(মলয় মারুত)

শুনেছি মলয় গিরি তােমার আলয়—
মলয় পবন!
বিহঙ্গিনীগণ তথা গাহে বিদ্যাধরী যথা
সঙ্গীত সুধায় পূরে নন্দন কানন;
কুসুমকুলকামিনী, কোমলা কমলা জিনি,
সেবে তােমা, বৃতি যথা সেবেন মদন!

হায়, কেনে ব্রজে আজি ভ্রমিছ হে তুমি—
মন্দ সমীরণ?
যাও সরসীর কোলে, দোলাও মৃদু হিল্লোলে
সুপ্রফুল্ল নলিনীরে—প্রেমানন্দ মন!
ব্রজ-প্রভাকর যিনি, ব্রজ আজি ত্যজি তিনি,
বিরাজেন অস্তাচলে—নন্দের নন্দন!

সৌরভ রতন দানে তুষিবে তােমারে
আদরে নলিনী;
তব তুল্য উপহার কি অজি আছে রাধার?

নয়ন আসারে, দেব, ভাসে সে দুঃখিনী!
যাও যথা পিকবধূ—বরিষে সঙ্গীত মধু,—
এ নিকুঞ্জে কাঁদে আজি রাধা বিরহিণী!

8

তবে যদি, সুভগ, এ অভাগীর দুঃখে
দুঃখী তুমি মনে,
যাও আশু, আশুগতি, যথা ব্রজকুলপতি—
যাও যথা পাবে, দেব, ব্রজের রতনে!
রাধার রোদন ধ্বনি বহ যথা শ্যামমণি—
কহ তারে মরে রাধা শ্যামের বিহনে!

যাও চলি, মহাবলি, যথা বনমালী—
রাধিকা-বাসন;
তুঙ্গ শৃঙ্গ দুষ্টমতি, রােধে যদি তব গতি,
মোর অনুরােধে তারে ভেঙো প্রভঞ্জন,
তরুরাজ যুদ্ধ আশে, তােমারে যদি সম্ভাষে—
বজ্রাঘাতে যেও তার করিয়া দলন!

দেখি তােমা পীরিতের ফাঁদ পাতে যদি
নদী রূপবতী;

মজোনা বিভ্রমে তার, তুমিহে দূত রাধার,
হেরো না, হেরো না দেব কুসুম যুবতী!
কিনিতে তোমার মন, দেবে সে সৌরভ ধন,
অবহেলি সে ছলনা, যেয়ে আশুগতি!

শিশিরের নীরে ভাবি অশ্রুবারিধারা,
ভুলো না, পবন!
কোকিলা শাখা উপরে, ডাকে যদি পঞ্চস্বরে,
মোর কিরে শীঘ্র করে ছেড়ে সে কানন!
স্মরি রাধিকার দুঃখ, হইও সুখে বিমুখ—
মহৎ যে পরদুঃখে দুঃখী সে সুজন!

উতরিবে যবে যথা রাধিকারমণ,
মোর দূত হয়ে,
কহিও গোকুল কাঁদে হারাইয়া শ্যাম চাঁদে—
রাধার রোদন ধ্বনি দিও তাঁরে লয়ে;
আর কথা আমি নারী শরমে কহিতে নারি,—
মধু কহে, ব্রঙ্গাঙ্গনে, আমি দিব কয়ে।