ভগ্নহৃদয়/একত্রিংশ সর্গ
একত্রিংশ সর্গ।
অনিল ও কবি।
অনিল।—একবার এস তুমি—চলগো হোথায়
দেখে যাও কি হৃদয় দোলেছ দু’পায়!
যখন কোরক সবে—খোলে নাই আঁখি,
তখন হৃদয়ে তার বসিয়া একাকী—
দিনরাত—দিনরাত বিষদন্ত বিঁধি,
—আহা সেই সুকুমার কিশলয় হৃদি—
বিন্দু বিন্দু রক্ত তার করেছ শোষণ;
কথাটি সে বলে নাই—মুখটি সে তুলে নাই
হৃদয়-ঘতীরে হৃদে দিয়েছে আসন!
আজ সে যৌবনে যবে খুলিন নয়ন—
দেখিল হৃদয়ে তার নাই রক্ত-লেশ
যৌবনের পরিমল হয়েছে নিঃশেষ—
কথাটি সে বলিল না—মুখটি সে তুলিল না
দুর্ব্বল মাথাটি আহা পড়িল গো নুয়ে
মাটিতে মিশাবে কবে, চেয়ে আছে ভুঁয়ে!
এস তবে বিষকীট, দেখ’সে আসিয়া
—হলাহলময় হাসি মরিও হাসিয়া—
একটু একটু করি কি কোরে যেতেছে মরি
একটি একটি দল পড়িছে খসিয়া!
বিষাক্ত নিশ্বাসে তব বিষাক্ত চুম্বনে
কি রোগ পশিল তার সুকোমল মনে?
তার চেয়ে কেন তীব্র অশনি আসিয়া
দারুণ চুম্বনে তারে ফেলেনি নাশিয়া,
দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে জ্বরি জ্বরি হলাহলে
মর্মে মর্মে শিরে শিরে হতনা দহিতে,
মনের ব্যথার পরে দংশন সহিতে!
মুহূর্তের আলিঙ্গনে মরিত—ফুরাত—
মুহূর্ত জ্বলিয়া শেষে সকল জুড়াত!”
যে কৌশলে ধীরে ধীরে হৃদয়ের শিরে শিরে
দারুণ মৃত্যুর রস করেছ সঞ্চার—
সে কৌশল সফল যে হয়েছে তোমার।—
তাই একবার এস—দেখ’সে ত্বরায়
কেমন করিয়া তার জীবন ফুবায়!
নিদারুণ বিষ তব ফলে কি করিয়া,
জ্বরিয়া মরিতে হলে মরে কি করিয়া!
সে বালা, আসন্ন তার দেখিয়া মরণ,
কাঁদিয়া তোমার কাছে করেছে প্রেরণ!
এখনো চাওগো যদি—শেষ রক্তে তার
দিবে গো সে প্রক্ষালিয়া চরণ তোমার!
নিতান্ত দুর্ব্বল বুকে করিবে ধারণ
ওই তব নিরদয় কঠিন চরণ!
রক্তময় পদতলে বুক ফাটি গিয়া,
নিতান্ত মরিবে বালা কথা না কহিয়া!
তবে এস, তার কাছে এস একবার
আরম্ভ করিলে যাহা শেষ দেখ তার!