"ভৈরবের মাটির পরে মোদের

         শিলদা গ্রাম ৷

   কিশোর মনির পূর্ন স্মৃতি

        নিত্য বিরাজ মান ৷৷

  রাজার বাঁধের তরল জলে

        মরুন-মাছে গরীব বাঁচে

       এমনবা পাবে কোথায় ,

এমন শান বাঁধানো ঘাট দেখতে শোভা

       পাবে না কোথাও ৷৷"

—অনেক কালের অাগের কথা ! ভৈরবের মাটি অাছে ,রাজার বাঁধ অাছে ,মরুন হয় ,মাছ কিলবিল করে ,কিশোর মনির স্মৃতি সৌধ বর্তমান ,শান বাঁধানো ঘাটও রয়েছে ৷ কিন্তু সেই জৌলুস অাভিজাত্য সপ্রতিভ নয় ৷

****শিলদা থেকে উত্তরে  মাত্র ২কিমি দুরে ছোট গ্রাম   ওড়গোদা ৷ সেখানে কয়েক শতাব্দী অাগে নির্মিত প্রায় এক প্রাচীন শৈব মন্দির বাবা ভৈরব মন্দির ৷ ধ্বংস প্রাপ্ত এঈ মন্দিরের পুজো বহূ বছর থেকে চলে অাসছে ৷ দেবী দুর্গার কৈলাস গমনের দিনে বুড়ো বাবার পুজো হয় ৷ অার একদিন হয় ধুমধাম করে এখান যাত্রার দিন ৷

বহূ দুরান্ত ভক্তমন্ডলী ও দর্শনার্থীরা অাসে পুজো দিতে ৷

**** বিজয়া দশমীর দিন থেকে ৩ দিন মেলা চলে ৷ পশ্চিমবঙ্গ ,ওড়িশা , ঝাড়খন্ড , বিহার  প্রভৃতি রাজ্য থেকে অাদিবাসী সমাজের মানুষেরা অাসে এই মেলা তে ৷ প্রচুর দোকান পাঠ বসে এই মেলাতে ৷

**** ভৈরব এত জাগ্রত বিগ্রহ  তবুও অামাদের মনে প্রশ্ন অাসে এর মন্দির প্রতিষ্ঠিত  হয়নি কেন ?হাজার হাজার ভক্তের এক এক টাকায় সুন্দর মন্দির প্রতিষ্ঠিত করা যায় অনায়াসে ৷কিন্তু কয়েক বিঘা জায়গা জুড়ে এক ফাঁকা মাঠের মাঝখানে এক ভাঙাচোরা মন্দির অবহেলায় অনাদরে ও উপেক্ষায় ৷

**** এই ইতিহীনতার পিছনে কোন কারন অাছে এই প্রশ্ন বারে বারে উঁকি মারছিল ৷ কারন রহস্য সন্ধানে তিনটি দিক উঠে এসেছে ৷ এর ইতিহাসগত কারন , ভৌগোলিক ও সংস্কৃতি গত কারন ৷

**** প্রথমে অাসি ইতিহাস গত কারন ৷ সিংহবংশীয় রাজারা শিলদায় রাজত্ব শুরু করে ওড়গোদাতে একটি শৈব মন্দির প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন ৷বিজয়া দশমীর দিনে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চুড়ান্ত দিন স্থির করা হয় ৷ এই মন্দিরের অাদল ঠিক হয় কোনারকের সূর্য মন্দিরের মত ৷ পাথর কেটে ব্লক তৈরী এই মন্দির নির্মান শুরু হয় ৷ বিজয়া দশমির অাগে মোরগ ডেকে দেই তাই নির্মানের অাগেই ভেঙে পড়েএই প্রাচীনত্বের প্রতীক ৷ এটাই জনশ্রুতি অাছে ৷ কিন্তু অামরা মানে একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান মনষ্ক মানুষ শেষ সত্য বলে ভাবতে পারছি না ৷ অামাদের মনে কৌতুহল রয়েই গেল ৷

**** এবার ভৌগোলিক কারন ৷ এই অঞ্চল মালভূমি এলাকা ৷ প্রচুর ভূমিকম্প হত ৷ শোনা যায় ভূমিকম্প হলে বাবা ভৈরব নাকি ঘাটশিলায় মা রুক্মিনীদেবির কাছে যায় ৷ অাবার মাও অাসে বাবার কাছে দেখা করতে ৷ অনুমান করা যাচ্ছে যে , বাবা ভৈরব যে স্থানে অবস্থিত সেখানে পুর্ব কালে অাগ্নেয়গিরির অবস্থান ছিল ৷এখন তা মৃতে পরিনত হয়েছে ৷বাবা  ভৈরবের মুখ জ্বালামুখ ছিল ৷তা না হলে বাবার নাকে ঘাম জমে কিভাবে ৷ সেই কারনে বাবার মূর্তি স্থাপনের মধ্যে  জ্বালামুখ বন্ধ হয় ৷প্রবল ভূমিকম্পের জেরে মন্দির ধ্বংস্ হয় ৷

**** বাবা ভৈরবের মাহাত্ম্য ধ্বংসের প্রতিমূর্তি ৷ সমস্ত কিছুকে ভেঙে গুড়িয়ে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম এই উগ্রদেব ৷ ভৈরবকে ব্রাহ্মনরা পূজো করেনা ৷মাঝি সম্প্রদায়রা  এখানে পূজো করে ৷ সমস্ত পারিপার্শ্বিক মানষের ধারনা বাবা ভৈরব মন্দির স্থাপনের মধ্যে থাকবে না ৷ ফলে সংস্কৃতিগত কারনে এর মন্দির স্থাপিত হয়নি ৷

*** এই মন্দিরের জন্য ব্যবহৃত পাথরের ষাঁড় এখনও বিরাজমান ৷পাথরের চাকা ও পড়ে অাছে কয়েক শতাব্দি ধরে খোলা অাকাশের নিচে ৷

**** যাই হোক ইতিহাস -সংস্কৃতি-ভূগোল সমস্ত কিছু বাবাভৈরব কে মুড়ে অাছে ৷ গবেষকরা তার স্থির সিদ্ধান্তে অাসতে পারবেন ৷