ব্যায়াম শিক্ষা (প্রথম ভাগ, ১৮৭৩)/২

ব্যায়ামের ফল।

 ব্যায়াম অভ্যাস করিলে শরীর পুষ্ট, বলিষ্ঠ ও দৃঢ় হয়, অনেক প্রকার শারীরিক রােগের প্রতীকার হয়, এবং অনেক প্রকার রােগ শরীরে প্রবেশ পর্য্যন্তও করিতে পারে না। ইহাতে যে কেবল শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি হয় এমত নহে, ব্যায়ামকারী প্রয়ােজনানুসারে আপন শক্তি উপযুক্ত মত ব্যবহার করিয়া ভয়ানক বিপদ হইতেও উত্তীর্ণ হইতে পারে। যে দুর্গম স্থানে অতি বলবান্ ব্যক্তি যাইতে সাহস করে না, যে ব্যক্তি রীতিমত ব্যায়াম অভ্যাস করিয়াছে, সে হস্ত পদ ও অঙ্গুলি উপযুক্ত মতে সঞ্চালন করিয়া সেই দুর্গমস্থানে অনায়াসে যাইতে পারে। যখন জগদীশ্বর আমাদিগকে শারীরিক শক্তি দিয়াছেন, তখন সেই শক্তির ঔৎকর্ষ্য সাধন করা, এবং উহাকে নানা প্রকার প্রয়ােজনের উপযােগী করা আমাদিগের একটী প্রধান কর্ত্তব্য কর্ম্ম। ব্যায়ামের দ্বারা মাংসপেশীপুষ্ট ও দৃঢ় হয়, পরিপাক শক্তি বৃদ্ধি পায়, শারীরিক বল বৃদ্ধি পায়, এবং শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পাদিত হইলে, মনও সবল এবং স্ফুর্তিযুক্ত হয়। ভারতবর্ষীয় প্রাচীন পণ্ডিতগণ ব্যায়ামের বিষয়ে যাহা লিখিয়াছেন, তাহার কিয়দংশ নিম্নে প্রকাশিত হইল।

ব্যায়ামো হি সদা পথ্যো বলিনাং স্নিগ্ধভোজিনাং।
স চ শীতে বসন্তে চ তেষাং পথ্যতমঃ স্মৃতঃ॥
সর্ব্বেধৃ, তুষু সর্ব্বৈহিমর্ত্ত্যৈরাত্মহিতার্থিভিঃ।
শক্ত্যর্দ্ধেন তু কর্ত্তব্যো ব্যায়ামো হন্ত্যতোহন্যথা॥
কুক্ষৌ ললাটে গ্রীবায়াং যদা ঘর্ম্মঃ প্রবর্ত্ততে।
শক্ত্যর্দ্ধং তং বিজানীয়া দায়তোচ্ছ্বাসিমেবচ॥
লাঘবং কর্ম্মসামর্থং ধৈর্য্যং ক্লেশসহিষ্ণুতা।
দোষক্ষয়োহগ্নিবৃদ্ধিশ্চ ব্যায়ামাদুপজায়তে॥
ব্যায়ামং কুর্ব্বতো নিত্যং বিরুদ্ধমপি ভোজনং।
বিদগ্ধ মবিদগ্ধংবা নির্দ্দোষং পরিপচ্যতে॥
নচ ব্যায়ামসদৃশমন্যৎ স্থৌল্যাপকর্ষণং।
নচ ব্যায়ামিনং মত্যংমর্দ্দয়ন্ত্যরযোবলাৎ॥
নচৈনং সহসাক্রম্য জরা সমধিগচ্ছতি।
ব্যাধয়োনোপ সর্পন্তি বৈনতেয়মিবোরগাঃ॥
ব্যায়ামক্ষুণ্ণ গাত্রস্য পদ্ভামুদ্ব র্ত্তিতস্যচ।

 বলবান্ ও স্নেহদ্রব্য ভােজনশীল ব্যক্তির ব্যায়াম সর্বওদা হিতকর; সেই ব্যায়াম ঐ সকল ব্যক্তির পক্ষে শীত ও বসন্ত ঋতুতে অধিকতর হিতকর হইয়া থাকে।

 আত্মহিতেচ্ছুক মনুষ্যমাত্রেরই সকল ঋতুতে শক্তির অর্দ্ধ পরিমাণে ব্যায়াম কর্ত্তব্য। ইহার অন্যথা করিলে ব্যায়াম কর্ত্তৃক শরীর নষ্ট হয়।

 যখন কুক্ষি, ললাট ও গ্রীবা হইতে ঘর্ম্ম নির্গত হইতে থাকে, এবং নিশ্বাস দীর্ঘ হয়, তখনই শক্তির অর্দ্ধ ব্যায়াম হইল বুঝিতে হইবে।

 ব্যায়াম দ্বারা শরীরে লঘুতা কার্য্যদক্ষতা স্থৈর্য্য ও ক্লেশসহিষ্ণুতা জন্মে, এবং দোষক্ষয় ও অগ্নিবৃদ্ধি হয়।

 যে ব্যক্তি নিত্য ব্যায়াম করে তাহার বিরুদ্ধ[১] বিদগ্ধ[২] কিম্বা অবিদগ্ধ ভােজন ও দোষ প্রকোপ না করিয়া, পরিপাক হয়।

 স্থূলতা দূর করিবার নিমিত্ত ব্যায়াম সদৃশ আর অন্য উপায় নাই। ব্যায়ামশীল ব্যক্তিকে শত্রুরা বলপূর্ব্বক ক্লেশ দিতে পারে না।

 ব্যায়ামশীল ব্যক্তিকে সহসা জ্বরা আসিয়া আক্রমণ করিতে পারে না।

 সর্প সকল যে রূপ গরুড়ের নিকট গমন করিতে পারে না, সেই রূপ যাহার শরীর ব্যায়াম দ্বারা মর্দ্দিত ও পাদ দ্বারা ঘৃষ্ট, তাহাকে কোন প্রকার ব্যাধি আক্রমণ করিতে পারে না।


  1. কতকগুলি দ্রব্যের, একত্র মিশ্রিত করিয়া, ভােজনের নিষেধ আছে সেই রূপ একত্র মিশ্রিত করিয়া যদি ভােজন করা যায় তবে তাহাকে বিরুদ্ধ ভােজন কহে যথা:—মাষকলাই ও মুগের দাল কিম্বা দুগ্ধ ও মৎস্য ইত্যাদি।}}
  2. যে দ্রব্যে অম্লদোষ জন্মে।