১৬

(সখী।)

কি কহিলি কহ, সই, শুনি লো আবার—মধুর
বচন!
সহসা হইনু কালা; জুড়া এ প্রাণের জ্বালা,
আর কি এ পোড়া প্রাণ পাবে সে রতন?
হ্যাদে তোর পায় ধরি, কহ না লো সত্য করি,
আসিবে কি ব্রজে পুনঃ রাধিকারমণ?

কহ, সখি, ফুটিবে কি এ মরুভূমিতে কুসুম
কানন?
জলহীনা স্রোতস্বতী, হবে কি লাে জলবতী,
পয়ঃ সহ পয়ােদে কি বহিবে পবন?
হ্যাদে তাের পায়ে ধরি, কহ না লাে সত্য করি,
আসিবে কি ব্রজে পুনঃ রাধিকারঞ্জন?

হায় লাে সয়েছি কত, শ্যামের বিহনে—কতই
যাতনা।
যে জন অন্তরযামী সেই জানে আর আমি,
কত যে কেঁদেছি তার কে করে বর্ণন?
হ্যাদে তাের পায় ধরি, কহ না লাে সত্য করি,
আসিবে কি ব্রজে পুনঃ রাধিকামােহন।

8

কোথা রে গােকুলইন্দু, বৃন্দাবন-সর—কুমুদ-
বাসন!
বিষাদ নিশ্বাস বায়, ব্রজ, নাথ, উড়ে যায়

কে রাখিবে, তব রাজ, ব্রজের রাজন!
হ্যাদে তোর পায় ধরি, কহ না লো সত্য করি,
আসিবে কি ব্রজে পুনঃ রাধিকাভূষণ!

শিখিনী ধরি, স্বজনি, গ্রাসে মহাফণী—বিষের
সদন!
বিরহ বিষের তাপে শিখিনী আপনি কাঁপে,
কুলবালা এ জ্বালায় ধরে কি জীবন।
হ্যাদে তোর পায় ধরি, কহ না লো সত্য করি
আসিবে কি ব্রজে পুনঃ রাধিকারতন!

এই দেখ ফুলমালা গাঁথিয়াছি আমি—চিকণ
গাঁথন!
দোলাইব শ্যামগলে, বাঁধিব বঁধুরে ছলে—
প্রেম-ফুল-ডোরে তারে করিব বন্ধন!
হ্যাদে তোর পায় ধরি কহ না লো সত্য করি,
আসিবে কি ব্রজে পুনঃ রাধাবিনোদন।

কি কহিলি কহ, সই, শুনি লো আবার—মধুর
বচন।
সহসা হইনু কালা, জুড়া এ প্রাণের জ্বালা
আর কি এ পোড়া প্রাণ পাবে সে রতন!
মধু—যার মধুধ্বনি—কহে কেন কাঁদ, ধনি,
ভুলিতে কি পারে তোমা শ্রীমধুসূদন?