ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬৪)/১৩
১৩
(সারিকা)
১
ওই যে পাখীটী, সখি, দেখিছ পিঞ্জরে রে,
সতত চঞ্চল,—
কভু,কাঁদে, কভু গায়, যেন পাগলিনী প্রায়,
জলে যথা জ্যোতি বিম্ব—তেমতি তরল!
কি ভাবে ভাবিনী যদি বুঝিতে, স্বজনি,
পিঞ্জর ভাঙিয়া ওরে ছাড়িতে অমনি!
২
নিজে যে দুঃখিনী, পরোদুঃখ বুঝে সেই রে,
কহিনু তোমারে;—
অজি ও পাখীর মনঃ বুঝি আমি বিলক্ষণ—
আমিও বন্দী লো আজি ব্রজ-কারাগারে!
সারিকা অধীর ভাবি কুসুম-কানন,
রাধিকা অধীর ভাবি রাধা-বিনোদন!
৩
বনবিহারিণী ধনী বসন্তের সখী রে—
শুকের সুখিনী!
বলে ছলে ধরে তারে, বাঁধিয়াছ কারাগারে—
কেমনে ধৈরজ ধরি রবে সে কামিনী?
সারিকার দশা, সখি, ভাবিয়া অন্তরে,
রাধিকারে বেঁধোনা লো সংসার-পিঞ্জরে!
8
ছাড়ি দেহ বিহগীরে মোর অনুরোধে রে—
হইয়া সদয়।
ছাড়ি দেহ যাক্ চলি হাসে যথা বনস্থলী—
শুকে দেখি সুখে ওর্ জুড়াবে হৃদয়!
সারিকার ব্যথা সারি, ওলো দয়াবতি,
রাধিকার বেড়ি ভাঙ—এ মম মিনতি।
৫
এছার সংসার আজি আঁধার, স্বজনি রে—
রাধার নয়নে!
কেনে তবে মিছে তারে রাখ তুমি এ আঁধারে—
সফরী কি ধরে প্রাণ বারির বিহনে?
দেহ ছাড়ি, যাই চলি যথা বনমালী;
লাগুক্ কুলের মুখে কলঙ্কের কালী!
৬
ভাল যে বাসে, স্বজনি, কি কাজ তাহার রে
কুলমান ধনে?
শ্যামপ্রেমে উদাসিনী রাধিকা শ্যাম-অধীনী—
কি কাজ তাহার আজি রত্ন আভরণে?
মধু কহে কুলে ভুলি কর লো গমন—
শ্রীমধুসুদন, ধনি রসের সদন!