ত্রিংশ সর্গ।

নলিনী।

বড় সাধ গেছে মনে ভাল বাসিবারে,
সখি তোর বল্ দেখি, ভালবাসি কারে?
বসন্তে নিকুঞ্জ বনে, বেষ্টিত সহস্র মনে
নলিনী প্রাণের খেলা শুধু খেলিয়াছে,
খেলা ছাড়া সত্যকার জীবন কি আছে?
সে জীবন দেখিবারে বড় সাধ গেছে!
মনেতে মিশায়ে মন সচেতনে অচেতন,
জগত হইয়া আসে মৃদু ছায়াময়,
দুটি মন চেয়ে থাকে দোঁহে দোঁহা ঢেকে রাখে,
সজনি লো, সে বড় সুখের মনে হয়!
সে সুখ কি পাই যদি ভালবাসি কারে?
বড় সাধ যায় সখি ভাল বাসিবারে!
এত যে হৃদয় আছে, ভ্রমে নলিনীর কাছে,
নলিনীর নহে কিগো একটি ও তার?
যদি কারো দ্বারে যাই, কাঁদিয়া আশ্রয় চাই,
কেহই কি খুলিবে না হৃদয়ের দ্বার।
হৃদয়ের দুয়ারের বাহিরে বসিয়া
খেলেছি মনের খেলা সকলে মিলিয়া,

সিংহাসন নিয়মিত’ আমারে বসায়ে দিত’
পদতলে ফুল তুলে দিত সবে আনি,
গরবে উন্মত্ত-হিয়া, আপনারে বিসরিয়া,
তাবিতাম আমি বুঝি হৃদয়ের রাণী?
চারিদিকে আমার হৃদয়-রাজধানী!
দিবস সায়াহ্ন হ’ল, বসন্ত ফুরায়,
খেলাবার দিন যবে অবসান—প্রায়,
মাথায় পড়িল বাজ, সহসা দেখিনু আজ,
আমি কেহ নই, শুধু খেলাবার রাণী,
বালুকার পরে গড়া খেলা-রাজধানী!
নিতান্ত ভিখারী আজি, দীনহীন বেশে সাজি
দুয়ায়ে দুয়ারে ভ্রমি আশ্রয়ের তরে,
সবাই ফিরায় মুখ উপেক্ষার ভরে।
খেলা যবে ফুরাইল কে কোথায় চ’লে গেল,
তাই বড় সাধ যায় ভাল বাসিবারে।
সখি তোরা, বল্ দেখি, ভাল বাসি কারে?