১৫

(নিকুঞ্জবনে)

যমুনা পুলিনে আমি ভ্রমি একাকিনী,
হে নিকুঞ্জবন,
না পাইয়া ব্রজেশ্বরে, আইনু হেথা সত্বরে,
হে সখে, দেখাও মােরে ব্রজের রঞ্জন!

সুধাংশু সুধার হেতু, বাঁধিয়া আশার সেতু,
কুমুদীর মনঃ যথা উঠে গাে গগনে,
হেরিতে মুরলীধর—রূপে জিনি শশধর—
আসিয়াছি আমি দাসী তােমার সদনে—
তুমিহে অম্বর, কুঞ্জবর, তব চাঁদ নন্দের নন্দন।

তুমি জান কত ভাল বাসি শ্যামধনে
আমি অভাগিনী;
তুমি জান, সুভাজন, হে কুঞ্জকুল রাজন,
এ দাসীরে কত ভাল বাসিতেন তিনি।
তােমার কুসুমালয়ে, যবে গাে অতিথি হয়ে,
বাজায়ে বাঁশরী ব্রজ মােহিত মােহন,
তুমি জান কোন ধনী শুনি সে মধুর ধ্বনি,
অমনি আসি সেবিত ও রাঙা চরণ,
যথা শুনি জলদ নিনাদ ধায় রড়ে প্রমদা শিখিনী।

সে কালে—জ্বলে রে মনঃ স্মরিলে সে কথা,
মঞ্জু কুঞ্জবন,—
ছায়া তব সহচরী সোহাগে বসাতো ধরি
মাধবে অধিনী সহ পাতি ফলাসন;

মুঞ্জরিত তরুবলী, গুঞ্জরিত যত অলি,
কুসুম-কামিনী তুলি ঘােমটা অমনি,
মলয়ে সৌরভধন বিতরিত অনুক্ষণ,
দাতা যথা রাজেন্দ্রনন্দিনী—গন্ধামােদে
মােদিয়া কানন!

8

পঞ্চস্বরে কত যে গাইত পিকবর
মদন কীর্ত্তন,—
হেরি মম শ্যাম-ধন ভাবি তারে নবঘন,
কত যে নাচিত সুখে শিখিনী, কানন,—
ভুলিতে কি পারি তাহা, দেখেছি শুনেছি যাহা?
রয়েছে সে সব লেখা রাধিকার মনে।
নলিনী ভুলিবে যবে রবি দেবে, রাধা তবে
ভুলিবে, হে মঞ্জু কুঞ্জ, ব্রজের রঞ্জনে।
হায়রে, কে জানে যদি ভুলি যবে আসি
গ্রাসিবে শমন।

কহ, সখে, জান যদি কোথা গুণমণি—
রাধিকারমণ?
কাম বঁধু যথা মধু তুমি হে শ্যামের বঁধু,

একাকী আজি গো তুমি কিসের কারণ,—
হে বসন্ত, কোথা আজি তোমার মদন?
তব পদে বিলাপিনী কাঁদি আমি অভাগিনী,
কোথা মম শ্যামমণি—কহ কুঞ্জবর!
তোমার হৃদয়ে দয়া, পদ্মে যথা পদ্মালয়া,
বধো না রাধার প্রাণ না দিয়ে উত্তর!
মধু কহে শুন ব্রজাঙ্গণে, মধুপুরে শ্রীমধুসুদন!