(উষা)

কনক উদয়াচলে তুমি দেখা দিলে,
হে সুর-সুন্দরি!
কুমুদ মুদয়ে আঁখি, কিন্তু সুখে গায় পাখী,
গুঞ্জরি নিকুঞ্জে ভ্রমে ভ্রমর ভ্রমরী;

বরসরোজিনী ধনী, তুমিহে তার স্বজনী,
নিত্য তার প্রাণনাথে আন সাথে করি।

তুমি দেখাইলে পথ যায় চক্রবাকী
যথা প্রাণপতি!
ব্রজাঙ্গনে দয়া করি, লয়ে চল যথা হরি,
পথ দেখাইয়া তারে দেহ শীঘগতি!
কঁদিয়া কাঁদিয়া আঁধা, আজি গগ শ্যামের রাধা,
ঘুচাও আঁধার তার, হৈমবতি সতি!

হায়, উষা, নিশাকালে আশার স্বপনে
ছিলাম ভুলিয়া,
ভেবেছিনু তুমি, ধনি, নাশিবে ব্রজ রজনী,
ব্রজের সরোজরবি ব্রজে প্রকাশিয়া!
ভেবেছিনু কুঞ্জবনে পাইব পরাণ বনে,
হেরিব কদমূলে রাধা বিনোদিয়া!

মুকুতা কুণ্ডলে তুমি সাজাও, ললনে,
কুসুমকামিনী;

আন মন্দ সমীরণে বিহারিতে তার সনে,
রাধা বিনোদনে কেন আননা, রঙ্গিণি?
রাধার ভূষণ যিনি, কোথায় আজি গো তিনি?
সাজাও আনিয়া তাঁরে রাধা বিরহিণী!

ভালে তব জ্বলে, দেবি, আভাময় মণি—
বিমল কিরণ;
ফণনী নিজ কুন্তলে পরে মণি কুতূহলে—
কিন্তু মণি-কুলরাজা ব্রজের রতন!
মধু কহে, ব্রজাঙ্গনে, এই লাগে মোর মনে—
ভূতলে অতুল মণি শ্রীমধুসূদন!