১২

(গোবর্দ্ধন গিরি)

নমি আমি, শৈলরাজ, তােমার চরণে—
রাধা এ দাসীর নাম—গােকুল গােপিনী;
কেনে যে এসেছি আমি তােমার সদনে—
শরমে মরমকথা কহিব কেমনে,
আমি, দেব, কুলের কামিনী!
কিন্তু দিবা অবসানে, হেরি তারে কে না জানে,
নলিনী মলিনী ধনী কাহার বিহনে—
কাহার বিরহানল তাপে তাপিত সে সরঃ
সুশােভিনী?
হে গিরি, যে বংশীধর ব্রজ-দিবাকর,
ত্যজি আজি ব্রজধাম গিয়াছেন তিনি।

নলিনী নহে গাে দাসী রূপে, শৈলেশ্বর,
তবুও নলিনী যথা ভজে প্রভাকর,
ভজে শ্যামে রাধা অভাগিনী!
হারায়ে এ হেন ধনে, অধীর হইয়া মনে,
এসেছি তব চরণে কাঁদিতে,ভূধর,
কোথা মম শ্যাম গুণমণি? মণিহারা
আমি গো ফণিনী!

রাজা তুমি; বনরাজী ব্রততী ভূষিত,
শোভে কিরীটের রূপে তব শিরােপরে;
কুসুম রতনে তব বসন খচিত;
সুমন্দ প্রবাহ—যেন রজতে রজিত—
তােমার উত্তরী রূপ ধরে;
করে তব তরুবলী, রাজদণ্ড, মহাবলি,
দেহ তব ফুলরজে সদা ধূষরিত;—
অসীম মহিমাধর তুমি, কেনা তােমা পূজে
চরাচরে?

বরাঙ্গনা কুরঙ্গিনী তােমার কিঙ্করী;

বিহঙ্গিনী দল তব মধুর গায়িনী;
যত বননারী তােমা সেবে, হে শিখরি,
সতত তােমাতে রত বসুধা সুন্দরী—
তব প্রেমে বাঁধা গাে মেদিনী!
দিবা ভাগে দিবাকর তব, দেব, ছত্রধর,
নিশাভাগে দাসী তব সুতারা শর্ব্বরী!
তােমার আশ্রয় চায় আজি রাধা, শ্যাম
প্রেম ভিখারিণী!

যবে দেব কুলপতি রুষি, মহীধর,
বরষিলা ব্রজধামে প্রলয়ের বারি,—
যবে শত শত ভীম মূর্ত্তি মেঘবর
গরজি গ্রাসিলা আসি দেব দিবাকর,
বারণে যেমনি বারণারি,—
ছত্র সম তােমা ধরি রাখিলা যে ব্রজে হরি,
সে ব্রজ কি ভুলিলা গো আজি ব্রজেশ্বর?
রাধার নয়ন জলে এবে ডােবে ব্রজ! কোথা
বংশীধারী?

হে ধীর, শরম হীন ভেবাে না রাধারে—

অসহ যাতনা দেব, সহিব কেমনে?
ডুবি আমি কুলবালা অকূল পাথারে,
কি করে নীরবে রবো শিখাও আমারে—
এ মিনতি তোমার চরণে।
কুলবতী যে রমণী, লজ্জা তার শিরোমণি—
কিন্তু এবে এ মনঃ কি বুঝিতে তা পারে!
মধু কহে লাজে হানি বাজ, ভজ, বামা,
শ্রীমধুসূদনে!