনে মনে করিলেন, বাহবা, নােকটা ত বড় ভাল। কিছুক্ষণ বিতর্ক করিয়া পাল্কী হইতে তাঁহার টাকবিশিষ্ট মাথাটি বাহির করিয়া কহিলেন, “খাঁ সাহেব, তুমি বড় ভাল লােক।”
খাঁ সাহেব তৎক্ষণাৎ এক সেলাম করিলেন। এ বিষয়ে বসন্তরায়ের সহিত খাঁ সাহেবের কিছুমাত্র মতের অনৈক্য ছিল না। বসন্তরায় মশালের আলােকে তাহার মুখ নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন “তোমাকে বড়ঘরের লােক বলিয়া মনে হইতেছে।”
পাঠান আবার সেলাম করিয়া কহিল “কেয়া তাজ্জব, মহারাজ, ঠিক ঠাহরাইয়াছেন।”
বসন্তরায় কহিলেন “এখন তােমার কি করা হয়?”
পাঠান নিশ্বাস ছাড়িয়া কহিল “হুজুর দুরবস্থায় পড়িয়াছি, এখন চাষ বাস করিয়া গুজরান্ চালাইতে হইতেছে। কবি বলিতেছেন—“হে অদৃষ্ট, তুমি যে তৃণকে তৃণ করিয়া গড়িয়াছ, ইহাতে তােমার নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পায় না, কিন্তু তুমি যে অশথ গাছকে অশথ গাছ করিয়া গড়িয়া অবশেষে ঝড়ের হাতে তাহাকে তৃণের সহিত সমতল করিয়া শােয়াও ইহাতেই আন্দাজ করিতেছি, তােমার মনটা পাথরে গড়া!”
বসন্তরায় নিতান্ত উল্লসিত হইয়া বলিয়া উঠিলেন “বাহবা, বাহবা, কবি কি কথাই বলিয়াছেন। সাহেব, যে দুইটি বয়েৎ আজ বলিলে, ঐ দুইটি লিখিয়া দিতে হইবে।”
পাঠান ভাবিল, তাহার অদৃষ্ট সুপ্রসন্ন। বুড়া লােক বড় সরেস; গরীবের বহুৎ কাজে লাগিতে পারিবে। বসন্তরায় ভাবিলেন, আহা, এককালে যে ব্যক্তি বড়লোক ছিল আজ তাহার এমন দুরবস্থা! চপলা লক্ষ্মীর এ বড় অত্যাচার! মনে মনে তিনি কিছু কাতর হইলেন, পাঠানকে কহিলেন—
“তােমার যে রকম সুন্দর শরীর আছে, তাহাতে ত তুমি অনায়াসে সৈন্যশ্রেণীতে নিযুক্ত হইতে পার।”
পাঠান তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিল “হুজুর পারি বৈকি! সেই ত আমাদের কাজ। আমার পিতা পিতামহেরা সকলেই তলােয়ার হাতে করিয়া মরিয়াছেন, আমারে সেই এক মাত্র সাধ আছে। কবি বলেন,—
বসন্তরায় হাসিতে হাসিতে কহিলেন “কবি যাহাই বলুন বাপু, আমার কাজ যদি গ্রহণ কর, তবে তলোয়ার হাতে করিয়া মরিবার সাধ মিটিতেও পারে, কিন্তু সে তলোয়ার খাপ হইতে খোলা তোমার ভাগ্যে ঘটিয়া উঠিবে না। বুড়া হইয়া পড়িয়াছি, প্রজারা সুখে স্বচ্ছন্দে আছে, ভগবান্ করুন্, আর যেন লড়াই করিবার দরকার না হয়। বয়স গিয়াছে; তলোয়ার ত্যাগ করিয়াছি। এখন তলোয়ারের পরিবর্ত্তে আর একজন আমার পাণিগ্রহণ করিয়াছে।” এই বলিয়াই পার্শ্বে শায়িত সহচরী সেতারটিকে দুই একটি ঝঙ্কার দিয়া একবার জাগাইয়া দিলেন।
পাঠান ঘাড় নাড়িয়া চোখ বুঁজিয়া কহিল, “আহা, যাহা বলিতেছেন, ঠিক বলিতেছেন। একটি বয়েৎ আছে যে, তলোয়ারে শত্রুকে জয় করা যায়, কিন্তু সঙ্গীতে শত্রুকে মিত্র করা যায়।”
বসন্তরায় বলিয়া উঠিলেন “কি বলিলে খাঁ সাহেব? সঙ্গীতে শত্রুকে মিত্র করা যায়, কি চমৎকার!” চুপ করিয়া কিয়ৎক্ষণ ভাবিতে লাগিলেন, যতই ভাবিতে লাগিলেন ততই যেন অধিকতর অবাক হইতে লাগিলেন। কিছুক্ষণ পরে বয়েৎটির ব্যাখ্যা করিয়া বলিতে লাগিলেন, “তলোয়ার যে এত বড় ভয়ানক দ্রব্য তাহাতেও শত্রুর শত্রুত্ব নাশ করা যায় না,—কেমন করিয়া বলিব নাশ করা যায়?—রোগীকে বধ করিয়া রোগ আরোগ্য করা সে কেমনতর আরোগ্য? কিন্তু সঙ্গীত যে এমন মধুর জিনিষ, তাহাতে শত্রু নাশ না করিয়াও শত্রুত্ব নাশ করা যায়। এ কি সাধারণ কবিত্বের কথা? বাঃ, কি তারিফ্!” বৃদ্ধ এত দূর উত্তেজিত হইয়া উঠিলেন যে, শিবিকার বাহিরে পা রাখিয়া বসিলেন, পাঠানকে আরো কাছে আসিতে বলিলেন ও কহিলেন “তলোয়ারে শত্রুকে জয় করা যায়, কিন্তু সঙ্গীতে শত্রুকেও মিত্র করা যায়, কেমন খাঁ সাহেব?”
পাঠান—“আজ্ঞা হাঁ হুজুর।”
বসন্তরায়—“তুমি একবার রায়গড়ে যাইও। আমি যশোর হইতে ফিরিয়া গিয়া তোমার যথাসাধ্য উপকার করিব!”
পাঠান উৎফুল্ল হইয়া কহিল “আপনি ইচ্ছা করিলে কি না করিতে পারেন!” পাঠান ভাবিল, একরকম বেশ গুছাইয়া লইয়াছি। জিজ্ঞাসা করিল “আপনার সেতার বাজানাে আসে?”
বসন্তরায় কহিলেন “হাঁ।” ও তৎক্ষণাৎ সেতার তুলিয়া লইলেন। আঙুলে মেজরাপ আঁটিয়া বেহাগ আলাপ করিতে লাগিলেন। মাঝে মাঝে পাঠান মাথা নাড়িয়া বলিয়া উঠিল “বাহবা! খাসী।” ক্রমে উত্তেজনার প্রভাবে শিবিকার মধ্যে বসিয়া থাকা বসন্তরায়ের পক্ষে অসাধ্য হইয়া উঠিল। তিনি উঠিয়া দাঁড়াইয়া বাজাইতে লাগিলেন। মর্য্যাদা গাম্ভীর্য্য আত্মপর সমস্ত বিস্মৃত হইলেন ও বাজাইতে বাজাইতে অবশেষে গান ধরিলেন—“কেয়সে কাটোঙ্গী রয়ন, সো পিয়া বিনা।”
গান থামিলে পাঠান কহিল “বাঃ কি চমৎকার আওয়াজ।”
বসন্তরায় কহিলেন “তবে বােধ করি, নিস্তব্ধ রাত্রে, খােলা মাঠে সকলের আওয়াজই মিঠা গালে। কারণ, গলা অনেক সাধিয়াছি বটে, কিন্তু লােকে আমার আওয়াজের ত বড় প্রশংসা করে না। তবে কি না, বিধাতা যতগুলি রােগ দিয়াছেন তাহার সকল গুলিরই একটি না একটি ঔষধ দিয়াছেন, তেমনি যতগুলি গলা দিয়াছেন তাহার একটি না একটি শ্রোতা আছেই। আমার গলাও ভাল লাগে এমন দুটো অর্ব্বাচীন আছে। নহিলে, এত দিনে সাহেব, এ গলার দোকানপাট বন্ধ করিতাম; সেই দুটো আনাড়ি খরিদ্দার আছে, মাল চিনে না, তাহাদেরি কাছ হইতে বাহবা মিলে। অনেক দিন দুটাকে দেখি নাই, গীত গানও বন্ধ আছে; তাই ছুটিয়া চলিয়াছি; মনের সাধে গান শুনাইয়া, প্রাণের বােঝা নামাইয়া বাড়ি ফিরিব।” বৃদ্ধের ক্ষীণজ্যোতি চোখ দুটি স্নেহে ও আনন্দে দীপ্যমান হইয়া উঠিল।
পাঠান মনে মনে কহিল “তােমার একটা সাধ মিটিয়াছে, গান শুনানো হইয়াছে, এখন প্রাণের বোঝাটা আমিই নামাইব কি? তােবা, তােবা, এমন কাজও করে! কাফেরকে মারিলে পুণ্য আছে বটে, কিন্তু সে পুণ্য এত উপার্জ্জন করিয়াছি যে, পরকালের বিষয়ে আর বড় ভাবনা নাই, কিন্তু ইহকালের সমস্তই যে প্রকার বেবন্দোবস্ত দেখিতেছি, তাহাতে কাফেরটাকে না মারিয়া যদি তাহার একটা বিলিবন্দেজ করিয়া লইতে পারি তাহাতে আপত্তি দেখিতেছি না।”
বসন্তরায় কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া আর থাকিতে পারিলেন না; তাঁহার কল্পনা উত্তেজিত হইয়া উঠিল; পাঠানের নিকটবর্ত্তী হইয়া অতি চুপি চুপি কহিলেন “কাহাদের কথা বলিতেছিলাম, সাহেব, জান? তাহারা আমার নাতি ও নাতনী।” বলিতে বলিতে অধীর হইয়া উঠিলেন, ভাবিলেন, “আমার অনুচরেরা কখন ফিরিয়া আসিবে।” আবার সেতার লইয়া গান। আরম্ভ করিলেন।
একজন অশ্বারােহী পুরুষ নিকটে আসিয়া কহিল “আঃ বাঁচিলাম। দাদা মহাশয়, পথের ধারে এত রাত্রে কাহাকে গান শুনাইতেছ?”
আনন্দে ও বিস্ময়ে অভিভূত বসন্তরায় তৎক্ষণাৎ তাঁহার সেতার শিবিকা উপরে রাখিয়া উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া নামাইলেন ও তাঁহাকে দৃঢ়রূপে আলিঙ্গন করিলেন; জিজ্ঞাসা করিলেন “খবর কি দাদা? দিদি ভাল আছে ত?”
উদয়াদিত্য কহিলেন “সমস্তই মঙ্গল।”
তখন বৃদ্ধ হাসিতে হাসিতে সেতার তুলিয়া লইলেন ও পা দিয়া তাল রাখিয়া মাথা নাড়িয়া গান আরম্ভ করিয়া দিলেন।
“বঁধুয়া অসময়ে কেন হে প্রকাশ?
সকলি যে স্বপ্ন বলে হতেছে বিশ্বাস।
চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে ছিলে, সেথায় ত আদর মিলে?
এরি মধ্যে মিটিল কি প্রণয়েরি আশ!
এখনো ত রয়েছে রাত এখনো ত হয় নি প্রভাত,
এখনো এ রাধিকার ফুরায়নি ত অশ্রুপাত।
চন্দ্রাবলীর কুসুমসাজ এখনি কি শুকাল’ আজ?
চকোর হে, মিলাল, কি সে চন্দ্র মুখের মধুর হাস?”
উদয়াদিত্য পাঠানের দিকে চাহিয়া বসন্তরায়কে কানে কানে জিজ্ঞাসা করিলেন, “দাদা মহাশয় এ কাবুলি কোথা হইতে জুটিল?”
বসন্তরায় তাড়াতাড়ি কহিলেন “খাঁ সাহেব, বড় ভাল লোক। সমজ্দার ব্যক্তি। আজ রাত্রি বড় আনন্দে কাটান গিয়াছে।”
উদয়াদিত্যকে দেখিয়া খাঁ সাহেব মনে মনে বিশেষ চঞ্চল হইয়া পড়িয়াছিল, কি করিবে ভাবিয়া পাইতেছিল না।
উদয়াদিত্য পিতামহকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “চটিতে না গিয়া এখানে যে?”
পাঠান সহসা বলিয়া উঠিল “হুজুর আশ্বাস পাই ত একটা বলি। আমরা রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রজা। মহারাজ আমাকে ও আমার ভাইকে আদেশ করেন যে, আপনি যখন যশোহরের মুথে আসিবেন, তথন পথে আপনাকে খুন করা হয়!”
বসন্তরায় চমকিয়া কহিয়া উঠিলেন “রাম, রাম, রাম!”
উদয়াদিত্য কহিলেন “বলিয়া যাও!”
পাঠান—“আমরা কখন এমন কাজ করি নাই, সুতরাং আপত্তি করাতে তিনি আমাদিগকে নানাপ্রকার ভয় দেখান। সুতরাং বাধ্য হইয়া এই কাজের উদ্দেশে যাত্রা করিতে হইল। পথের মধ্যে আপনার সহিত সাক্ষাৎ হইল। আমার ভাই গ্রামে ডাকাত পড়িয়াছে বলিয়া কাঁদিয়া কাটিয়া আপনার অনুচরদের লইয়া গেলেন। আমার উপর এই কাজের ভার ছিল। কিন্তু, মহারাজ, যদিও রাজার আদেশ, তথাপি এমন কাজে আমার কোন মতেই প্রবৃত্তি হইল না। কারণ, আমাদের কবি বলেন, রাজার আদেশে প্রভুর আদেশে সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস করিতে পার কিন্তু সাবধান, স্বর্গের এক কোণও ধ্বংস করিও না। এখন গরীব, মহারাজের শরণাপন্ন হইল। দেশে ফিরিয়া গেলে আমার সর্ব্বনাশ হইবে। আপনি রক্ষা না করিলে আমার আর উপায় নাই!” বলিয়া যোড়হাত করিয়া দাঁড়াইল।
বসন্তরায় অবাক হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। কিছুক্ষণ পরে পাঠানকে কহিলেন—“তোমাকে একটি পত্র দিতেছি তুমি রায়গড়ে চলিয়া যাও। আমি সেখানে ফিরিয়া গিয়া তোমার একটা সুবিধা করিয়া দিব।”
উদয়াদিত্য কহিলেন “দাদা মহাশয়, আবার যশোহরে যাইবে না কি?”
বসন্তরায় কহিলেন “হাঁ ভাই!”
উদয়াদিত্য অবাক হইয়া কহিলেন “সে কি কথা!”
বসন্তরায়—“প্রতাপ আমার ত আর কেহ নয়, সহস্র অপরাধ করুক, সে আমার নিতান্তই স্নেহভাজন! আমার নিজের কোন হানি হইবে বলিয়া ভয় করি না। আমি ত ভাই, ভবসমুদ্রের কুলে দাড়াইয়া; একটা ঢেউ লাগিলেই আমার সমস্ত ফুরাইল। কিন্তু এই পাপকার্য্য করিলে প্রতাপের ইহকালের ও পরকালের যে হানি হইত, তাহা ভাবিয়া কি আমি নিশ্চিন্ত থাকিতে পারি? তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া একবার সমস্ত বুঝাইয়া বলি।”
বলিতে বলিতে বসন্তরায়ের চোখে জল আসিল। উদয়াদিত্য দুই হস্তে তাঁহার চক্ষু আচ্ছাদন করিলেন।
এমন সময়ে কোলাহল করিতে করিতে বসন্তরায়ের অনুচরগণ ফিরিয়া আসিল।
“মহারাজ কোথায়? মহারাজ কোথায়?”
“এইখানেই আছি বাপু, আর কোথায় যাইব?”
সকলে সমস্বরে বলিল—“সে নেড়ে বেটা কোথায়?”
বসন্তরায় বিব্রত হইয়া মাঝে পড়িয়া কহিলেন “হাঁ হাঁ বাপু, তােমার খাঁ সাহেবকে কিছু বলিও না।”
প্রথম—“আজ মহারাজ, বড় কষ্ট পাইয়াছি, আজ সে—”
দ্বিতীয়—“তুই থামনারে; আমি সমস্ত ভাল করিয়া গুছাইয়া বলি। সে পাঠান বেটা আমাদের বরাবর সােজা লইয়া গিয়া অবশেষে বাঁহাতি একটা আমবাগানের মধ্যে—”
তৃতীয়—“নারে সেটা বাব্লা বন।”
চতুর্থ—“সেটা বাঁহাতি নহে সেটা ডানহাতি!”
দ্বিতীয়—“দুর ক্ষেপা, সেটা বাঁহাতি।”
চতুর্থ—“তাের কথাতেই সেটা বাঁহাতি?”
দ্বিতীয়—“বাঁহাতি না যদি হইবে তবে সে পুকুরটা—”
উদয়াদিত্য—“হাঁ বাপু সেটা বাঁহাতি বলিয়াই বােধ হইতেছে তার পরে বলিয়া যাও।”
দ্বিতীয়—“আজ্ঞা হাঁ! সেই বাঁহাতি আম বাগানের মধ্যে দিয়া একটা মাঠে লইয়া গেল। কত চষা মাঠ জমি জলা বাঁশঝাড় পার হইয়া গেলাম, কিন্তু গাঁয়ের নাম গন্ধও পাইলাম না। এমনি করিয়া তিন ঘণ্টা ঘুরিয়া গাঁয়ের কাছাকাছি হইতেই সে বেটা যে কোথায় পালাইল খোঁজ পাইলাম না।”
প্রথম—“সে বেটাকে দেখিয়াই আমার ভাল ঠেকে নাই।”
দ্বিতীয়—“আমিও মনে করিয়াছিলাম এই রকম একটা কিছু হইবেই।”
তৃতীয়—“যখনি দেখিয়াছি নেড়ে, তখনই আমার সন্দেহ হইয়াছে!”
অবশেষে সকলেই ব্যক্ত করিল যে তাহারা পূর্ব্ব হইতেই সমস্ত বুঝিতে পারিয়াছিল।